ইউজার লগইন

মিষ্টি উপাখ্যান

মিষ্টি খেতে বা উপহার হিসেবে পেতে কার না ভাল লাগে। মিষ্টির দোকানের সামনে দাড়ালে এত বাহারি রকমের মিষ্টি দেখা যায় যে দেখতে দেখতেই দিন পার করে দেয়া যায়। মিষ্টির উৎপত্তি কোথায় বা কারা এ সম্পর্কে আমার কোন আইডিয়াই নাই তবে মোঘলদের আমলে যে এর বৈচিত্রের উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে তা ইতিহাসেই পাওয়া যায়। মিষ্টি খেতে চাইলে কেউ খাওয়াবেন না বা সামনে এনে দিলে কেঊ খাবেন না এরকম মানুষ পাওয়াও বেশ দুস্কর। তবে এই মিষ্টি সাধের মিষ্টি আজকের আলোচ্য বিষয় নয়। ঠিকই ধরেছেন। সেইরকম মিষ্টি আদান-প্রদানের কিছু কাহিনী বলি যার অবস্থান সাধারনত টেবিলের তলায়, খামের ভিতরে কিংবা মুঠো থেকে মুঠোতে। নিতান্ত ফান করার জন্য নয়। কর্মক্ষেত্রে এ রকম মিষ্টির আবদার হয়তো অনেকেই পেয়েছেন কিংবা দিয়েছেনও।

এডমিনিষ্ট্রেটিভ জব করার সুবাদে একবার অফিসের টেলিফোন বিল সংক্রান্ত একটা ঝামেলা নিয়ে গেলাম পল্টন টিএন্ডটি অফিসে। আমাকে যে টেবিলটি দেখানো হলো সেখানে বসা ছিল এক বয়ষ্ক ভদ্রলোক। উচা-লম্বা গড়ন, কাঁচা-পাঁকা দাড়ি বুকের নিচ পর্যন্ত লম্বা। কপালে রেগুলার নামাজ পড়লে যে কালচে দাগ হয় সে চিহ্নটিও আছে। এরাবিয়ান জোব্বা পড়িয়ে দিলে যে কেউ তাকে পীরবাবা বলে ভুল করতে পারেন। তো যাই হোক ঝামেলা শেষ করে যখন সংশোধীত বিল নিয়ে উঠতে যাব, পীরবাবা কদমবুসির উছিলায় হাত বাড়িয়ে দিলেন। হাত ধরতেই তার পান খাওয়া মুখের হাসি ছড়িয়ে বললেন “বাবা মিষ্টি খাওয়ার জন্য কিছু ... হে হে সবার কাছে তো আর বলা যায় না, বলিও না ”। এইবার বোঝেন আমার অবস্থা। পুরাই বোকা আর হতভম্ব। মুখ দিয়ে কথা বের হতে চাইছিল না। তার মিষ্টি খাওয়ার সাধ অবশ্য অপুর্ন রাখিনি।

আরেকবার অফিসের এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট লাইসেন্স নবায়নের জন্য গেলাম এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যূরোতে। ভদ্রলোকের নাম ছিল মনে পড়ে মুলকুছ মিয়া। তো মুলকুছ মিয়ার আবদার পাঁচ হাজার। খেয়াল করছিলাম টাকার অংকটা বলার সময় তার চোখ ঘুরছে আশে পাশের টেবিলে। পাছে টাকার অংকটা অন্য কেউ শুনে ফেলে। একটু ক্ষেপেই গিয়েছিলাম। লাইসেন্স নবায়নের জন্য পাঁচ হাজার। ভদ্রলোক একটু চুপসে গেলেন। পরে জেনেছিলাম এটাই নাকি রেট। ভদ্রলোক আমাকে স্বাভাবিক করার জন্য আমার দিকে একটু ঝুঁকে এসে আস্তে আস্তে বললেন “আরে ভাই আমাদের কষ্টটা তো আপনারা বুঝবেন না। এই যে আমার চারপাশে দেখতেছেন (তার কলিগদের উদ্দেশ্যে) সবাই হাঁ করে আছে বোয়াল মাছের মত (হাত দিয়ে হাঁ এর পরিমানও দেখালেন)। সবার মুখেই একটু আধটু দিতে হয়”। ভাবলাম একে তো বোঁয়াল মাছের হাঁ তার উপর পরিবারে খাওয়ার উপযোগী সদস্য সংখ্যাও কম না। পাঁচ হাজার তো লাগবেই।

আমার বড় বোন হ্যান্ডক্রাফটস এর উপর একটা কোর্স করেছিল বিসিক এ। শেখায় খারাপ না। আপা দেশে থাকতে তার অনেক কিছুই শেয়ার করতো আমার সাথে। এখন আর কিছুই হয় না। মিস্‌ করি সেইসব কথোপকথন। যা বলছিলাম, বেশ কয়েক মাসের কোর্স শেষ করে এবার আপার সার্টিফিকেট নেয়ার পালা। সেদিন আপা দেখলাম সকাল সকালই বের হয়ে গেল। সার্টিফিকেট বিলি করার দ্বায়ীত্ব ছিল নাকি এক মধ্যবয়স্ক মহিলার হাতে। ভদ্রমহিলা আপার হাতে সার্টিফিকেট দিয়ে একপাশ ধরে আছেন। এরপর তার সলজ্জ বিগলিত হাসি ছড়িয়ে বললেন “আপা চইলা তো যাইবেন। কিছু খাওয়াইবেন না। আমি তো মিষ্টি খাই না। একটু ঝাল-টাল ......”। জানা গেল তাকে পঞ্চাশ টাকা দিতে হবে ঝাল-টাল খাওয়ার জন্য। তা না হলে সার্টিফিকেট তো হালাল হবে না। মিষ্টির উপনাম যে ঝাল ও হতে পারে এই প্রথম শেখা। সন্ধ্যায় দুই ভাই-বোন মিলে হেসেছিলাম অনেকক্ষন। আর আপা যেভাবে মহিলার অঙ্গ-ভঙ্গী করে দেখাচ্ছিল সে মনে হয় না ভুলতে পারব কোনদিন।

