ইউজার লগইন

ফিমেল পার্ভারসন এবং অসম্পূর্ণ ভাবনা

বিদ্যমান সমাজব্যবস্থা নারীর উপরে অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করতে চায়, তাদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ নারী পুরুষতন্ত্রের ছাঁচে বিভিন্ন ভাবে নিজের স্বপ্ন-অভিলাষ বিন্যস্ত করে এবং এভাবেই নিজেকে মানিয়ে নেয়, এই মানিয়ে নেওয়া, বিকালঙ্গ জীবনযাপনের মোহে অবশেষে যখন নারী মধ্যবয়সে নিজেকে আবিস্কার করে, সে তখন পুর্নাঙ্গ মানুষ নয়, মানুষের অভিক্ষেপ হয়তো, সভ্যতা এভাবেই বিকৃত মানুষের জন্ম দেয়। আমাদের প্রতিটি নারী এক একজন বিকৃত মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠে।

"ফিমেল পার্ভাসন" ছবিটা নারী পুরুষ সম্পর্কের নারিবাদী বয়ানকে ধরতে চেয়েছিলো, সরল সোজা নারীবাদী বয়ানটাকে হাস্যকর রকমের খেলো এবং অসম্পূর্ণ মনে হলো সে সময়ই, নারীর কামনার স্বরূপ পুরুষ বুঝতে অক্ষম, যৌনচারণে নারী সাময়িক প্রশান্তি পেলেও সম্পূর্ণ পরিতৃপ্তি পায় না কখনই, নারীর যৌনতার চাহিদা পুরুষের অজ্ঞাত থেকে যায়, সুতরাং নারীকে পরিপূর্ণ তৃপ্তির জন্য অন্য একটি নারির সাথেই সম্পর্কিত হতে হবে, নারী যৌন অভিজ্ঞতার সম্পূর্নতা দিতে পারে অন্য একটি নারী, সুতরাং আবশ্যিক ভাবেই সমকামী হয়ে যাওয়াটাই নারীবাদীদের পরিনতি।

যৌন অভিজ্ঞতার নারী-পুরুষ বৈচিত্রতা সম্ভবপর হলেও সেসব যৌনতার একরৈখিক বয়ান সম্ভব না। বিদ্যমান সমাজমানসের পুরুষতান্ত্রিকতায় বেড়ে ওঠা অধস্তন নারীদের যৌনতার অভিজ্ঞতায় তেমন একরৈখিক হওয়ার সম্ভবনা নেই। নারীর দু'পায়ের মধ্যে দিয়েই সভ্যতার নদী প্রবাহিত হয় বক্তব্যটা হাস্যকর রকমের অসৎ হলেও আমাদের সমৃদ্ধি-উৎপাদনশীলতা এবং আমাদের যৌনআগ্রাসনের ইতিহাসটা এই একটি বাক্যেই সম্পূর্ণ করা সম্ভব।

ফিমেল পার্ভার্সন ছবিটা নারীর যৌন অভিজ্ঞতার অকা্ট্য দলিল মেনে নেওয়া সম্ভবপর হলে হয়তো এত বাক্যব্যয়ের প্রয়োজন ছিলো না।সুসান স্ট্রেইটফেল্ড এবং জুলি হার্বার্ট এ ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন সাইকোএনালিস্ট লুইসি কাপলানের ফিমেল পার্ভার্সন অনুসরণ করে এবং এর পরিচালনাও করেছেন একজন নারি সুসান স্ট্রেইটফেল্ড,

লুইসি কাপলান "ফিমেল পার্ভার্সন" এ সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন নারীবিষয়ক উপকথা এবং যৌনতা বিষয়ক মীথকে প্রশ্ন করেছিলেন কিন্তু সুসান স্ট্রেইটফেল্ড কতটুকু স্বার্থকতার সাথে সেসবের চিত্রায়ন করতে সমর্থ হয়েছেন সেটা আমার পক্ষে জানা সম্ভব হয় নি, আমি লুইসি কাপলানের ফিমেল পার্ভার্সন পড়ি নি। কিন্তু ছবিতে প্রধান চরিত্রটির বিভিন্ন দোলাচল আদতে নারীবাদের প্রতিষ্ঠিত পথটাকেই অনুসরণ করে চলে, সিমোন ব্যুভের যে ধারণার জন্ম দিয়েছেন কিংবা যে বিশ্লেষণ করেছেন তা অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করে চলতে থাকা চিত্রনাট্যের সবটুকু অংশেই সামাজিক ক্ষমতার অক্ষে নারীর উপস্থিতি কিংবা তাদের নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গটি স্থুল ভাবে উপেক্ষিত থাকে,

নারী এটর্নির ভুমিকায় অভিনয় করা টিল্ডা সুইংটন নিজের অভিনয়ে পরিচালিকার মতামতকেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন দক্ষভাবে হয়তো। তার পদোন্নতি এবং তার স্থলাভিষিক্ত হওয়া অন্য নারীর সাথে তার দ্বন্দ্বের ধরণটাও হাস্যকর, মাত্র দুটো দৃশ্যেই ফ্যাশন সচেতন নারীদের ভেতরের বৈরিতা তুলে ধরে পরিচালিকা যে উপসংহার জানাতে চান তাতে প্রতিষ্ঠিত হয় নারী যখন কর্মক্ষেত্রে নিজেকে উপস্থাপন করে তখন সে নিশ্চিত করতে চায় তার এককত্ব কিংবা স্বাতন্ত্র, সে কারণেই তার পার্ফিউম অন্য কেউ ব্যবহার করলেও সেটা তার কাছে আপত্তিকর হয়ে উঠে, আর প্রতিটা নারী অন্য নারীর চোখে নিজেকে যাচাই করতে চায়, তার সাজ স্বজ্জা পুরুষের চোখে আকর্ষণীয় হয়ে উঠুক এটাই তার কাম্য নয় বরং অন্য সকল নারীর সাথেও যেনো তার বৈশিষ্ঠ্যপূর্ন স্বাতন্ত্রতা বজায় থাকে এটাও সে নিশ্চিত করতে চায়।

