কবিতার আস্তাবল ০৩
এটাকে অনায়াসে বলা যায় একজন কবির চোখে বাংলাদেশ ২০০১ কিংবা বলতেও পারিস যদি কখনও অস্ত্র তুলে নেয় হাতে সে অস্ত্র গর্জাবে কোন বুকে-
প্রত্যেকেই জানে একজন কবির চোখ আর একজন রাজনৈতিকের চোখে পার্থক্য আছে, কবির চোখের আড়ালে থাকে স্বপ্নীল চশমা এবং যেকোনো দৃশ্যের গভীরে যায় তার চোখ, আর রাজনৈতিকের চোখে থাকে আদর্শের কবচ যা ভেদ করে কোনো দৃশ্যই নেতা দেখতে পারেন না। আর দু'জনের গন্তব্যেও আছে বিস্তর ফারাক।
একজন যা নিজের জন্য করেন তা হয়ে যায় সার্বজনীন আর অন্যজন তার সার্বজনীন তত্ত্বের বুলি কপচে যা করেন তা হয়ে যায় একান্তই ব্যক্তিবিলাস। কবি নামক লোকটা কখনও প্রতিষ্ঠা পান, কখনও পান না কিন্তু সকলেই তাকে চেনে আর এমন অনেকেই এদের মধ্যে আছে যাদের চেনে শুধুমাত্র ডাকপিওনের ঝুলির অসংখ্য হলুদ খাম
মা-বাবা-সাংসারিক কুশল সংবাদ আর অসুস্থতা দু:খের গল্পে ভারী হাজার হাজার ছোটো ছোটো জীবনের গল্প ডাকপিওন পৌঁছে দেয় যাদের ঠিকানায় তাদের সকলেই সম্মিলিত ভাবে একজন, সে রাম-শ্যাম-যদু-মধু- রহিম- করিম যেকোনো একজন, যার প্রতিটি পরিবর্তিত ঠিকানা ডাকপিওন জানে। অথচ এই শহরে আমরা তাকে খুঁজেও পাবো না। তারা প্রতিদিন রাস্তায় নামে, ঠক বাটপারি করে কিংবা নেহায়েত গোবেচারা নিরীহ জনগন, রোজ বাসে রিকশায় টেম্পোতে বা হেঁটেই জনারণ্যে মিশে ও হারিয়ে যায়। রাত হলে বাসায় স্ত্রীর আঁচলে মুখ লুকিয়ে সুখস্বপ্ন দেখে- ইদানিং তারা কেমন আছে আমার জানা নেই।
তবে এইসব মানুষকে বোঝা যায়, এইসব রামশ্যামযদুমধু বেঁচে থাকে বিশেষণ ভুবনে- তারা প্রতিটা শব্দের আগে ও পরে অনাবশ্যক একটা বিশেষণ জুড়ে দিয়ে বলে মোটামুটি বেঁচেই আছি বলা যায়- সংশয় ছায়ার মতো এদের পেছনে পেছনে হাঁটে, এরা জানে না ভালো বা মন্দ থাকা কি- সুখ দু:খ আনন্দ বা বেদনার কোনো গল্পই স্পর্শ্ব করে না এদের, তবে চায়ের কাপের তুমুল ঝড়ে এরা বলে দিতে পারে দেশটা কিভাবে চলা উচিত যেই উচিত পথে দেশ কখনও চলে না, বরং দেশ চলে সেইসব বিশেষণসেবক লোকদের পথে যারা বক্তৃতায় গলার রক্ত উঠিয়ে কখনও জয়বাংলা জিন্দাবাদ হাঁক দেয়, কখনও অমুক-তমুক নিপাত যাক বলে মিছিল নিয়ে বাধায় যানজট এবং এদের সেইসব মেকী দু:খবোধ , সেইসব মাছের কান্না আর সেইসব অবাস্তবায়নযোগ্য স্বপ্ন যা তারা মঞ্চে ফেরী করে এবং সেইসব গরঠিকানা মানুষ যারা সেই স্বপ্ন দুচোখে মেঝে সন্ধ্যায় বাড়ী ফেরে তাদের হিসেবে সামান্য গোলমাল হয়ে গেছে এই ২০০১ এ।
যেকোনো অদৃশ্য কারণে যখন তখন হঠাৎ বোমাবিস্ফোরিত হয়ে গরঠিকানা বেশ কিছু মানুষ যাদের ডাকপিওন চিনতো তারা শহরের বুক থেকে মুছে যায়। তাদের বেনামি চিঠিগুলো ডাকবাস্কে পঁচতে থাকে।
আর পৃথিবীর বয়েস বাড়ে ১ ২ ৩
মানুষের সংখ্যা বাড়ে ১ ২ ৩
আর শহরে বাড়ে এপার্টমেন্ট বিল্ডিং
আর সেইসব মৌমাছির চাকে অসংখ্য
গরঠিকানা মানুষ বাসা বাধে
দরজায় নেমপ্লেট ঝুলিয়ে দিব্যি
১০০০/ দারোয়ান
১০০০/ নানাবিধ বিল
১০০০/ চিকিৎসা ফান্ড
উহ এই বছর বাবা-মাকে দেওয়া হলো না কিছুই
