রোমান্টিক পতন......
এক
সময়টা তখন একেবারে খারাপ চলছিলো না, ছোট্ট মেয়ে আর বউটাকে নিয়ে গৎবাধা নিয়মে জীবনটা চালিয়ে নিচ্ছিলাম, যেমন সবাই নেয় আর কি। সকলে ল্যাবে যাওয়া, দুপুরে পারলে খেতে আসা, নইলে একেবারে বিকেলে এসে পারিবারিক আবহে চা-নাস্তায় সময় পার। মাঝে মাঝে হাটতে যাওয়া নদীর পাড়ে, নইলে কারও বাসায়। আর উইকেন্ডে বাজার করা সপরিবারে। একটা সুখী পরিবারের সব গৎবাধা উপাদান নিয়েই সুখী আর কি!
কিন্তু সমস্যাটা বাধালো বাদল, আর তার কথিত অতুলনীয়া বউ নীলিমা।
আমার একবছর পর একি ইউনিতে পিএইচডি করতে আসা বাদল। দেখতে শুনতে এভারেজ, কথা-বার্তাতেও। তবে একমাত্র বিশেষত্ব হলো তার প্রতি তিনটি কথার কমপক্ষে একটা দেশে রেখে আসা তার বউ কেন্দ্রিক।
বাংগালীর বিবাহিতদের আড্ডায় ব্যাচেলরদের প্রবেশাধিকার কিছুটা নিয়ন্ত্রিত মনে হয় সবখানেই। আমাদের এখানেও ব্যতিক্রম না। তবে বাদল এক্সেস পেলো " বিবাহিত-খন্ডকালীন ব্যাচেলর" হিসেবে। সব আড্ডায় বাদল আছে, আর আছে একতৃতীয়াংশ তার বউ, ভার্চুয়ালী। কিছু উদাহরন দেই,
:ভাবী, বেগুনের টকটা খুব মজা হয়েছে, অনেকদিন এমন খাইনি। শেষ যেবার খেয়েছিলাম, যেবার নীলিমা বানিয়েছিলো, উফ এখনও তার স্বাদ জিভে লেগে আছে।
:ভাবী আপনার কানের দুলটা তো খুব সুন্দর। এখান থেকে কিনেছেন? নীলিমাকে এমনই একটা কিনে দিয়েছিলাম, সারা নিউমার্কেট-গাউসিয়া-বসুন্ধরা খুজে। উফ! সারাদিন
লেগেছে..........।
:ভাইয়া, আপনারা এই চাল খান, স্বাদতো দেশী চালের মত না একটুকুও। নীলিমা আবার ভালো চাল না হলে খেতে পারেনা, এখানে তো তত ভালো চাল পাওয়াই যায় না। উফ! আর যা দাম........।
বউকে নিয়ে কোথায় গিয়েছিলো, কি খেয়েছিলো, উইকেন্ডে কি করতো (বেডরুমের কাহিনী বাদে), বউ কত ভালো গান গায়.... এমনকি গ্রামের পথে হাটতে গিয়ে "মানব মাইন" এর উপর পা পড়েছিলো সেটাও বাদ যায় না।
কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের গা'সওয়া হয়ে গেলো, জানতাম সব কিছুর পিঠে বাদল আর পিঠে সওয়ার হয়ে নীলিমা আসবে। তবে আমাদের, মানে পুরুষ মানুষ বা স্বামীপ্রবরদের সহ্য হয়ে এলেও মেয়ে মহল বা ভাবী মহলে বাদল আর তার বউকে নিয়ে তুমুল চর্চা, প্রবাসের স্টারপ্লাসের প্রতিস্থাপক হিসেবে আর খেদ,
:"ইস! ওরা কত রোমান্টিক!"....
:বাদল ভাই তার বউকে কত ভালোবাসে.........। আর আমার জন...হুহ!
রাতে ঘুমুতে যাবার আগে নিয়মিত বউয়ের "বাদলের বউ প্রীতি বনাম আমার নির্লিপ্ততা" বিষয়ক লেকচার শোনার অভ্যাস হয়ে গেলো। মেয়ে ঘুমায় রাইমস আর ফেইরীটেল শুনে, আমি ঘুমাই ভাষন শুনে।
উইকেন্ডে মাঝে মাঝে ফাকিঝুকি দিয়ে টেনিস খেলতাম কয়েকজন, সেটাতেও বউদের হস্তক্ষেপের দুঃসংবাদ আসতে লাগলো, ঝরে যেতে লাগলো দু'একজন। আর কতিপায় সাহসী আপোষহীন পুরুষ টেনিসের পর আধঘন্টা গেজিয়ে বের করলাম, সব ভাবী একি লেকচার দিচ্ছেন আজকাল। সবার অভিযোগ আর আক্ষেপ একি, "আমার স্বামীটা রোমান্টিক না।"
বাদলের "বউ কথন" চলমান, আমাদের মানসিক পরিস্থিতি নিম্নগামী। আর ঐদিকে বাদল-নীলিমার রোমান্টিকতার কথা জ্যামিতিক হারে বাড়তে লাগলো মেয়েমহলে, আমরা অপেক্ষায় রৈলাম কবে শুনবো "ওরা এক টুথব্রাশেই দাত মাজে...."
