বাংলাদেশে পাকিস্তানী সন্ত্রাসবাদ প্রসারের নীলনকশা: একটি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা
আজকের প্রথম আলোতে দেখলাম পাকিস্তান ’৭১ এ বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করেছে, দেখে মুখ ভরে গেল থুথুতে, মাথায় উন্মাদ রাগ চাড়া দিয়ে উঠলো। মনে পড়ে মাস কয়েক আগে আরেকটা খবরে দেখেছিলাম পাকিরা কূটনৈতিক পর্যায়ে বিনা ভিসায় বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য দেন-দরবার করছে। এইসব দেখে পুরানা কিছু কথা আবারও মনে পড়ে গেল। কথাগুলো গত বেশকিছুদিন যাবতই মাথায় ঘুরছে। লিখবো লিখবো বলে যখনই অলসতার কাছে আত্মসমর্পণ করতে গেছি তখনই কোন একটা ঘটনা বা খবর সামনে চলে এসে স্মৃতিকে নাড়া দিয়ে গেছে।
পাকিস্তান কখনোই বাংলাদেশের বন্ধু ছিলনা। কোনদিন হবেওনা। ৪৭ থেকে ৭১ সালের পাকি-পৈশাচিকতার দাঁতভাঙ্গা বাঙ্গালী জবাব এখনো তাদের পোড়ায়। কেয়ামত পর্যন্ত পুড়িয়েই যাবে। স্বাধীনতার পর থেকেই নানাভাবে তারা বাংলাদেশের ক্ষতি করতে চেষ্টা করে গিয়েছে, এখনও যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও যাবে। আমার সাধারণ বিচার বুদ্ধিতে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কই থাকা উচিত না, বন্ধুত্ব তো দূরের কথা। এই দানব রাষ্ট্রের সাথে মানবিকতা দেখানো নিজের পায়ে শটগান দিয়ে গুল্লি করারই নামান্তর।
স্বাধীন বাংলাদেশে মৌলবাদ,সন্ত্রাসবাদের বীজ বপন এবং বিস্তারে পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের ইতিহাস অনেক পুরানা। আইএস কসাই, লস্কর, হিজবুত্তাহির বা স্থানীয় বেজন্মা রাজাকারদের সহায়তায় একের পর এক বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলেছে, চলবে। আজকে তাদের দাবী অনুযায়ী সরকারী বা কূটনৈতিক পাস্পোর্টধারীদের বিনা ভিসায় ঢুকতে দেয়ার মধ্য দিয়ে অদূর ভবিষ্যতে আম পাকি সন্ত্রাসীদের বিছানা বালিশ সহ বাংলাদেশে চলে আসার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে—এ বিষয়ে আমার অন্তত কোনো সন্দেহ নেই।
আমি রাজনৈতিক বিশ্লেষক না। সাদা চোখে যা দেখি সেটাই বোঝার চেষ্টা করি। আমার সন্দেহের যৌক্তিকতা হয়তো আমি রেফারেন্স টেনে বা কোন বিশেষজ্ঞের গবেষণাজাত তথ্য-উপাত্ত হাজির করে বোঝাতে পারবো না। নিজের ঝুলিতে অতি সামান্য একটা অভিজ্ঞতা আছে। পুরোটা পড়ে আপনারাই বলবেন বাংলাদেশকে ছলে-বলে-কৌশলে সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্য বানানোর পাকি ষড়যন্ত্র বিষয়ে আমার দুঃশ্চিন্তা অমূলক কিনা।
ঘটনা ১৯৯৬-৯৭ সালের। দেশে তখন কম্প্যুটার ব্যবসার হুজুগ। আমরা চার ক্লাসমেট মিলে অতি কষ্টে ১৫-২০ হাজার টাকা যোগাড় করে হাতিরপুলে একটা ছোট দোকান নিয়ে ফেলি। দোকানতো নেয়া হলো কিন্তু ভেতরে বিক্রিযোগ্য কিছু নাই, কয়েকটা মাউস প্যাড ছাড়া। আমার বন্ধু রাসেল কোত্থেকে যেন বেশকিছু মাদার-বোর্ড, হার্ডড্রাইভ ইত্যাদির খালি খোসা এনে শেলফে সাজিয়ে রাখলো। আমরা সারাদিন বসে মাছি মারি, আর আগডুম বাগডুম নানা স্বপ্ন দেখি। সেই খালি দোকানে একদিন এক বিদেশী লোক