মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা
এককেন্দ্রীক স্বৈরতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্মিত একটি সংসদে কণ্ঠভোটে আইন নির্মাণ করে একাডেমিক ফ্রিডম হরণের সুযোগ তৈরী করে রাখা-
হাইকোর্টের রায়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, পরবর্তীতে এই একাডেমিক ফ্রিডম ক্ষুন্ন করা আইনকে হাইকোর্টের কতৃত্ব হ্রাসের ঢালা বানিয়ে ফেলা-
এই শাঁখের কারাতে বেঁচে আছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা গবেষণা।
নিরপেক্ষ গবেষকদের সংখ্যাস্বল্পতায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাস চর্চা টিকে আছে বক্তিগত স্মৃতিচর্চার বয়ানে। ব্যক্তিগত স্মৃতিচর্চা অনেক সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত কৌশলী মিথ্যার চর্চা, অনেক সময় ব্যক্তিগত অক্ষমতা আড়ালের চেষ্টা হিসেবে ক্রমাগত মিথ্যা উৎপাদন করে যাওয়া।
এমন অসংখ্য মিথ্যাই জনপ্রিয় হয়েছে, কারন এটা বিবাদমান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের একপক্ষকে তৃপ্তি দিয়েছে। যেহেতু অসংখ্য মানুষই একই যুদ্ধে একই সময়ে অংশগ্রহন করেছে, অসংখ্য মানুষ এই প্রক্রিয়ার অংশ ছিলো, সুতরাং পেঁয়াজের খোসা খুলতে খুলতে অবশেষে ব্যক্তিগত মিথ্যাগুলো উলঙ্গ উদ্ভাসিত হয়।
প্রশ্ন হলো এইসব ব্যক্তিগত মিথ্যাগুলো যখন কোনো না কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পুরণ করে- সেক্ষেত্রে ইনিয়ে-বিনিয়ে- এর সাথে ওর যোগ দিয়ে হাইকোর্টে গিয়ে এমন কিছুর বিরোধিতার রাস্তা খুলে রাখা একাডেমিক ফ্রিডমে হস্তক্ষেপ।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্ম, যাদের সামনে এই মুক্তিযুদ্ধ বয়ান সংক্রান্ত রাজনৈতিক বিরোধগুলোর পর্দা উন্মোচিত হচ্ছে- সেটার সাথে মোটা দাগে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী সাধারণ যোদ্ধাদের কোন সংশ্রব নেই। একটা চলমান বিতর্ক স্বাধীনতার ঘোষনা সংক্রান্ত। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে যে দুইজনকে যুদ্ধে নামানো হয়েছে,তাদের স্ব স্ব জীবদ্দশায় এই সংক্রান্ত ঘোষণার কোনো গুরুত্ব ছিলো না। স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে তাদের ভেতরে কোনো বৈরিতাও ছিলো না। এদের ভেতরে স্বাধীনতা ঘোষণা বিতর্ক মূলতঃ রাজনৈতিক পূঁজিহীন একজন সেনাসদস্যকে প্রচারণায় সামনে এনে তার জন্যে কিছু রাজনৈতিক পূঁজি জোগাড় করা। যিনি এই প্রচারণা শুরু করেছেন তিনি তার ব্যক্তিগত ধারণা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন, রাজনৈতিক দল থেকে বহিস্কৃত হয়েছেন এবং পরবর্তীতে নিজেই একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হয়ে বসেছেন।
রাজনৈতিক পূঁজির চেয়ে বর রাজনৈতিক অন্ধত্ব- তাই স্বাধীনতার ঘোষনা বিতর্ক একপাক্ষিক আত্মহণন ছিলো না। যার নেতৃত্বগুণ নিয়ে কোনো প্রশ্ন কিংবা সংশয় নেই, তাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার প্রাণান্ত চেষ্টায় অনেক ধরণের মিথ্যে অনুমানকেও গুরুত্ব দিতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। সেই আত্মহণন প্রক্রিয়া এখনও চলমান- কিংবা হাল আমলে যখন আড়াল আরও পাতলা হয়ে আসছে- আইন আদালত ক্যাডার বাহিনী সবাই একই লক্ষ্য পুরনের চেষ্টা করছে।