মাঝরাতের আকাশে হাজার হাজার নগ্নলীলা ভাসে , কেউ কেউ তার দিয়ে সেইসব নগ্নিকাদের টেনে নামায় ড্রইং রুমে , হাত মারে, ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরে, কিন্তু বাংলাদেশ ২০০১ নামে একটা অধ্যায় পুনর্লিখিত হওয়ার আশা নিয়ে দিন গুনে, ক্যালেন্ডারের পাতা বদলায়, চলে আসে পহেলা বৈশাখ
উগ্রবাঙালীরা পিলপিল ছুটে যায় রমনার বটমূলে
পান্তা-ইলিশের সানকি ৫০০ টাকা ক্ষতি নেই
একদিনের এরিস্টোক্রেট বাঙালীর পাশেই বেলুন হাতের গোবেচারা মধ্যবিত্ত বাবা ছেলের হাতের বেলুন দুলিয়ে হাঁটে, এসো হে বৈশাখ শুনে
শুনে বেমক্কা বোমা বিস্ফোরনের শব্দ, তারপর নয়টা ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন লাশ আর গুরুতর আহত আরও চৌদ্দ জন যায় বঙ্গবন্ধু সরকারী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আর বাকি সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ী পৌঁছে দেওয়া হয়
আর এক একটা সান্তনাবানীসহ চিঠি এবং প্রেসরিলিজ যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, কতিপয় দুস্কৃতিকারীর বোমাহামলায় রাম শ্যাম যদু মধুর একজন মৃত্যু বরণ করেছেন। তার অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীর ভাবে শোকাহত
প্রধানমন্ত্রী আরও একটু সাহসী হয়ে তার ছেলে মেয়ের শিক্ষার সার্বিক দায়িত্ব তুলে নেন তার নাজুক কাঁধে
সরকার বদলায় নিয়মতো- কিন্তু সেইসব অপেক্ষমান চিঠির পাহাড় আর সেইসব বেলুন ফট্টাস হারিয়ে যায়
তুমি আমার হারিয়ে যাওয়া নাগরিক সভ্যতা
ঘাসের মধ্যে তোমায় খুঁজেছি একা একা
আমাকে খুঁজো না বলে কোন এক অতল শহরে
ডুবে গেলে
আমি স্টেশন উপরে বাড়ী বয়ে আনি
তন্ন তন্ন করে সব খুঁজে দেখি
তুমি নেই।
আমি বাসস্টপে সবটা দুপুর একলা পায়ে দাঁড়িয়ে থাকি,
একখানা চোখ পথের বুকে একটা অতলে ডুবিয়ে রাখি
তুমি নেই
হয়তো তেমনভাবে গদ্য কবিতায় খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়- একটা নদী বা একটা নারীর খোঁজ করে যাওয়া এতটা সহজ নয়।
তুমি হারিয়ে যাওয়া কোন সভ্যতা, কোনোও পুরোনো নদীর বাঁকে লুকিয়ে আছো, তোমাকে খুঁজছি কিন্তু নদী যেভাবে পথ বদলে ফেলে, নতুন বাঁকে যায়,সেভাবে দেখলে কাউকে খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। এইসব কেজো মানুষের ভীড়ে আমার সঙ্গীন অবস্থাটাও বোঝার মতো
ভেবে দেখো ডাকপিওন অসংখ্য মানুষের ভীড়ে একটা সুতোর মতো, একটা অসম্পূর্ণ মালা গেঁথে রেখেছে, বিভিন্ন বাড়ীর নাম লেখা সেখানে, প্রতিদিন এক একটা নতুন ঠিকানায় এক একটা হলুদ খাম পৌঁছে যায়, কিন্তু খামগুলো সব একই ঠিকানা থেকে আসে না, কত সুতো দুহাতে জড়িয়ে ডাকপিওনটা ঠিক ঠিক সুঁতোতে গিঁট দিয়ে আমাদের মধ্যে একটা সেতু বাঁধছে এটা আমি তুই যেভাবে বুঝবো সেভাবে বুঝবে কি অন্য লোক।
সবার চোখে একটা দায়িত্ব্বের গরজ , ওটা আমরাও মানি কিন্তু চোখটা পাল্টালে একই দৃশ্যের অন্য রকম একটা প্রভাব থাকে। সেই দেখার চোখটা কার আছে?
