নিভৃত স্বপ্নচারী'এর ব্লগ
একাত্তরের বিদেশী বন্ধুগণঃ আমাদের দুঃসময়ের সূর্যসারথি (পর্ব-১১)
জুলিয়ান ফ্রান্সিস, বৃটেন
পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ থাকেন জাঁকজমকপূর্ণ জীবনের জৌলুসের প্রতি যাদের বিন্দুমাত্র টান থাকেনা, এরা সবসময়ই মানুষের কল্যাণে কিছু করার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে থাকেন। এমন মানুষ যদিও বিরল তবুও মানবতার মহাক্রান্তিকালে এই ধরনের কিছু মানুষ ঠিকই জুটে যায়। তাঁদের দেখলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে! তেমনই একজন মানুষ জুলিয়ান ফ্রান্সিস। জন্মসূত্রে বৃটিশ নাগরিক। জন্ম ২৯শে এপ্রিল ১৯৪৫। দক্ষিন-পশ্চিম লন্ডনে শৈশব কাটানো জুলিয়ান ছেলেবেলা থেকেই স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৬৮ সালে গ্রামাঞ্চলে কাজ করার জন্য অক্সফামের একজন হয়ে চলে এলেন ভারতে। সেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে না হতেই শুরু হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। মানুষের জন্য কাজ করার জন্য যার জন্ম সে কি আর চুপ থাকতে পারে! ঝাপিয়ে পড়লেন এদেশের শরনার্থীদের সেবার কাজে।
বেলা অবেলা
খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেল রঞ্জুর। পাশ থেকে মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো মাত্র সাড়ে পাঁচটা বাজে। সেলিম ও পাভেল তখনও ঘুমাচ্ছে। আজ কয়েক রাত ধরে ঠিকমত ঘুম হচ্ছে না ওর। মায়ের কথা খুব মনে পড়ে আজকাল! প্রায় প্রতিদিনই মা’র সাথে কথা হয় তবুও মায়ের মুখটা দেখতে না পাওয়ার অতৃপ্তি যেন থেকেই যায়। আরো কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি করে অবশেষে উঠে পড়ল। হাত মুখ ধুয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এল, উদ্দেশ্য কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা।
কষ্টের ঈদ
আমাদের বিয়ের আট বছর পর এই প্রথমবার ঠিক হয়েছিল আমার স্ত্রী শ্বাশুড়ির সাথে ঈদ করবে। প্রতিবছর আমার ভাই-বোন আমার কাছে থাকেতে আগে কখনও সম্ভব হয়নি, এবার ওরা যার যার বাসায় ঈদ করাতে ঠিক হল স্ত্রী শ্বাশুরির বাসায়ই যাবে। মেয়ের যাবার কথা শুনে শ্বাশুরি খুব খুশি হয়েছিলেন। ওনাকে যে দেখাশোনা করছিল তাকে বার বার নাকি বলছিলেন-এবার আমার সব ছেলেমেয়ে নিয়ে একসাথে ঈদ করব। দীর্ঘ দুই বছর প্যারালাইসড হয়ে বিছানায় শোয়া, তবুও ছেলেমেয়েদের কাছে ভরসার স্থল। শ্বশুর জীবিত নেই, তাই সবার মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি করেন উনিই, ওনার টানেই কিছুদিন পর পর সবাই ছুটে আসে।
এলোমেলো কথামালা
শেষ হতে চলল রোজা। সামনে ঈদ, শপিং মলগুলোতে কেনাকাটার ধুম লেগে গেছে। সারা বছরের সব কেনাকাটা যেন এই ঈদের সময়টাতে সেরে ফেলবে মানুষ। গিন্নির ঈদের শপিং এর লিস্ট দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে হিসেবটা একবার মিলিয়ে নিলাম। ভয়ে ভয়ে বলি কিছুটা কাটছাঁট করা যায়না? প্রয়োজন হলে আমারটা থেকে করতে পারো, গিন্নির উত্তর শুনে দমে যাই। আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের এই এক সমস্যা, নড়াচড়ার স্কোপ নেই। অনেকেই এই সময়টায় তাকিয়ে থাকে, দিতে না পারলে দু পক্ষেরই মন খারাপ! অতএব কি আর করা! বিভিন্ন খাত থেকে টেনেটুনে বাজেট বাড়ানো ছাড়া আর কোন গত্যান্তর নেই।
গিন্নিকে বললাম তোমার বাজেট ফুলফিল করে দিলাম, এবার তুমি একাই শপিংটা সেরে ফেলো। লাভ হলনা, তাকে সঙ্গ দিতে যেতে হল। মহিলাদের সাথে শপিংএ যাওয়াটাও এক বিড়ম্বনা। বিশাল শপিং লিস্ট কিন্তু সহজে যেন কিছুই পছন্দ হয়না। ব্যাপারটা পছন্দের না, আসলে তাদের সেরাটা চাই। এই সেরাটা খুঁজতে গিয়ে সময়ের দিকে কোন খেয়াল থাকে না। এই মার্কেট সেই মার্কেট করে শেষমেশ আড়ংই পছন্দের জায়গা। তবুও খুশি যে শেষমেশ এই পর্বটা শেষ হল!
