আমার পথে তোমার ঝিকিমিকি
বাংলাদেশ ক্রিকেট টীমকে নিয়ে একটু টেনশনে আছি। আজ-কাল জিতলেও মানুষ সমালোচনা করতে ছাড়ছে না। ওরাও তো সবাই রক্তে-মাংসে গড়া, ভুল অভ্যাসে ভরা মানুষ। টাকা যাই কামাই করুক, তা দিয়েই সব বিচার করে ফেলা বোধহয় একশ' ভাগ ঠিক হবে না। আমাদের কষ্টার্জিত ট্যাক্সের টাকা দিয়ে দেশে খালি ওরা একাই লালিত-পালিত হচ্ছে না। আরো অনেকে হচ্ছে। এমন অনেক গোষ্ঠীকে আমাদের টাকা দিয়ে পালা হচ্ছে, যাদেরকে হয়তো আমাদের দরকারই নেই। যেমন, র্যাব (rab)।
জাপানকে নিয়ে আরো বেশি টেনশনে আছি। প্রিয় একজন ব্লগার শাপলা আপু জাপানে থাকেন বলে জানি। তার ব্যপারে ওয়াকিবহাল যে কেউ তথ্য পাচারের উপকারটুকু করলে কৃতজ্ঞ থাকবো। ভূমিকম্পের প্রবল ধাক্কায় একটা দেশ নিজ ভূখন্ড থেকে আট ফুট সরে গেছে। কি মারাত্মক কথা! আর তার পরপরই ভয়াল সুনামি'র তোড়ে গ্রাম ধরে ধরে মানুষ হারিয়ে গেছে। গাড়ি-বাস-এরোপ্লেন শোলার খেলনার মতো পানির তোড়ে ভেসে গেছে। ভয়ংকর হয়ে দেখা দিয়েছে তেজষ্ক্রীয় বিকিরণে আরো একবার পুরো জাতিটির ঝলসে যাওয়ার; ঝলসে অন্তত ৫০ বছর পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। পশ্চিমা ধনী দেশগুলোর জন্য নিঃসন্দেহে সুসংবাদ। ওস্তাদ জাপানীদেরকে শোক সহ্য করার শক্তি দিন।
আজ ক'দিন হলো গ্রামের মেঠোপথের ধারে অপেক্ষমান আমার দুঃখী স্বদেশমাতৃকার জন্য একটা নিবিড় টান অনুভব করছি। আমি এ মাটির সন্তান। কথাটা মনে পড়লে প্রথমে চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত। মাঝে মাঝে বিশালাকায় অন্ধকার জমিয়ে রাখা ঝাকালো গাছ, পল্লীবিদ্যূতের টাওয়ার, ছবির মতো গ্রাম দিয়ে আঁকা তেপান্তর। সেই তেপান্তরের মাঠে যতদূর চোখ যায় একইরকম সবুজ ফসলী গাছ। তার মাঝ দিয়ে চলে গেছে পীচটানা রাস্তা। রাস্তার দু'ধারের উঁচু গাছগুলো উপরের নীল আকাশটার একদম মাথার চাঁদিতে উঠে আসা ঠেকিয়ে রাখে। বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দূরে ধানক্ষেতের ওপর সেটাকে ভেসে থাকতে দেখি। আমি শহর আর গ্রামের মধ্যে একটা পার্থক্য খুঁজে পাই। শহরে একটা ডিম লাইটের আলো সারাক্ষণ চোখের সামনে ঝুলতে থাকে। আর গ্রামের সবুজ ধানের পাতার ওপর মাঝদুপুরে চলে রোদের ঝিকিমিকি।