এসে হাজির। সুবেশী, সুদর্শন, চমৎকার ইংরেজী বলে। জিজ্ঞেস করায় বললো সে দুবাই থেকে এসেছে। এখানে এডিবির একটা প্রজেক্টে কাজ করে। কম্প্যুটার কিনবে, এখানে নতুন মার্কেট হয়েছে শুনে দাম-দস্তুর দেখতে এসেছে। রাসেল লোকটাকে পটিয়ে ফেলে হাজার তিরিশেক টাকায় পেন্টিয়াম টু বা থ্রি একটা গছিয়ে দিল। লোকটা মানিব্যাগ থেকে আট বা দশ হাজার টাকা অগ্রীম দিয়ে দুইদিন পরে ডেলিভারী নিতে আসবে বলে চলে গেল। আমরাও প্রথম বিক্রির আনন্দে উচ্ছ্বসিত।
তখন আমরা একেবারে অনভিজ্ঞ। বিদেশী কারও সাথে বেচা-কেনা করলে যে তার পাস্পোর্ট বা পরিচয় পত্রের কপি রেখে দেয়া উচিত সেটা আমাদের মাথায়ই আসেনি। কিছুটা খটকা লাগলো দুই দিন পরে আমাদের হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কম্প্যুটার ডেলিভারী দিয়ে ফিরে আসার পরে। সে জানালো ক্রেতা ভদ্রলোক কোনো বাড়িতে না, ফার্মগেটের একটা মাঝারী মানের হোটেলে থাকে, হোটেল রুমেই কম্প্যুটার সেট করে নিয়েছে। খটকা লাগলেও ভেবে নিলাম হয় তো এটা তার সাময়িক ঠিকানা, পরে অন্য কোথাও উঠবে। এদিকে নতুন ব্যবসার ঝামেলায় আমরা বিষয়টা এক রকম ভুলেই যাই। সপ্তাহ তিনেক পরে সে আবার একদিন এসে হাজির, কিছু সফটওয়্যার দরকার। এবার আর বোকামি করলাম না, বললাম পাসপোর্টের কপি লাগবে, কারণ আমরা তাকে ওয়ারেন্টি কার্ডও ইস্যু করবো। সে কিছুটা ইতস্তত করলেও আমার ক্রমাগত তাগাদায় পাসপোর্ট বের করে দিল। কপি করতে নিজেই গেলাম। খুলে দেখি ভেতরে বিশাল দাড়িওয়ালা এক লোকের ছবি। আর নাম লেখা আছে মোহাম্মদ শাকিল। মনে পড়লো কম্প্যুটার কেনার রশিদ লেখার সময় সে নাম বলেছিল ফারুক হোসেইন। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে পাসপোর্টটা পাকিস্তানের , আরব আমিরাতের না।
এবার আমি পুরাই হতচকিয়ে গেলাম। ছোটবেলা থেকেই বাবার নির্দেশনা অনুযায়ী সব কাজে পাকিদের এড়িয়ে চলেছি, আর এখন কি না তাদেরই একজনের সাথে ব্যবসা করে বসলাম! আর এই লোকের গতিবিধি, কাজ-কাম সবই চূড়ান্ত সন্দেহজনক , আবার না জানি কোন বিপদে পড়ি। উপরে এসে বন্ধু রাসেলের সাথে আলাপ করলে ও নিজেও আমার কথায় সায় দিল। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম সরাসরি ফারুক ওরফে শাকিলকে জিজ্ঞেস করবো তার বৃত্তান্ত। কিন্তু ব্যাটাকে জিজ্ঞেস করতেই সে ঝাঁ করে রেগে উঠলো। ইংরেজীতে আমাদের বিস্তর গালাগাল শুরু করলো। কেন আমরা তার পাসপোর্টের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছি, এগুলো তো আমাদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। সে এডিবির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, আমাদের দূরাবস্থা থেকে করুণাবশত একটা কম্প্যুটার কিনেছে, আর আমরা তাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো দুঃসাহস করি ইত্যাদি ইত্যদাই। বাংলাদেশের পথে-ঘাটে ব্যবসা করে যারা পড়ার খরচ চালায়, তাদের ঝাড়ি মেরে কাত করা এত সহজ কথা না। আমরাও দমে না গিয়ে তাকে চেপে ধরলাম, তোমার নাম পরিচয় যা আগে বলেছ তার কিছুই তো মেলে না পাসপোর্টের সাথে—এর ব্যাখ্যা কী?
