আড়িয়ল বিলঃ আবার ফাইদা
রাজনীতি নিয়ে কোন কিছু লেখার যোগ্যতা বা সাহস আমার তেমনটা নাই, আর থাকলেও কি বা হতো দুটো বড় দলের যে কোন একটা অথবা পালাক্রমে দুটোরই কৃতদাস রূপে বিবেকের সাথে বেঈমানি করে বেঁচে থাকতাম । আড়িয়ল বিলে বিমান বন্দর নির্মাণের ইস্যু নিয়ে সারা দেশ ভাবিত, এমন সময়ে একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে দেশে নতুন বিমান বন্দর নির্মাণের বিষয়টা মাথায় পজেটিভ ভাবে আসছে না।
নতুন একটা বিমান বন্দরের প্রয়োজনীয়তা যে আছে তা নিয়ে কত টুকু জরিপ বা ডাটা বিশ্লেষন করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে? আর যদি এমন কিছুর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তবে তার সঠিক উপস্থাপন প্রয়োজন ছিল । সরকারের কি উচিৎ ছিল না মানুষের মধ্যে গুজবের শাখা প্রশাখার বিস্তার রোধ করা ? আজ বোঝা যাচ্ছে ৫০ ভাগ গ্রামবাসী রাজী নয়, এটা তো স্বাভাবিক, ঘন বসতির দেশে এমন কিছু করলে তার বাধা আসবেই। এমন ক্ষেত্রে তথ্য আর সরকারি সম্পৃক্ততার ব্যাপকতা না থাকলে অনেক পক্ষই এর সুযোগ নিবে। ফুলবাড়িতেও তা প্রত্যক্ষ করা গেছে ।
রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী পদ থেকে বলা হয়েছে কক্সবাজার, কুয়াকাটার সৌন্দর্য্য বিশ্ববাসির কাছে তুলে ধরতে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো বিমান বন্দর প্রয়োজন। কিন্তু ক্রম বর্ধমান জন সংখ্যার দেশে পণ্যের উৎপাদন এবং বিদেশে বাজার খুঁজে বিপনণ না করতে পারলে প্রকৃ্ত উন্নয়ন সম্ভব নয়। পর্যটন নিয়ে বিমান বন্দর পর্যন্ত ভাববার সময় এখন না। পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য প্রয়োজন যথাযথ প্রচার প্রক্রিয়া, ভালো পরিকল্পনা, চমৎকার ম্যানেজমেন্ট, সুনিশ্চিত নিরাপত্তা,রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাস্তা-আবাসনের মতো অবকাঠামো। এতো দিনেও যখন আকর্ষনীয় একটা ওয়েব সাইট নাই, দায় সারা নিয়েই চলছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন তখন পর্যটনের স্বা্র্থে বিমান বন্দর একটু বেশিই শুনায় । যেখানে একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বিমান বন্দরের কথা বলা হচ্ছে সেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মক্ষেত্র, পুষ্টি, গবেষনা, বিদ্যুৎ-জ্বালানী সব কিছুতেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বিষয়টি ফাইল বন্দি। যে রাষ্ট্রীয় সমাজ কেবল মাত্র রাজনৈতিক ডামাডোলের কা্রণে নৈতিক অধঃপাত ঘটিয়েছে দিনের পর দিন, অর্থনৈতিক বৈষম্য গড়তে হাতিয়ার হয়েছে রাষ্ট্রীয় আইন, রাজনৈতিক পরিচয়ধারীরা বাজার লুটেছে অবলীলায় সেখানে নিতান্ত গরীব খেটে খাওয়া মানুষের জমি টুকুর পৃষ্ঠ তলে হাজার শত প্লেন উঠানামা করলে কারা লাভবান হবে তা বোঝা কি খুব কঠিন !
