ইউজার লগইন

মাইনুল এইচ সিরাজী'এর ব্লগ

প্রেম যদি চাঁদ দেখা হয়, বিয়ে হচ্ছে চাঁদে গিয়ে চাঁদ দেখা

যাঁরা এখনো একটা প্রেম করতে পারেন নি, তাঁরা সুযোগ পেলেই আক্ষেপ করেন- হায়, জীবনে কিছুই হলো না। এই আক্ষেপ যৌক্তিক। কারণ - ক) প্রেম না করলে ছোট্ট এই জীবনের অনেক সৌন্দর্য অনাবিষ্কৃত থেকে যায়, খ) চাঁদকে ঝলসানো রুটির মতো লাগে।

প্রেমে পড়লে বোঝা যায়- টিপে টিপে বাদাম খাওয়ার মতো সামান্য জিনিসে কী মজা! আর বাদামের খোসাটা যদি অন্যজন ছাড়িয়ে দেয় তাহলে তো কথাই নেই। আবার, প্রেমে পড়লে চাঁদ আপনাকে জোছনার গালিচায় চড়িয়ে উড়িয়ে নিয়ে যাবে রংয়ের রাজ্যে। সুতরাং যাদের প্রেম নেই তাঁরা আক্ষেপ করতে থাকুন। কলার নাড়িয়ে দোয়া করি, দ্রুত প্রেমে পতন ঘটুক আপনাদের।

নাম বনাম

আমরা বন্ধু ব্লগে এম. এ. সিরাজীকে দেখে অবাকই হয়েছি। আমার নামের সাথে এত মিল! প্রথমে ভেবেছি- এটা বুঝি আমি নিজেই। মাইনুলের এম, এইচের এ। পরে ভদ্রলোকের প্রোফাইল দেখে বুঝলাম- লোকটা আমি নই। আমিতো ভার্সিটি লাইফ শেষ করে এসেছি সেই ১১ বছর আগে। তবে অনেকে ভাবতে পারেন এম. এ. সিরাজী নামে আমি বুঝি আরেকটা একাউন্ট খুলেছি!

নাম নিয়ে এহেন বিড়ম্বনার গল্প শোনাবার জন্যই এই পোস্টের অবতারণা। একটা ধাঁধা দিয়ে শুরু করব, কৌতুক দিয়ে শেষ করব।

১। আচ্ছা বলুন তো, কী এমন জিনিস, যা একেবারেই আপনার; কিন্তু আপনি ব্যবহার করেন কম, অন্যরা সারাদিন ব্যবহার করে?

ঠিক ধরেছেন। এটা হচ্ছে আপনার নাম।

অভিমানী দম্পতির চিঠি চালাচালি

স্ত্রীকে স্বামী

আমার পেটে-বুকে খুব জ্বালাপোড়া করছে। এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। অনেক বছর ধরে এই যন্ত্রণা সহ্য করে যাচ্ছি। ওষুধ খেতে খেতে আমার চুল উঠে গেছে।

চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে। তবু তোমার ইচ্ছা পূরণের অদম্য ইচ্ছায় কাগজটা, কলমটা নিয়ে বসলাম। আমিতো তোমাকে কিছুই দিতে পারি না। অন্তত এই চাওয়াটা পূরণ করি না খানিকটা।

বোনাস লাইফ

শিরোনামটা শুদ্ধ হলো কিনা বুঝতে পারছি না। ইংরেজিতে আমার খদল একেবারেই নেই। এই দেখুন ইংরেজি ভীতিতে দখলটাও খদল হয়ে যাচ্ছে!
যাই হোক। নিচের ঘটনাগুলো পড়ুন।

ছোটবেলায় আমার বয়স যখন ১০, একবার গাব গাছের ডাল ভেঙে নিচে পড়ে গিয়েছিলাম। ভাগ্যিস ডাল আর মাটির মাঝখানে লাউয়ের মাচা ছিল। পতনকালে মাঝপথে ওখানে আটকে পড়ায় এখন পর্যন্ত আরও ২৫ বছর বেঁচে আছি।

বয়স তখন ১২ বছর। ভাই বোন সবাই মিলে পুকুরে মাছ ধরছি। দুপুরবেলা হয়রান হয়ে ঘরে এসে এক মগ রেডিমেড শরবত খেয়েছি ঢকঢক করে। ওমা খেয়ে তো হেচকি দিতে দিতে মরে যাওয়ার দশা! আব্বা পানের সাথে তামাক পাতা (সাদা পাতা) খেতেন। তামাক পাতা ধোয়া পানিই আমি শরবত মনে করে খেয়ে ফেলেছিলাম। পরে মা বোনেরা তেঁতুল খাইয়ে আমাকে সে যাত্রা বাঁচিয়েছেন।