ঝাড়ি মেরে আমাদের দমাতে না পেরে এবার সে একটু সুর নরম করে। বলে,- ‘দেখ আমার জন্ম পাকিস্তানে কিন্তু আমি দীর্ঘদিন যাবৎ দুবাইয়ে থাকি। ওখানে আমার ঘর-বাড়ি, বউ-বাচ্চা সব আছে। আর পাসপোর্টের নামের বাইরেও তো মানুষের ডাকনাম থাকে। আমার ভালো নাম মোহাম্মদ শাকিল, ডাকনাম ফারুক। তোমাদেরও কি পোশাকি নামের বাইরে ডাক নাম নেই?’ ছবির কথা বলবো না ভেবেও বলে ফেলি। সে জানায় এটা অনেক আগের ছবি, ইদানীং দাড়ি নিয়ে দেশ-বিদেশ ঘোরা অনেক ঝক্কির ব্যাপার তাই শেভ করে ফেলেছে। আমরাও মেনে নেয়ার ভাব করে শেষ কার্ডটা আস্তিন থেকে বের করলাম। আচ্ছা তুমি যদি এডিবির কর্মকর্তা হয়েই থাক, তাহলে তোমার বিজনেস কার্ড বা কোম্পানীর আইডি কিছু সাথে আছে? এবার সে পুরাই ক্ষেপে গেল। বলে, সেটা আমি তোমাদের দেখাতে যাব কেন? আমি কি তোমাদের সাথে কোনো ব্যবসা করতে যাচ্ছি? তোমরা সামান্য কম্প্যুটার ব্যবসায়ী কোন সাহসে আমার কোম্পানীর আই ডি দেখতে চাও। ইউ গাইজ আর আনবিলিভেবল! আর কোনোদিন আসবো না তোমাদের দোকানে। ইচ্ছা ছিল আরও কিছু যন্ত্র-পাতি কেনার, মোডেম লাগবে, নেটওয়ার্কিংয়ের পার্টস লাগবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তোমরা কাস্টমার কেয়ারের চাইতে ব্যক্তিগত বিষয়েই বেশি আগ্রহী। লাগবে না আমার সফটওয়্যার, আমি গেলাম।
লোকটি আসলেই রেগেমেগে চলে গেল। আমরা ভাবলাম, যাক একটা যন্ত্রণা গেল। এই ব্যাটা আর কোনোদিন আমাদের কাছে না আসলেই আমরা খুশী।
কিন্তু মানুষ ভাবে এক, আর হয় আরেক। ছয়মাস পরে, রমজান মাসে, একদিন ইফাতারীর সময়ে তড়িঘড়ি করে বাড়ি ফিরছি। রাস্তায় বড় ভাই মোবাইলে ফোন করে বলে, ‘তুই আজ রাতে বাসায় আসিস না।’ কেন?—অবাক হয়ে জানতে চাই।
‘টাঙ্গাইলে এক আই এস আই এজেন্ট ধরা পড়ছে। তোর খোঁজে পুলিশ আসছিল দুইবার আজকে বাসায়। ধরা পড়ার পরে টাঙ্গাইলের গ্রামে তার শ্বশুর বাড়িতে পুলিশ কম্প্যুটার, সিডি সহ অনেক কিছু আবিস্কার করেছে। সেই কম্প্যুটার নাকি তোর কাছ থেকে কেনা হয়েছে। ’—বড়ভাই রীতিমতো আতংকিত কন্ঠে বলে।
(চলবে)
সর্বনাশ !!!!
