নিপীড়নে লাভ হয়েছে শঙ্কা গেছে টুটি, আজকে সানীর ছুটি ও ভাই দুই বছরের ছুটি
যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সানোয়ার হোসেন ওরফে আহমেদ সানিকে অবশেষে শাস্তি(!) দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এটা এমন এক শাস্তি, যে শাস্তি পাওয়ার জন্য পৃথিবীর প্রতিটা মানুষই মুখিয়ে থাকবেন।
শাস্তিস্বরূপ সানিকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপক বানানো হলেও দেওয়া হয়েছে দুই বছরের বাধ্যতামূলক ছুটি। এই দুই বছর শাস্তি স্বরূপ তিনি কোনো কাজ না করেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেতন পাবেন!
একজন অপরাধীর জন্য এরচেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে?
এখন যদি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক এই সানিকে গুরু মেনে নেন, দু'টি বছর আরাম আয়েশে ভোগ বিলাসে কাটানোর জন্য যৌন নিপীড়নে উৎসাহী হয়ে ওঠেন?
সত্যি সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ। অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত তরুণরা যেখানে ইভটিজিংয়ের জন্য প্রকাশ্যে কানে ধরে উঠবস করতে বাধ্য হচ্ছে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিকৃত মানসিকতার শিক্ষক যৌন নিপীড়নের অপরাধে পাচ্ছেন আরাম আয়েশের জীবন! এই দুই বছর তিনি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকতার ক্ষেপ মারতে পারবেন নিশ্চিন্তে। তারপর ফিরে এসে আবারো ছুটির লোভে নিপীড়ন করবেন অন্য কোনো ছাত্রীকে!
কেন এই শিক্ষক নামের কলঙ্কটাকে চিরতরে বহিষ্কার করা হবে না বিশ্ববিদ্যালয় থেকে? কেন এমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না যাতে সে কোনোদিন কোথাও শিক্ষকতা করতে না পারে? কেন তার বিচার হবে না দেশের প্রচলিত আইনে?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আজ যে নজির স্থাপন করলেন, তার ফলাফল কতোটা ভয়াবহ হতে পারে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে?
তামাশা শুধু এখানেই নয়, আছে আরো। সেই কথায় যাবার আগে সানীর কুকর্মের ইতিহাসটা একটু ঝালিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
২০০৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর চার ছাত্রী উপাচার্য বরাবর যৌন নিপীড়নের লিখিত অভিযোগ করে সানীর নামে। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে, এবং সেই কমিটি সানীকে নির্দোষ ঘোষণা করে!
এর প্রতিবাদে ছাত্ররা রাস্তায় নামে। তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্ররা সানীকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। তবুও এই নির্লজ্জ সানী ২১ অক্টোবর নাট্যতত্ত্ব বিভাগে হাজির হলে ছাত্ররা তাকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করে।
অবশ্য এই ঘটনায় শাস্তি দিতে কর্তৃপক্ষ একটুও দেরি করে না। সেদিনই প্রশাসন ছয় ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে।
২৭ নভেম্বর মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র, নিজেরা করি, কর্মজীবী নারী, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম ও কামাল লোহানী জনস্বার্থে ঘটনার পুনঃতদন্ত, শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার ও শিক্ষককে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়াকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। গতবছর ১৭ মে হাইকোর্ট ঘটনা পুনঃতদন্ত করতে এবং ছয়জন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।
এরপর বাধ্য হয়েই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সানীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। অনেক দীর্ঘসূত্রিতার পর অবশেষে গতকাল রাতে সিন্ডিকেট সানীকে এই প্রহসন মূলক শাস্তি প্রদান করেন বাধিত করে।
আর সেই ছয় ছাত্রর কপালে কী জুটলো? তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু শর্ত প্রযোজ্য। উপাচার্য শরীফ এনামুল কবির জানিয়েছেন এই ছয় ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সব শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে!!!
কিন্তু ক্ষমা তো চাওয়া উচিত উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের, শিক্ষকের এবং সেই তথাকথিত তদন্ত কমিটির। যারা নিপীড়ক সানীর পক্ষাবলম্বন করে যাচ্ছে নির্লজ্জভাবে। তদন্ত কমিটি কোন বিচারে তাকে নির্দোষ ঘোষণা করেছিলো? নিপীড়ক শিক্ষকের যথাযোগ্য শাস্তি নিশ্চিত করা যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অন্যতম দায়িত্ব, সেখানে তারা কেন নীরব থাকলো এবং উল্টো দাবী আদায়ের আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীদের উপর লেলিয়ে দিলো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে? কেন তাদের বহিষ্কার করলো?
এই নির্লজ্জ পক্ষাবলম্বনের জন্য কেন প্রশাসনকে জবাবদিহি করা হবে না? কেন এই প্রহসনমূলক শাস্তি বহাল থাকবে? কেন তারা ক্ষমা চাইবে না ছাত্রদের কাছে?
সানীর অপরাধ ক্ষমার অনুপোযুক্ত। প্রচলিত আইনেই তার বিচার হওয়া উচিত।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ঘটনা নতুন কিছু নয়। বহু বছর ধরেই প্রশাসনের নির্লজ্জ পক্ষাবলম্বন চলছে ধর্ষক নিপীড়কদের প্রতি। এই জাতি এখনো ভোলেনি সেঞ্চুরিয়ান ধর্ষক মানিকের কথা। পুরো ছাত্রসমাজের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে ন্যাক্কারজনকভাবে মানিককে সমর্থন জানিয়েছিলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এখন তারা সানীর পক্ষে দাঁড়িয়েছে। ঠাঁয় পাশে দাঁড়িয়ে আছে আরেক যৌন নিপীড়ক আবদুল্লাহেল কাফির।
কাফি অবশ্য আরো এক কাঠি সরেস। তিনি ছাত্রী না, যৌন হয়রানি করেছে সহকর্মী এক শিক্ষিকাকে। কিন্তু অভিযোগের পরও কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়নি। এখনো নিচ্ছে না। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে হাইকোর্টে পাঠিয়েছে!