বাংলাদেশে মৎস্য বা কৃ্ষি জীবী এক জন যদি তার পেশা হারায় তবে সে কি করবে জীবনের পরের দিন গুলোতে? তার মধ্যে সে ধরনের প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা নেই যে সে খুব দ্রুত কোন নতুন কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যাবে। রিক্সা চালানো ছাড়া তার জন্য কোন পথই খোলা থাকবে না । এক্ষেত্রে এ মানুষ গুলোর জীবনে নেমে আসা অর্থনৈতিক অরাজগতা সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় ব্যাবস্থাপনায় প্রভাব রাখবে।
শুনলাম পদ্মার চরে নাকি সে প্রস্তাবিত বিমান বন্দর হবে।হোক বিমান বন্দর তাতে আপত্তি নাই তবে বিষয়টা আবেগ থেকে হলে কষ্টই বাড়বে । ফিজিবিলিটি স্টাডি না করে, যথেষ্ট আলোচনা, গবেষনা, জরিপ, জন চাহিদা বিশ্লেষন না করে বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে ৭৮% জমি কোন না কোন ভাবে চাষাবাদের আওতায় আছে সেখানে আবেগী হয়ে বড় প্রকল্প গ্রহন করা ঠিক হবে না। পদ্মার চরে করলেও উল্লেখিত বিষয় গুলোতে শত ভাগ চিশ্চিত হয়ে পরিকল্পনা নিতে হবে।
আড়িয়াল বিলের জন্য কোন কোন রাজনৈতিক দলের প্রধান রক্ত দিয়ে দিবে বলেছেন যাদের ফুলবাড়ি থেকে রক্ত নেবার বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে । কেবল বিরোধিতা করে আর মাঠ গরমের মাধ্যমে নিজের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ খুঁজলে হবে না, দেশ প্রেমিক রাজনীতিবিদ হিসেবে দেশের অগ্রগতির জন্য সরকারকে সাহায্য না করতে পারলে জনগন ভালোবাসবে না । যুক্তি নির্ভর বিরোধিতা জন কল্যান আনবে অন্যথায় চার দশক ধরে যা চলছে তা আরও খারাপ ভাবে চলবে, আমরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব না। রক্ত দিয়ে জন উত্তেজনা না বাড়িয়ে ফুলবাড়ি, পল্লী বিদ্যুৎ আন্দোলনের রক্ত ঋণ শোধের সময় এখন, উন্নয়নের যুদ্ধে সৈনিক হবার সময় এখন।
দেশে এখন আর একটা নতুন বিমানবন্দর করার চেয়ে পুরনো গুলোকেই যথাযথ সংস্কার করলে বেশী ভালো হবে । আমার তো ভয়, সরকারের ঠিক কোন পর্যায় থেকে এরকম কুচিন্তা আসছে । যদি মন্ত্রীত্ব না পাওয়া ভদ্রলোকগণ এই বুদ্ধি দিয়ে থাকেন, তাহলে বলব, নিজেদের কবর নিজেরাই খুড়বেননা দয়া করে ।
ধন্যবাদ লিজা আপনাকে ।
আধুনিক কালের কিছু প্লেনের জন্য বড় রানওয়ের বন্দর দরকার আছে তবে সেটা কত বেশি দরকার বাংলাদেশের জন্য তা ভেবে দেখার বিষয়। এমন বন্দর নির্মাণ করা যেতেই পারে তবে তা বাস্তবতার আলোকে অনেক স্বচ্ছতার সাথে করতে হবে ।
লেখাটা ভালো লাগলো। সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অবশ্যই জনমত যাচাই করা দরকার।
ধন্যবাদ তানবীরাপু ।
আপনার মতো অসাধারণ ব্লগার শুভ কামনা করলে খুব ভালো লাগে, খারাপ কিছু লিখেও একটা তৃপ্তি পাওয়া যায় ।
জন মত যাচাই করে আসলে সব উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নেয়া যাবেনা । এমন বড় বড় কাজের জন্য গবেষনা, অপ্টিমাইজেশন আর সরকার ও মানবাধিকার একাধিক সংস্থার সততার ভিত্তিতে নিবিড় সম্পৃক্ততা দরকার।
যা হোক আপনার কমেন্ট ব্লগে বাকি দিন গুলোর পাথেয় আমার জন্য ।