জ্বরাক্রান্ত, জরাক্রান্ত

গত কয়েক দিনে থেমে থেমে আমার জ্বর হয়েছে কয়েকবার। সর্দি-জ্বর। একটু ঠান্ডা পানি ধরেছিতো, ব্যাস শুরু হয়ে গেল হাপিশ-শো...
জ্বরের সময় সবচেয়ে কষ্ট লাগে রাতে। জ্বর বাড়ে। ১০১, ১০২...
ঘুম হয় না। একটা ঘোর। তন্দ্রা। ছটফটানি। ঘুম, ঘোর, তন্দ্রা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এক অন্যরকম জগতে হাবুডুবু খাওয়ার মতো। যেন অনেকগুলো অন্ধকার দলা পাকিয়ে ধেয়ে আসছে আমার দিকে। বাঁচাও, বাঁচাও। কখনো যেন বা পড়ে যাচ্ছি- খাট ভেদ করে ফ্লোরে; ফ্লোর থেকে তিন তলায়, দোতলায়, নিচ তলায়; মাটি ফেটে গিয়ে পাতালে। পতন, পতন...।
আবার কখনো যেন উড়ছি আকাশে। উড়তে উড়তে একেবারে সূর্যের কাছাকাছি। উফ, কত উষ্ণতা, কত আলো! চোখ ধাঁধিয়ে যায়, শরীর পুড়ে যায়। সমুদ্র চাই, সমুদ্র। পড়ে যাই সমুদ্রে। ভেসে উঠি, ডুবে যাই। দম আটকে যায়। চিৎকার দিয়ে জেগে উঠি।
সকালের দিকে আবার ভালো লাগে। পত্রিকা পড়ি। টিভি দেখি।

বিয়ের পরের শব্দ...গুলো

মাকে খুশি করতে পারার মতো আনন্দ আর নেই। ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি মা পান খান। এবং এক খিলি পান এগিয়ে দিলেই মা খুশি। মাকে খুশি করা যে খুব সহজ- এটা জানতাম ২৯ বছর পর্যন্ত।
এরপর জীবনের কোনো এক লগ্নে এসে বিয়ে করতে হলো। আমার আড়াই যুগের ধারণা পাল্টাতে সময় লাগল আড়াই দিনেরও কম। পান আনতে মনে ছিল না। কিন্তু ব্যাখ্যাটা হলো এরকম- বিয়ে করে পাল্টে গিয়েছি! অথচ আগেও কতদিন ভুলে গিয়েছি পান আনতে। তখন এমন কথা শুনিনি। ওদিকে মায়ের কাছে গেলে, মায়ের সঙ্গে গল্প করলে বউকে তার জবাবদিহি করতে হয়। হায়, এ কোন জীবনে প্রবেশ করলাম আমি! মা আর বউয়ের মাঝে একটা দেয়াল খুঁজে পেলাম। এপাশে গেলেও দেয়ালে পিঠ ঠেকে, ওপাশে গেলেও ঠেকে যায়।

দ্বিতীয় জীবন

২ মাসে আমার শরীরজুড়ে ২১টা ফোঁড়া উঠেছে। অস্বাভাবিক তাই না?
বড়ভাই ডাক্তার। ফোন করলাম। বললেন, ডায়াবেটিস চেক করিয়ে নে। ডায়াবেটিস থাকলে এমনটা হতে পারে।
আমি কিঞ্চিৎ আতঙ্কিত হলাম। এর আগে ডায়াবেটিস সম্পর্কে তেমন খোঁজখবর রাখা হয়নি। মা বাবার ডায়াবেটিস নেই। আমার হবে কেন? কিন্তু ডাক্তারের কথা শুনে আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। বাসার কাছেই চট্টগ্রাম ডায়াবেটিস হাসপাতাল। হাঁটা পথ। কিন্তু আমি আর টেস্ট করাতে যাই না। ভয়ে। যদি পজিটিভ হয়!
ফোঁড়ার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে অবশেষে গেলাম। আল্লাহ ভরসা।