নারী এবং পুরুষের যৌনতার দ্বন্দ্ব হয়তো এখানে আছে, আবছা ভাবে হলেও নারীর যৌনতা নারীকে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করে কিংবা নারী যৌনতা দিয়ে নিজের অন্যান্য অতৃপ্তি অপূর্ণতা পুরণ করতে চায় এই সংবেদ দেওয়ার চেষ্টা আছে, বিপরীত ভাবে পুরুষের যৌনচাহিদার পরিতৃপ্তি নিতান্তই শাররীক, তার কামনা কিংবা কামবোধ কোনোভাবেই তার সামাজিক প্রতিষ্ঠা কিংবা সামাজিক পরিস্থিতির উপরে নির্ভরশীল না।

এত সব বিপরীতমুখী ভাবনাকে একটা দক্ষভাবে ছবিতে উপস্থাপন করা কঠিন এবং আমার নিজের অনুভুতি দিয়ে বলতে গেলে আমি বলবো এইখানে ভাবনাগুলো তেমন দক্ষভাবে উপস্থাপিত হতে পারে নি, কিংবা ফিমেল সেক্সুয়ালিটির আলাদা কোনো বয়ান এই নারী পারিচালিকা তুলে ধরতে পারেন নি, কিংবা এই বিকালঙ্গতাই হয়তো ফিমেল সেক্স্যুয়ালিটির বয়ান

ক্লেপ্টোম্যানিয়াক নারী নিজের যৌনচাহিদা পুরণ করতেই দোকান থেকে জিনিষপত্র চুরি করে ধারণাটা হয়তো পুরুষবাদী ধারণা, সেটার হয়তো কোনো গ্রহনযোগ্য ভিত্তি নেই, কোনো একটা জিনিষ আত্মস্যাৎ এর উত্তেজনার সাথে যৌনপরিতৃপ্তির ধারণাটা কিভাবে সংযুক্ত এটা হয়তো কাপলানের নিজস্ব বিবেরণীতে ছিলো, সেটার অসম্পূর্ণতা কিংবা অসারতার কোনো ব্যাখ্যাও হয়তো সেখানে ছিলো কিন্তু এখানে সংলাপের আকারে সেসব অসারতা তেমন প্রতিষ্ঠিত হয় না, তেমন ভাবেই রজ:স্বলা নারী প্রতি মূহু্তেই, প্রতিটি স্রাবের অব্যাহিত পরেই বিষন্ন হয়ে যায়,তার নারী জন্মের সম্পূর্ণতা সন্তান উৎপাদনে এবং সেটাতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিটি ব্যর্থ স্রাবেই তার বিষন্নতা বৃদ্ধি পায় জাতীয় ধারণাটাও হাস্যকর ভাবে উপস্থাপিত হয় এই ছবিতে।

ছবিটি পুরুষতান্ত্রিক ভাবনার বয়ান হতে থাকে, পুরুষ কিভাবে নারি এবং তার যৌনতাকে চিহ্নিত করে, নারী কিভাবে এর প্রতিক্রিয়ায় নিজেকে গুছিয়ে আনে এইসব দ্বন্দ্ব যতটা চমৎকারভাবে উঠে আসা প্রয়োজন ছিলো এ ছবিতে তা তেমনভাবে ফুটে উঠে না।

আমি সে কারণেই যৌনতার বয়ান নিয়েই প্রশ্ন করি, যৌনতা অন্তত তিন শতাব্দি আগেও তেমন নিষিদ্ধ কিছু ছিলো না, ইউরোপীয় ভিক্টোরিয়ান ধারণা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে হয়তো নারীকে রক্ষিতা, প্রেমিকা, স্ত্রী এবং বারবনিতার বিভিন্ন ভুমিকায় দেখে অভ্যস্ত সমাজ একগামীতায় অভ্যস্ত হয়ে উঠে নি। এখনও যে সমাজ একগামীতায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে এমন নয় কিন্তু একগামীতার সামাজিক চাহিদা তৈরি হয়েছে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

বাংলাদেশেও ৩ শতাব্দি আগে পরুতের গন্ডাখানেক স্ত্রী থাকাটা আপত্তিকর ছিলো না, মুসলমান সংগতিসম্পন্ন পুরুষের একাধিক স্ত্রীও তেমন আপত্তিকর ছিলো না সমাজে, পতিতাগমন আপত্তিকর ছিলো না, গ্রামীণ সমাজে কুলটা রমনীরা নিজের যৌনতার চাহিদায় কতটুকু কুলটা আর কতটুকু তারা পুরুষের যৌনচাহিদা পুরণ করটে কুলটা তা নির্ধারণ করবার মতো কোনো গবেষণা এখনও হয় নি এখানে, কিন্তু বিদ্যাসাগর উপলব্ধি করেছিলেন " বিধবাবিবাহ" হলে অন্তত নারীর অবৈধ গর্ভধারণের প্রকোপ কমবে, তাদের আত্মহত্যা এবং গর্ভপাতের কারণে তাদের অকালমৃত্যুর পরিমাণ কমবে , পুরুতের ষান্মাসিক যৌনবিহারের নৌকা পরীনিতা স্ত্রীর ঘাটে হয়তো এক দিনের জন্য বাধা থাকে কিন্তু সে পুরুতের দাপটে স্ত্রির সম্পূর্ণ পরিবারই ত্রস্ত থাকে, কুলসম্মান রক্ষার্থে যেসব কচি মেয়েদের বিবাহ হয় এইসব পুরুষ পুরুতের সাথে রজ:স্বলা হয়ে উঠবার আগেই এদের স্বামীদের মৃত্যু ঘটে এবং এরাই অন্যান্য সব পুরুষের আকাঙ্খা ও কামনার লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠে, তাদের শরীরসঙ্গ পাওয়ার বাসনার তীব্রতা হয়তো পারিবারিক সংঘাতের কারণ হয়, হয়তো এভাবেই তাদের গ্রাম থেকে তীর্থস্থানে পাঠিয়েও হয়তো সে পরিণতি এড়ানে সম্ভব হয় না। এদের অনেকেই অভাবের চাপে তীর্থ স্থানেই পতিতাবৃত্তি শুরু করে। এইসব সামাজিক ইতিহাসের সাথে আমাদের বিংশ শতাব্দীর রোমান্টিক একগামীতার যোগাযোগ ক্ষীণ কিন্তু এই একগামীতার ধারণার সাথে আমাদের যৌনতাবিষয়ক বিভিন্ন বিধিনিষেধের ধারণাও সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সেই সব নিষ্পেষণের ইতিহাস মাথায় রাখলে বলা যায় কে কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে নিজের যৌনতার বয়ান নির্ধারণ করবে সেটা কোনো পরিচিত পথে নির্ধারণ করা সম্ভব না, বরং প্রত্যেকে প্রত্যেকের নিজস্ব পরিস্থিতি যাচাই করেই নিজের যৌনতার চাহিদা ও পরিতৃপ্তির পথ কহুঁজে নেয়, যারা সাহসী তারা হয়তো নিজের চাহিদাকে অনুসরণ করতে পারে, এবং নিজের শাররীক তৃপ্তি খুঁজে নেয় অন্য যারা সামাজিক রক্তচক্ষুর ভীতি কাটিয়ে উঠতে পারে না, যৌন অবদমন হয়ে উঠে তাদের নিত্যকার জীবনদর্শন।