একাত্তরের বিদেশী বন্ধুগণঃ আমাদের দুঃসময়ের সূর্যসারথি (পর্ব-৯)
পর্ব উৎসর্গঃ রমা চৌধুরী
একাত্তরে সব হারানো এই মহীয়সী নারী আজও সংগ্রাম করে চলেছেন বাঁচার তাগিদে কিন্তু মাথা নত করেননি কারো কাছে। অপার শ্রদ্ধা এই একাত্তরের জননীকে।
একাত্তরে মাদার তেরেসা
মাদার তেরেসা নামটি মনে এলেই শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে। এ যেন সেবা, মানবতার আরেক রূপ! মাদার তেরেসা সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। এই মহীয়সী নারী নিজে এমনই এক স্থানে অবস্থান করছেন যে তাকে নিয়ে আলোচনা করা রীতিমত দুঃসাহসের ব্যাপার। তবে একাত্তরে তাঁর অবদান নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করা যেতে পারে। সেই চরম দুঃসময়ে তাঁর অবদানের কথা বাঙালী জাতি কোনদিনও ভুলবে না।
Those were the Days
সেই কৈশোরে গ্রাম থেকে চলে এসেছি। আজও গ্রামে গেলে ফেলে আসা দিনগুলি স্মৃতিকাতর করে তোলে। পুরনো বন্ধুদের সাথে কাটানো সময়গুলো পিছু ডাকে বার বার। সময় চলে যায় নিজস্ব নিয়মে কিন্তু কিছু কিছু মূহুর্ত, স্থান কখনও মন থেকে হারিয়ে যায়না। তেমনি কিছু কবিতা, গান নিমিষেই নিয়ে যায় অন্য ভুবনে, নস্টালজিক করে দেয়। এরকম একটি গান Those were the days.
গানটির কৃতিত্ব ‘জেনে রাস্কিন’ এর যিনি রাশিয়ান কবি Konstantin Podrevskii কবিতা থেকে তৈরি একটি রোম্যান্টিক গান Dorogoi dlinnoyu কে ইংরেজিতে রুপ দেন। সর্ব প্রথম ১৯২৫ সালে রাশিয়ান গায়ক Alexander Vertinsky এবং জর্জিয়ান গায়ক Tamara Tsereteli গানটির রেকর্ডিং বের করেন। কিন্তু ইংরেজী ভাষাভাষীদের মধ্যে গানটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মূলত ১৯৬৮ সালে Mary Hopkins কণ্ঠে, যা দীর্ঘদিন ইউএস এং ইউকে সহ বিভিন্ন দেশের টপ চার্টে ছিল। গানটি তৎকালীন সময়ে এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে পরবর্তীতে Mary Hopkins আরও চারটি ভাষায় গানটি রেকর্ড করেছিলেন। স্প্যানিশ (Que Tiempo Tan Feliz), জার্মান (An jenem Tag), ইতালিয়ান (Quelli Erano Giorni), ফ্রেঞ্চ (Le temps des fleurs)
একাত্তরের বিদেশী বন্ধুগণঃ আমাদের দুঃসময়ের সূর্যসারথি (পর্ব-৮)
আর্চার কেন্ট ব্লাড, যুক্তরাষ্ট্র
একাত্তরে আর্চার কেন্ট ব্লাড তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন কুটনীতিক হিসেবে কাজ করতেন। সেই সময়ে তিনি ছিলেন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের শেষ ‘কনসোল জেনারেল’। একাত্তরে যে ক’জন বিদেশি আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম আর্চার কে ব্লাড, যাকে বাংলাদেশের যুদ্ধবিবেকও বলা হয়ে থাকে। ‘সৃজনশীল ভিন্নমতাবলম্বী’ হিসেবে পুরস্কৃত আর্চার ব্লাড নামটি মার্কিন কূটনৈতিক মহলে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়।
শূন্য এ বুকে পাখি মোর ফিরে আয়…
বেশ কিছুদিন ধরেই মেয়েটার শরীর ভাল যাচ্ছিল না, তাই মনটাও বেশ খারাপ থাকতো। দিন দিন মেয়েটা কেমন যেন শুকিয়ে যাচ্ছিল, ওয়েট লুজ করছিল বেশ। অনেক চিন্তা হচ্ছিল, কারণ প্রতিদিনই পায়খানার সাথে রক্ত যেত। কয়েকজন ডাক্তার দেখানোর পর বোঝা গেল ছোট একটা অপারেশন লাগবে, তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। যাক, অনেকদিন পর আশ্বস্ত হওয়া গেল যে মেয়েটা সুস্থ হয়ে যাবে। মন থেকে একটা দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেল। ওর মা চিন্তিত হয়ে পড়লে তাকে অভয় দিলাম এটা নিয়ে চিন্তার কি আছে! এটা তো অনেকটা ফোঁড়া কাটার মত, কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ও সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরবে, ভয়ের কিছুই নেই। তবুও মেয়েদের মন বলে কথা, অতি অল্পতেই কাতর হয়ে যায়!