এরপর চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা তালপুকুর, একটা বাঁশঝাড়, আর সেই বাঁশঝাড়ে বাস করা অসংখ্য অশরীরি। গ্রামগুলোকে আমার প্রায়ই সপ্তাশ্চর্য বলে ভুল হয়। কোনো আর্কিটেক্ট ওগুলোকে সাজিয়ে দেয় নি। তাও দেশের প্রত্যেকটা গ্রাম, প্রত্যেকটা গোয়াল ঘর, খচমচে খড়ের গাদা, উঠোন- পৃথিবীর বড় বড় ব্লু-বুকে কম্বিনেশনের উদাহরণ হয়ে আছে। কম্বিনেশন অভ লাইফ।
আমি একটা মেঠোপথ, বেশ কয়েকটা আইল, আর গোটা চারেক সরিষা-মরিচ-বেগুনের ক্ষেত; পেরিয়ে যাই। পাএর তলায় ঝুরঝুরে এঁটেল কিংবা দো-আঁশ মাটির চাঙড় পড়ে গুঁড়ো হয়ে যায়। সেগুলো আমার পা বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। চামড়ায় মিশে যায়। প্রিয় মাটির সংস্পর্শে আসতে পেরে পুলকিত হই।
ঝিঁঝিঁ পোকার জোরালো ডাকমুখর রাতগুলো কাটে অবিস্মরণীয় বিস্ময়ে। সৈয়দ সাহেবের সঙ্গে খাইবার পাস্এর গিরিপথ আর ইরান-তুরান-আফগান ঘুরে ঘুরে। সমুদ্রের থৈ থৈ স্রোতে ভেসে যাওয়ার মতো নিয়ত নিজেকে হারাই, নিয়ত খুঁজে পাই। স্রোতের তালে সামনে আগাই।
নিজেকে আরো খুঁড়ে যাওয়ার পক্ষপাতী আমি। ষটচক্রের কয়টি ধাপ পার হতে পেরেছি আজ পর্যন্ত? একজন দর্শক তো নীলকণ্ঠ ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সেই দেখার মানুষটি ঘুমিয়ে আছে কোন্ হিমালয়ের হারানো গুহায়? হারানো গুহাগুলো কোথায় জানি, কিন্তু হিমালয়টা কোথায়- কেন চোখে পড়ে না?
শাদা বরফের চাঁইগুলো এত ধারালো যে, অনেক সাবধান না হলে যেকোন সময় ঘটে যেতে পারে বিপত্তি। তাও সে দেবী উচ্চ ও গহীনতম এ পর্বতমালার কোথায় চুপটি করে লুকিয়ে আছে, খুঁজে বের করতেই হবে। তার একটু হাতের ছোঁয়ায় মিটে যায় সব ক্লান্তি। সামনে বসে একবার চোখে চোখ রাখলে দূর হয়ে যায় সব শীতলতা। তারপর আমি টুপ-টাপ ঝরে পড়ি, মাটিতে পড়ার আগেই হাওয়ায় মিলিয়ে যাই। কোথায়, আমি কোথায় তাকে পাই?
---
শাপলা ভালো আছে মীর মানে সুস্থ আছে। ফেসবুকে কথা হয়েছে
ফেসবুকে দেখেছি *******
আপনার পোস্টের পরই শাপলা আপুর পোস্ট
কয়েকদিন আগেই স্যার ক্লাসে জাপানীদের উত্থানের কাহিনি শোনাচ্ছিলেন, বলছিলেন, আমেরিকা জাপানকে রোজ দু'বেলা করে স্যালুট করবে সেই দিন খুব নিকটে। সেই জাপানের উপর প্রকৃতির এমন মর্মান্তিক আর নিষ্ঠুর আচরণ! সমবেদনা জাপানের জন্য। গভীর সমবেদনা......
গ্রাম নিয়ে একটা পুরো লেখা পড়তে অন্যরকম লাগে। লেখা পড়েই গ্রামে ঘুরে আসা যায়। আর এমন বর্ণনা তো এই এক্ষুণি গ্রামে যাবার ইচ্ছেকে কয়েক ডিগ্রি বাড়িয়ে দেয়....
