আদনানের সাথে ভন্ডামী বিষয়ক কচকচানি
ঘটনাটা পুরো আদনানকে নিয়েই। আদনান মানে সেই ছেলেটা তার সাহিত্য রচনার প্রবল রোগ কিংবা ঝোক আছে, কিন্তু আরও আছে নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবার প্রবনতা। এরপরেও যদি কেউ তাকে চিনতে না পারেন তাহলে দুঃখিত, হয়তো আপনাদের না বলে অন্য কাউকে তার গল্প বলেছিলাম। যদিও আদনানকে নিয়ে যা বলতে চাইছি তা বুঝার জন্য অতীতের গল্প না জানলেও চলবে। আদনান আদনানই, প্রতি গল্পে সেই একই রকম নিত্য, মানসিকতায় শ্রেষ্ঠ ভাবার ভাবালুতায় আক্রান্ত।
আদনান নাম শুনলে যদি গাদুম-গুদুম ললি-পপ টাইপের কোন চেহারা মনে আসে তাহলে তা দুর করে দিন। এই আদনান লম্বা, কৃশ, মাথায় চুল ক্রমহ্রাসমান। সাথে ফর্সা তেকোনা মুখমন্ডল। চেহারায় শান্তির চেয়ে শ্রান্তির ছাপ বেশি, কারন সে সব সময় থাকে উত্তেজিত। সেটা নিজের চারপাশের অন্যায়-অসংলগ্নতার জন্য নাকি অবদমিত কামের বহিঃপ্রকাশ তা অবশ্য বুঝা মুশকিল।
যা হোক মুল গল্পে আসি। অনেকদিন পর আবার আদনানের সাথে দেখা। শেষ দেখায় আমার কিছু কথায় মনোঃক্ষুন্ন হয়েছিলো সে, সুতরাং সে দেখা হলে কথা না বলবে না সে আশংকা করেছিলাম। আমার আশংকা ভুল প্রমান করে সে হাসিমুখেই কথা শুরু করলো। আমিও সহজ হলাম। তবে একফাকে যখন তাকে জানালাম আমার পুর্ব আশংকার কথা, তখন গর্বভরেই সে জানালো, সে কোন প্রথাগত সামাজিকতা মেনে চলে না, সো এইসব ব্যাপার সে মনে রাখে না। সে চলে আপন মর্জি মত, কোন ধর্মগন্থ-সংবিধান তার আচরন নির্ধারন করে না।
আমি জানতাম সুযোগ পেলেই সে নিজেকে এভারেস্টে তুলে অন্যদের একহাত দেখে নেয়ার লোক, তবুও নিজের ভুলে এই সুযোগ দেয়ার নিজের উপরই রাগ উঠলো। রাগ চাপার প্রানান্ত চেষ্টা করতে করতে জিজ্ঞেস করলাম, "তো ইদানিং কি করছো?"
আদনান: এই তো, গত বই মেলায় একটা বই বেরুনোর কথা ছিলো, শেষ মুহুর্তে কেঁচে গেলো, সামনের বার যেনো সেটা বের হয় তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
আমি: কি নিয়ে সমস্যা ছিলো?
আদনান: আর বলবেন না, এরা সব পুতু-পুতু প্রেম কাহিনীর প্রকাশক, আমার রিয়েলিস্টিক-জীবন ঘনিষ্ট গল্প ছাপতেই যতো গড়িমসি।
আমি: বটেই তো বটেই তো! তো কিছু মনে না করলে কি একটু বলবে, কি ধরনের জীবন ঘনিষ্ঠ গল্প তুমি দিয়েছিলো তোমার প্রকাশককে?
আদনান: জীবন ঘনিষ্ঠ মানে জীবন ঘনিষ্ট। অর্থ্যাৎ প্রাত্যহিক জীবনে আমরা যা করি তা নিয়ে গল্প?
আমি: যেমন?
আদনান: (বিরক্ত হয়ে) এটাও বুঝলেন না। এই যেমন প্রাত্যহিক জীবনে আমরা খাই-দাই-ঘুমাই-টয়লেটে যাই, এই সব নিয়ে যে গল্প তাই জীবন ঘনিষ্ঠ গল্প।
আমি: (কিছুটা মজার গন্ধ পেয়ে) তো তোমার প্রকাশকের মুল আপত্তি কোথায়?
