মাসব্যাপী কার্ণিভাল ০৫
জনমুখে বাস্তবতা পরিবর্তিত হয়, ক্ষেত্রবিশেষে পুনঃনির্মিত হয়।
বিএনপি আগামীকাল দেশব্যাপী হরতালের ডাক দিয়েছে, আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের বিরোধিতায় ঘটে যাওয়া সহিংসতায় খালেদা জিয়াকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়েরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ আহূত হরতালের যৌক্তিকতা বাড়াতে পূঁজিবাজারে অস্থিরতা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ইত্যাদি ইত্যাদি কারণে হরতাল ডেকেছে জনগণের বন্ধু দল হিসেবে বিএনপি, কিন্তু জনবিচ্ছিন্ন এই দলটির নিজেদেরও তেমন সুদুরপ্রসারী এবং এসব সংকট মোকাবেলার মতো পাল্টা কোনো অভিমত নেই। তারা হরতাল ডেকেছে, হরতাল ডাকলেই যেহেতু সরকারী দলই নিজেদের ছাত্র ও যুব অংশকে রাস্তায় নামিয়ে হরতাল প্রতিরোধের নামে হরতালই পালন করে ফেলে সুতরাং বিএনপি হরতাল ঘোষণা করলেই হরতাল হয়ে যায়। জনগণ হরতাল গ্রহন করলো না কি বর্জন করলো, জনগণ বিএনপির ঘোষিত দাবির বিপরীতে অন্য কোনো স্পষ্ট নির্দেশনামুলক বক্তব্য জানতে আগ্রহী কি না এসব যাচাই না করেই কিংবা জনমত যাচাই না করেই একটা হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপির নেতারা এবং সেটা মূলত সংবাদসম্মেলন করে পুরোনো অভিযোগগুলোর পুনঃবয়ান করেই আমরা হরতাল আহ্বান করছি জাতীয় বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো, আজ বিকেল থেকেই হরতালে সফল!!! করবার জন্য জনসাধারণকে সন্ত্রস্ত করতে বাসে আগুণ জ্বালানো হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় টিএসসির সামনে দুটো ককটেল বিস্ফোরিত হয়। বীরবাঙালী উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে পালানোর সময় বাস্তবতার বিনির্মান করে, তাদের জবানিতে প্রকৃত ঘটনা প্রতি ১০ ফুট পর পর বদলে যেতে যেতে যখন বইমেলার ভেতরে আমার কাছাকাছি পৌঁছালো, তখন সেটা স্পষ্ট বোমা হামলার সংবাদ, আহত-নিহতের সংখ্যা নির্ধারণী পর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই 'মুক্ত বয়ান'এর বয়ানে শুনলাম টিএসসিতে বোমা হামলা হয়েছে, কৌশিক সে সময়ে উপস্থিত ছিলো সেখানে, ও বললো বোমা না দুটো ককটেল ফাটানো হয়েছিলো।
তবে সেই ককটেল ফাটানোর প্রতিক্রিয়ায় কিংবা পুলিশী তৎপরতায় মেলায় দর্শনার্থী সমাগম ছিলো কম। রাত ৯টার সময়ও দেখলাম পুলিশ প্রতিটি ব্যক্তির ব্যাগ আর মানিব্যাগ তল্লাশী করছে, মানিব্যাগে বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখা যায় হয়তো, তবে পুলিশের এই তল্লাশীকে বাঁকা চোখে দেখবার কোনো কারণ নেই, পুলিশ নিজের দায়িত্বই পালন করছে।