আরীব ও প্রকৃতি

তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় ফেসবুকে। আমার স্ট্যাটাসে কমেন্ট করেন, লাইক করেন। একদিন কৌতূহলবশত তাঁর প্রোফাইলে ঢুঁ মারলাম। সরকারের অবসরপ্রাপ্ত পদস্থ কর্মকর্তা তিনি। শখ তাঁর শিশু পালন। প্রিয় উদ্ধৃতি-'প্রকৃতি প্রার্থনার বশ নয়। প্রকৃতি প্রার্থনার বশ হলে পৃথিবীর চেহারা বদলে যেত। পৃথিবীর জন্য প্রার্থনা তো কম করা হয়নি'।
কিন্তু তাঁর ওয়ালে কিছু মন খারাপ করা কথাবার্তা দেখে কষ্ট লাগল।
ফেসবুক ছাড়াও বিভিন্ন ব্লগ এবং প্রথম আলোতে আমার লেখা পড়ে তিনি প্রতিক্রিয়া জানান।
একদিন আমার ইনবক্সে তাঁর একটি মেসেজ পেলাম এরকম-'''আপনি তো অনেক লিখেন । ১ বছর ৯ মাস বয়সের একটি জীবন্ত জড়মানবকে নিয়ে লিখতে পারেন ? যার শ্রবণযন্ত্র ছাড়া আর কিছুই স্বাভাবিক নয়, যাকে সুস্থ করে তুলবার কোনো ব্যবস্থা এখনও কেউ করতে পারলো না ! মৃত্যুই যাকে তার সকল কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পারে, তেমন কাউকে নিয়ে কিছু লিখতে পারেন আপনি?'

হে দারিদ্র...

পরীক্ষার হল-এ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছিলাম। ক্লাসে আমি যতটা আমুদে, পরীক্ষার হল-এ ঠিক ততটাই কড়া। ছাত্ররা মাথা নাড়তেও ভয় পাচ্ছিল। ইলেকট্রনিক্সের জটিল পরীক্ষা। কক্ষজুড়ে পিনপতন নীরবতা। এরই মাঝে দেখলাম এক ছাত্র পাশের জন থেকে ক্যালকুলেটর নিচ্ছে। আমি দুজনকেই সতর্ক করে দিয়ে বললাম, কেউ কারো কাছ থেকে যন্ত্রপাতি নিয়ে বিরক্তির সৃস্টি করবে না। সাবধান করে দিচ্ছি।
একটু পরে ছেলেটি আবার একই ঘটনা ঘটাল।
আমি ছেলেটিকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম- তুিম আমার নির্দেশ অমান্য করলে কেন? সে কাচুমাচু ভঙ্গিতে বলল, ভুল হয়ে গেছে স্যার। আমি বললাম- এটা ভুল নয়, অসদাচরণ। তোমার পরীক্ষা দেওয়া লাগবে না, যাও বেরিয়ে যাও। আমি তার খাতা নিয়ে নিলাম।
ছেলেটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল। দশ-পনের মিনিট পর সে আমার কাছে এসে করজোড়ে আবার বলল, স্যার ভুল হয়ে গেছে।

হায় সাধু!

স্থানীয় পোস্ট অফিস। যিনি টিকেট বিক্রি করেন, তিনিই আবার মানি- অর্ডার গ্রহণ করেন। তাই তাঁর ব্যস্ততা প্রচুর।
এক বিকেলে টাকার হিসাব মেলাতে পারছিলেন না ডাকঘরের সেই কর্মীটি। ধরে নিই তাঁর নাম শফিক।
অনেকবার গুেণটুনেও যখন হিসাব আর মিলল না-১৫০০ টাকার গরমিল হলো-শফিক ভাবলেন, গরমিল যখন হলোই, পোস্টমাস্টারকে যখন ব্যাপারটা জানাতেই হবে, ধমক যখন খেতেই হবে তাহলে নিজের পকেটেও কিছু থাকুক না! তিনি আরও ১০০০ টাকা রেখে দিয়ে পোস্টমাস্টারকে ব্যাপারটা জানালেন।
পোস্ট অফিসের সব কর্মী গভীর রাত অব্দি চেষ্টা করে হিসাব মেলাতে ব্যর্থ হলেন। শেষে পোস্টমাস্টার নিজের সুনামের কথা ভেবে পকেট থেকে টাকা দিয়ে হিসাব মিলিয়ে দিলেন।
আমার বসবাস পোস্ট অফিস থেকে কিছু দূরে। এ ঘটনা আমার জানার কথা নয়। তবু আমি খুব ভালোভাবেই জেনেছি ঘটনার সাথে আমি জড়িত ছিলাম বলে।