স্বপ্নের ফেরীওয়ালা'এর ব্লগ
জড়ভরত কড়চা
বড় বিপদের কথা...মরে যাওয়া মানে পৃথিবী থেকে পুরাই বিচ্যুতি। এমনকি মরে যাওয়া মানে নিজের দেহের উপরও অধিকার হারানো। কয়দিন আগে হুমায়ূন আহমেদ কোথায় দাফিত হতে চেয়েছিলেন সেটা নিয়ে তুলকালাম। এবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের দেহ দান করার অন্তিম ইচ্ছেটাকেই দাহ করলেন তার পরিবার। ভবিষ্যতে পছন্দের কবরস্থানে গিয়ে নিজেই জিন্দা কবর কিংবা হাসপাতালে গিয়ে জিন্দা দেহ সমর্পণ ছাড়া উপায় নাই
নাই তারেক মাসুদ, নাই হুমায়ূন আহমেদ, নাই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তারেক মাসুদের সাতচল্লিশের দেশভাগের উপর ‘কাগজের ফুল’ আর বঙ্গভঙ্গ নিয়ে ছবি দুটি হওয়া দরকার ছিল; হুমায়ূন আহমেদের হাত দিয়ে ‘দেয়াল’ কিংবা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের রামায়ণ নিয়ে উপন্যাসও পুরো শেষ হওয়া দরকার ছিল। শুধু এই কয়েকটা কাজ শেষ হলে আমাদের আত্ম-উউপলব্ধি অনেকটুকু সমৃদ্ধ হতে পারতো, যারা করতে পারতেন তারা চলে গেলেন, আমার মত ২৫ কোটি বাঙ্গালী দিব্যি বেঁচে রইলো শুধু সংখ্যা হিসেবে
“ব”তে বাংলাদেশ, “ব”তে বুরুন্ডি..
বাসায় প্রাণী তিন খানা, এর মধ্যে অধম মোটামুটি ১৪-১৫ ঘণ্টা বাহিরে থাকি। সারা মাসে এসি ঘণ্টা খানেকও চলে না। বাকি যাহা কিছু যন্ত্রপাতি – অতি নগন্য, ব্যবহারের হার ও অতি সাধারণ। গত মাসের বৈদ্যুতিক বিল আসিয়াছে ৩,৯৭৩ টাকা মাত্র। ইহা ইতিপূর্বের যেকোন সময়ের সর্বোচ্চ বিলের চাইতে দ্বিগুনেরও বেশী। বিদ্যুত অফিসে কমপ্লেন দিয়াছিলাম, চেক করিয়া বলিলো সব নাকি ঠিক আছে।
এই ৩,৯৭৩ টাকার ব্যক্তিগত বৈদ্যুতিক বিল ব্যতীত, এপার্টমেন্টের কমন বৈদ্যুতিক বিল ও জেনারেটরের তৈলের খরচের আনুপাতিক হিসাবে আরো ২,০০০ টাকার উপর আমাকে বহন করিতে হইবে। তাহা হইলে, তিন সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের মোট বৈদ্যুতিক খরচ দাঁড়ায় ৬,০০০ টাকা, মাথাপিছু ২,০০০ টাকা। এই হিসাবে জেনারেটরের রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা অবচয় ধরা হয় নাই। এমনকি, অতি সাম্প্রতিক বর্ধিত বৈদ্যুতিক বিলের প্রভাবও ইহাতে পড়ে নাই।
“Invictus” ...হার না মানার গল্প
“Invictus” মানে "অপরাজেয়" বা "অপরাজিত"। উইলিয়াম আর্নেস্ট হেনলের এই নামে একটি কবিতা আছে যেটা তিনি হাসপাতালে হাড়ের যক্ষ্মায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় লিখেছিলেন। খুব কম বয়সে তিনি এই রোগে পরেন আর এই কবিতা লেখার কিছু আগে তার পা কেটে ফেলা হয়। জীবনের চরম দুঃসময়েও সাহস এবং নিজের মর্যাদা ধরে রাখার কথাই এই কবিতার প্রতিপাদ্য। “Invictus” কে ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম প্রধান অনুপ্রেরণার কবিতা হিসাবে দেখা হয়। ২৭ বছর কারাবন্দী জীবনে এই কবিতা নেলসন ম্যান্ডেলার নিজের এবং অন্য কয়েদীদের অনুপ্রেরণার শক্তি হিসাবে কাজ করে। “Invictus” সিনেমাতে ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকা রাগবি দলের অধিনায়কের হাতে এই কবিতাটি তুলে দেন যা তাদেরকে রাগবি ওয়ার্ল্ড কাপ জয়ে অনুপ্রাণিত করে।
হুমায়ূনীয় রাসায়নিক বিশ্লেষণ
নিজের ক্যান্সার রোগ নিয়েও তিনি অবলীলায় মজা করেছেন। যেকোন কিছুতেই একটা মজা আর হাস্যরস খুঁজে নেয়ার নিরন্তর চেষ্টা ছিল তার। নিজে ছিলেন রসায়নের শিক্ষক। আজ বিদায় বেলায় তাই ব্যক্তি হুমায়ূনের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করি।
ব্যক্তি হুমায়ূন আহমেদ = তিন আঙ্গুলের প্রথম ভাগের সমান এক চিমটে হিমু + এক মুঠো মিসির আলী + আধ সের শুভ্র।
~
তিনি...