কিছুদিন আগেই শেয়ার মার্কেট নিয়ে রাজপথ ছিল উত্তপ্ত। সরকারের হস্তক্ষেপে এখন আস্থা হারানো মানুষগুলো সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্ক্রিনের সামনে বসে বসে কত লস কমলো সেই হিসাব কষছে। এবারের মত হয়তো সামাল দেয়া গেল।
কিন্তু কিসের কি। আড়িয়ল বিল নিয়ে আবার সরগরম জনপদ। একটি প্রয়োজনীয় লেখা যেটা সকলরে উপকার হবে ভেবে শেয়ার করলাম।
আড়য়ল বিল রক্ষা করুন : ডা. ফখরুল ইসলাম চৌধুরী / শাহজাহান বাদল / সাইদুর রহমান সাইদ
১. ঐতিহাসিক পটভূমি
পদ্মা-ধলেশ্বরী-ইছামতি নদী পরিবেষ্টিত ও বিধৌত অঞ্চল হচ্ছে ঐতিহাসিক বিক্রমপুর। এক সময় বাংলার ৫২টি পরগনা এ বিক্রমপুরের অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা কালের বিবর্তনে বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ জেলার অংশ হয়ে টিকে আছে। স্বর্ণগর্ভা এ বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেছেন অনেক কালজয়ী ব্যক্তিত্ব, যারা যুগে যুগে আমাদের ও বংশধরদের অনুপ্রেরণা হিসেবে বেঁচে থাকবেন। ঐতিহ্যবাহী এ বিক্রমপুরের আরেকটি অহঙ্কার হলো আমাদের আড়িয়ল বিল। আড়িয়ল বিল ও বিক্রমপুর দুটি যেন একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। বিক্রমপুরের সন্তানদের জীবনধারণ ও সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে লালন করাসহ দেশের খাদ্য যোগান দেয়ার জন্যই মনে হয় সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ এ আড়িয়ল বিল।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোয় বিক্রমপুর ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল এবং কার্যত একটি মুক্তাঞ্চল। এলাকার তরুণরা যুদ্ধ করেছে এবং প্রাণ দিয়েছে। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর সে এলাকার মানুষ যদি উত্খাত হয়ে যায় তবে তার চেয়ে বড় দুঃখের ব্যাপার কী হতে পারে?
২. আয়তন ও পরিবেশ
প্রথম দিকে এ বিলের আয়তন ছিল ২৫০ বর্গমাইলের বেশি এবং জমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ একরেরও বেশি। তবে এরই মধ্যে সঠিক পদক্ষেপ না নেয়ার ফলে পদ্মার বালু এসে কিছু অংশ ভরাট, জনসংখ্যার চাপে গ্রাম বর্ধিত হওয়ার ফলে এবং বিলের মধ্যে অসংখ্য মাছের পুকুর (যেগুলো স্থানীয়ভাবে জেঙ্গা নামে পরিচিত) স্থাপনের ফলে বর্তমানে কৃষি জমি ২০ হাজার একরের কিছু বেশি হতে পারে, যা এখনও সরকার বা কোনো সংস্থা সঠিকভাবে জরিপ করেনি। আয়তনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই জলাভূমি শ্রীনগর, সিরাজদিখান, নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলার অংশ নিয়ে বিস্তৃত। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলার প্রতীক রবিশস্য, তরিতরকারি, মাছে ভরপুর ও অসংখ্য প্রজাতির পাখির অনেকটা অভয় বিচরণ ক্ষেত্র এই আড়িয়ল বিল।
৩. অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান
আড়িয়ল বিল দেশের অন্যান্য জলাভূমির চেয়ে স্বতন্ত্র। কারণ এ বিলে শুষ্ক মৌসুমে ধানসহ অনেক রবিশস্য এবং সাথী ফসল হয়। এ বিলের জমি এত উর্বর যে, প্রতি একরে ১০০ মণেরও বেশি ধান উত্পন্ন হয়, যা দেশের অন্য কোথাও হয় না। বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ উন্মুক্ত জলাভূমিতে লাখ লাখ জেলে মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। শুধু আড়িয়ল বিলের পার্শ্ববর্তী এলাকা নয়, সারা দেশের খাদ্য, মাছ ও সবজি চাহিদার একটা বিরাট অংশ যোগান দেয় এই আড়িয়ল বিল। আড়িয়ল বিলের দীঘির মাছ সবচেয়ে সুস্বাদু, এখানকার একটি মিষ্টি কুমড়ার ওজন হয় ৫০ কেজিরও বেশি।
প্রতি বছর প্রকৃত আয় হয় ১,০০০ কোটি টাকারও অনেক বেশি।
৪. আড়িয়ল বিলকে কেন্দ্র করে জীবিকা ও কর্মসংস্থান
৫. প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্ব
আড়িয়ল বিল বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর প্রবাহিত অতিরিক্ত পানিসহ কয়েক কোটি টন পানির জলাধার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যাতে করে বিক্রমপুর, নবাবগঞ্জ, দোহারকে অনেকাংশে বন্যা ও নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করে।
তাছাড়া প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য ও বিভিন্ন জাতের পাখির বিচরণ ক্ষেত্র হচ্ছে এ বিল। বিলের মাঝে অবস্থিত দীঘিগুলোর পাড়ে বনজ গাছগুলো পরিবেশ রক্ষায় রাখছে অনন্য ভূমিকা।
৬. প্রস্তাবিত ২৫ হাজার একর জমিতে বিমানবন্দর ও স্যাটেলাইট শহর স্থাপিত হলে যে ভয়ঙ্কর বিরূপ প্রভাব পড়বে এবং জাতির জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে তা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি :
এতে করে শুধু আড়িয়ল বিলের জমি অধিগ্রহণের ফলে যারা নিঃস্ব হবেন, বেকার হবেন তারাই নয়, সার্বিকভাবে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং বর্ষায় পদ্মার পানির চাপ সহ্য করতে না পেরে বন্যাসহ ব্যাপক ভাঙনের মুখে একদিন সম্পূর্ণ বিক্রমপুর নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
৭. আদৌ আরেকটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা
বিমান চলাচলে বিশেষজ্ঞসহ আমরা সাধারণ মানুষ লক্ষ্য করছি, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরটির যে ধারণক্ষমতা আছে তা সম্পূর্ণ ব্যবহৃত হচ্ছে না। পত্রিকায় প্রকাশিত বিশেষজ্ঞের মতে, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের জমির পরিমাণ মাত্র ২,০০০ একর। আন্তর্জাতিক রুটে বিমানের সংখ্যা, পিকআওয়ার বিমান মুভমেন্ট ও যাত্রী সংখ্যার পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে আগামী ২০২৫ সালে পর্যায়ক্রমে ফ্লাইটের সংখ্যা ৫৭,০০০ এবং প্রতি ঘণ্টায় ২৯টি ফ্লাইট ও ৪,৮০০ যাত্রী হতে পারে বিধায় বর্তমান বিমানবন্দরেরই কিছু আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সহজেই চলবে।
পরীক্ষা সাপেক্ষে ট্যাক্সিওয়েকে ২য় রানওয়েতে পরিবর্তন করে বা পশ্চিম দিকে কিছু স্থাপনার যুক্তিসঙ্গত পুনঃস্থাপনে একটি ২য় রানওয়ে নির্মাণ করা যেতে পারে বলেও তারা জানিয়েছেন।
সরকারের অনেক অগ্রাধিকার প্রকল্প আছে, যেমন—খাদ্যশস্যসহ দ্রব্যমূল্যের দাম কমানো, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধান করা, বিদ্যুত্ সমস্যা লাঘব, ঢাকা শহরের যানজট কমানো ইত্যাদি। কিন্তু এসব না করে আরেকটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি করা সমীচীন নয়। এটি জাতীয় সম্পদের অপচয় এবং একটি বিলাসবহুল প্রকল্প বলেই জনগণ মনে করবে।