আদনান: টয়লেটের ব্যাপারে।
আমি: (চোখ কপালে উঠিয়ে) মানে?
আদনান: মানে আর কি, গল্পগুলোতে কয়েকটা করে টয়লেটিয় কর্মকান্ডের বর্ননা ছিলো, সেটা নাকি গল্পগুলোর সাহিত্যমুল্যকে ভীষন ভাবে ব্যাহত করেছে। উনি সেই বর্ননাগুলো বাদ দিতে বলছেন, আমি রাজি হচ্ছি না। আচ্ছা বলেন তো, টয়লেট বাদ দিয়ে জীবন হয়? যত সব ভন্ডের দল। নান্দনিকতার মাঝেই শুধু জীবন খোঁজে। জীবন মানে কি শুধু প্রেম-ঘুরে বেড়ানো আর খাওয়াদাওয়া? টয়লেট তো একটা এসেনসিয়াল পার্ট।
আমি: তাই তো। গোপাল ভাড় পর্যন্ত তার রাজার মুখ দিয়ে বলিয়েছিলেন যে টয়লেট কর্মেই প্রকৃত শান্তি।
আদনান: এক্সাটলি ভাইয়া। তবে আমি এসব শিখেছি আবার বাবার কাছ থেকে। বাবা ছিলেন বামপন্থী রাজনীতিবিদ। তবে গলাকাটা গ্রুপ না। উনি সমাজের অবহেলিত মানুষের মাঝে আমাকে নিয়ে গিয়ে "জীবন ঘনিষ্ঠ" কাকে বলে সেটা বুঝিয়েছেন।
আমি: বিষদ বলোতো, উনার কর্মকান্ড সম্বন্ধে জানতে ইচ্ছা করছে। আমার আবার বামপন্থী শুনলেই চারু মজুমদারের মত কাউকে মনে হয়।
আদনান: বাবা আমাকে নিয়ে যেতেন আমাদের শহরের মেথর পট্টিতে। জানেনতো ওরা সমাজে কত অবহেলিত-উপেক্ষিত?
আমি: হ্যা তাতো জানিই। তো তোমার বাবা তোমাকে ওখানে নিয়ে গিয়ে কি শেখাতেন?
আদনান: বাবা বুঝাতেন, আমাদের জীবনে যেমন খাওয়া ও প্রাতঃক্রিয়ার গুরুত্ব অসীম, তেমনি মেথরদের গুরুত্বও অসীম, কারন তারা আমাদের বর্জ্য গুলো পরিস্কার করে।
আমি: গ্রেট গ্রেট! অসাধারন। উনি আসলেও মানবতাবাদী ছিলেন। তো তার সাথে তোমার দেয়া জীবন ঘনিষ্ঠের সংজ্ঞার মিল কোথায়?
আদনান:(আহত স্বরে) আহা! বুঝতে পারলেননা? মেথররা যেমন সমাজের অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ, তেমনি টয়লেটক্রিয়াও জীবনের অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ। সুতরাং জীবন নিয়ে কথা বলতে হলে টয়লেটক্রিয়া মাষ্ট থাকতে হবে।
আমি: ও! তোমার বাবা ঠিক পথেই ছিলেন, কিন্তু তুমি বুঝেছো উল্টোটা।
আদনান: মানে?
আমি: মানে আর কি? তুমি উদাহরন কে বানিয়েছো ফ্যাক্ট, আর ফ্যাক্টকে উদাহরন। টয়লেটক্রিয়ার গুরুত্ব দিয়ে তোমার বাবা বুঝিয়েছেন মেথরদের গুরুত্ব। কিন্তু তুমি বুঝেছো সমাজে মেথরদের গুরুত্ব যেমন জীবনে টয়লেটের গুরুত্ব তেমন। সো তোমার কাছে জীবন ঘনিষ্ঠ কিছু লেখা মানেই টয়লেটের কথা লেখা। কিন্তু সেটা তো ঠিক না। টয়লেট করা ছাড়াও মানুষের জীবনে অনেক বড় বড় ব্যাপার আছে, সেগুলোই গল্প-উপন্যাসের জন্য যথেষ্ঠ। তুমি টয়লেটে কি করছো সেটা জানতে নিশ্চিত কেউ উৎসাহী হবে না?