কয়েক প্রজন্ম বাংলাদেশীদের বই পড়ানো তে ফিরিয়েছেন তিনি; কয়েক প্রজন্ম বাংলাদেশীদের বই পড়ানো শিখিয়েছেন তিনি; টিভি নাটক দেখানো শিখিয়েছেন তিনি; মধ্যবিত্তকে সিনেমা হলে ফিরিয়েছেন তিনি; মনের আনন্দে বৃষ্টিতে ভেজা শিখিয়েছেন তিনি; জোছনায় উদ্ভাসিত হতে শিখিয়েছেন তিনি; রাজাকারকে “তুই রাজাকার” বলতে শিখিয়েছেন তিনি; শেষ জীবনে নিজেই আবার প্রায় রাজাকার উপাধি পেয়েছেন তিনি...
তার কাগুজে চরিত্রগুলি তার মতই অতি সাধারনের মধ্যে অসাধারন, জীবনের বাহুল্যগুলি তাদের স্পর্শ করেনি। বেঁচে থাকতে ব্যাপক গালাগাল খেয়েছেন, এখন কয়েকদিন তার স্তুতিবন্দনা চলবে সর্বত্র। তারপর আবার বৃষ্টি হবে, জোছনা উঠবে, কিন্তু...
গত চারটি দশক তিন হুমায়ুন (আজাদ - ফরিদী - আহমেদ) ঋদ্ধ করেছেন আমাদের নানাভাবে। শেষজনও চলে গেলেন সময়ের আগেই। তার শেষ ইচ্ছাটা অন্ততঃ বাস্তবতা দেখুক, দেশে একটা আন্তর্জাতিক মানের ক্যান্সার হাসপাতাল হোক, তারই নামে...
~
অনেকদিন পরে এপ্লিকেশন লিখলাম...
হরতালে বাসায়। সকাল থেকে প্রত্যেক ঘণ্টায় একবার করে বিদ্যুৎ গেছে পরের ঘণ্টায় এসেছে। এভাবে জেনারেটরের সঞ্চিত তেল শেষ। ওদিকে পেট্রল পাম্প বন্ধ, স্থানীয় থানার নির্দেশ হরতালে তাদের অনুমতি ছাড়া তেল বিক্রয় করা যাবে না। এদিকে বিদ্যুতাভাবে জীবন অতিষ্ঠ। অবশেষে, থানায় এপ্লিকেশন লিখলাম ...আবাসিক কমপ্লেক্সের জেনারেটরের জন্য সংশ্লিষ্ট পেট্রোল পাম্পকে ডিজেল বিক্রয়ের নির্দেশ প্রদানের জন্য বিনীত আবেদন। মেজাজ খারাপ ছিল তাই, এপ্লিকেশন টা ইংরেজিতেই লিখেছি। আমার এপ্লিকেশন নিয়ে কেয়ারটেকার গেছে থানায়। পরবর্তী ফলাফল জানি না। আবার বিদ্যুৎ-শালা ফুড়ুত, ল্যাপ টপের ব্যাটারীও ক্লান্ত, তাড়াতাড়ি শেষ করি...