সেইসব যৌন অবদমনের কোনোটা কোনোটা হয়তো নারী এবং নারীর যৌন সম্পর্কে পরিতৃপ্ত হয়তো, কিংবা যৌনবিকৃতিতে নারী পুরুষের কামনার সমাপ্তি হয়। আমার ধারণা সামাজিক পরিস্থিতি এবং মানুষের কল্পনার বৈচিত্র এতটাই যে এমন ফিমেল সেক্স্যুয়ালিটির কোনো প্রতিষ্ঠিত ধারা বর্ণনা করা সম্ভব না।

পোস্টটি ৪ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

এস এম শাহাদাত হোসেন's picture


চমৎকার বিতর্ক জমে ওঠার অপেক্ষায় থাকলাম।

রাসেল's picture


চমৎকার বিতর্ক জমে উঠবার অপেক্ষাটাই সার হবে, সে আশা পুরণ হবে না। আলোচনায় অংশগ্রহন করবার অনীহা এর একটা কারণ আর অন্য একটা কারণ যৌনতাবিষয়ক সামাজিক ট্যাবুটা সবার ভেতরেই প্রবল।

এখানে যারা লিখছেন তাদের ভেতরে যারা পুরুষ তারা ফুলের ভেতর ভ্রমর বসা আর ফুলে ফুলে ঠোক্করের ভেতরেই আলোচনা সীমিত রাখতে চাইবেন, নিজেদের যৌনঅভিজ্ঞতা, বিষন্নতা কিংবা অতৃপ্তি কিংবা এ জাতীয় কোনো বিছানার বিষয়াসয় এখানে উত্থাপন করবেন না, এবং এখানে যেসব নারীরা পাঠক ও লেখক তারাও নিজেদের যৌনমনস্তত্ব সবার সামনে তুলে ধরতে চাইবেন না। সেটাও একধরণের ট্যাবুজনিত কারণেই। আপনি যেমন অন্য সবার আলোচনায় অংশগ্রহনের প্রতীক্ষা করছেন, সবাই একই প্রতীক্ষা নিয়ে আছেন। সুতরাং বিষয়টা আলোচনাবিহীন সমাপ্ত হবে।

এস এম শাহাদাত হোসেন's picture


আপনার আক্ষেপ সঠিক। অথচ এরকম ফোরামে অংশগ্রহণের অন্যতম উদ্দেশ্য থাকা উচিত মুক্তচিন্তার চর্চা। দুঃখজনক হচ্ছে বর্তমানে চিন্তা, বিশেষ করে বিরুদ্ধ চিন্তার চরম খরা চলছে। এজন্য আমাদের পদে পদে মূল্যও দিতে হচ্ছে।

আমাদের প্রতিটি নারী এক একজন বিকৃত মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠে।

পুরুষের মানসিক বিকলাঙ্গতা কম নেই, কিন্তু নারীর মানসিক বিকলাঙ্গতা প্রায় অনারোগ্য পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমার মতে, এখন থেকেও যদি ব্যাপক চেষ্টা করেন আমাদের নারীরা তাহলেও ২০০ বছর লাগবে গ্রহণযোগ্য মানে পৌঁছতে। তাঁরা নিজেরাও জানেন না, বনসাই জীবন স্মার্ট অ্যাপার্টমেন্টের জন্য ঠিক আছে কিন্তু প্রকৃতিতে বেঁচে থাকার জন্য ঠিক নেই।

চাঁদবেনে's picture


ভাই, আপনার দেখা পাওয়া আমার জন্য এক বিশাল আবিষ্কার। আপনি ভাই অ্যানাক্রনিজম পার্সোনিফায়েড। আপনার মত পুংগর্ভী আর দেখি নাই। বিরুদ্ধ মতের অভাব একজনের কত ক্ষতি করতে পারে আপনাকে দেখলেই বুঝি।আপনার জন্য প্রশ্ন:

১। 'গ্রহণযোগ্য মানে'র স্কেলটা কোথায় পেলেন? আপনার আবিষ্কার? একটু ধার দিবেন। কাজের জিনিষ।
২। 'প্রকৃতিতে বেঁচে থাকার জন্য ' কি কি উপাদান লাগে যা নারীর নেই?