সন্ধ্যার সময় বইমেলার বাইরের চত্ত্বরে যেসব স্টল রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে সেসব স্টলে গিয়ে দেখলাম তাদের নিজস্ব কোনো প্রকাশনা নেই, অনন্যা দিব্যপ্রকাশ, অন্য প্রকাশ, শিশুশিক্ষা এবং নামাজশিক্ষার বই একসাথে করে তারা বিক্রী করবার চেষ্টা করছে, যারা বিপণনের সাথে যুক্ত তাদের অধিকাংশই পার্টটাইমার, প্রতিষ্ঠানের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই, কিন্তু স্টলে সময় দেওয়ার জন্য নিয়মিত সম্মানী পান তারা।
প্রথম আলোর পাঠক সংখ্যা প্রকাশিত দৈনিকগুলোর ভেতরে সবচেয়ে বেশী, কিন্তু তাদের প্রকাশণীর প্রকাশিত বইয়ের পাঠকসংখ্যা তেমন বেশী না। চমৎকার জায়গায় স্টল হলেও সে স্টলের সামনে তেমন ভীড় চোখে পড়ে না। দু চারজন মানুষ হাতে বই উঠিয়ে দেখে নামিয়ে রাখেন। কেউ কেউ হয়তো কিনেনও তবে আমি দুই দফায় ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকেও কাউকে বই কিনতে দেখি নি। প্রথমা প্রকাশনী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের উপরে লিখেছে মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর, যদিও এই ৪০ সংখ্যাটার গুরুত্ব কি এখনও বুঝি নি আমি। স্বাধীনতা সংগ্রামের ৪০ বছর পুর্তি কোন বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ, স্বাধীনতার প্রতিটি দিনই একই রকম গুরুত্বপূর্ণ এবং একই রকম গৌরবের বিষয়, সেখানে ৪০ ৫০ এই জাতীয় সংখ্যাবাচক সংখ্যার গুরুত্বটা উপলব্ধি করতে পারি নি, কিন্তু এই দেশকে মায়ের মতো ভালোবাসা শ্লোগানটাও যেমন একটা ব্যবসায়িক কৌশল, মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর শ্লোগানটাও একটা ব্যবসায়িক কৌশল, সেটা যদি মতি মিয়ার উদযাপনের আগ্রহ থাকতো তাহলে প্রতিটি বইয়ের কভারে এটা লিখে রাখতো, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসবিষয়ক বইয়ের কভারে এটার আলাদা উপস্থিতির কোনো প্রয়োজন ছিলো না।
বাংলা একাডেমীর বইমেলা মূলত শুরু হয়েছিলো মুক্তধারার প্রকাশক চিত্তরঞ্জনের উদ্যোগেই, তিনি পথ দেখিয়েছিলেন এবং তার ধারাবাহিকতায় এখন এটা বার্ষিক একটা আয়োজনে পরিণত হয়েছে। বাংলা একাডেমী কতৃপক্ষ প্রতিবছরই মুক্তধারাকে প্রথম স্টলের সম্মান দেন। বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যেভাবে সম্মান প্রদর্শণে কুন্ঠিত তাতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পরিষদকে প্রথম স্টলের মর্যাদা না দিয়ে মুক্তধারাকে প্রথম স্টলের সম্মাননা দেওয়ায় বাংলা একাডেমীর সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু পরবর্তী স্টলগুলো কি বিবেচনায় প্রদান করা হয়েছে সেটা বোধগম্য না। বইমেলায় অংশগ্রহনের সময়সীমা, প্রকাশণার সময়কালজাতীয় কোনো ভাবনা কাজ করে নি নিশ্চিত ভাবেই, যাদৃচ্ছিক বন্টনে যার কপালে যা জুটে। তবে এইবারের বইমেলার সেরা আয়োজন স্টলের দিক নির্দেশনা দেওয়ার ডিজিটাল বন্দোবস্ত , সেখানে প্রকাশনীর নামের অদ্যাক্ষর দিলেই সেই অক্ষর দিয়ে শুরু প্রতিটি প্রকাশণীর নাম আসে, সেখান থেকে প্রকাশণীর নাম ঠিক করে দিলে স্টল নাম্বার এবং সেখানে পৌঁছানোর ম্যাপও প্রদর্শিত হয়। বাংলা একাডেমীর স্টলের সামনের এই উদ্যোগটা নতুন এবং চমৎকার একটি উদ্যোগ।