কি সুন্দর করে গ্রামের ছবিটা আকঁলেন, পড়েই মনে হয় ছুটে যাই।
মীরের লেখার একটা বড় গুণ হচ্ছে কোনোকিছুই অবাস্তব মনে হয় না। মনে হয় যাই কাজটি এখনই করি, কথাগুলো এখনই বলে ফেলি।
আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে মীরের লেখার শিরোনাম। এত সুন্দর শিরোনাম সে পায় কোথায়। আমিতো লিখতে গেলে ২৫ টা চুল ছিড়াও শিরোনাম খুঁইজা পাই না।
আমিও
তাইতো কই, আপনার চুল কমতাছে কেন? মাথার চুল শেষ হইয়া গেলে কী করবেন? মানে কী ছিড়বেন আর কী
খাইছে, কমেন্ট দেখি নীচে নাইমা গেছে। রায়হান ভাইরে কইছি, লিজা আবার জবাব দিতে চেষ্টা কইরেন না
কী বলাইতে চাইতেছেন বুঝতে পারছি।
মাসুম কুল ভাই রক্স
CNN এ সুনামীর ভিডিও প্রথম দেখেই আমার "২০১২" ছবির কথা মনে পড়ছে । সবকিছু ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল আমার । আমি মনে করছিলাম, পুরা জাপানই মনে হয় শেষ । আমাদের ভাগ্যে এর থেকেও বেশী ভয়ানক কিছু অপেক্ষা করতেছে । এই চিন্তা আরো দুর্বল করে দেয় ।
গ্রামের কথা আর কি বলব । আপনার লেখা পড়ে একবার ঘুরেও আসলাম আমার নানুবাড়ি দাদুবাড়ি ( মনে মনে ) । আমার সবথেকে প্রিয় গ্রাম আম্মুর নানুবাড়ি পিরোজপুর । অসাধারণ !!

আরেরররররর, লিজা দেখি মোগো দেশি
ও আল্লাহ !! আমনেও পিরোজপুরের লোক ?

যদিও পিরোজপুর হল আমার নানির গ্রাম, মানে আম্মুর নানাবাড়ি । এইখানেই বেশী যাওয়া হইছে জীবনে, নিজের নানা দাদার বাড়ির থেকেও ।
যখনই ভাবি, একটু নেট-এ বসি, অম্নি কারেন্ট বাবাজি বেড়াতে চলে যায়। এই পোষ্ট পড়ছিলাম, তখনি উনি আবার বেড়াতে গেলেন। তাই, পড়ার নেশা কাটাতে মোবাইলে-ই পড়া শেষ করলাম।
এমনি মন চাচ্ছিলো একটু নিজের মত করে ঘুরতে, এর মাঝে আপনার এই লেখা পড়ে তো..... ধুর!
সত্যি।

অনেকদিন থেকেই ভাবছি গ্রামে গিয়ে কিছুদিন থাকি। কিন্তু হয় না।
কাল বোনকে বললাম, আমার মন অস্থির বাড়ি গিয়ে কিছুদিন থাকার জন্য। আর আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেথি এই পোষ্টটা ।
আহা কি শীতল, স্নিগ্ধ আমার গ্রাম, আমার স্বর্গ। আবার জন্মালে এই গ্রামেই যেনো আমার বাড়ি হয়।
গ্রাম নিয়া আমার তেমন আহা উহু অনুভূতি নাই...তবে মাঝে মাঝে বেড়াইতে ভালোই লাগে। কয়দিন থাকনের পর মনে হয় আমার পরিচিত শহরটারে মিস করতেছি...
ধুর!!!!
এমনিতেই কাল থেকে মন উদাস।তারপরে আবার খুচায়েঁ ঘা করে রক্ত বের করে দিলো।

মীর লেখা খুব ভাল লাগলো। আমি নিয়মিত ব্লগে আসতে পারি না তবে এলে আপনার লেখা পড়া হয়। এত টেনশনের মাঝে য়াপনার লেখা পড়ে একটু অন্য ভাবে সময় কাটানো । ভাল লাগলো।
ব্যাপক !
মন্তব্য করুন