যাহোক, ভবিষ্যতে এই ধরণের আবেদন পত্র মাধ্যমিকের বাংলা/ইংরেজি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন মনে করছি...
~
হরতাল মুবারক
অনেক দিন পর বেশ হরতাল ম্যুডে আছি। কাজ কম। কি করা? গেজাই...
১। প্রেসিডেন্ট ওবামা পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াবেন। এবার তার স্লোগান কি হওয়া উচিৎ হবে? নিন্দুক মতে উপযুক্ত স্লোগান হলঃ “পরিবর্তন, যাতে আপনি বিশ্বাস করতে পারেন। এইবার আমি প্রতিজ্ঞা করছি, সত্যিই!”
২। আরেকবার, অর্থায়ন-শুন্য সরকারের নানা বড় বড় পরিকল্পনাকে অটোমোবাইল ব্যবসার সাথে তুলনা করে বলা হয়, “আপনারা হয়তো ইতিমধ্যে জানেন, বর্তমান সরকার অটোমোবাইল ব্যবসায় সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে – যা আশ্বাস দিচ্ছে আশা, পরিবর্তন, এবং 0% অর্থায়নের!”
৩। একজন মানুষকে হোয়াইট হাউসের দেয়াল ডিঙ্গাতে দেখা গেছে। পরে তৎপর সিক্রেট সার্ভিস ওবামার সাথে কথা বলে অন্ততঃ মেয়াদ পূর্তি পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে থাকতে তাকে সম্মত করায়!!
Spring, Summer, Fall, Winter... and Spring কিংবা শাশ্বত জীবন-চক্র
জীবন-চক্র শাশ্বত, অহেতুক ব্যস্ত মানুষ হিসেবে আমরা অধিকাংশ সময় সেটা খেয়াল করতে ভুলে যাই। আধুনিক জীবনের সুবিধা, কাজের তাড়াহুড়া এবং ছুটাছুটি সর্বদা চলমান পৃথিবী থেকে আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে রাখে। ভাগ্যিস Spring, Summer, Fall, Winter … and Spring এর মত কিছু ছবি আছে যা আমাদের আবার শিকড়ে তাকাতে বাধ্য করে।
কোরিয়ান কিম কি-দুক এর এই ছবিতে চরিত্র হাতে গোনা, পুরো ছবির সংলাপ হয়তো সাকুল্যে এক পাতা হবে, ছবির লোকেশন বলতে গেলে এক জায়গাতেই! তারপরও ছবিটা দেখার পরে স্তব্ধ হয়ে হয়ে বসেছিলাম। এটা এতই গভীর মর্মস্পর্শী যে ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।
এবি’র সাইট কি হ্যাক হয়েছে নাকি?
ঘটনা বুঝতেছি না। এবি’র সাইট কি হ্যাক হয়েছে? কে বা কারা নামে, বেনামে এবি’তে নতুন নতুন ব্লগ লিখছে, নতুন নতুন মন্তব্য করছে। যে সাইটে সারাদিনে মন্তব্যই পরে না, মন্তব্য করার জন্য রীতিমত অনুরোধ করা হয়, কদাচিৎ নতুন ব্লগ পোস্ট হয়, সেই সাইটে আজকে ১০ টা নতুন ব্লগ পোস্ট হয়েছে, নতুন মন্তব্য গুনে শেষ করা যাবে না। মেসবাহ য়াযাদ ভাইয়ের এক লেখা হজম না হতেই আরেক লেখা, সাথে ভাস্করদা, মাসুম ভাই, শুভ ভাই, এবি এস হাসান, মৌনকুহর, একান্ত অভাজন, স্বপ্নময়ী, আরাফাত শান্ত, অণু পাঠক এর লেখা। পুরাই টাস্কি। ব্যাপারটা কি? মুহিত সাব কি এবি’তে লেখা আর মন্তব্য করার জন্য নতুন কোন প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছেন নাকি? নাকি এবি’র মডু নিজেই বিভিন্ন নামে লেখা আর মন্তব্য শুরু করেছে? এবি’র সাইট হ্যাক হয়েছে কিনা সেই সন্দেহও হচ্ছে। ঘটনা কি?