দুই
নীলিমা ভাবীর ভিসা হয়েই ছিলো, পরীক্ষার জন্য আসতে দেরী হচ্ছিলো। আসার কথা ঠিক হলো বাদল আসার তিন মাস পর। ততদিনে বাদল আর তার সুবাদে নীলিমা ভাবী শারীরিক অনুপস্থিতি স্বত্বেও কম্যুনিটিতে একটা জায়গা করে নিয়েছে, ব্যাপক রোমান্টিক কাপল হিসেবে। তার আসার খবরে আমরা প্রমাদ গুনলাম, এতদিন তো মুখে মুখে সেলিম-আনারকলি পেছনে পরে যাচ্ছিলো, এইবার ডেমো হবে সামনা সামনি। যদিও আমার আগ্রহ ছিলো এদের কাজকারবার দেখার, কারন আমার কাছে বাদলের বর্ননা গুলো ফুলিয়ে ফাপিয়ে বলা মনে হতো। আমার ঘোর সন্দেহ ওরা এত রোমান্টিক না যতটা বলে, পুরোটাই চাল, অন্যের হিংসা উদ্রেক করার জন্য।
অবশেষে নীলিমা ভাবীর আসার দিন এলো। বাদল বেশিদিন হলো আসে নি, সুতরাং তার গাড়ী নেই। সো কে তাদের আনতে যাবে এটা নিয়ে কম্যুনিটিতে একটা ছোটখাট যুদ্ধ হয়ে গেলো, তবে শেষে দেখা গেলো, চার গাড়ীতে করে প্রায় সবাই যাচ্ছে এয়ারপোর্টে অভ্যর্থনা জানাতে। ব্যাপারটা একটু আনইউজুয়াল, একজন না আসতেই বরণ করতে ছোট্ট কম্যুনিটির সবাই মিলে তাকে আনতে ছুটে যাওয়া, নীলিমা ভাবীও মনে হয় এক্সপেক্ট করবে না এমন। তবে আমার ধারনা সবার যাওয়ার মুখ্য উদ্দেশ্য দীর্ঘদিন পর কপোত-কপোতির দেখা হবার ক্ষনটি কত রোমান্টিক হয় তা অবলোকন করা। বাদল আছে আনন্দে, একেতো বউ আসছে, তার উপর তার ম্যাজিকে পুরা কম্যুনিটি চলে গিয়েছে এয়ারপোর্টে তার বউকে রিসিভ করতে।
সবাই দাড়িয়ে আসি সার বেধে, গল্পগুজব চলছে, আর কার বাসায় ওরা আগে খাবে সেই সিডিউল ভাগাভাগী চলছে, বাদল এইফাকে টয়লেট ঘুরে এলো একবার।
অবশেষে ইমিগ্রেশনের ল্যাঠা চুকিয়ে নীলিমা ভাবীকে আসতে দেখা গেলো, বাদলের সুবাদে ছবির মাধ্যমে আমরা আগেই তার চেহারা মোবারকের সাথে পরিচিত। ট্রলি ঠেলতে ঠেলতে সে এগিয়ে আসছে, মাড়ি-দাত সব বের করে বাদল এগিয়ে যাচ্ছে, আর একপাশে ভদ্র দুরত্বে চোখ বড় বড় করে আমরা নিঃশ্বাস চেপে অপেক্ষায় আছি, কি হয়? কি হয়?
দুরত্ব কমছে তাদের মধ্যে, একেবারে হাত বাড়িয়ে ছোয়ার দুরত্ব, আমরা উৎকন্ঠায়, এই বুঝি......। না, বাদলের সামনে এসে ঝপাৎ করে হাটুগেড়ে বসে পড়লো তার বউ। "সালাম করবে নাকি পায়ে ধরে" ভাবতে ভাবতেই দেখি মহিলার দুইহাত বাদলের পেন্টের জিপারে ....।
বিশ্বাস করুন, সে যখন ঐকাজটা করছে তখন আমাদের নিঃশ্বাস থেমে গেছে, চোখ বড় হয়ে গেছে, আশ পাশ দিয়ে যাওয়া অন্যান্য যাত্রীরাও মনে হলো একটু থমকে গেলো... এই বুঝি শুরু হলো....।
আসলে হারামজাদা বাদল টয়লেট গিয়ে পেন্টের জিপার না আটকেই বের হয়ে এসেছে, ওর বউ হাটুগেড়ে বিশেষ স্টাইলে বসে ওটাই ঠিক করে দিলো।
পুরা চেহারায় বিটকেলে হাসি নিয়ে বউয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, মহিলা দেখি আসলেই ব্যাপক রোমান্টিক.......।
এই ধরনের নমুনা সব কমিউনিটিতেই একটা করে থাকে দেখি
তবে বাদলের মতো বাদলানিরাও আছে। প্রথমেতো আমি টাশকিত হয়ে গেছিলাম আমি কি ভুল করি আমার স্বামী কেনো এমন করে না আমার জন্যে? পরে দেখি ওরা বলার আনন্দেই বলে, ঘটনা আমাদের থেকেও খারাপ থাকে
যাক, তেমন কোন দুর্ঘটনা ঘটে নাই।
ভয়াবহ! দারুণ লিখছেন ...