দ্বিতীয় একটা চলমান বিতর্ক হলো স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত মানুষের সর্বমোট পরিমাণ সংক্রান্ত বিতর্ক। এই বিতর্কের সূচনা হয়েছিলো মূলতঃ জামায়াত- ই ইসলামের হাতে। তারা ঘাতক বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলো। তারা বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে যুক্ত। এমন কি মহল্লা মহল্লা জেলায় জেলায় শান্তিবাহিনী গঠন, পাতানো নির্বাচনে অংশ গ্রহন, লুণ্ঠন, অত্যাচারের অভিযোগের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে লাশের সংখ্যার রাজনীতি শুরুর কৌশলটা চমৎকার ছিলো। আবারও আলোচনার কেন্দ্রে শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসার পথে কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই বলেছেন ৩০ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে। এই সংখ্যটা প্রতিষ্ঠার লড়াই করার কোনো প্রয়োজন নেই- কিন্তু পরবর্তী ৪৮ বছর ধরে এই সংখ্যতাত্ত্বিক রাজনীতি চলমান। হাইকোর্টে এই বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছে। সেটার বিরোধিতা করা আদালত অবমাননা- আদালত কিভাবে অমীংসিত একটি বিষয়ে কোনো রকম সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারে - এই প্রশ্নটাও আদালত অবমাননা না করে তোলা মুশকিল।
কিন্তু এইসব বড় বিতর্কের নীচে অসংখ্য কৌশলি মিথ্যা আছে। ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণের একটা উদ্দেশ্য হলে কোনো না কোনো ভাবে হীনতার অনুভব। অনেকগুলো স্মৃতিচারণের নেপথ্য কারন লেখকের মনে হয়েছে তার যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিলো- সেটার দাপ্তরিক স্বীকৃতি পাওয়া গেলো না। যেহেতু দাপ্তরিক স্বীকৃতি নেই, তাই নিজেই স্মৃতিচারনে সব তথ্য দিয়ে রাখা।
দ্বিতীয় প্রকার স্মৃতিচারনের উদ্দেশ্য ব্যক্তিগত অপরাধ স্খলনের প্রয়াস। মোটা দাগে বাগাড়াম্বর করা।
তৃতীয় প্রকার স্মৃতিচারণের উদ্দেশ্য ব্যক্তিগত অপমানকে জানানোর চেষ্টা। একটা বিশাল মাপের যুদ্ধে যেখানে ব্যক্তির মান-অভিমান-অপমান বোধের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে বিজয়ি হওয়া এবং নিজের ও সঙ্গীর প্রাণ বাঁচানো- সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার প্রতি আস্থা রাখতে না পারা কিংবা এই রকম কোনো অঘটন সহ্য করতে না পেরে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফেরত চলে আসা- এইসব আক্ষেপ প্রকাশ, যোদ্ধা হিসেবে ব্যক্তিগত অবমূল্যায়নের সাথে অপরাপর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে হেনেস্তা হওয়ার আক্ষেপ- সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে স্মৃতচারণগুলোর সূর এই ৩ ভাগেই চলছে- হয়তো আর নিবিড় পাঠে সুক্ষ্ণ বিভাজন করা সম্ভব হবে।
সাধারন মানুষের স্মৃতিচারণেরও এমন নানাবিধ শ্রেণীবিভাজন করে সেসব নিয়ে আলোচনা করা যায়। যেহেতু সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত অবমূল্যায়ন সংক্রান্ত আক্ষেপ কম, তাদের আছে নির্যাতনের স্মৃতি- তাদের নির্যাতনের স্মৃতির সাথে রাজনৈতিক বিশ্বাসের বিষাক্ত মেলামেশা- এবং এর চেয়ে ভয়াবহ হলো ব্যক্তিগত অহং। প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে প্রয়োজনে আকাধিক মিথ্যা লিখে ফেলবে। এইসব মিথ্যাচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা যায়- সরাসরি অস্বীকার সুযোগ কম। একই মহল্লার তিনজন মানুষ একই বিষয় নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক বই লিখছেে না। অবশ্য কথ্য ইতিহাস প্রকল্প পুনরায় এইসব তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ করে দিয়েছে। সুতরাং এইসব তথ্য থেকেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচারগুলোকে আলাদা করে চিহ্নিত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতাহাস চর্চার ক্ষেত্রে পীরবাদী ধারণা প্রকট। রাজনৈতিক কারনে আমরা যাদের মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত বয়ানে আস্থা রাখি, তাদের ভ্রান্ত দাবীকে সত্য প্রমাণের জন্যে লাঠি নিয়ে ফাটাফাটি করার মতো অন্ধত্ব আমরা ধারণ করি। হাল জামানায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উৎপাদিত পীরদের ভক্তগোষ্ঠীর ব্যক্তিগত বিবেচনা ও বিশ্লেষণ ক্ষমতার অনুপস্থিতি পীড়াদায়ক না কি তাদের কোনো যৌক্তিক কারন ছাড়া ভিন্নমত পোষনকারীকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ধরে নেওয়া বিব্রতকর- এটা একটা আলাদা বিবেচনার বিষয় হতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মত প্রকাশ করে আলোচনা এইসব ভক্তকূলের ষন্ডামির বাইরে রাখা কঠিন। তারা অহেতুক শিং নেড়ে ছুটে আসবে, বিভিন্ন সুরে ডেকে গুরুত্ব দাবী করবে, এবং তাদের শোভনভাবে উপেক্ষা করার কোনো উপায় নেই।
রাজনৈতিক কারণে, ব্যক্তিগত অক্ষমতা কিংবা প্রতিহিংসা পরায়নতা নিয়ে লেখা স্মৃতিচারণের কারণে ব্যক্তি গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যে রাজনৈতিক ইতিহাস চর্চার কারণ শুধুই মাত্র রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা- এই ধরণের ইতিহাসগুলোকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। সেসবের পেছনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও পেয়াজের খোসার মতো খুলে খুলে দেখা প্রয়োজন। একবার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট করে দেখাতে পারলে- রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পুরনের জন্যে কিভাবে ধারাবাহিক মিথ্যা নির্মানের চেষ্টা হচ্ছে সেটা বুঝতে পারা সহজ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের তাৎক্ষণিক তথ্যের উৎস কোলকাতার দৈনিক পত্রিকা, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কতৃত্ব প্রকাশিত বাংলা ইংরেজী দৈনিক থেকে খুব বেশী বস্তুনিষ্ট তথ্য পাওয়া কঠিন। দ্বিতীয় উৎস ইউরোপ-আমেরিকা-আস্ট্রেলিয়ার দৈনিক পত্রিকা। এইসব দেশের সাথে আমাদের সময়ের ব্যবহান এক ধরণের সময় সংক্রান্ত বিভ্রম তৈরী করে। আস্ট্রেলিয়া আমাদের চেয়ে ৫ ঘন্টা এগিয়ে- যুক্তরাষ্ট্র ১২ ঘন্টা পিছিয়ে। সুতরাং একই তথ্য ভিন্ন দুই দিনে প্রকাশিত হচ্ছে দুটো ভিন্ন দেশের দৈনিকে- এবং এই দিন-ক্ষণ সংক্রান্ত বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার আগে তথ্যের উৎস নিয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। কোন দেশের পত্রিকা, তার সাথে আমাদের সময়ের ব্যবধান, সেসব দেশে দীনিক পত্রিকা প্রকাশিত হওয়ার স্বাভাবিক সময় রাত্র না দুপুর- এইসব তথ্য হালনাগাদ হলে কিছুটা বিভ্রান্তি এড়ানো সহজ।
বর্তমান সময়ে হাইকোর্ট-ঢাল ব্যবহার করে গবেষনাবাধাগ্রস্ত করার যে প্রয়াস- সেসবকে প্রতিহত করার জন্যে এক ধরণের সচেতন প্রতিরোধ প্রয়োজন। কিন্তু যখন গবেষক নিজেই রাজনৈতিক বিভ্রমে ভুগছে, কিংবা নিজপাণ্ডিত্যের গর্বে অন্ধ- তখন সচেতন প্রতিরোধের তাগিদের বদলে নিম্নস্বরে অভিযোগ উত্থাপনের আগ্রহটা প্রবল হয়ে উঠে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পবিত্রতা রক্ষার জন্যে ষন্ডামির পরিমাণ বাড়ছে। প্রত্যেকে যারা স্মৃতিচারণ করছে, তারা নিজস্ব বিশ্বাসের জায়গা থেকে সৎ, তারা যা বলছে- বিভিন্ন ব্যক্তিগত জায়গা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সত্য- কিন্তু বাস্তবতা হলো দৈনিক পত্রিকার পাতায় এইসবের কোনো অস্তিত্ব নেই। এবং রাজনৈতিক বাঁশী পোঁপোঁ করা ভক্তকূলের সামনে এইসব ব্যক্তিগত তথ্য অগ্রহনযোগ্য।
আমাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের উৎস হতে পারে গোয়েন্দা বিভাগের সংকলিত প্রতিবেদন। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের উৎস হইতে পারে সচিবালয়ের মাহফেজ খানা। কোর্টের দস্তাবেজ- কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধঅন্তপ্রাণ কণ্ঠযোদ্ধাদের এইসব তথ্য উৎস ঘাঁটার আগ্রহ নেই। মুজিবনগরের সংগৃহীত দলিলপত্র যাদুঘরের গ্যারেজে বস্তাবন্দী অবস্থায় বন্যার পানিতে ভিজে ধ্বংস হয়েছে। এতা আমাদের ইতিহাস সচেতনতার নমুনা। এই অব্যবস্থাপনার দায়টা সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের নয়, দোষ অবশ্যই এই জামানার মন্ত্রীর বিবেচনায় বিএনিপির। ৮৮র বন্যা কিংবা ৯৮ এর বন্যা- যেই দুই বন্যার পানিতে ঢাকা প্লাবিত হয়েছে সেটার দায় কিভাবে বিএনিপির বলা মুশকিল কিন্তু এই যে রাজনৈতিক নোংরামি- এটাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাস চর্চার মূলসুর।
গণমাধ্যম- স্মৃতিচারণে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ইতিহাস চর্চা, নির্যাতন কিংবা অত্যাচারের করুণ বর্ণনা সম্প্রচারের মনোবিকীলনের চর্চা আমাকে ক্লান্ত করে- কিছুটা লজ্জিত করে। আমার মনে হয় করুণ নিপীড়নের স্মৃতি লেখকের ব্যক্তিগত যৌনসহিংসতা চরিতার্থের পথে খুঁজছে। এই ধরণের ইতিহাসচর্চাকারী আসলে অত্যাচারের ভয়াবহতা, আক্রান্তের যন্ত্রনা বিষয়ে সহানুভুতিশীল নয়- বরং ব্যক্তিগত তৃপ্তি সন্ধানে মরিয়া। এমন যেকোনো প্রয়াসকে আমার নিন্দনীয় মনে হয়। এমন রুচিহীনতা এড়ানোর উপায় নেই। দলিল দস্তাবেজ ঘেঁটে, ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণের শব্দ শব্দ আলাদা করে যেকোনো একটা ঘটনাকে স্পষ্ট করে তোলার ক্লান্তিকর, ক্লেশকর প্রয়াস আমাকে চমৎকার লাগে। এইসব প্রয়াসে যুক্ত মানুষদের শ্রদ্ধা।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চার বিষয়ে আমাদের অক্ষমতা- অযোগ্যতা প্রকট হয়ে উঠে যখন আমরা ইউরোপ- আমেরিকার প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ১৯৭১ এর বয়ান পড়ি। সেখানের তথ্যসূত্র মূলত ভারতীয় এবং পাকিস্তানী লেখকেরা। যারা ইংরেজীতে লিখছে- তাদের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির ভেতরে একটা সামষ্টিক জাতীয়তাবাদী চরিত্র আছে। পাকিস্তানীরা নিজেদের পরাজয়কে বৈধ্যতা দিতে একটা নির্দিষ্ট পথে বয়ান চালিত করে, ভারতীয়রা নিজের কৌশলের গর্ব প্রকাশ করতে একটা সুর ব্যবহার করে। বাস্তবতা হলো মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত নথিপত্রগুলো মুক্তিযুদ্ধ সমাপ্ত হওয়ার ১ মাসের ভেতরেই ধ্বংস করে ফেলে ভারতীয় কতৃপক্ষ। নির্দোষ তথ্যগুলো বেঁচে যায়। ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণে সকল তথ্য অক্ষত পাওয়া সম্ভব না। এইসব তথ্য সংক্রান্ত ঝুটঝামেলা দিয়ে আমাদের ইতিহাস চর্চা করা কিছুটা দুরহ। তবে আমাদের অকর্মন্যতা- অযোগ্যতা পরিস্থিতিকে আরও দুরহ করে তুলেছে। আমি এতকিছু স্বত্ত্বেও চাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত গবেষণা আরও বস্তুনিষ্ট হয়ে উঠুক। তথ্যনির্ভর, বিশ্লেষণ নির্ভর হোক। রাজনীতির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সত্যতা- বস্তুনিষ্ঠতা। একাডেমিক দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ। ট্যাবু, রাজনৈতিক গোলোযোগ মুক্ত থাকার জন্যে আমাদের একাডেমিক ফ্রিডমের পরিসরটা হাইকোর্টের কাছে স্পষ্ট করতে হবে।
মন্তব্য করুন