নিয়োনেট'এর ব্লগ
১
ওয়েদার
আবহাওয়া বড় সমস্যা নয়, সমস্যা হলো এইভাবে বেঁচে থাকায় অভ্যস্ত হওয়া। বাইরে বাতাসে বসে আড্ডা মারার কোনো সুযোগ নেই। সবাই ঘরের ভেতরে।ফলে যার কোনো বন্ধু নেই তার শীতের রাস্তা বা নিজের ঘরে একা একা বসে থাকা ছাড়া তেমন কিছু করার নেই। অক্টোবর শেষ প্রায়। রুমের জানালাটাও খোলা রাখার উপায় নাই। আমি আসলে একটা ছোট শহরে থাকি। জাঁকজমক বা নাইট লাইফ বলতে তেমন কিছুই নেই। দিনের বেলায় সিটি সেন্টারের দিকে গেলে কিছু মানুষ দ্যাখা যায়। কেউ বাজার ঘাট করে, কেউ ফুটপাতে সাজিয়ে রাখা জামা কাপড় দ্যাখে। রোদ্দুর থাকলে ফুটপাতে পাতানো চেয়ার টেবিলে বসে বীয়ার বা কফি খায় কেউ কেউ। সন্ধ্যা বা রাতের বেলা বাইরে আমি যত জনকে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকতে দেখেছি, তারা নিশ্চয়ই বাস বা বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছিলো।
বুয়াসাবা
সূর্য নিভে যাবার আগের পৃথিবীতে দারুণ অসহায় আমি
একদিন তো সব খেলা থেমে যাবে। সূর্য আর কিরণ দেবে না অকাতরে। সূর্য নিভে গেলে পৃথিবী তার সমস্ত জ্ঞানভাণ্ডার, সমস্ত নাটক সিনেমা গান গল্প কবিতা সুর আর রাগ নিয়ে কোথায় যাবে সেইদিন?
অথবা তার আগেই যদি নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণে ছাই হয়ে যাই আমরা সবাই?
অত দূর না ভাবলেও হয়ত এটুকু জানা যায় যে আমাদের এই জীবন আর ফিরে আসবে না মরণের ওপারে। জীবন কতো সীমিত সময় নিয়ে এসেছে আমাদের কাছে, আমি ভাবতে পারি না কিছু, আমার খুব অসহায় লাগে সবকিছু ছেড়ে চলে যাব ভাবলে। এইটুকুন জীবন কতোটা অবহেলা করেছি তা ভেবে শুধু খারাপই লাগে।
সার্টিফিকেট ছাড়া
আমি আমার কিছুই খুঁজে পাই না আজকাল। আমি জানি না আমি ডিপ্রেশনে ভুগছি কি না। ভুগে থাকলেও ডাক্তার দ্যাখাতে ইচ্ছে করে না। নিজেই ভালো থাকতে চাই কোনো একটা উপায় বের করে নিয়ে। থেরাপি বা মেডিকেশন ভাল্লাগে না।
কিন্তু কোনো কিছু তো করা দরকার ভালো থাকতে হলে। আমি শুধু খাচ্ছি আর ঘুমাচ্ছি। মাঝে মাঝে মুভি দেখতেছি। সাইকেল চালাতেও ভালো লাগে। আর কোনো কাজে যেতে ইচ্ছে করে না।
লিখতে বসছিলাম এইম ইন লাইফ। কিন্তু সূচনাটা ভালো হয় নাই। আর কথা না বাড়ায়ে আসল পয়েন্টে যাই।
এইম ইন লাইফ রচনা আমি কোনো দিন পড়ছিলাম কিনা বা কোনো পরীক্ষায় লিখছিলাম কি না মনে নাই। অনেক কিছুই মনে নাই। মনে আছে আমি ছোট থাকতে ভাবতাম জাহাজের নাবিক হবো। বন্দরে বন্দরে নেমে পান করবো, ভোগ করবো নারী। কিন্তু সেটা থাকলো না।
মৌনতার কাছাকাছি
বেশী কথা কইবার ক্রান্তিকাল বিদায় হয়েছে নিঃশ্বব্দে এখন