বইমেলার এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে যেখানে গিয়ে থেমে যাই সেটা লিটলম্যাগ চত্ত্বর, সেখানটা গত বছর থেকে ব্লগারদের দখলে, আমার ব্লগের স্টল থাকায় জায়গাটা অনেকটা ব্লগার্স কর্ণারে রূপ নিয়েছিলো গত বছর, এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটে নি, বিডিনিউজ২৪ডটকম ব্লগ শুরু করবার পর তাদের স্টলেও ব্লগের উপস্থিতি, তার পাশের শূণ্য স্থানটা ব্লগাররা দখল করে সর্বদলীয় ব্লগার সমিতি নাম দিয়ে দখল করে ফেললে কেমন হতো সে বিষয়ে খানিকটা হাসিঠাট্টাও হয়েছে। আজ ব্লগারদের তেমন উপস্থিতি ছিলো না। গতকাল যেমন ব্লগারদের উপস্থিতি ছিলো বইমেলায় আজ তার সিকিভাগও নেই, তবে বইমেলার প্রতিটি দিনই নিয়মিত হাজির হন মঞ্জুরুল ভাই, হাজির হয় জ্যোতির্ময় বণিক, তারেক এবং অন্যান্য ব্লগাররা। এদের বাইরে পরিচিত ব্লগার তেমন ছিলো না বললেই চলে।
আমার ব্লগের আমার প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত মাহমুদুল হাসান রুবেলের সময়রেখা গল্পের বইয়ের প্রথম গল্পটা পড়লাম স্টলের সামনে দাঁড়িয়েই, সহজ-সরল ইচ্ছাপুরণের গল্প, গত বইমেলায় নুরুল তারেকের বইতেও এমন ইচ্ছাপুরণের গল্প ছিলো। তারেক গল্পকার হিসেবে ভালো তাই তার ইচ্ছাপুরণের গল্পটা অনেক বেশী পরিশীলিত ছিলো, রুবেলের গল্পটা একেবারে বাংলা সিনেমা কায়দায় লেখা। কিন্তু অন্তর্জালে শিবিরবিরোধী লড়াই এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি ও আকাঙ্খিত ন্যায়ের প্রত্যাশাপুরণের দিক থেকে গল্পদুটো ঐক্যতানিক। তারেক ভেন্ট্রিলোকুইস্ট দিয়ে রাজাকার নেতার কানের কাছে 'তুই রাজাকার', 'তুই রাজাকার' বলে তাকে মানসিক পীড়া দিয়েছিলো, রুবেল তেমন কৌশলী বয়ানে যায় নি, সে রিকশাওয়ালাকে দিয়ে গোলাম আজমকে হত্যা করেছে, পরবর্তীতে সেই রিকশাওয়ালাকে জাতীয় বীরে পরিণত করেছে। 'রাজাকার' কিংবা 'স্বাধীনতাবিরোধী'দের রাষ্ট্রক্ষমতায় অংশগ্রহনের পীড়া এবং ন্যায়বিচার বিলম্বিত হওয়ার কষ্টবোধের জায়গা থেকে বিষয়টা নতুন প্রজন্মের আকাঙ্খার জায়গা থেকে দেখলে স্পষ্ট হয়ে যায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে কতটা আগ্রাসী ও আগ্রহী এখনকার তরুণেরা।
রুবেলের কাছেই জানলাম পিয়াল ভাইয়ের নতুন বই ' বুদ্ধিজীবী হত্যার মার্কিন দায়' এই মেলায় প্রকাশিত হওয়ার সম্ভবনা এখনও অর্ধেক অর্ধেক। গত বছর সম্পূর্ণ বইমেলা জুড়েই আমার আকাঙ্খিত বইটি ছিলো জন্মযুদ্ধ, পিয়াল ভাইয়ের বাসায় কিংবা তার বাসার সামনের চায়ের দোকানে বসে বইটির বিষয়বস্তু এবং উপস্থাপন নিয়ে বেশ অনেকটা সময় আলোচনা করে কেটেছে, বইটির রিভিউ করবার আগ্রহ, বইটির প্রচারণার আগ্রহ আমার নিজের ভেতরে কম ছিলো না, আমি মোটামুটি একটা রিভিউ তৈরি করেই রেখেছিলাম পুরোনো আলাপনের ভিত্তিতে কিন্তু পিয়াল ভাইয়ের 'আরও একটু ভালো করা যায়', একটু খাটলেই এটার চেয়ে ভালো একটা কিছু করা যেতো মানসিকতায় ডিসেম্বর, জানুয়ারী এভাবে দিন গড়াতে গড়াতে ফেব্রুয়ারীর পুরোটাই চলে গেলো, বইটি প্রকাশিত হয় নি এখনও।
