হহুম
আমি পারতপক্ষে চিত্রপ্রদর্শনীতে যাই না, মুক্ত চলচিত্র উৎসব এড়িয়ে যাই, তারা যা বিবৃত করতে চান আমার ছোট্ট মাথার অনেক উপর দিয়ে সেসব চলে যায়, নিতান্ত বেকুবের মতো কি হলো কি বুঝলাম কি হতে পারতো দ্বন্দ্ব আর ধন্দের ভেতরে সংশয়ে বসবাস আমার নিতান্তই অপছন্দ।
উদ্দেশ্যমুখী শিল্পোৎপাদনের রাজনৈতিক সচেতনতা আমার নেই, অনেকেই নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে শিল্প-সংস্কৃতিতে নিজের বক্তব্য কিংবা উপলব্ধি তুলে ধরতে চান, কিন্তু শিল্পকে কিছু না কিছু হয়ে উঠতেই হবে, সেখানে শিক্ষনীয় কিছুর উপস্থিতি একান্তই বাঞ্ছনীয় এমন নীতিবাগিশতাও এক ধরণের নৈতিক শৃঙ্খল।
তবে আমার নিজের কাছে প্রতিটি শিল্প এক ধরণের যোগাযোগ, যে যার নিজের স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে নিয়ে একটা মাধ্যমে নিজের ভাবনা প্রকাশ করতে চায় কিংবা নিজের ভাবনাহীনতাও সম্ভবত। সেই ভাববিনিময়ের জায়গায় এক ধরণের অভ্যস্ততা কিংবা চর্চা থাকতে হয়। চলচিত্র কিংবা গানের মতো কিংবা কবিতা গল্প উপন্যাসের মতো মুক্ত পরিসরে নিজের ভাবনার বিস্তার ঘটানোর সুযোগ মুক্ত স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচিত্রে য়াছে কি না আমি জানি না কিন্তু একটা ক্যানভাসে নির্দিষ্ট একটা বক্তব্য সকলের বোধগম্যতার পর্যায়ে নিয়ে যেতে অধিকাংশ সময়ই আমাদের চিত্রশিল্পীরা ব্যর্থ।
আমি অবশ্য খুব বেশী কিছু চাই না, একটা ছবি দেখে এক ধরণের অনুভব হবে সে অনুভবটুকু সাথে নিয়ে আমি ফিরে আসবো এমন সহজসাধ্য চিত্র সম্ভবত আমাদের চিত্রশিল্পীরা আঁকতে চান না। তারা বিদগ্ধ মানুষদের জন্য উঁচু মাপের ছবি আঁকেন সেটা ক্যানভাস উলটে দেখলেও আমার জন্যে একই রকম, ক্যানভাসকে ডানে বামে সামনে পিছনে অনেক দিকে ঘুরালেও আমার কাছে সেসব রঙতুলির পোঁচ বাঙ্ময় হয়ে উঠে না।
এবার দ্বিবার্ষিক এশিয়ান চিত্র উৎসবে গিয়ে বুঝলাম আমার ছবিনির্বুদ্ধিতার বিন্দুমাত্র উন্নয়ন ঘটে নি। দ্বিতীয় তলার গ্যালারীতে বাংলাদেশের শিল্পীদের স্থাপনা এবং চত্রের প্রদর্শনীতে ঘুরে ক্যানভাসের কোনায় ১২ ফন্টে লেখা নাম দেখে বোঝার কসরত করতে হয়েছে কেনো এই শিরোণামে এই ছবি আঁকলেন শিল্পী। শিরোণামের সাথে ছবির যোগাযোগ আসলে কি?
তৃতীয় তলায় ভারতীয় শিল্পীদের বিভিন্ন ধরণের নিরীক্ষা দেখে ভালো লাগলো। প্রযুক্তির ব্যবহারে আমাদের পশ্চাৎপদতা নতুন কিছু না। জাপান যখন প্রথম শব্দ সুর আর স্থান নিয়ে নিরীক্ষা শুরু করেছিল তখন আমাদের দেশের চিত্রশিল্পীরা ক্যানভাসে মিশ্রমাধ্যমে ছবি আঁকতেন। ১২ বছর পর এখন তারা অনেক ভেবে বিশাল পরিসরে স্থাপনা নিয়ে কাজ করছেন যেখানে শিল্পের পেটের ভেতরে ঢুকে নাড়ী উলটে দেখা যায় তারা কি করতে চেয়েছেন। অবশ্য তেমন উঁচু মাণের কিছু মনে হয় নি দেখে। অসংখ্য ট্যাবলেটের প্যাকেট দিয়ে তৈরি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা রোগী, অসংখ্য ছবিতে সাজানো মনুমেন্ট কিংবা তার সামনে কাঠচেচে তৈরি করা স্থাপনায় হয়তো ভিন্নতা ছিলো, সেসব উপভোগের চেয়ে আমি বেশী ব্যস্ত ছিলাম আমার মেয়েকে নিয়ে ও সেইসব স্থাপনা শিল্প নিয়ে ঝুলছিলো নইলে লাল টেপে মাপা সীমানা পেরিয়া বিপদজনক ভাবে শিল্পধ্বংসের দিকে ছুটে যাচ্ছিলো। এসব স্থাপনা শিল্পকে রক্ষায় অধিকতর মনোনিবেশ করায় আর আলাদা করে বিষয়টা উপভোগ করতে পারি নি।
ভারতীয় শিল্পীরা প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন, ত্রিমাত্রিকতা এনেছেন, কখনো ছবির পর ছবি সাজিয়ে কোলাজ করেছেন, তেমন দুরহ বক্তব্য থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু একেবারে সাদামাটা প্রযুক্তির ব্যবহার দেখে ভালো লেগেছে। আরও বেশী ইন্টার্যাকটিভ হয়ে ওঠা শিল্পে দর্শককে আটকে রাখার একটা সুযোগ তারা নিয়েছেন।
জাপানের স্থাপনা শিল্পীরা বিষয়টাকে অন্য একটা উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন, এখন সুরের সাথে ফ্রেমের সাথে চলচিত্র যুক্ত করেছেন তারা। ছবি বুঝতে ব্যর্থ হলেও প্রযুক্তির ব্যবহার দেখে আমি মুগ্ধ।
মন্তব্য করুন