মৌনতার কাছ থেকে চেয়ে নেবার আছে যা কিছু পাওয়া হয় নাই
পাওয়া যায় নাই বেশী বেশী কথা কয়ে এ আমলের দিনমজুর আমি
তাই আর অযথা কথার জালে জড়াতে চাই না কোথাও বরং
চুপচাপ হেটে পথ পেরিয়ে বিছানার কাছে চলে আসা প্রয়োজন দিনটা শেষ করে
ক্লান্তিহীন কথা বলার দিন এভাবেই ফুরিয়ে গেছে কোনো এক পড়ন্ত সূর্জের আলোয়
সুখ আসুক সুখের মতোন
সুখ আসুক সুখের মতোন
আমি খুঁজতে যেতে পারবো না
বহুদিন খুঁজে বেড়িয়ে পা দুটো ক্লান্ত হয়েছে যথেষ্ট আজ
আর তাই ঝুপঝুপে অন্ধকার রাতে কাদাজলে পা রাখতে পারবো না
টুপটাপ বৃষ্টি হতে থাকুক কিংবা মেঘ ডাকুক ঝড় উঠুক কিছুতেই আমি যাব না
সুখ খুঁজতে এই প্রকান্ড অলস দেহ নিয়ে তারচে জানালাটার বাইরে
নিথর দেবদারু গাছের দাঁড়িয়ে থাকা বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে আমার কাছে আজ আমিও
গাছটার মত দাঁড়িয়ে কিংবা অলস বিছানায় শুয়ে শুয়ে এভাবে অসুখের দিন পার করতে বেশ লাগার কথা
জাপানের জনজীবনের যত ঘটনা
সংস্কৃতি বা জনজীবনের কথা বলতে গেলে বলতে হয় মানুষ আসলে কী করে আনন্দ পায় বা সময় কাটাতে ভালোবাসে। যেকোনো সংস্কৃতির এই প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে গেলে টেলিভিশনের কথা প্রথমেই চলে আসে। জাপানীরাও সবার মতই টেলিভিশন, সংবাদমাধ্যম বা রেডিওর দ্বারা প্রভাবিত হয়। তবে টেলিভিশন দেখার ব্যাপারটাও বদলে গেছে- কেননা জাপানী গৃহবধূরা যেসব টেলিভিশন নাটক দেখে থাকেন তাতে সমাজে ঘটে যাওয়া নিকৃষ্ট বিষয়গুলোই প্রাধান্য পায়।
ম্যাগাজিনের কথায় আসলে সেসব ম্যাগাজিনের প্রসঙ্গই প্রধানত চলে আসে- যেসব কাগজ মানুষের মনে সুপ্ত থাকা বাসনা নিয়েই লেখে- কেননা জনমানুষ সাধারণ সংবাদপত্র পড়ে পড়ে একঘেয়ে হয়ে যায়। জাপানের কমিক্স ছেলে বুড়ো সবার অবসরের অনেকটা জায়গা জুড়েই রয়েছে এখনো।
নীল রক্ত
রুম
ব্যালকনিতে আমার গাছটার সাথে আরও বেশ কয়েকটা গাছ। একটা বাগান বিলাস, বাকিগুলোর নাম জানি না। নেশাখোর ছেলেটাকে হাউস টিউটর অন্য রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে। আহ কি আরাম লাগলো শুনে। নতুন ছেলেটাই এসব বলতে শুরু করল। একটু পর মেহেদিকে দেখা গেলো। ও মেডিক্যালে পড়ে। গদগদ হয়ে বলল- দোস্ত আমি তোর রুমে উঠেছি।
লিফট
হেমন্তের গল্প
চাঙ্খারপুলের ঐ বাড়িটিতে আমি আগে কোনোদিন যাইনি। ওইদিন আমাদের কোথা থেকে কি শুরু হয়েছিল জানি না। আমি, পদু, গনেশ, রাখাল, অমিতাভ, রঞ্জন, গৌতম মিলে কিছু একটা শুরু করেছিলাম। সেই কিছু একটার শুরু হয়েছিল গাঁজা খাওয়া থেকেই। এরপর চান্দা তুলে মাল খাইতে খাইতে আমরা আরও এক লেভেল উপরে ওঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে শুরু করলাম।