পরীদের শহর থেকে... (২)
( এই ছবিটা রমণীয় পা সন্ধানীদের জন্য )
থাইল্যান্ডের ডাকনাম "হাসির দেশ" আর ব্যাংককের সদা হাস্যময় মানুষ সেই নামের মর্যাদা ভাল ভাবেই রেখে চলে। এখানকার মানুষের ব্যবহারের কারণে পর্যটকরা বারবার এখানে আসে। অত্যধিক উন্নয়ন-জনিত নির্মাণ আর সামুদ্রিক উচ্চতা বৃদ্ধিতে ব্যাংকক শহর বছরে ২-৫ সে.মি. ডেবে যাচ্ছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে এটি ভেনিস শহরের মত ডুবন্ত শহর হয়ে যাওয়ার কিঞ্চিত সম্ভাবনা বিদ্যমান। তবে, ব্যাংকক শহরের মধ্যে দিয়ে অনেকগুলি খালে পানিপথে চলাচলের সুযোগ থাকায় একে “প্রাচ্যের ভেনিস” বলা হয়।
পরীদের শহর থেকে... (১)
শহরটার পুরো নাম এতটাই বড় যে গিনেস রেকর্ডে এটা যেকোনো জায়গার সবচেয়ে দীর্ঘতম নামের অধিকারী, মোট ২১টি শব্দ নিয়ে এর পুরো নাম। সংক্ষেপে শহরটার নাম “ক্রুং থেপ মাহা নাখন” যার মানে “পরীদের শহর”। আর আমরা শহরটাকে চিনি ব্যাংকক নামে। এখানে আসছি অফিসের কাজে।
ব্যাংককে বাংলাদেশীরা এত বেশী আসে যে এই শহর সম্বন্ধে নতুন কিছু জানানোর চেষ্টা রীতিমত ধৃষ্টতা। তাই শুধু কয়টা ছবি...
~
নেশার মেলায়..
নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে বই, সিনেমা, গান, কোমল সম্ভার কিনতে আজকাল কোন আগ্রহ পাই না। তাছাড়া, যা কিছু শক্ত, যা সংখ্যায় বেশী হলে সাথে রাখতে সমস্যা, তাতে উৎসাহ কম পাই। বই হলে পিডিএফ এ চাই; কখন কোথায় থাকি ঠিক নাই, তাই আজাইরা বুকশেলফ ভরার মানে নেই। সিনেমা আর গান হলে কোমল-অনুলিপি, আজাইরা সিডি-ডিভিডির স্তূপ করে লাভ নাই। বই, সিনেমা, গান, কোমল সম্ভার, যা কিছু ভাল, এসো আমার হার্ডডিস্কে এসো। কিন্তু বই মেলায় গেলে সব সংকল্প কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
একটা সময় ছিল যখন একুশে বইমেলায় সারা মাস প্রতিদিন হাজির থাকতাম। পিছনে তাকালে সেটা এই জীবনে নাকি গত জন্মে, নিজেরই সন্দেহ হয়। বইমেলার ওই এলাকার বাতাসে মনে হয় নেশার কিছু ভাসে, যারা যায় তারা নেশাগ্রস্থ হয়ে বার বারই যেতে থাকে।
‘৪৭ থেকে ‘৭১
১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট থেকে ১৯৭১ এর ২৬শে মার্চ পর্যন্ত আমাদের যে বিশেষ বিশেষ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলি আছে সেই দিন গুলিতে কোন দিন কি হয়েছিল, কোথায় হয়েছিল, সেই দিনগুলি কেন আমাদের জন্য গুরুত্ব বহন করে সেই সব এক জায়গায় লিপিবদ্ধ থাকা দরকার। এই বিষয় নিয়ে আমরা বন্ধু কি একটা eপুস্তক প্রকাশের উদ্যোগ নিতে পারে?
আমাদের যে ইতিহাস জ্ঞান দেখা যাচ্ছে, আমার মনে হয় এইরকম একটা eপুস্তক প্রকাশ করে সব দিকে ছড়িয়ে দেয়া অতি জরুরী হয়ে পড়েছে।
সবার মতামত আশা করছি।
~
খোঁজ দ্যা মুরগা (মুরগী হইলেও চলিবে)...
[মেসবাহ য়াযাদ ভাইয়ের বই মেলা কড়চার সূত্র ধরিয়া ইহা একটি জন-প্রণোদনামুলক পোস্ট]