পাকি গুলারে বুট দিয়া লাত্থাইতে পারলে কি যে শান্তিও লাগতো। ওদের দেশে যে প্রতিদিন আত্মঘাতি বোমা হামলা হয় , আমি পড়ি আর ভাবি, তোদের কর্মের ফল পেয়েছিস আগে, এখন নিজের দেশের ভিতর তোরা পাচ্ছিস , সামনে আরো পাবি।
চলুক।
পাক-হানাদার-জামাত-শিবির-রাজাকার নিপাত যাক। এদের খুব ইচ্ছে বাংলাদেশকে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করার। অবশ্য উপমহাদেশে আরো দেশ আছে এইটা করতে চায়। সরকারের ভেতরে তাদের চামুচ আছে। যে কারণে ওরা এসব সুযোগ পায়। সরকারকে এ ব্যপারে সচেতন হতে হবে।
আরো একবার জোরসে বলতে হয়, পাক-হানাদার-জামাত-শিবির-রাজাকার নিপাত যাক।
বাকীটুকু তাড়া্তাড়ি কন।।
আর নিমুসা দের জন্য নাকি উটপাখির ডিম আসতেছে.।
মানুষরুপী এইসব জানোয়ারগুলির জন্য শুধুই ঘৃণা। ৩ রাজাকাররে ধরার দিন থেকে মনটা খুব খুশি। শুয়োরের ছানাগুলিরে বেদম একটা মাইর দরকার (আশা করছি, এরমধ্যে তা সারা হয়েছে)। জীবনে যেনো কোনোদিন সোজা হৈয়া না দাঁড়াইতে পারে। বেজন্মা রাজাররা নিপাত যাক...
আমার কিছু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা একবার লিখেছিলাম। নিজেদের বাড়িতেই যারা সৎ না অন্যের সাথে তারা আর কি করবে?
http://www.sachalayatan.com/tanbira/26640
পড়ার জোনয় সবাইকে ধন্যবাদ। মন্তব্যের জন্যও। তবে বুঝতে পারলাম যে বিশ্বকাপের ডামাডোলে এই ধরনের সিরিয়ার টপিক একটু বেমানান, তাই বাকী কাহিনি ফুটবল উন্মাদনা শেষ হবার পরেই আপনাদের জানাবো
আমার বিশ্বকাপের লাল বাতি জ্বলে গেছে ইতিমধ্যেই যদিও।
বস,
রীতিমত ভয় লাগিয়ে দেবার মত কাহিনী।
একটা জিনিস ভাবলে খুব অদ্ভূত লাগে---আমাদের প্রায় প্রত্যেকেরই পাকি নিয়ে যেসব কম-বেশি অভিজ্ঞতা আছে, তার কোনটাই সুখকর কিছু না। অন্তত আমি এখনো এমন কারো দেখা পাইনি যে বলতে পেরেছে, পাকির সাথে তার বেশ ভাল কিছু সময় কেটেছে। আমি বলছি না যে এমনটা অসম্ভব। তবে এমনটা ঘটা আসলেই খুব বিরল।
আমরা সাধারন মানুষেরা যে জিনিসটা এত সহজে জানতে পেরেছি, বুঝতে পেরেছি---আমাদের হর্তাকর্তাদের সেইটে বুঝতে কেন এত বেগ পেতে হয়?
আমি এই জিনিসটাই শুধু বুঝতে পারি না।
খাইছে। এর পর কি হলো। এখন দ্রুত লিখে ফেলেন।
মন্তব্য করুন