এস এম শাহাদাত হোসেন's picture


১. আপনাদের মতো উচ্চতর পুরুষ ও নারীরা যে স্কেল তৈরি করবেন।
২. বেশ কিছু উপাদান প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। সবচেয়ে তীব্রটি হচ্ছে, পরিণাম যাই হোক, তাঁকে বিয়ে করে এটা 'ঘর' বাধঁতে হবে। একজন 'স্বামী' না থাকলে তাঁর জীবন বৃথা, বিয়ের পর সন্তান জন্ম দিতে না পারলে তাঁর জীবন বৃথা, প্রভৃতি। যা পুরুষদের অত প্রকটভাবে আক্রান্ত করে না।

আপনি ভাই অ্যানাক্রনিজম পার্সোনিফায়েড। আপনার মত পুংগর্ভী আর দেখি নাই। বিরুদ্ধ মতের অভাব একজনের কত ক্ষতি করতে পারে আপনাকে দেখলেই বুঝি।

এত দ্রুত কারো সম্পর্কে সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া সঠিক মনে হলো না।

স্কলারদের (আপনিসহ) উপলব্ধিগুলো বুঝতে চেষ্টা করে করে নিজের বোধকে সংহত করতে থাকাকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস মনে করি। তবে বেশী গভীরে যাওয়ার চেষ্টা আমার নেই, সাধারণ স্তরে থাকার মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতা রোধ করাও কম জরুরি নয়।

ভাস্কর's picture


আপনি কি বিতর্ক জমানের লেইগা এমন একটা অবস্থান নিলেন? নাকি আপনি একজন পুরুষ হিসাবে প্রতিপক্ষ নারীরে হেয় করার জন্য এইসব কইলেন বুঝলাম না।

ভাস্কর's picture


@শাহাদত সাহেব

তানবীরা's picture


সব প্রশ্নের উত্তর জানা থাকা সত্বেও আপনি কি উদ্দেশ্যে কীবোর্ডের কালি খরচ করলেন, সেটা বুঝলাম না Shock

চাঁদবেনে's picture


আপনার আগের লেখা পড়েছি। ভাল লেগেছে।আপনার সেন্স অব হিয়ুমার চমৎকার।
কিন্তু এটা অনেক অযত্নে লেখা।
১। 'পুর্নাঙ্গ মানুষে'র ব্যাপারটা খোলসা করেন।

২। আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে পুরুষতন্ত্র শুধু নারীর জন্যই 'আদর্শ ব্যবহারবিধি' দেয়, পুরুষের জন্য দেয় না, নারীকেই বিকৃত করে, পুরুষকে করে না।যে পুরুষ পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাকাঠাময় অভ্যস্ত তাকে কি বলবেন? তার মুক্তি কই?

৩। 'গ্রামীণ সমাজে কুলটা রমনীরা নিজের যৌনতার চাহিদায় কতটুকু কুলটা আর কতটুকু তারা পুরুষের যৌনচাহিদা পুরণ করটে কুলটা তা নির্ধারণ করবার মতো কোনো গবেষণা এখনও হয় নি এখানে'- এ মন্তব্য সঠিক নয়। এ বিষয়ে গবেষনা আছে। Arguing With the Crocodile: Gender and Class in Bangladesh/ Sarah White.
'কুলটা' শব্দটি খুবই জাজমেন্টাল।বাঁকা অক্ষরে লেখা উচিৎ ছিল।

৪। 'ফিমেল সেক্স্যুয়ালিটির কোনো প্রতিষ্ঠিত ধারা বর্ণনা করা সম্ভব না' - এ বক্তব্যের সাথেও একমত নই। অবশ্য আপনি যদি সিনেমায় রিপ্রেসেনটেসনের কথা না বুঝিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে খুব চমৎকার কিছু বই আছে:
ক. Kinsey Reports-Sexual Behavior in the Human Female
খ. The Female Brain/Louann Brizendine

১০

রাসেল's picture


২। আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে পুরুষতন্ত্র শুধু নারীর জন্যই 'আদর্শ ব্যবহারবিধি' দেয়, পুরুষের জন্য দেয় না, নারীকেই বিকৃত করে, পুরুষকে করে না।যে পুরুষ পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাকাঠাময় অভ্যস্ত তাকে কি বলবেন? তার মুক্তি কই?

আমার নারীবাদ সম্পর্কে আগ্রহ কম, নারীবাদ বিষয়ে ব্যপক পড়াশোনার আগ্রহটা আমার নেই বলে হয়তো এতসব বইয়ের তালিকা উদ্ধৃত করতে পারবো না, তবে নারীবাদী অবস্থান থেকে নারীর সাথে পুরুষতান্ত্রক সমাজকাঠামোর সংঘাতটা নারীকে অধ:স্তন করেছে, সুতরাং সামাজিক চাহিদা অনুযায়ী নারীকে নিজের চাহিদা এবং স্বপ্ন পুরুষতান্ত্রিকতার মাপেই সাজাতে হচ্ছে, পরিস্থিতির বদল হয়তো ঘটছে ধীরে ধীরে, জেন্ডার ইক্যুয়ালিটির ধারণাটা জাতিসংঘ এবং অন্যান্য এনজিও'র কল্যানে বিকশিত হচ্ছে। নারীর সাথে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সংঘাতে পুরুষ আক্রান্ত হয় না, মানে পুরুষের সাথে পুরুষতন্ত্রের অন্যান্য লড়াই থাকতে পারে

সামাজিক ক্ষমতার পরিমাপ এবং পরিধি নিয়ে সংঘাত থাকতে পারে কিন্তু সেখানে অধ:স্তন উর্ধ্বতন সম্পর্কটা যৌনাঙ্গে মাপা হয় না। সামাজিক পরিস্থিতিতে পুরুষ এবং অন্য পুরুষের সম্পর্কে যখন তাকে ভাবনা সংশোধনের বিধান দেওয়া হয় সেটা কিন্তু নারীবাদের পরিধির অন্তর্ভুক্ত নয়। পুরুষের বিকৃতি কিংবা পুরুষের বিকশিত হতে না পারার বাধাগুলো অর্থনৈতিক লৈঙ্গিক নয় কিংবা নারীর ভুমিকা সম্পর্কে সামাজিক মানসে যেমন দৃঢ় ধারণা বিদ্যমান সেসব বিষয় পুরুষকে সরাসরি আক্রান্ত করে না। যে পুরুষ পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোতে চিন্তা করে অভ্যস্ত সে সামাজিকঅভ্যস্ততায় জীবনযাপন করছে, তার এই ভাবনা তার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় নি।