আদনান: তাইলে জীবন ঘনিষ্ঠ গল্প কিভাবে হবে?
আমি: তোমার দ্বারা এই জীবনে মনে হয় হবে না, কারন তুমি যা বুঝেছো সেটা থেকে তোমাকে সরানো যাবে না। তুমি বরং সমাজ ঘনিষ্ঠ গল্প লেখো। তাতে মেথরদের জীবনের সুখ-দুঃখের কথা আসলে বরং সেটাই গ্রহনযোগ্য হবে। চাই কি তুমি বড়সর পুরষ্কার পর্যন্ত পেয়ে যেতে পারো।
আদনান: বলছেন? তাহলে জীবন ঘনিষ্ঠ কিছু লিখবো না?
আমি: সহজ করে বলি, তুমি টয়লেট নিয়ে কিছু লিখো না। বুঝোই তো সব কিছু সব খানে মানায় না। এটাকে ভন্ডামী না বলে ভব্যতা বলো, ব্যাখ্যা পাবে অনেক কিছুরই। সর্বোপরি, ভন্ডামী আর ভব্যতার পার্থক্য করতে শেখা খুব জরুরী, নিজের বসকে জিজ্ঞেস করা, "স্যার টয়লেট কেমন হলো?" কোনমতেই জীবন ঘনিষ্ঠ না। টয়লেট জীবনের অংশ হলেও এই প্রশ্ন করা অভব্যতা।
হাতে অন্য কাজ আমাকে বিদায় নিতে হয়েছিলো আদনানের কাছ থেকে, তাই জানি না আদনান ঠিক মত বুঝেছে কিনা। না বুঝার শংকা আছে বিলক্ষন। কারন সে নিজেকে মানসিকতায় অনেক উচু ভাবে, আর ভাবে সে যা করছে তাই ঠিক, অন্যরা যা করছে তা ভন্ডামী। দেখা যাক পরবর্তী বই মেলায় কি বের করে সে।





আমি নিজেও তার বই প্রকাশ হওয়ার অপেক্ষায় আছি। জানলে অবশ্যই বলবো।
বিয়াপক


আদনানদের জন্য মায়াই লাগে
আচ্ছা, পাটকেল শব্দের অভিধানিক অর্থ জানি কী ?
আদনানদের জন্য মায়া দেখিয়ে আপনি যে মহানুভবতার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করলেন তা অনন্য।
পাটকেল জিনিসটা ভালু না মনে হয়।
তাই জানি না আদনান ঠিক মত বুঝেছে কিনা। না বুঝার শংকা আছে বিলক্ষন। কারন সে নিজেকে মানসিকতায় অনেক উচু ভাবে, আর ভাবে সে যা করছে তাই ঠিক, অন্যরা যা করছে তা ভন্ডামী। দেখা যাক পরবর্তী বই মেলায় কি বের করে সে।
ধন্যবাদ।
মুল সুরটা ধরে পারার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ বোনডি।
বইয়ের অপেক্ষায় আইজুদ্দীন
অফট পিকঃ এতো বানান ভুল হলে কেমনে চলবে।বানানগুলা ঠিক করেন মিয়া।

বইয়ের অপেক্ষায় তাইলে আইজুদ্দিনও আছে...। খাইছে...।
বানান ভুল আছে কিছু, পরে ঠিক কৈরাম..।
পোস্ট ভালো লাগলো না। এইটাও চুলকানী মার্কা।
ব্যাপক স্যাটায়ার!
প্রাথমিক প্রয়াস হিসেবে খুব একটা খারাপ হয় নি, উন্-নত হওয়ার সম্ভবনা আছে। আরেকটু জোরে কোঁত দিলে জিহ্বা বের হবে, তখন লেড়ে-চেড়ে কথা বলতে পারবে। চেষ্টা অব্যহত রাখাটা জরুরী।
আপনিও দেখি টয়লেটিয় স্টাইলে কমেন্ট করলেন। আদনান খুশি হবে নিশ্চয়।
আদনান নামটা শুনলেই গাপ্পু গুপ্পু একটা আদুরে আদুরে চেহারা মনে হয় যার গাল টিপে দিতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এর গালেতো বোধ হয় হাত দেয়া ঠিক হবে না

খবরদার ভুলেও এর গালে হাত দিয়েন না।
মন্তব্য করুন