হাসতে হাসতে কাইত ... হা হা হা ...
@তানবীরা, আসলেও সবখানেই থাকে এসব।
আর নিজের কানে ভয়ংকর ঝাড়ি খেতে শুনেছি বাদলকে, ঐটাও মনে হয় রোমান্টিক ঝাড়ি।
@মীর, সামনা সামনি দেখার সৌভাগ্য মিস হৈলো আর কি।


@ভাঙ্গা পেন্সিল, ধন্যবাদ হাসার জন্য।
@নড়বড়ে, থ্যান্কি, থ্যান্কি।
@বকলম,
নীলিমা ভাবী দেখি সেই রকম রোমান্টিক!!!
বাসায় এসে ভাবীরে বলেন নাই ''দেখেছো নীলিমা ভাবী কত কেয়ারিং!!দুলালের প্যান্টের জিপার লাগায় দেয় আর তুমিতো একদিন শার্টের বোতামও লাগায় দেও না।
''
হাহাহাহা তানবীরার চোখ জায়গামতো পড়ছে! 'আদরের দুলাল' একেই বলে
ব্যাপক মজা পাইলাম !
তবে ঘটনা বানানো মনে হচ্ছে কেন --
বিশেষ ইষ্টাইলে বসে কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ চেইন লাগায় না - বড়োজোর ইশারা দিতে পারে।
হাহাহাহহা।
সকাল বেলা এমন নির্মল আনন্দ দেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
হাহা! ব্যাপক!
মজাই মজা!
এমন পোস্ট নিয়মিত আসুক
মজারু হইছে

গত রাতের কথা মনে পড়লো মনে হয়?!
পোস্ট ভাল্লাগছে।
হা হা হা। হো হো হো।
হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়ে গেলাম।
অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম এবং গড়াগড়ি দিলাম।
এই জন্যই সেই দিন কইলেন যে আপনে পাজামা ছাড়া আজ কাইল কিছু পড়েনই না
গল্পটা পড়ে সত্যিই মজা পেলাম
।
ঝাক্কাস হইছে। হাসতে হাসতে পেটে খিল।
ঘটনা অতি রসাত্মক। পড়ার পর হাসি আসবেই। তবে আমার কাছেও গালগল্প বলেই মনে হচ্ছে কেন --
ঘটনা অতি রসাত্মক। পড়ার পর হাসি আসবেই। তবে আমার কাছেও গালগল্প বলেই মনে হচ্ছে কেন --
@রাসেল, ইয়ে, বাই এনি চান্স তোমার আরেক ডাকনাম কি দুলাল?




@আরণ্যক - ঈশান মাহমুদ, এটা তো গল্পই... কিন্তু চরিত্রগুলো সত্যি। যদি এইরাম চরিত্র আপনার আশে পাশে না থাকে তাইলে বিশাল মিস।
@লীনা দিলরুবা , থ্যান্কি।
@নাজমুল হুদা , সেটাই।
@বোহেমিয়ান, ব্যাপক রোমান্টিক আর কি..
@জয়িতা,
@নুশেরা, এটা বিয়ে বার্ষিকী উপলক্ষ্যে লেখা, মন খুব ভালো থাকলে যা হয় আরকি.।
@টুটুল, আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো আপনে ঐ লাইনটাই পিক করবেন।
@আসিফ, ইয়া নফসী, ইয়া নফসী....... বউ বিরহে কাতর একজন রোমান্টিক লুকরে কি বলেন এইসব?
@মুকুল, হে হে। ব্যাথা পাইলে আমার দোষ নাই।
@নীড় দা, থ্যান্কি। ইদানিং লেখার কিছু পাই নারে ভাই।
@মাহবুব সুমন, মাইট, কথা সত্যি।
@লিজা, টুথব্রাশের এইকরম কথা আমি শুনেছি নিজেই। আমার দুলাভাইয়ের ছোটভাই পরিবারের অমতে বিয়ে করেছিলো, আর তারা যে খুব সুখি, খুব আপন এইটা বোঝাতে এমন ডায়ালোগ দিয়েছিলো তার স্ত্রী।
@সাঈদ,
@উচ্ছল, থ্যান্কি থ্যান্কি।
অনেকদিন পোষ্ট দেন না কেন! জলদি এমন মজার লেখা দেন!
মন্তব্য করুন