১১

চাঁদবেনে's picture


১। বইয়ের তালিকা দিয়েছি কারণ বইগুলো মজার।

আমি ভাবছিলাম, বাসে বিক্রী হয় এমন একটা বই লিখব এগুলো নিয়ে।শুরু হবে এভাবে "আপনি কি জানেন, পুরুষরা প্রতি ৫২ সেকেন্ডে একবার সেক্সের কথা চিন্তা করে, যেখানে নারীরা করে দিনে একবার।" হাহাহা

২। সমাজ শিশুদের(ছেলে ও মেয়ে) জেন্ডার রোলগুলো শেখায় জামাকাপড়, খেলনা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে।( এ বিষয়েও একটা চমৎকার বই আছে, বইয়ের নাম দিলে আপনি রাগ করেন তাই দিলাম না)
টেক্সটের মধ্য দিয়েও করে, যেমন, ' মাইয়া মানুষ আর ঢোল মাইরের উপর রাখতে হ্য়'।

আপনি বললেন," পুরুষ পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোতে চিন্তা করে অভ্যস্ত সে সামাজিকঅভ্যস্ততায় জীবনযাপন করছে, তার এই ভাবনা তার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় নি।" তাই কি? যে ছেলে উপরের প্রবাদটিতে বিশ্বাস করে তার মানুসিকতাকে সুস্থ্য বলবেন? তার কোন ক্ষতি হয়নি? এ ভাবনা তাকে আক্রান্ত করে নি?

৩। "পুরুষের বিকৃতি কিংবা পুরুষের বিকশিত হতে না পারার বাধাগুলো অর্থনৈতিক, লৈঙ্গিক নয়" (কমা আমার) - এ ধারনাটির সাথেও একমত নই।
মানুষের মাথার যে অংশটি সেক্স নিয়ন্ত্রন করে, পুরুষের সে অংশটি নারীর দ্বিগুন। সেক্স পুরুষকে নারীদের চেয়ে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রন করে।

১২

রাসেল's picture


"পুরুষের বিকৃতি কিংবা পুরুষের বিকশিত হতে না পারার বাধাগুলো অর্থনৈতিক, লৈঙ্গিক নয়" (কমা আমার) - এ ধারনাটির সাথেও একমত নই।
মানুষের মাথার যে অংশটি সেক্স নিয়ন্ত্রন করে, পুরুষের সে অংশটি নারীর দ্বিগুন। সেক্স পুরুষকে নারীদের চেয়ে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রন করে।

প্রথমত আমার ধারণা 'সমকামিতা', 'যৌনকামনা', কামনিবৃতির মতো শরীরঘনিষ্ঠ শব্দগুলোর উপস্থিতিতেই শুরুতে বলা 'নারীর বিকৃতি' ভিন্ন দ্যোতনা নিয়ে এসেছে, নারীর বিকৃতি তার যৌনকামনাপরিপুরণ বিষয়কই নয় বরং সামাজিক প্রতিবেশ তার স্বাভাবিকতার বিরুদ্ধে কাজ করে। একজন ছেলে শিশু আর মেয়ে শিশুর প্রতিবেশ ভিন্ন, তার কাজে সমাজের প্রত্যাশা ভিন্ন, কিন্তু প্রতিটি মানুষ সমান এবং একই রকম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায় ধারণাটা বিশ্বাস করলে নারীর উপরে আরোপিত প্রতিবেশের কারণে নারী অন্য পুরুষের মতো সকল পথেই সমানভাবে গমন করতে পারে না, অন্য সবার প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করে তার চাওয়াগুলো পরিমিত পরিশীলিত হয়। সেটুকুই নারীর বিকৃতি, সেখানে হয়তো যৌনকামনানিবৃতির কিছু অংশ আছে তবে সবটুকুই যৌনকামনানিবৃতি ও সমকামিতা নয়।

সে জায়গা থেকে দেখলে পুরুষের স্বাভাবিক আচরণ কিংবা পুরুষের পুরুষালী প্রত্যাশিত আচরণের ক্ষেত্রে তার যৌনকামনা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় কি না?

পুরুষের যৌনকামনা তার প্রতিষ্ঠার পথে বাধা কিংবা তার সামাজিক গ্রহনযোগ্যতার ক্ষেত্রে কোনো রকম বাধা তৈরি করে?

পুরুষ যৌনতাড়িত কিংবা তার যৌনতাড়না তাকে অনেক কিছু করতে বাধ্য করে বিষয়টার ভেতরে "যৌনতা" অনুভবটুকু কি সামাজিক না কি জৈবিক?

স্বাভাবিক কিংবা প্রচলিত রীতিতে যৌনসংগমে অভ্যস্ত না হওয়াটা হয়তো মোটা দাগে যৌন বিকৃতি বলা যেতে পারে, কিন্তু যখন কোনো পুরুষ সমাজের চাপে বিকশিত হতে পারে না সে চাপটা আসে ক্ষমতা কাঠামো থেকে, লিঙ্গউদ্ভুত উর্ধমুখী কামচাপ তার সামাজিক প্রতিষ্ঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালে সবার আবশ্যিক ভাবে শিবলিঙ্গে দুধ কলা দেওয়া উচিত।

১৩

রাসেল's picture


৩। 'গ্রামীণ সমাজে কুলটা রমনীরা নিজের যৌনতার চাহিদায় কতটুকু কুলটা আর কতটুকু তারা পুরুষের যৌনচাহিদা পুরণ করটে কুলটা তা নির্ধারণ করবার মতো কোনো গবেষণা এখনও হয় নি এখানে'- এ মন্তব্য সঠিক নয়। এ বিষয়ে গবেষনা আছে। Arguing With the Crocodile: Gender and Class in Bangladesh/ Sarah White.
'কুলটা' শব্দটি খুবই জাজমেন্টাল।বাঁকা অক্ষরে লেখা উচিৎ ছিল।

