ছায়াবাজির পুতুল (৩)
১.
‘বাম চোখ লাফালে খারাপ খবর পাওয়া যায়। ডান চোখ লাফানো ভালো’। ছোটবেলা থেকে অনেক শুনসি এই কথাটা। এই কথার ভিত্তি কতটুকু আর যুক্তি কি জানি না। কিন্তু গত প্রায় এক মাসেরও বেশি হবে আমার বাম চোখ অনবরত লাফায়। সারাদিনে এক মূহুর্তের জন্যও যেন থামে না। ঈদের আগে ভাইয়া একটা বড় দূর্ঘটনা থেকে ফিরে আসছে। আল্লাহই জানেন আর কি অপেক্ষা করতিসে। মাঝে মাঝে অবশ্য ডান চোখও লাফায়। এই লাফালাফির কারণে কেমন কোরবানির গরুর মতো একটা ফিলিংস হচ্ছে। কোরবানির পর মাংস পিস করে বাসায় আনার পরও পিস গুলা যেমন কাঁপতে থাকে তেমন লাগতিসে।
২.
আমি তখন অনেক ছোট। সিসিমপুরের সমানই হবো। জন্মের পর থেকে ঘর ভরা মানুষ, বড় ভাই বোন দেখে বড় হচ্ছিলাম। হঠাৎ আব্বু-আম্মুর কি জানি কি হলো। একেক জনকে একেক দিকে পাঠায়া দিলো। কারো বিয়ে দিলো, কাউকে দেশের বাইরে পড়ালেখার জন্য পাঠায়া দিল। হুট করে বাসা খালি। ভাইবোনরা চিঠি বা ফোনে শুধু একই কথা বলে যেত, ঠিক মতো পড়াশুনা করতে আর আব্বু আম্মুর যত্ন নিতে। ‘আমরা কাছে নাই, তোমরা আব্বু-আম্মুর যত্ন না নিলে কে নিবে? তোমরা নিজেদের খেয়াল না রাখলে কে রাখবে’ কম বেশি এই ছিল কথা। এই কথা শুনতে শুনতে মনে হয় ব্রেইন ওয়াশ হয়ে গেসে।
৩.
বছর খানেক আগের কথা। অনেক অসুস্থ ছিলাম আমি। প্রায় পনেরদিনের মত বিছানায়। লাফালাফি করতে পারতিসি না, হৈ চৈ ছাড়া আমি - তাই স্বাভাবিক ভাবেই মন খুব খারাপ। একদিন ভাইয়া অফিস থেকে এসে পাশে বসল। মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞাসা করল, শরীরটা কেমন লাগে? মন খারাপ? আর তো আমি ভ্যাএএএএএ। ভাইয়া তাড়াতাড়ি শুধু বলল, তুই কাদঁতিসিস দেখলে আব্বা-আম্মার মন খারাপ হবে না!!! বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আর আমার তো ব্রেইন ওয়াশড। যাই হোক, আব্বু-আম্মু অবশ্য কিছু দেখে নাই। কিন্তু ঘটনা যা হলো, ঐ দিন মনে হয় ভাইয়া ভয় পাইসিলো, না কি, এরপর আর এত আহ্লাদ দেখায়া জিজ্ঞেস করতে আসে নাই শরীর খারাপ না মন খারাপ।
৪.