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ধর্ষক-নিপীড়ক-বান্ধব প্রশাসনের বিরুদ্ধেই এবার সরকারের ব্যাবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে। নতুবা অন্য শিক্ষকরাও দু'বছর বিনাশ্রমে বেতন ভোগ করার দারুণ এই সুযোগ লুফে নিতে পারেন।
***
তথ্যসূত্র: দৈনিক প্রথম আলো ও দৈনিক কালের কণ্ঠ
পত্রিকার রিপোর্ট নিয়ে দু'কথা: প্রথম আলো সানোয়ার হোসেনের নাম প্রকাশ করলেও আবদুল্লাহেল কাফির নাম প্রকাশ না করে বারবার 'এক সহযোগী অধ্যাপক' লিখেছে। আমরা জানি পত্রিকাগুলো নিপীড়িতের নাম প্রকাশ করে না আরো বেশি সামাজিক নিপীড়ন এড়াতে। কিন্তু কাফির বিষয়টি অবাক করেছে। তাই জানতে চাচ্ছি, কাফির বিরুদ্ধে অভিযোগ এখনো হাইকোর্ট দ্বারা প্রমাণিত না, এজন্যই তার নাম প্রকাশ করা হয়নি? কেউ জানালে কৃতজ্ঞতা বোধ করতাম।
সানীর অপরাধ তো এখন প্রমাণিত, তাহলে সানীর ছবি প্রকাশে পত্রিকাগুলোর বাধা কোথায়? এটাও জানতে আগ্রহী।
নিজেদের গায়ে আঘাত লাগার সম্ভাবনা দেখা দিলে জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষকরা ভেদাভেদ ভুলে যান। তখন কে কোন দলের, কে কোন রঙের তা বিবেচনার বাইরে চলে যায়। আবদুল্লাহেল কাফির বিরুদ্ধে আরো কিছু অভিযোগ আছে। তা সত্ত্বেও তার বহাল তবিয়তে থাকাটা আমাকে ভাবাচ্ছে। এ লোক ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।
প্রথম আলোর সংবাদটার নিচে মন্তব্য করেছিলাম - কাফি সম্ভবত ওনাদের ভাসুর হয়। তাই তার নাম মুখে নিতে লজ্জা পেয়েছেন। মন্তব্য যথারীতি অপ্রকাশিত।
সেঞ্চুরিয়ান মানিকের মতো বিদেশযাত্রাটাও ঘটিয়ে দেয়া যেতো, সবেতন বহিঃবাংলাদেশ উচ্চশিক্ষাছুটি!
শিরোনামের জন্য সাধুবাদ নিন লোকেনদা। ধিক্কার আর কতো দেয়া যায়!
মন্তব্য করুম না!!!
যত দিন সানির প্রকৃত সাজা না হয় ততদিন ধিক্কার জানাইতেই থাকব। পোষ্ট ভাল লাগল।
সানি... শিক্ষক... থুঃ
তদন্ত কমিটি... ধিক্কার
জাবি কর্তৃপক্ষ... ঘেন্না
এইসব নিয়ে আমাদের এইসব দিনরাত্রি।
দেবশ্রী রায়ের একটা সিনেমা দেখেছিলাম, নামটা মনে পড়ছে না। নিজে ধর্ষিতা তারপর মেয়ে ধর্ষিতা স্বামীর পেনশনের পাওনা টাকা তোলার চেষ্টায়। তারপর তারাপদ রায়ের কবিতার মতো দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর, নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর .........
এরমধ্যে আর একটা ফ্যাকড়া আছে, সানিরে শাস্তি দিলে সানি ছাড়বে না, তার দোসরদের গোমড় ফাঁক করবে তখন? তখন কি হবে? যতোক্ষন ধরা না পরে ততোক্ষন ভদ্রলোক, সেই ভদ্রলোকদের ভবিষ্যত রক্ষার্থে এই শাস্তি
যতোক্ষন ধরা না পরে ততোক্ষন ভদ্রলোক!
আপা, ইউ আর রাইট! বড় চোর ধরা হউক।
আসলে তাকে এই দুই বছর সুযোগ দেয়া হয়েছে আরো বেশী যৌন জ্ঞান অর্জন করে আসার জন্য...................
ভাই রুবেল শাহ,
আপনার মন্তব্য সেরা মনে হয়েছে।
আসলে আমার কাছে তাই মনে হচ্ছে............
ছুটি কোন শাস্তির বিধান হল ?
আসলে তাকেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে আরো পাকা হয়ে আসার জন্য যাতে করে অন্যদের মত আর ধরা না পড়েন।
রুবেল ভাই, সত্য।
কাজ না করে বেতন পাবে। কি মজা! একটা শিশুকে এ বিচারের রায় শুনালে, সেও হাত তালি দিবে।
বুঝতে পারছি না আমাদের না ওনাদের মাথার ভিতর 'গু' আছে!
খুবই দুঃখজনক !!!
কিন্তু এই যোগ্যতার কারণেই সে শিক্ষক হতে পেরেছিল!!!!!?
আমার ধারণা ডিপার্টমেন্টের ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করার যোগ্যতাও তার নাই। এই টাইপের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আমি দেখেছি।
প্রথম থেকেই তাদের গড়িমসি দেখে এর চাইতে বেশি কি কেউ আশা করছিল?!!
মন্তব্য করুন