সেই অনুভবের বশবর্তী হয়ে দলেবলে পৌঁছে গেলাম চাঙ্খারপুলের ঐ বাড়িটিতে। তিনতলা। একটা অপ্রশস্ত করিডোর চলে গেছে ফ্ল্যাটের দরজা থেকে পেছনের দিকের ওয়াশ রুম পর্যন্ত। এটি একটি নটিপাড়া। ম্যানেজারটি দেখতে ঠিক নটিপাড়ার ম্যানেজারদের মতো নয়। আমাদের জেনারেশনের ছেলেদের মতো মুখে দাড়ি। বেশ ভদ্র গোছের মনে হল। আমরা বললাম- আমাদের কাছে কাউকে পাঠিয়ে দিতে।
শেষ থেকেই শুরু
শেষ থেকেই শুরু করতে হবে। দিন শেষে প্রথম কাজ হচ্ছে দ্রুত বিছানায় যাওয়া। একজন সুস্থ মানুষের ছয় ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। সেই হিসেবে ঘুমাতে যেতে হবে যাতে ঘুম আসার আগের অস্থিরতা পাশ কাটিয়ে ছয় ঘণ্টা ঘুম হয় এবং সূর্যোদয়ের দেড় ঘণ্টা আগে ঘুম ভাঙ্গে। পৃথিবীর প্রকৃতি, আবহাওয়া ও পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এটাই একটি সুস্থ, কর্মময় এবং আনন্দময় জীবনের সঠিক স্লিপিং সাইকেল।
সিগারেট খাওয়া এবং না খাওয়া
পুরনো আলাপ। নিচে নেমে ভাত খেয়ে একটি বেনসন নিয়ে উপরে উঠলাম। একজন ধূমপায়ীর জন্য মাত্র একটা সিগারেট একটা যাচ্ছেতাই ব্যাপার- তাও যদি হয় সারারাতের জন্য বরাদ্দ মাত্র একটি শলাকা- তাহলে ব্যাপারটা হাস্যকর পর্যায়ে চলে যায়- এক গেলাস জল দিয়ে ঘরের আগুন নেভানোর চেষ্টা করা যেমন হাস্যকর ঠিক তেমন। একজন ধূমপায়ী-যে মিথ্যে আবেগে রাত জাগে- তার ঘরে অন্তত কয়েক প্যাকেট সিগারেটের মজুদ থাকা দরকার।
ধুমপান ছাড়তে চাই কি চাই না সে ব্যাপারে আমি নিজেই নিশ্চিত নই- আজ পর্যন্ত হতে পারিনি। প্রথমে ভাবলাম ছেড়ে দেব- দিনে দুই একটি এবং রাতে মাত্র একটি শলাকা বরাদ্দ করলাম। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সিগারেটের বদলে বরাদ্দ একটা কলা। আমি প্রতিরাতে একটি কলা নিয়ে ঘরে ফিরতে লাগলাম। এসবের পেছনে অবশ্য একজন মানুষের অবদান ছিল। মেয়েটির ব্যাপারে আমি প্রায় পাগল ছিলাম। ঠিক করে ফেললাম ছাইপাঁশ ছেড়ে দিয়ে প্রেমের নাও বাইবো।
আরও কবিতা
Federico García Lorca যখন Madrigals নামের একটা কবিতা লিখেছিলেন, তখন নিশ্চয়ই আমি সেই রেস্তোরাঁর কাজ করতাম, লরকা যেখানে আসতো মাঝে সাঁঝে। আজ সেই কবিতাটা হাতে পেয়ে এক ধরণের অনুবাদকের ভূমিকা পালন করলাম।
ছিন্ন পদ্য
১
তোমার কথারা
সুরেলা ঢেউয়ের মত
আমার প্রাণে।
চুম্বনেরা
উড়ন্ত পাখির মত
আমার ঠোঁটে।
তোমার শরীর
বিকেলের ঝর্ণার মত
আমার খয়েরী চোখে।
২
আমি আবদ্ধ
তোমার বৃত্তে।
অপশক্তির মত
দুঃস্বপ্নের আংটি
আমার আঙুলে।
প্রিয়তমা!