৮. বিমানবন্দর স্থাপনের জন্য আড়িয়ল বিল উপযোগী কিনা
সাধারণভাবে যে কেউ এটা স্বীকার করবেন, যে জমি বর্ষা মৌসুমে ১০ থেকে ২৫/৩০ ফুট পানির নিচে থাকে সেখানে বিমানবন্দর করতে হলে হাজার হাজার কোটি টাকা শুধু পাইলিং ও মাটি ভরাটের জন্যই প্রয়োজন হবে এটিকে ভারী বিমান অবতরণের চাপ সহ্যের উপযোগী করতে। এরই মধ্যে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, এ প্রকল্পের জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। কিন্তু আমাদের মনে হয়, শুধু মাটি ভরাট করতেই এর চেয়ে অনেকগুণ বেশি টাকা চলে যাবে। কারিগরি বিশেষজ্ঞদের মতে, আড়িয়াল বিল বিমানবন্দর স্থাপনের জন্য কোনো ক্রমেই উপযোগী নয়।
স্যাটেলাইট ছবিতে এ এলাকার মাটিতে গভীর পিট কয়লার স্তর দেখা যায় বিধায় এখানে বিমানবন্দরসহ সব স্থাপনাই দেবে যাওয়ার সার্বক্ষণিক হুমকিতে থাকবে।
আমাদের মতো দরিদ্র দেশে যেখানে অজস্র সমস্যা, সেখানে এ ধরনের অবাস্তব, অবৈজ্ঞানিক এবং অর্থনৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য কোনো ধরনের টেকনিক্যাল, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমীক্ষা না করে তোঘলকি আমলের মতো ভূমি অধিগ্রহণের পদক্ষেপ কোনো ক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।
৯. আন্তর্জাতিক খাদ্য সঙ্কট ও আল্লাহ প্রদত্ত একটি খাদ্যভাণ্ডার নষ্ট করা
সারা বিশ্ব এখন একটি মহা খাদ্যশস্য সঙ্কটের দিকে যাচ্ছে। এ বছর আমাদের সরকার বাধ্য হচ্ছে খাদ্য সমস্যা মোকাবিলার জন্য অনেক চড়া মূল্যে ১.৫০ লাখ টন খাদ্য আমদানি করতে। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র খাদ্যশস্য রফতানি করতে অক্ষমতা প্রকাশ করেছে। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা জরুরি বৈঠক আহ্বান করছে বিশ্বের খাদ্য সমস্যা মোকাবিলার জন্য। তারা আশঙ্কা করছে বিশ্ব একটি কঠিন খাদ্য সমস্যার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে আড়িয়ল বিলের মতো একটি খাদ্যশস্যের ভাণ্ডারকে ভরাট করে বিমানবন্দর করার উদ্ভট পদক্ষেপ শুধু আত্মঘাতীই নয়, দেশকে দুর্ভিক্ষ ও মঙ্গার ঝুঁকিতে ঠেলে দেয়ার একটি অশুভ পদক্ষেপ বলে আমরা মনে করি।
১০. জাতীয় পানি নীতি ও জাতীয় পানি আইন ২০১০ উপেক্ষিত
জাতীয় পানি নীতি ১৯৯৯ সালের আর্টিকেল ৪.১৩-তে বলা হয়েছে, হাওর-বাঁওড় এবং বিলের মতো জলাভূমি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত বিবেচনায় এগুলোর মূল্য অনেক। বিল, হাওর এবং বাঁওড়ের জলাভূমিকে পানি নিষ্কাশন ও জলজ পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে সংরক্ষণ করা হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর শাসনামলেই ওই পানি নীতি চূড়ান্ত করা হয়, যার ভূমিকায় তিনি লিখেছিলেন, এ ধরনের নীতিমালার অভাবে এরই মধ্যে দেশের জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই নীতিমালার প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়ে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