এ বছর অনেক ঘুরাঘুরি হইসে। মে মাসে আম্মু-আব্বুর সাথে বান্দরবন গেলাম। বান্দরবন গিয়ে অসম্ভব মন খারাপ হইসিল একটা কারণে। সেটা হলো বাকি ভাইবোনদের অনেক মিস করসি। কিন্তু সেটা কাউকে বলা যায় নাই। কারণ আম্মু অনেক এনজয় করসে। আর আমি যদি বলি ওদের ছেড়ে গেসি বলে আমার মন খারাপ তাহলে আবার আম্মুর খারাপ লাগতে পারে যে তার সাথে ঘুরে আমি মজা পাইম না। তো যে কারণে সবাইকে মিস করসি সেটা হলো একসাথে সবাই গেলে গান-বাজনা করে অনেক মজা করা যেত।
ভাগ্য ভালো তাই বান্দরবন থেকে ফিরে আসার পরই ঠিক হলো বাজি আসলে সবাই একসাথে নীলগিরি যাবো। ভাইয়া ব্যবস্থা করে ফেললো সব। আর কিভাবে কিভাবে যেন সিলেট যাওয়ারও একটা প্রোগ্রাম হয়ে গেল।
বাজি আসার পর বান্দরবন আবার গিয়ে মন তো ভালো হলোই। সবাই একসাথে খোকন ভাইয়ের সেই বারান্দায় বসে গান গাওয়া, চান্দের গাড়িতে ঘুরাঘুরি, নীলগিরিতে কাটানো রাত। স্বপ্নের মতো, অদ্ভুত, ধোঁয়া ধোঁয়া, কুয়াশা ভেজা।
সিলেটের ট্যুর নিয়ে শুধু বলতে পারি, মনের সাধ মিটায়া সবাই গলা ফাটায়া গান গাইসি। হাওরের মাঝে লঞ্চে ঘুরাঘুরি আর আমাদের গান। এরকম ট্যুরে আর যাওয়া হবে কিনা জানি না। না হলেও আফসোস থাকবে না। অসাধারণ ছিল সব কিছু।
মিজান ভাই-জুঁই আপুদের সাথেই প্রায় পুরাটা সময় গান করা হইসে। বিদায় নেয়ার সময় জুঁই আপুর ফোন নম্বরও নিয়ে আসছিলাম। জুঁই আপুদের আবৃত্তি একাডেমীর ক্লাস থাকে টিএসসিতে প্রতি শুক্রবার। তখন মনে হচ্ছিল আমার ঢাকায় আসতে দেরী, প্রতি শুক্রবার সকাল হওয়ার আগে আমি টিএসসি গিয়ে বসে থাকবো। কিসের কি! সিলেট ঘুরে আসলাম মাস পার হয়ে গেলো এখন পর্যন্ত একদিনও যাওয়া হয় নাই। এই কারণে আমাকে কষায়া একটা চড় মারা যাইতেই পারে। কি যে করি! আসলেই কি করি আমি!!
আহ, দুই তিন হাজার বছর পর মায়াবতীর নতুন লেখা!
তুমি বেশী বেশী লিখো আমার লেখা তো এলোমেলো। প্রথম পাতায় দেয়ার যোগ্য না। প্রাইভেট করে দিলে ভালো হইত
ব্যাপার না!
হাবিজাবি বা এলোমেলো লিখ্যা দিবা ব্র্যাকেটের ভিতরে, তাইলেই হপে!
দেখছো এলোমেলো লিখি বইলা এবি আমারে বার বার অটো লগ আউট করে দেয়।
একসাথে তিনজন মায়াবতী অনলাইন
আররে না!
তোমারে দেইখা খুশিতে পাগল হৈয়া গেছে মে বি!
তুমি লগ আউট হৈলেও যেন পুরাপুরি উধাও না হৈতে পার, তাই চালাকি করে এই সিস্টেম করছে!
সামনে মনে হয় বড় ধরনের দুঃসংবাদ আছে! বিবাহ টাইপ!
নীলগিরি ঘুরে আসায় আপনেদের এক বস্তা হিংসা!
পিচ্চি তোর মাথা।
হিংসা করা ভালো না।
ইইহ, কইছে তোমারে!
হিংসা একটি স্বাভাবিক সাস্হসম্মত আই এস ও ২০১২ অনুমোদিত মানসিক প্রক্রিয়া!
মজাদার লেখা! চোখ লাফানোর উদাহরণ তা ব্যাপক হইসে
এটা মনে হয় আমার লেখায় আপনার প্রথম মন্তব্য
আসছেন যখন একটা খান
চোখ লাফানোর ব্যপার টা শুনে একটা কথা মনে পড়লো। আমার নিজের সাথে এমন হইতে দেখছি। ডান হাত চুলকালে কোন টাকা পয়সা আসে না তবে বাম হাত চুলকালে ভালো খরচ হয় (
কি করি চোখ নিয়া!! ঘুষি মারতে ইচ্ছা করে.....