এখনও ডুবে যাইনি,
ভেসেও উঠিনি।
( অনুবাদ করা হলে কবিতার আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না । )
বোঝাপড়া
মহাকালের সময়ের ভাণ্ডার থেকে
পুড়ে পুড়ে ছাই হচ্ছে প্রতি ক্ষণ-
পৃথিবী আজও অভেদ্য রহস্য
তাই অপদার্থের বাক্স খুলে বসলাম আবার
নেড়ে চেড়ে দেখতে গেলাম মধ্যরাতের হরমোন;
ক্ষয় হতে থাকুক দুর্বল রক্ত কণা
মন্ত্র বিফলে গেছে
অবধারিতভাবে শরীরের পতনের দিকে হেঁটে যাচ্ছি
মিছেমিছি ভুল জীবন যাপন করে কাজ নেই অন্তত আমার
আরও অন্ধকার
অফুরন্ত কলম আর কাগজ আমার ঘরে -
তবু ভালো কিছু লেখাটা দুঃসাধ্য কাজ
লিখতে চাইলে
মুহুর্তেই অমাবস্যার মত হতাশায়
নুয়ে পড়ে বলপেন
স্থবির হয়ে যায় আঙুল
শুধু তা-ই নয়
এ এক চতুর চক্রান্ত;
ওরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে
ডেকে আনছে আরও অন্তহীন অন্ধকার
এখানে নদী নয়, প্রেম নয়, সুখ নয় ;
চোখে মুখে মগজের ড্রেনে
জীবনের অজান্তে
বয়ে বেড়াচ্ছে অসুখের কালো
স্নিগ্ধ-সুন্দরের সবটা মেখে গুলে খেয়েছে ওরা
ওদের মাই পাছার সমারোহে
নিঃশ্বাস ফেলে নিশ্চয়ই বুঝেছিলাম -
পৃথিবীর বিষণ্ণ গরীব মানুষেরা সবচেয়ে ভালো।
দুঃসংবাদ
সুখকর কোনও খবর নেই আপাতত
হতাশাগ্রস্ত তরুন-তরুণীরা বিদায় নিয়েছে অনেক আগেই
বুড়ো সিগারেটওয়ালাটাও নিকোটিনের ভাণ্ডার উজাড় করে দিয়ে
চলে গেছে
রাস্তাগুলো আমাকে বিদায় জানিয়েছে তারও আগে
দিন শেষে আমি ফিরে গেছি আমার বিষণ্ণ কামরায়
আমাকে গিলে খেয়েছে বদ অভ্যাসেরা
আক্রান্ত করেছে আলস্য
দংশন করেছে দুশ্চিন্তা
শীর্ণ হয়েছে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আর বেশভূষা
মনে হচ্ছে আমিও আর মানুষ নই এখন
এ সংবাদ যথেষ্ট আনন্দের নয়
তবে এইমাত্র আবার বৃষ্টি নেমেছে
তোমরা ইতোমধ্যে উপভোগের আসর সাজিয়ে নিয়েছ
গান অথবা কবিতায়
সে আসরে সমাদৃত হবে-এমন খবর নেই এখানে।
সবকিছু বরং অসাড় করে রাখি
বোঝার চেষ্টা ছেঁড়ে দিয়েছি বছর কয়েক আগে
শিশুসুলভ কৌতূহল আমার
দিনে দিনে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ঘাতকের নীরব আক্রমণে;
আজকাল তাই আর বোঝার চেষ্টা করি না কিছু-
সম্পদের অপচয়,
অপরাধী, প্রধানমন্ত্রী কিংবা নিছক বুদ্ধিজীবীদের মনস্তত্ত্ব।
একটা ধর্ষণ অথবা খুন,
অ্যামেচার ক্রাইম, আমার দুর্বিনীত আলসেমি, বেয়াদবি
বোঝার চেষ্টা করি না কোন আগামী অপেক্ষা করছে সাদা জামায়
কলেজের কিশোর কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবুঝ তরুণীটির জন্য ;
বুঝতে চাই না, খুঁজতে যাই না আমার ও আমাদের জ্ঞান, শক্তি
আমার কালো ফুসফুস-হৃদযন্ত্র, স্বদেশী বাজার, খাবারের স্বাদ;
কাঁঠালচাঁপার রঙ, রহস্য, প্রেম-
এ সমাজে সবকিছু বোঝার সামর্থ্য হারিয়েছি
প্রেম আর স্বপ্নের পোস্টমর্টেম
করতে গেলে আঙুলের নখে জমা হয় কালের আবর্জনা
দাপাদাপি করে হতাশ হরমোন
ওরা আমার দেহমন বিষাক্ত করে রাখে
শুকিয়ে শুন্য হয়ে আসে মস্তিস্ক,