এ রকম মিষ্টি খাওয়ানোর কাহিনী আমার জীবনে অসংখ্য। হয়তো অনেকের জীবনেও তাই। তা না হলে কি আর দুর্নীতিতে আমাদের অবস্থান এত উন্নত হয়। রিসেন্ট শুনলাম এই অবস্থান নাকি তের হয়েছে। এটা আমি তো কখনও মানবই না আমার ভবিষ্যত প্রজন্মকেও বলে যাব না মানতে। মাঝে মধ্যে খুব কষ্ট পাই আর ভাবি, এ রকম একটা জাতির অংশ হলাম কেন। যে জাতির ইতিহাস এত গৌরবের সে আজ কোথায় নেমে এসেছে। কোথায় তার আত্মা, কোথায় তার বিবেক, কোথায় তার গড়বার স্বপ্ন। এর থেকে উত্‌রানোর রাস্তা হয়তো আছে তবে সে আমাদের প্রজন্মের আর দেখে যাওয়ার সৌভাগ্য হবে বলে মনে হয় না। জয়তু মিষ্টির, জয়তু মিষ্টি খানেওয়ালাদের।

পোস্টটি ১১ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

ফিরোজ কবীর's picture


কোক আমার মিষ্টি তেমন রুচি নাই।
ভাল লাগছে। এইটা বেশি ( মাঝে মধ্যে খুব কষ্ট পাই আর ভাবি, এ রকম একটা জাতির অংশ হলাম কেন। )

নাহীদ Hossain's picture


কোন মিষ্টিতে রুচি নাই। টেবিলের উপরের টা না নিচের টা Tongue

রায়েহাত শুভ's picture


ধুরু, আমি আরো ভাবলাম সত্যিকারের মিস্টি নিয়া বলবেন...

নাহীদ Hossain's picture


মিথ্যা মিত্থি তো বলি নাই Wink

সাঈদ's picture


এই জন্যই তো তাগো সবার ডায়াবেটিস ।

নাহীদ Hossain's picture


হইলে কি হইবো Sad মিষ্টি খাওয়া তো কমে না At Wits End

লিজা's picture


আমাদের কলেজের কেরানী থেকে শুরু করে ম্যাডামরা পর্যন্ত ব্যাপক মিষ্টিখোর ।

জয়তু মিষ্টির, জয়তু মিষ্টি খানেওয়ালাদের।

কোক

নাহীদ Hossain's picture


উনারা মোঘল বংশের লোকজন মনে হয় Wink Big smile

জেবীন's picture


ভাবলাম, মন ভালো করা, মুখরোচক মিষ্টির কথা হচ্ছে এইখানে, কিন্তু এইটাতো মেজাজখারাপ করা বাশঁখাওয়া মিষ্টি! Stare
সবখানেই এই মিষ্টি কমবেশি চলে, খালি জাতি হিসেবে আমাদেরই দোষ আসছে কেন এখানে?

১০

নাহীদ Hossain's picture


স্বাধ মিষ্টি হউক বা তিতা, মিষ্টি তো খাওয়া হইলো Wink
দোষ খালি আমাদের হবে কেন। যারা করবে সবারই দোষ। আমাদের গৌরবের জায়গা এখনও আছে। কিন্তু দুর্নীতিতে তো আমরা স্ট্যান্ড করা। এই জন্য আক্ষেপ আর কি ......

১১

উচ্ছল's picture


ভাইরে মিিষ্ট ছাড়া এখন তো কোন জায়গায়(অফিস-আদালত), কোন কাজ করাই কঠিন হয়ে েগছে।

১২

নাহীদ Hossain's picture


ঠিকই বলছেন। আসলে সরকারী অফিস-আদালতে ডিল না করলে এই সমস্যার গভীরতা বোঝা খুব কঠিন Smile

১৩

আনন্দবাবু's picture


তোমারে টিপ সই

আর জায়গামতন (মিষটি খানেওয়ালা) মাইর

১৪

নাহীদ Hossain's picture


তোরে ধইন্যা পাতা
মিষটি খানেওয়ালাদের গুল্লি

১৫

তানবীরা's picture


আমার আব্বু খুব ভালো বলেন, কয় কাপ চা খাবেন কিংবা কয় কেজি মিষ্টি Big smile

১৬

নাহীদ Hossain's picture


আপনার আব্বু অবশ্যই সমঝদার চোখ টিপি

১৭

লীনা দিলরুবা's picture


নিজে মিষ্টি খায়েন না Steve

১৮

নাহীদ Hossain's picture


টেস্টও করুম না টিসু

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

নাহীদ Hossain's picture

নিজের সম্পর্কে

এখনো তৈরী করতে পারি নাই।