১১. বিমানবন্দর নির্মাণের কার্যক্রম শুরুতে নজিরবিহীন দ্রুততা
যে দেশের প্রকল্প গ্রহণে সমীক্ষা প্রস্তাব (চ.চ) প্রণয়ন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন ও একনেক হয়ে প্রকল্প পাস হতেই কয়েক বছর লেগে যায়, সেখানে এত বিশাল প্রকল্প নেয়ার আগে প্রয়োজনীয় কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই হঠাত্ করে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়া রীতিমত বিস্ময়কর ও বিপদসংকুল।
আড়িয়ল বিল ও তত্সংলগ্ন এলাকার জনসাধারণ আজ অসহায় ও উদভ্রান্ত। সরকারি আমলাদের অতিউত্সাহী তোষামোদি কর্মকাণ্ডে ত্বরিত উচ্ছেদের আশঙ্কায় তারা আড়িয়ল বিল রক্ষার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশ হচ্ছে এবং সেখানে কৃষক-শ্রমিক, নারী-পুরুষ সবার একই দাবি—‘জান দেব, তবু জমি দেব না।’
এরই মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আড়িয়ল বিল রক্ষার দাবিতে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ৪ ঘণ্টার জন্য অবরোধ করে রাখে। পক্ষান্তরে দু’জন সংসদ সদস্যের পৃষ্ঠপোষকতায় ও তাদের উপস্থিতিতে ঢাকা-মাওয়া সড়কে বিমানবন্দর স্থাপনের পক্ষে মানববন্ধন হয়, যাতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও স্কুলের কোমলমতি শিশুদের (ছাত্রছাত্রী) নিয়ে আসা হয়েছে, যা বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে।
বিদ্যমান এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের আকুল আবেদন, অবিলম্বে আড়িয়ল বিলে সম্পূর্ণ অমানবিক, বেআইনি, অবৈজ্ঞানিক ও অপ্রয়োজনীয় এ বিমানবন্দর স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিল করবেন এবং লাখ লাখ মানুষকে বেকার, ভূমিহীন ও তাদের বাপ-দাদার বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করবেন না। আমাদের সামনে খাদ্য সঙ্কট অপেক্ষা করবে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষ করতে হবে। সেই বিবেচনাতেও ২৫ হাজার একর জমি নষ্ট করা কীভাবে চিন্তা করা হচ্ছে সেটাও আমরা ভেবে পাই না। অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে পরিণতি যে কী হবে তা ভাবতেও আমাদের গা শিউরে ওঠে।
আরো কিছু লেখার রেফারেন্স উল্লেখ করার যায়:
আড়িয়ল বিলে ভিন্ন বাস্তবতা
বিমান বন্দরের নামে আড়িয়াল বিলে রাষ্ট্রীয় ভূমি আগ্রাসন!
বিমানবন্দরের নামে ভূমি আগ্রাসন : সমীক্ষা ছাড়াই আড়িয়ল বিলে আঞ্চলিকতাদুষ্ট প্রকল্প
‘ভালো থেকো বক, আড়িয়ল বিল’
তাজমহল হতে আড়িয়ল বিল, ...ভালবাসার অমর কাহিনী।
আড়িয়াল বিলের আদ্যোপান্ত
ধন্যবাদ
শুধুমাত্র একটা নামকরণের প্রয়োজনীয়তা ছাড়া নতুন একটা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর স্থাপনের আর কোন প্রয়োজনীয়তা খুঁজে পেলাম না ।
হুদা ভাই, কে এ বুদ্দিটা দিলো। নিশ্চয় কোন আমলা! (তবে আপনার মত আমলা দেয় নাই এটা বুঝি)
একমাত্র সত্য ! এটি প্রকাশে সবারই দেখি অনিহা । কিন্তু কেন ?
আর আমলারা তো গামলা ধরে 'ইয়েস স্যার' বলতে সদাপ্রস্তুত ।