এ বছরও বইমেলার আগে থেকেই এই বইয়ের কভার ডিজাইন চুড়ান্ত হয়েছে, বইয়ের কন্টেন্ট ঠিক হয়ে যাওয়ার পরও এখন সেই পরিচিত পিয়াল ভাইয়ের' আরও একটু ভালো করা যেতো' মানসিকতার খপ্পড়ে পরে বইটি আদৌ প্রকাশিত হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা কঠিন আমার জন্য।
বইমেলায় দেখা হলো মাহবুব লীলেনের সাথে, তার নতুন বই' সাকিন সুন্দরবন' প্রকাশিত হবে শুদ্ধস্বর থেকে। লীলেনের বাক্য ও বিষয় উপস্থাপন চমৎকার। বাংলাদেশের মানুষ যখন সপ্তাহান্তে গ্রামের বাড়ী না গিয়ে অন্য কোথাও যাওয়া শুরু করলো তখন থেকেই সুন্দরবন ভ্রমনার্থীর সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু এখনও সুন্দরবন মধু আর কাঠের বন হিসেবেই পরিচিত, সে কারণেই এখনও কেউ 'রয়েল বেঙ্গল টাইগার'এর কোনো বাংলা নাম দেয় নি, বিশ্বের সবচেয়ে বড় 'ম্যাংগ্রোভ' বন হওয়ার পরও বাংলাদেশের কেউই 'ম্যাংগ্রোভ' বনের বাংলা করেন নি। তবে আমার ধারণা 'ম্যাংগ্রোভ' এর একটা বাংলা প্রতিশব্দ আছে, তবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ক্ষেত্রে বিষয়টা সত্য। আমাদের ভাষায় জাতীয় পশুর কোনো শোভন বাংলা নেই। আমরা সেই ইংরেজদের জবানীতেই এটাকে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ডেকে যাচ্ছি।
তার 'সাকিন সুন্দরবন' একটা উপন্যাস আবার একই সাথে এটা ৯টা ছোটো ছোটো আলাদা গল্পের সমষ্টিও। বিষয়টা কেমন হবে আমি জানি না, কিন্তু তার নিজের অভিজ্ঞতার ভান্ডার থেকে লেখা ব্লগগুলো আমি মুগ্ধ হয়েই পড়েছি।
এবার বইমেলায় উপন্যাসজাতীয় কিছু কিনবার আগ্রহ নেই, কিন্তু জাকির তালুকদারের পিতৃঋণ কিংবা এমন নামের একটা উপন্যাসের সূচনা পড়ে উপন্যাসটার বিষয়ে আগ্রহী হলাম। উপন্যাসের বিষয়বস্তু কৈবর্ত্য বিদ্রোহ, পাল রাজাদের সময়, মানে আজ থেকে প্রায় ৭০০ বছর আগে বরেন্দ্র অঞ্চল কিংবা পন্ড্রুবর্ধনে কৃষকেরা বিদ্রোহ করে আলাদা একটা রাজ্য স্থাপন করেছিলো, সেই স্বাধীন রাজ্যের স্থায়িত্ব ছিলো ৩৭ বছর।
পরবর্তীতে অষ্টাদশ শতাব্দী ও উনবিংশ শতাব্দীতেও সেখানে কৃষক বিদ্রোহ হয়েছে, বিংশ শতাব্দীতেও সেখানে কৃষক বিদ্রোহ হয়েছে, বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের এই বিদ্রোহ প্রবনতা কি মাটির গুণ? কিন্তু এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট সেই ত্রয়োদশ শতাব্দীর কৈবর্ত্য বিদ্রোহ, বখতিয়ার খিলজী বাংলা দখল করবার পর যখন হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান হলো তখন কৈবর্ত্যদের রাজনৈতিক অধঃপতন ঘটেছিলো, আর্যবীর্যের প্রশস্তিমূলক গাঁথায়, কবিতায় এবং হিন্দুত্ববাদের জয়গানে কৈবর্ত্যরা পালরাজাদের ধ্বংসের কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলো সম্ভবত, পরাজিত সিরাজউদদৌলা যেমন বাংলাদেশীদের কাছে বিদেশী হয়েও শেষ স্বাধীন নবান ঠিক তেমন ভাবেই চতুর্দশ, পঞ্চদশ শতাব্দীতে রাজ্যচ্যুত পাল রাজাদের প্রতি সহানুভু্তির মানসিকতার কমতি ছিলো না। সেই উদ্দীপনার জায়গা থেকেই হয়তো ইতিহাসে বাঙ্গালিত্বের সূচনাকাল ধরা হয়েছে পাল রাজাদের সময়কাল, এটা নিয়ে ইতিহাসবিদদের ভেতরে মতবিরোধ থাকলেও জাকির তালুকদারের একটা পক্ষপাতমুলক অবস্থান আছে। সেই পক্ষপতামূলক অবস্থান থেকে তিনি কি লিখেছেন তা আমার জানা নেই। তবে আমি সময় পেলেই বইটা পড়বো।
আমার নিজের আগ্রহের জায়গা এখন ভাষার উপরে রাজনীতির প্রভাব এবং রাজনীতিতে ভাষার প্রভাব। কয়েকদিন আগে 'বাফড়া'র কাছে জানলাম সিলেটের নিজস্ব লিপি এখন প্রায় বিলুপ্ত এবং সেখানকার কথ্যরীতিও সমতলের বাংলার প্রভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। সিলেটের নাগরীলিপিতে একদা সাহিত্য রচিত হলেও ইদানিং কেউ সে লিপিতে সাহিত্য চর্চা করছে না। সিলেটের অসংখ্য লেখক ব্লগে সক্রিয় থাকলেও সিলেটের স্থানীয় ভাষায় তারা সাহিত্য চর্চা করে না, তাদের ভাষা ব্যবহারে এখন সমতলের স্পষ্ট ছাপ , কিন্তু অসমীয়াদের সাথে নিজেদের সাতন্ত্রতা প্রকাশে এমন কি ৪৭ এর আগে সিলেটের বাসিন্দারা নিজেদের নাগরী লিপির পরিচর্যা করতেন নিয়মিত, সিলেটের ছেলেমেয়েরা অন্য সবকিছুর সাথে নিজেদের বর্ণমালার চর্চাও শিখতো, বৃহত্তর আসামের সাথে নিজেদের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক বিভেদের কারণে না কি অন্য কোনো স্থানীয় রাজনীতির প্রভাবে সেটা প্রকট সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ঠ্য হিসেবে প্রচলিত ছিলো সেটা বাফড়া বলতে পারে নি। তবে সিলেটের রাজনৈতিক মানসে ' নিজস্ব নাগরী লিপি' ব্যবহারের একটা উদ্দীপনা স্পষ্টতঃই ছিলো।
আমার নিজের অশিক্ষিত অনুমান ' যখন সিলেট পূর্ব বাংলা তথা পাকিস্তানের অংশভুক্ত' হলো, তখন তাদের নিজেদের এই ধর্মীয় সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতার পরিচায়ক নিজস্ব লিপি, যারা অসমীয়া বর্ণমালা থেকে স্পষ্টতই পৃথক এবং সেখানে সীমিত পর্যায়ে হলেও আরবি হরফের ছোঁয়াচ আছে, সেটার প্রকটতা কমে গিয়েছিলো। বৃহত্তর অসমীয়াদের সাথে সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতা স্পষ্ট করবার বদলে পাকিস্তানের কৌমের সাথে মিলমিশের আকাঙ্খা থেকেই তারা নিজেদের রাজনৈতিক মনঃস্তত্বের পরিবর্তন ঘটিয়েছিলো, কিন্তু ভাষাভিত্তিক সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ঠ্যের বোধটুকু তাদের ভেতরে স্পষ্ট ছিলোই, সে কারণে ঢাকা শহরের বাইরে চট্টগ্রাম নয় বরং সিলেটই ভাষা আন্দোলনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশী আলোড়িত হয়েছিলো। নিজস্ব লিপি ও সংস্কৃতি অক্ষুন্ন রাখবার দীর্ঘ লড়াকু মনঃস্তত্বই ভাষা আন্দোলনে সিলেটবাসীর সক্রিয় অংশগ্রহনের অন্যতম প্রধান একটি উদ্দীপনা ছিলো।'
