অন্য এক গুরুর সান্নিধ্যে...
তার জীবনের প্রথম সেমিনারে নাকি একজন মাত্র দর্শক ছিলেন। তা সত্বেও তিনি বেশ যত্ন করে বক্তৃতা দেবার পরে যখন চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন সেই একমাত্র শ্রোতা বলে উঠেছিলেন যে তাকে থাকতে হবে কারণ তিনিই পরের বক্তা! সেই লোকটাই ৮১ বছর বয়সে অর্ধেকটা পৃথিবী দূরে এসে প্রায় ১৩০০ লোককে সারাদিন মাতিয়ে গেলেন। আমি নিজে তাকে কাছ থেকে দেখার আগে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে আসলেও তিনি বাংলাদেশে এসেছেন আর আমাদের সৌভাগ্য হচ্ছে তার কাছ থেকে কিছু জানার।
ভদ্রলোকের নাম ফিলিপ কটলার, সারা দুনিয়ায় তিনি “বিপণন গুরু” হিসাবে পরিচিত। ব্যবসায় পরিমণ্ডলে তার বই পড়েনি এমন কাউকে পাওয়া যাবে না। কাল সারাদিন তার কাছ থেকে জানা গেল মার্কেটিং এর নতুন গতি-প্রকৃতি। তার প্রিন্সিপাল অফ মার্কেটিং এর নতুন সংকলনে বাংলাদেশের কোন কোম্পানি হিসাবে প্রথমবারের মত এসিআই আলোচিত হয়েছে জেনে ভাল লাগলো। বাংলাদেশকে কান্ট্রি ব্রান্ডিং এর দিক-নির্দেশনা দিলেন তিনি। আর ঘোষণা দিয়ে গেলেন যে,আসন্ন ওয়ার্ল্ড মার্কেটিং ফোরামের হোস্ট হবে বাংলাদেশ যেটা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে তুলে ধরবে।
শাহরুখ-সালমান-অক্ষয়-ক্যাটরিনা কে না এনে ফিলিপ কটলার দের মত লোকদের এদেশে আনতে পারলে এদেশের উপকার হবে অনেক বেশী।
ফিলিপ কটলার যা দিয়ে তার বক্তব্য শেষ করলেন আমিও তাই দিয়ে শেষ করি। তিনি বিন লাদেনদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে কিছুদিন আগে গিয়েছিলেন সৌদিআরব (প্রসঙ্গ্তঃ বিন লাদেন পরিবার সেখানকার বৃহৎ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং ওসামা অনেকদিন ধরেই তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন)। সেখানে ওসামার এক ভাই, মোহাম্মাদ বিন লাদেন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি তো “বিপণন গুরু” হিসাবে পরিচিত, আপনি কি পৃথিবী-ব্যাপী শান্তি বাজারজাত করতে পারেন? “বিপণন গুরু” এর উত্তর তখন দিতে পারেন নাই এবং এখনো তা খুঁজে বেড়াচ্ছেন...
~
কান্ট্রি ব্রান্ডিং ব্যাপারটার একটু বিশদ ব্যাখা দেন ভাই, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে
কান্ট্রি ব্রান্ডিং হচ্ছে এমন এক পদ্ধতি যার মাধ্যমে একটি দেশের খ্যাতি পরিমাপ, নির্মাণ ও পরিচালনা করার চেষ্টা করা হয়। কিছু পন্থা প্রয়োগের মাধ্যমে একটি দেশ তার স্বাতন্ত্র্য গুণাবলিসমূহকে জোর দিয়ে সে দেশের দ্রব্যের প্রতীকী মূল্যের গুরুত্ব বাড়াতে সচেষ্ট হয়। একটি দেশ ব্রান্ডিং এর মাধ্যমে বিশ্বে যে ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে তা তার রপ্তানি, বিদেশী বিনিয়োগ, পর্যটন বাড়াতে বিশেষ অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে, যেমনটি বাংলাদেশের দরকার।
~
খুব ভাল লাগলো লেখাটা। স্বপ্নের মত ব্যাক্তিত্ব দের কাছে পাওয়া অসাধারন অনুভূতি।
একদম ঠিক
~
তার বক্তব্যের বিস্তারিত লেখেন বস...
দেখি বস...
~
মিরপুরেটায় যারা গিয়েছিল তারা সবাই হতাশ হয়েছে পরিপূর্ন আলোচনার ঘাটতির কারনে, বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং এর টপিকটা নিয়ে তেমন কিছুই নাকি বলেননি উনি।
আপনি কি কর্পোরেট সেশনটায় গিয়েছিলেন? বিস্তারিত লিখুন প্লীজ।
ঐসব গাধামি কনসার্টের ৩০% কাভারেজও যদি এই সেশনগুলো পেতো, অনেককিছু জানতে পেতাম সবাই।
হুমম...কর্পোরেট সেশনটায়
~
ইচ্ছে ছিল এই বসের কাছ থেকে সরাসরি কিছু জানার। হয়নি। আপনি একটু বিস্তারিত লিখলে স্বাদ মিটবে কিছুটা হলেও।
আপনার সৌভাগ্য কটলারের ভাষণ শুনতে পেরেছেন।
আমাদের এক শিক্ষক গল্প করেছিলেন, কটলারের প্রিন্সিপালস অব মার্কেটিং বইটি তিনি জার্মানীতে যখন পিএইডি করতে যান সেখানে এক বাংলাদেশী ব্যবসায়ীর বুক শেলফএ আবিস্কার করেন। সেই ব্যবসায়ী জার্মানীর সেরা ধনীদের একজন। তার সফল ব্যবসায়ী হবার মূল প্রেরণার উৎস যে এই বইটি সেটি তিনি জানেয়েছিলেন। তিনি ইলেক্ট্রিক ক্যাবল ম্যানুফেকচার করেন, তার তৈরিকৃত পণ্য এশিয়ায় আসে না, অত্যন্ত দামী এবং গুণগত মানে সেরা সেই পণ্যের বাজার মূলত ইউরোপ। কটলারের বই অনুসরণ করে জীবন বদলে যাওয়া সেই বাংলাদেশী ব্যবসায়ীকে স্যালুট।
মন্তব্য করুন