আমলা বলে আলাদা কোন বিশেষ শ্রেনী নাই আর, সবাই এখন দলীয় কর্মী । তবে বিমান বন্দর তৈরীর ভূত কোন আমলা রূপি কর্মীর মাথা থেকে আসে নাই, এটা আবেগ আর লাগাম হীন যুবা/ছাত্র নেতাদের উপার্জনের উৎস হিসাবে এসাছে। আবেগটা নাম কেন্দ্রিক হবার সম্ভবনা বেশি ।
যুবা/ছাত্র নেতাদের উপার্জনের উৎস হিসাবে
আবেগটা নাম কেন্দ্রিক
বিশেষভাবে প্রনিধানযোগ্য । অন্য আর সব যুক্তি চোখ বন্ধ করে ছুড়ে ফেলে দিতে পারেন নির্দ্বিধায় ।
আমার পুরোটা তা মনে হয় না। একটা আধুনিক সুবিধাসম্মত বিমানবন্দর বাংলাদেশে কতো প্রয়োজন সেটা প্রবাসী মাত্রই জানেন, ভুক্তভোগী যারা।
আধুনিক বিমানবন্দর প্রয়োজন তবে সেটা বিদ্যমান যেটা আছে সেটাকেই আধুনিকায়ন না করে কেনোই বা নতুন আরেকটা করার প্রয়োজন হচ্ছে, সেটাই প্রশ্ন।
---
লেখাটা ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ আপনাকে । আপনার কথা শতভাগ সত্য, বিদ্যমানটা বড় করা যাবে না করণ পরিকল্পনা ছাড়ায় আশে পাশে যে অবকাঠামো তা সরানো অতো সহজ নয়।একজন ঋণ খেলাপী বহুতল ভবনের মালিক অনেক শক্তি রাখে । সব কিছু অতো সহজ না ।
আমি এক মত হতে পারলাম না । কোন সুবিধাটা নাই সেখানে ? যত আধুনিকায়ন করুক ১৬ কোটির দেশে জটলা, হয়রানি হবেই কারন এটা আধুনিকায়নে্র অভাব জনিত কারণ নয় এটা হয় ওখানে একটা ভঙ্গুর আর লোভাতুর ম্যানেজমেন্ট কাজ করে তাই। আমি মনে করি না যে একটা অপেক্ষাকৃ্ত ছোট বন্দরে আধুনিক সুবিধাদি রাখা যাবে না । আমারতো ভালোই লাগে সব চাইতে কম হাঁটতে হয় ঢাকা এয়ারপোর্টে ।
সিঙ্গাপুর তো বেশী দূরে নয় । সিঙ্গাপুরে মানুষ যাচ্ছেও হরদম । সেখানকার এয়ারপোর্টটা কী অনেক বড় ? একটু খেয়াল করে দেখে এলেই ঝামেলা মিটে যায় ।
রাইট নাজমুল ভাই
আপনার সমস্যাটা কি? একটু খোলসা করে বলবেন? আপনার দৃষ্টিতে অতি কথনে ভরা সাহিত্য কোনটা এটা জানতে চাইলে বললেন বকুল কথা। আবার আপনাকে বকুল কথা নিয়ে সমস্যা কোথায় জানতে চাইলে বললেন নো সমস্যা। আপনার আচরনে পুরাই কনফিউজড হইয়া গেলাম বস। আমাদের প্রিয় ণুঢ়ে আলম পরবর্তী যুগে আপনার মত লেখক আর আসে নাই। এটা খুবি সত্যি কথা। আপনার কোন বই বের হইছে এইবার বই মেলায়? একটু জানালে কিনার চেষ্টা করতাম।
আপনে জানলেন কিভাবে? আপনারতো দেখি ঐশ্বরিক ক্ষমতাও আছে।
আজকের প্রথম আলোর ১২ পৃষ্ঠায় আতাউর রহমানের "লাইনসংক্রান্ত ব্যাপার-স্যাপার" পড়তে পারেন । সময় কম থাকলে শুধু শেষ অনুচ্ছেদটি পড়ুন ।
ওহ ! জটিল নাজমুল ভাই, আপনে একজন ডিজুস মানুষ । এটা মিস করে যেতাম আপনি না থাকলে। না, আপনার অপরিহার্যতা দিন দিন বাড়ছে আমার কাছে । খুব ভালো লাগলো নাজমুল ভাই লেখাটা। আচ্ছা আপনি কি পত্রিকায় লেখালেখি করেন ? আপনার লেখাও আমার খুব ভালো লাগে যেমনটা তানবীরাপুর লাগে , রাজনীতি ঘেঁষা লেখা খুব মিস করি এবি তে । জীবনেতো অনেক দেখেছেন, অনেক রকমের মানুষের সাথে মিশেছেন, একটু লেখুন না সে গুলো নিয়ে যেখানে রাজনৈতিক কিছু কথাও থাকবে ।
ধন্যবাদ ।
পড়তে পারি মোটামুটি, লিখতে ভাল্লাগেনা । তা'ছাড়া যা লিখলে আক্রমনের আশঙ্কা থাকে, তা লিখতে আমি ভয় পাই । আমি একজন ভীতু মানুষ, একই সাথে দুর্বলও । আক্রমন প্রতিহত করবার সামর্থ নেই মোটেও । ব্লগের বিনোদনটুকুই শুধু আমি উপভোগ করতে চাই । তাই বিতর্কিত বিষয় এড়িয়ে চলতে পছন্দ করি ।
মন্তব্য করুন