############
আমি একটা সময় চিঠি লিখতাম- খুব সীমিত কয়েকজন মানুষকেই- তবে কারণে অকারণে অনেক চিঠিই লেখা হতো-কোনো প্রাপকবিহীন চিঠিগুলো পরবর্তীতে পাঠানো হতো না, সম্ভবত চিঠিটা লেখা হওয়ার পরে সেটার ভেতরে এক ধরণের কবিতার সম্ভবনা খুঁজে পেতাম-
এমন কবিতা জুড়ে জুড়ে মধ্যাংশে কবিতা লিখে যাকে চিঠি পাঠাতাম এ চিঠিটা তার উদ্দেশ্যে নয়, তাকে আমি কখনও তুই সম্বোধন করি নি। সম্ভবত কোনো বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে চিঠিটা শুরু হয়েছিলো তবে কেনো পাঠানো হয় নি মনে পরছে না।
অপেক্ষায় ছিলাম আপনার লেখার জন্য।
আজ কি মন খুব বেশি খারাপ?
'তুমি নেই',
কি নিদারুন এক হাহাকার!
পুরোটাই একটা কবিতা? নাকি কবিতাই নয়! হিসেব মেলানোর অংশটা বেশ লাগলো। ম্যালথাস কিন্তু বলেছে-জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ে (খাদ্য গাণিতিক), তাহলে পৃথিবীর আর জনসংখ্যার বাড়ার হার কি একই হবে? (মজাক করলাম)
দারুণ
আমি বাসস্টপে সবটা দুপুর একলা পায়ে দাঁড়িয়ে থাকি,
একখানা চোখ পথের বুকে একটা অতলে ডুবিয়ে রাখি
তুমি নেই
পড়তে পড়তে খেই হারিয়ে ফেলছিলাম, পুরোটাই কি কবিতা?
এইটাকে ঠিক কবিতা বলা যাবে না, এটা চিঠি, তবে এর ভেতরে কিছু অংশে কবিতা হওয়ার সম্ভবনা ছিলো, আমি ডাকপিওন- গরঠিকানা মানুষ আর ডাকপিওনের হাতের চিঠি দিয়ে সবাইকে সংযুক্ত রাখবার বিষয়টাকে অনেক বেশী সম্ভবনাময় মনে করেছিলাম। তবে মনে পরছে না সেসব ব্যবহার করে পরবর্তীতে কোনো কবিতা লিখেছি কি না। একবার লিখে ফেললে সেসব আর মাথায় থাকে না বিবেচনায় সম্ভবত চিঠিটা বন্ধুকে পাঠানো হয় নি, কিংবা হতে পারে এ চিঠি পাঠানোর মতো বন্ধুর ঠিকানা আমার কাছে ছিলো না।
ভালো লেগেছে
মনতব্য লিখতে সাহস হয়না । পুরো লেখাটাই কবিতা হয়ে গেছে রাসেল ভাই ! স্যালুট !
মন্তব্য করুন