একাত্তরের বিদেশী বন্ধুগণঃ আমাদের দুঃসময়ের সূর্যসারথি (পর্ব-৭)
সিনেটর উইলিয়াম বি স্যাক্সবিকে জন রোহ্ড
একাত্তরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ইউএসএআইডির ডাক্তার হিসেবে কর্মরত জন ই রোহ্ড ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সিনেটর স্যাক্সবিকে যে চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন তা কাঁপিয়ে দিয়েছিল সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রকে। সেই চিঠিটি সিনেটে উপস্থাপিত হয় ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল। চিঠিটিতে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ সাধারণ জনগণের উপর পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক চালানো নির্বিচারে গণহত্যার চিত্রটি অত্যন্ত সুচারুভাবে ফুটে ওঠে। তার চিঠির সংক্ষিপ্ত রুপ এখানে তুলে ধরা হল-
একাত্তরের বিদেশী বন্ধুগণঃ আমাদের দুঃসময়ের সূর্যসারথি (পর্ব-৬)
জন সার - সাংবাদিক, লাইফ ম্যাগাজিন
বিখ্যাত লাইফ ম্যাগাজিনের সাংবাদিক JOHN SAAR একাত্তরের জুনে কলকাতায় এসে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন এলাকা। শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে ঘুরে ঘুরে তিনি যুদ্ধের সময়কালীন অনেক লোমহর্ষক ঘটনার চিত্র তুলে ধরেছেন আর সে সময়ের তার সাথে ক্যামেরাম্যান MARK GODFREY এর তোলা দুর্লভ ছবিগুলি আজও সেই ভয়াল কালো সময়ের সাক্ষী হিসেবে বিদ্যমান। JOHN SAAR এর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে অনেক মানুষের, শরনার্থীর সাক্ষাতকার নিয়ে প্রকাশ করেছেন। তাতে ফুটে উঠেছে অনেক নির্মম চিত্র। পাক বাহিনীর অনেক অত্যাচারের চিত্র ফুটে উঠেছে সেই লেখায়। বেঁচে পালিয়ে সীমান্তের ওপাড়ে পৌছে যাওয়া অনেকের কাছ থেকে জানা যায়- আগুন দিয়ে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া সহ নিরীহ অসহায় গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাক বাহিনী। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশু কিশোরও রক্ষা পায়নি তাদের অত্যাচারের হাত থেকে।
একাত্তরের বিদেশী বন্ধুগণঃ আমাদের দুঃসময়ের সূর্যসারথি (পর্ব-৫)
পর্ব উৎসর্গঃ অমি রহমান পিয়াল, যার লেখা না পড়লে এই পর্বটা লেখা হতোনা।
মারিও রয়ম্যান্স - লিমবার্গের থিল
ছেঁড়া জীর্ণ কাপড়ে কোনরকমে নিজের শরীর ঢেকে রাখা এক মায়ের কোলে একটি অপুষ্ট শিশু, চোখদুটো যেন ঠেলে বেরিয়ে আসছে! কিংবা পথের পাশে পড়ে থাকা মানুষের লাশ ছিঁড়ে খুবলে খাচ্ছে কুকুর... অথবা ভীত-সন্ত্রস্ত্র হয়ে লোকজন দ্বিগবিদিক ছুটছে জীবন বাঁচাতে... সবারই লক্ষ্য সীমান্ত পার হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে...
একাত্তরের বিদেশী বন্ধুগণঃ আমাদের দুঃসময়ের সূর্যসারথি (পর্ব-৩)
একাত্তরের বিদেশী বন্ধুগণঃ আমাদের দুঃসময়ের সূর্যসারথি (পর্ব-১)
একাত্তরের বিদেশী বন্ধুগণঃ আমাদের দুঃসময়ের সূর্যসারথি (পর্ব-২)
স্যার উইলিয়াম মার্ক টালি
একাত্তর, উত্তাল সারাদেশ। সর্বত্রই মানুষের মুখে শুধু যুদ্ধের আলোচনা, সচেতন বাঙালি মাত্রই সর্বদা জানতে আগ্রহী ছিল কোথায় কি ঘটেছে আর এর জন্য সবাই উন্মুখ হয়ে থাকতো একাত্তরের বিবিসিতে একটি কন্ঠ শোনার জন্য। একাত্তরের বিবিসি মানেই মার্ক টালি। তখনকার দিনে যুদ্ধের আলোচনা উঠলেই অনেকেরই প্রশ্ন ছিল বিবিসিতে আজ কি বলেছে মার্ক টালি? ধনাঢ্য ইংরেজ পরিবারের সন্তান মার্ক টালির জন্মস্থান কোলকাতা। বাবা বৃটিশ হলেও মা ছিলেন বাংলাদেশের নেত্রকোনার মেয়ে। তাইতো বাংলাদেশের সাথে তার সম্পর্ক নাড়ির।