আনন্দেই কাটুক সারাটাজীবন।
চোখ লাফানোর কুসংস্কার কেন জানি আমার মনেও ভয় ধরিয়ে দেয়।
কুসংস্কার নিয়ে ব্লগে একটা সিরিজ পড়েছিলাম মনে হয়। সেইটা কই
আমার ডান হাত চুল্কাইলে শিওর টাকা পয়সা আসে
আপনে তাহলে ভাইগ্যবান
হাত চুল্কাইলে টাকা আসে না কিন্তুক চোখ লাফাইলে ঠিকই একটা অকান্ড ঘটে যায়! কে জানে, অইটাই বেশি করে মাথায় ঢুকে গেছে বলেই হয় এমনি!!
ব্রেইন ওয়াশের কথাটা মর্মে মর্মে বুঝি আমি!!
নীল্গিরি যাবার ব্যাপক শখ আছে! টাঙ্গুয়া যাবার জন্যেই কি তাড়াহুড়া করে টিকিট কাটলাম! কিন্তু দেখো কপালে হইলো কই!! অসুস্থ হবার আর টাইম পাইলাম না আমি!! (
আমার হাল! - কেউ চায়, কেউ পায়, কেউ বারবার হেরে যায়!
আবার যাচ্ছে তো অনেকেই ব্লু মুন দেখতে। এবার ট্রাই করে দেখতেন? অবশ্য আমরা ব্যাপক মজা করসি। এইবার আর এত মজা হবে না। কারণ আমরা যাচ্ছি না
নীলগিরি গেলে রাতে থাকার ট্রাই কইরেন। অদ্ভুত..........................
চোখ লাফানোর ব্যপারটা বুঝাইতে খুব যুৎসই একটা মেটাফর য়ু'জ করছেন। পইড়া বিয়াপুক মজা পাইসি।
আমারো চোখ লাফায় মাঝে মাঝে এবং বিষয়টা আসলেই ওইরকম।
আমি অতি কষ্ট থেকে একটা জিনিস লিখলাম আর আপ্নে মজা পাইলেন!!
বিষয়টা তো ঐরকম কিন্তু কেন ঐরকম
হ
ভালো কথা, ওইদিন মাই নেম ইজ খান দেখতে গিয়া আপনের কথা মনে পড়লো। শাহরুখ তার ছোটভাইকে রাজাবেটা বলে ডাকে।
আপনার মনে আছে রাজাবেটার কথা!! এইটা একটা জান হইসে। দেখি পরের সিসিমপুর খুব তাড়াতাড়ি দিতে চেষ্টা করবো।
বরাবরের মতোই ভালো লেখা। ঈদ ক্যামন কাটলো?
থ্যাঙ্কু আপু ঈদ ভালো কাটসে। আপনার কেমন কাটলো??
আমার এবারের ঈদ ভালো কাটসে।
লেখা ভালো হইছে.....
আপা চোখ লাফানোর আরেকদিক হইলো আপনে লেখা দিসেন । সিসিমপুর লেখেন, মেঘ এসে ঘুরে গেল আর আপনি এখনও সিসিমপুর দিলেন না !
আপনার তো আমার চেয়ে ও খারাপ অবস্থা দেখা যায় আফা!!! আমার চোখ লাফায় আপনার চোখ তো টিপি মারে
যাক সামনে আরো শুক্রবার আছে। চড় খেয়েও যদি আপনার শিক্ষা হয়তো অন্য শুক্রবারগুলো কাজে লাগবে
আসেন আপা চড় দিয়া যান
খুব সুন্দর গান ছিলো
আপনি গান শুনলেন কখন? আপনি তো পুরা সময় নিচেই কাটাইলেন
মায়াবতির লেখা মায়াবতি হইছে।
সুন্দর লেখা।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ
এগজ্যাম শেষ হয়নাই এখনও? নতুন লেখা কই??
মন্তব্য করুন