"সারাহ হোয়াইট" অষ্টাদশ শতকের নারীদের পরিস্থিতি এই সময়ে বাংলাদেশের শ্রেণী ও লৈঙ্গিক মন:স্তত্ব নিয়ে গবেষণা করে নির্ধারণ করে ফেলেছে ভাবনাটা আমাকে চমৎকৃত করলো। 'কুলটা' শব্দটা জাজমেন্টাল হয়তো কিন্তু সে জাজমেন্ট যে সময়ের বাস্তবতা সে সময়ের বাস্তবতার প্রেক্ষিতে 'কুলটা' শব্দের অর্থটা ছিলো যে কূলের সম্মান নষ্ট করবার মতো কাজ করে। নারী যখন বিবাহবহির্ভুত সম্প্কে জড়িয়ে পড়ে কিংবা কূলের পুরুষের অধ:স্তন না থেকে নিজ দায়িত্বে অন্য কোনো সম্পর্ক দীর্ঘায়িত করে সেসব কূলের সম্মানকে ভুলুণ্ঠিত করে।

এই সামাজিক মানসটি পুরুষকে নারীর রক্ষণাবেক্ষণের ভার প্রদান করে, নারীর ভরনপোষণের দায়িত্ব প্রদান করে পুরুষকে, পুরুষ তার কর্তব্য সমাধা করবে এবং নারী কোনো সংশয় এবং প্রশ্ন উত্থাপন না করেই পুরুষকে অনুসরণ করবে ধারণাটার সাথে কুলটা শব্দটা সাংঘর্ষিক। 'কুলটা' রমণী পুরুষের নির্ধারিত কাঠামোতে নিজের সতীত্ব ও যৌনাঙ্গের বিশুদ্ধতা রক্ষা করতে অসমর্থ এবং যৌনাঙ্গের পরিশুদ্ধতার উপরে যখন কূলের সম্মান অসম্মান নির্ধারিত হয় তখন নারীর যৌনাঙ্গে যে শিশ্ন প্রবিষ্ট হচ্ছে সেটার বৈধতা নির্ধারণ করে পুনরায় সমাজ এবং কূল। বৈধতা অবৈধতা অষ্টাদশ শতকের মাপেই বিচার করতে হবে, সেটা বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ নিয়ে দেখলে হবে না। সতীত্ব শাররীক বিশুদ্ধতার ধারণা এখন ততটা প্রয়োজনীয় নয়, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে, কিন্তু এখনও সেটা বিলীন হয়ে যায় নি বলে আমরা অনেক ধরণের বাক্যব্যয় করছি, আমাদের সামাজিক মূল্যবোধের দোহাই দিতে অভ্যস্ত হচ্ছি, আমার ধারণা সারাহ হোয়াইটের চোখে যে সমাজটা ধরা পরবে সেটা আমাদের সমাজের অনুলিপি হবে না। আমাদের সামাজিক মন:স্তত্ব উপলব্ধি করতে হলে আমাদের সমাজ কাঠামো উপলব্ধি করতে হলে এই সংস্কৃতির ভেতরে প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠতে হবে, কেউ ৬ মাস, ২ বছর গ্রামে গিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়ে সেই সোশ্যল টেক্সচার বুঝে ফেলতে পারলে খুব আনন্দের বিষয় হতো, সংকটের বিষয় হলো,দীর্ঘ দশ বছরের সাধনার পরেও কোনো বিদেশীই একটি দেশের সকল বাগধারার অর্থ বুঝতে পারে না, একটা মানুষের মন:স্তত্ব বুঝে ফেলবে বিষয়টা একটু বেশী মাত্রার বাড়াবাড়ি হয়ে দাঁড়ায়।

কেউ হয়তো হোাইটের পরে শুরু করবে, সে হয়তো আরও ভালো ভাবে বিষয়টা বিশ্লেষণ করবে। এটা আশা করা যায় কিন্তু তাকে সম্পূর্ণ বুঝতে হলে এই সমাজের ভেতর থেকেই উঠে আসতে হবে।

১৪

চাঁদবেনে's picture


১। আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে কুলটাদের সামাজিক স্টেটাস বেড়েছে বা শব্দটির অর্থে পরিবর্তন এসেছে! আসেনি। জেনেভা কনভেনসানে ধর্ষনকে পর্যন্ত ফিজিকাল টর্চার হিসেবে রাখেনি...সব সম্ভ্রম-টম্ভ্রম...হাস্যকর ক্রেপ...

২। কোন জায়গার উপর গবেষনা করতে গেলে একজন বিজ্ঞানীকে অনেকগুলো শর্ত পালন করতে হয়। ঐ জায়গায় জন্মাতে হবে এটা বাধ্যতামুলক না।এটা হলে নৃতত্ত্ব বিষয়টিকেই বাদ দিতে হবে।

১৫

রাসেল's picture


কুলটাদের সামাজিক স্ট্যাটাস বাড়ে নি কিংবা কমে নি বরং এইসব সম্পর্কগুলোর গ্রহনযোগ্যতা বাড়ছে, এখন বিবাহপূর্ব, বিবাহবহির্ভুত শাররীক সম্পর্ক ততটা মারাত্মক প্রভাব রাখে না, শাররীক বিশুদ্ধতার ধারণা কিংবা আদর্শের প্রতিমূর্তি হয়তো এখনও টিকে আছে, মধ্যবিত্তের জবান আর ভাবনার বাইরে এইসব শাররীক বিশুদ্ধতা অন্য কোথাও নেই।

শাররীক বিশুদ্ধতাবাদী বিকার বিবেচনা করলে আগেকার মধ্যবিত্ত এবং এখনকার মধ্যবিত্তের ভেতরে মানসিকতার তফাতটা বুঝা যায়, গ্রামীণ সমাজের বদ্ধ ক্ষেত্রেও এইসব পরিবর্তন আসবে ধীরে ধীরে সুতরাং এই সময়ে দাঁড়িয়ে সেইসময়ের কল্পনা সম্ভব, নৃতত্বের অর্ধেক অনুমান, অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে জোড়া দেওয়ার কৌশল বলা যায় এটাকে, সামাজিক পরিবর্তনের গবেষণায় হয়তো সেইসব জার্গনের মূল্য আছে কিন্তু নৃতত্ববিদ যেভাবে বলছে সামাজিক পরিবর্তনের সেটাই একমাত্র পন্থা ছিলো কিংবা সেটাই গ্রহনযোগ্য পন্থা এমনটা নিশর্ত মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমি কিঞ্চিৎ সংরক্ষণশীল।