আমার এই অনুমাণের পেছনে বেশ গোছানো একটা রাজনৈতিক বক্তব্য থাকলেও সেটার যথার্থতা প্রতিষ্ঠিত করবার মতো তেমন জোড়ালো কোনো প্রমাণ নেই, সে কারণেই আমি সিলেটের নাগরী লিপি আর ভাষা-সাহিত্যের একটা বই কিনলাম আজকে। আমার অনুমাণ সিলেটের সাহিত্য ইতিহাসের সাথে খাপ খাচ্ছে কি না সেটা যাচাই করে দেখবার আগ্রহটা আমার আছে ।
বরাবরের মতোই লাইক করলাম। বইমেলার খুঁটিনাটি অনেক কিছু জানা যাচ্ছে আপনার লেখায়।
পিয়াল ভাই এর বই আসুক এই বইমেলায়।
আজকে বোধ হয় মুড অফ ছিল লেখকের।
রসাত্বক উপাদান কম (
এই সিরিজটা পড়ে মোটামুটি একটা ভালো চিত্র পাওয়া যাচ্ছে বইমেলার। সিরিজ চলুক।
এবার মনে হয় মেলায় যাওয়া হবে না। সময় বের করতে পারছি না।
তথ্যে একটু ভুল আছে। কৈবর্ত্যরা কৃষক না জেলে। এই কৈবর্ত্য বিদ্রোহ বাংলার ইতিহাসে চমকপ্রদ এক ঘটনা। অল্প সময়ের জন্য হলেও বাঙালির বাংলার শাসক হিসাবে প্রথম সুস্পষ্ট নজির। জাকির তালুকদারের লেখা পড়েছি বোধহয় আগে। বুঝতে পারছিনা উপন্যাসটা কেমন হবে।
ঐদিন কাউয়া আর বিলাইয়ের সাথে আলোচনা করছিলাম, এই যে বইমেলায় শত শত বই বের হয়। কিন্তু আমাদের কয়জনএমন লেখক আছে যার উপন্যাস পড়ার জন্য আমরা আগ্রহী হই? কী দীণ আমাদের কথা শিল্প।
পাল রাজারা আসলে বিদেশি ছিলনা। গোপালের জন্ম রাজশাহীতে।
তাহলে তো একটা ভুল হয়ে গেলো, কৈবর্ত্যদের সম্পর্কে লেখাটা কেমন হবে বুঝতেছি না, কিন্তু জাকির তালুকদারের পরিশ্রম যদি সামান্য অনুদিত হয় তাহলে অন্তত ইতিহাসের দিক থেকে একটা ভালো বক্তব্য পাওয়া যাবে
সিরাজউদদৌলার জন্মও কিন্তু পশ্চিম বাংলায়, কিন্তু তারা কি বাংলার মানুষের সাথে একাত্মতা বোধ করেছিলেন?
পাল রাজাদের সম্পর্কে বড় অভিযোগ, তারা স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে তাদের আস্থায় আনতে পারেন নি, আর্য্য ধর্মের মোহে স্থানীয় ধর্মমতকে উপেক্ষা করেছেন,
জন্মের বিষয়টা বলে বুঝাতে চেয়েছিলাম গোপলা বহিরাগত ছিলেননা। বাঙালিই ছিলেন। বহিরাগত আর্য হলে নিশ্চয়ই তার জন্ম পরিচয়ে ফলাও করে বলা হত/ যেটা রাজ রাজাদের ঠিকুজি দিতে ফলাও করে বলা হয়।
এইটা ঠিক ক্লীয়ার হল না। স্থানীয় ধর্ম কি হীনযান বৌদ্ধ ছিলনা?
হা হা হা !
পুরা দিলে দাগা দেয়া কথা কইলেন ! আপনজনদের বইও কিনবেন না !
দুই পোস্ট আগে সম্ভবত বলছিলেন, আপনি বাই ডিফল্ট সমালোচক।
সমালোচনার জন্য হলেওতো আমার বইটা আপনার পড়া দরকার ।
নিজের দুর্বলতাগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকলেও অন্যের চোখে সে দুর্বলতাগুলো দেখতে চাই ।
চলুক।
মন্তব্য করুন