সমাজ 'ক' এবং সমাজ 'খ' অতীতে একই রকম ছিলো, পরবর্তীতে সমাজ 'ক' এবং সমাজ 'খ' এর ভেতরে আচরন ও মানসিকতার কারণ বয়ানটাতে পরিবর্তিত মানসিকতার বিবরণ থাকবে কিন্তু নৃতত্ববিদ যে বয়ান দিবেন এই পরিবর্তনের সেটাই একমাত্র বয়ান বিবেচিত হলে সেটার ভবিষ্যত বলে দেওয়া সম্ভব হতো। সেটা যখণ সম্ভব হবে এবং যখন একটি মাত্র গ্রহনযোগ্য ধারা থাকবে তখন আমি নৃতত্বকে প্রকৃতবিজ্ঞানের স্বীকৃতি দিবো।

১৬

রাসেল's picture


৪। 'ফিমেল সেক্স্যুয়ালিটির কোনো প্রতিষ্ঠিত ধারা বর্ণনা করা সম্ভব না' - এ বক্তব্যের সাথেও একমত নই। অবশ্য আপনি যদি সিনেমায় রিপ্রেসেনটেসনের কথা না বুঝিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে খুব চমৎকার কিছু বই আছে:
ক. Kinsey Reports-Sexual Behavior in the Human Female
খ. The Female Brain/Louann Brizendine

"নারীর যৌনতার অনুভব একরৈখিক"

আপনি এটা বিশ্বাস করেন, সেটা কি পুরুষতান্ত্রক চিন্তাকাঠামোর ত্রুটি হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে?

পুরুষের যৌনতার অনুভব কি একরৈখিক?
পুরুষের যৌনতার প্রকাশ কি একরৈখিক?
পুরুষের যৌনসম্পর্ক স্থাপনের পরিস্থিতি, সেখানে নিজের ভুমিকা এবং নিজের ক্ষমতার পরিসর নির্ধারণ করাটা কি ব্যক্তিনিরপেক্ষ?

আপনি দুটো বইয়ের নাম ধরে দিয়েছেন, নারী কেনো কামার্ত বোধ করে, নারীর কামমন:স্তত্ব এবং কামনিবৃতির বিষয়ে সেখানেও কিছু ধারণা প্রতিষ্ঠিত করবার চেষ্টা হয়তো আছে, কিন্তু সেটা কি সকল নারীর প্রতিনিধিত্ব করে?

"নারীর মস্তিস্ক" শব্দটাও অনেক বেশী পুরুষালী, সেসব বাক্য এবং শব্দ নিয়ে আমরা আলোচনা করবো না, নারী দুর্বল, নারীকে সব সময় রক্ষা করতে হবে, পুরুষের দায়িত্ব নারীর ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহন করা, তাকে সকল বিপদআপদ থেকে রক্ষা করা, রাস্তার ইভটিজার থেকে শুরু করে কামুক স্কুল মাস্টারের পীড়ন সবকিছু থেকেই নারীকে রক্ষা করবার দায়িত্ব পরিবারের পুরুষের।

অন্য সকল পুরুষ তার পরিবারের নারীদের শরীর হাতাতে উদগ্রীব ভাবনাটুকু অশালীন, একই রকম অশালীন ভাবনা হলো পরিবারের সদস্য হিসেবেই একটি নারীর যৌননিগৃহণ থেকে রক্ষা করবার দায়িত্ব পুরুষের আছে, নারীর নিজস্ব ক্ষমতা নেই ভাবনাটুকু নারীকে দুর্বল ভাববার পরিণতি। এই একটা জিনিষ স্পষ্ট করে সামাজিক ভাবে পুরুষ সকল নারীকেই বিছানায় নিতে চায়, যার কৌশল ভালো সে নারীকে বিছানায় নিয়ে যেতে পারে, বিছানায় নিজের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে, অনেক কিছুই বলা যায়, কিন্তু এইসব বিষয়াসয় ব্যক্তিনির্ভর। সেটা ঢালাওভাবে সবার উপরে চাপিয়ে দেওয়া যায় না।
ধর্ষণের বিবর্তনবাদ কিংবা কাছাকাছি শিরোণামের একটা বই আছে, সেখানে বিবর্তনের সাথে পুরুষ এবং নারীর ভুমিকা কিভাবে পরিবর্তিত হয়েছে সেসব ব্যখ্যা করবার চেষ্টা আছে, সেটাও অবসরে পড়ে ফেলতে পারেন।

১৭

চাঁদবেনে's picture


১। Kinsey Reports - বইয়ের লেখক একজন বিজ্ঞানী, তিনি ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষার(দেখতে পর বইটি প্রকাশ করেছেন। আমার জানা মতে বিজ্ঞানকে অবজেকটিভ( একে আপনি 'ব্যক্তিনিরপেক্ষ' পড়তে পারেন) নলেজই বলে।

Louann Brizendine ও একজন বিজ্ঞানী। এবং এটা বিজ্ঞানের বই ই।

৮০'র দশকে লিওতার রা বিজ্ঞানের জ্ঞানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন।আপনিও চাইলে করতে পারেন।

২। "নারীকে সব সময় রক্ষা করতে হবে, পুরুষের দায়িত্ব নারীর ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহন করা, তাকে সকল বিপদআপদ থেকে রক্ষা করা, রাস্তার ইভটিজার থেকে শুরু করে কামুক স্কুল মাস্টারের পীড়ন সবকিছু থেকেই নারীকে রক্ষা করবার দায়িত্ব পরিবারের পুরুষের।"
--আফগানিস্তান আক্রমনের আগে মেরিন করপ্সের সদস্যরা বলেছিলেন, আমাদের উদ্দেশ্য,আফগানিস্তান মেয়েদের রক্ষা করা। হাহাহা

--নারীদের রক্ষা করতে হবে।
--কার হাত থেকে?
-- কামুক পুরুষের হাত থেকে।
--কে করবে?
--পুরুষ।
বাহ...
এন্টিবায়োটিকের ধারনা মনে হয় এখান থেকেই এসেছ।

১৮

রাসেল's picture


নারীর মস্তিস্কের ওজন পুরুষের মস্তিস্কের চেয়ে কম সুতরাং নারীদের বুদ্ধি কম- এটা তথ্য এবং তথ্যের ব্যাখ্যার জন্য যথেষ্ট বিবেচিত হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু সেটা কি মেনে নেওয়া যায়?

নারীর শাররীক কাঠামো, নারীর আভ্যন্তরীণ গঠন পুরুষের তুলনায় ভিন্ন রকমের, সেটা স্পষ্ট দেখা যায় কিন্তু সেটা দিয়ে কোনো ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভবপর?

আমি বইটা পড়ি নি সুতরাং ব্যাপক গবেষণা ও পরীক্ষা নিরিক্ষার পর বৈজ্ঞানিক Kinsey Reports যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন সেটাকে সম্মান করা যায় কিন্তু "সেক্সুয়াল বিহেভিয়র ইন হিউম্যান ফিমেল" যেভাবে নারীর কামভাবনাকে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে সেটাকে প্রশ্ন না করার কোনো কারণ নেই।

মানুষের মস্তিষ্কের বিশেষ একটা অংশ যৌনতাড়িত হলে উদ্দীপ্ত হয়, ভীত হলেও সেই অংশটুকুর কাছাকাছি অংশগুলো উদ্দীপ্ত হয়, উত্তেজনা, শাররীক প্রস্তুতি জাতীয় বিষয়গুলোতেও সেইসব অংশগুলো উদ্দীপ্ত হয়, পুরুষ বিশেষত শ্রমঘনিষ্ঠ কাজ করে বলে তাদের সে অঞ্চলাটা নারীর তুলনায় বলিষ্ট হওয়ারও একটা সম্ভবনা আছে, আমি মাথায় ইলেক্ট্রোড লাগিয়ে বিভিন্ন অংশের তড়িৎ প্রবাহের পরিমাণ মেপে ভীতি, যৌনউত্তেজনা, শাররীক প্রস্তুতি এবং ক্ষুব্ধ হওয়া জাতিয় সকল জায়গাতে এই অঞ্চলের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির প্রমাণ পেতে পারি,
ধরা যাক কেউ চেয়ারের পা দেখলে কামার্ত হয়, এখন গবেষণার প্রয়োজনে তার মাথায় তার লাগানোর পরপরই দেখা গেলো সে উত্তেজিত, সেটাকে কি যৌনতাড়না হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে না কি সেটা ক্ষোভ কিংবা দ্বেষজনিত উত্তেজনা ধরে নেওয়া হবে?

১৯

রাসেল's picture


নারীবাদীদের দৃষ্টিতে পূর্নাঙ্গ মানুষের একটা ধারণা আছে যে মানুষ নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারে, নিজের রক্ষানাবেক্ষণ করতে পারে এবং নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী জীবিকানির্বাহ এবং নিজের পরিপার্শ্ব নির্ধারণের ক্ষমতা রাখে, যে নিজের সম্পর্কগুলো নিজের বিবেচনা অনুযায়ী তৈরি করতে এবং ধ্বংস করতে সক্ষম।

নারীবাদী মানুষের নারীদের জন্যও এমন সব ক্ষমতা চান। প্রকৃত মানুষের মনুষত্ববোধ কতটা থাকবে, যে কতটুকু প্রেমিক হবে, কতটুকু কোমল হবে এইসব বিষয়ে কোনো পরিমাপ লেখা নেই, কারণ একজন মানুষের মানসিক অনুভব তার পূর্নাঙ্গ মানুষ বিবেচিত হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু না।

২০

চাঁদবেনে's picture


১। নারীবাদকে হোমোজেনাস ধরছেন। এটার মধ্যে অনেক বিভক্তি আছে।
যেমন, ব্যুভয়ারের মতে, পুরুষ হল মানুষের আদর্শ; ডোনা হারাওয়ের মতে, সাইবর্গ হল মানুষের আদর্শ।
সুতরাং 'নারীবাদীদের দৃষ্টিতে' না বলে নাম উল্লেখ করলে ভাল হত।
এখানে দেওয়া মানুষের ধারণা অনেক এক্সিস্টেনসিয়াল শুনাচ্ছে। ব্যুভয়ারের?

২। "কারণ একজন মানুষের মানসিক অনুভব তার পূর্নাঙ্গ মানুষ বিবেচিত হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু না।"- আপনার চিন্তার সাথে আমার পার্থক্য মনে হয় এটাই। আমি মনে করি 'মানসিক অনুভব'ই সবকিছু। এটাই একটা মানুষকে অন্য মানুষ থেকে আলাদা করে। তার সকল কাজ এটা থেকেই উৎপত্তি লাভ করে, তাকে ডিফাইন করে।

২১

এস এম শাহাদাত হোসেন's picture


আমি মনে করি 'মানসিক অনুভব'ই সবকিছু। এটাই একটা মানুষকে অন্য মানুষ থেকে আলাদা করে। তার সকল কাজ এটা থেকেই উৎপত্তি লাভ করে, তাকে ডিফাইন করে।

একমত। তবে এই অনুভবের জন্য সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা শুধু নারী নয়, পুরুষকেও করতে হবে। নিজের স্বার্থেই।

২২

চাঁদবেনে's picture


অবশ্যই

২৩

চাঁদবেনে's picture


ব্যাপক আলোচনা হল। আর বাড়াচ্ছি না। চিরকাল কেবল নারীরাই পরীক্ষা দিল, সতীত্বের, শক্তির, বিকৃতির, মেধার। আমাদের উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় তাত্বিক একজন মহিলা, গায়ত্রী স্পিভাক চক্রবর্তী।অথচ কালই হয়ত কোন মেয়েকে পরীক্ষা দিয়ে দেখাতে হবে তার মেধা 'মানসম্মত' কিনা। আর কত? আসুন এবার ছেলেদের পরীক্ষা নেই।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.