বইমেলা সরগরম - ০২
ঢাকা আমার অবৈধ প্রণয়, শহরের বিশ্রী জ্যাম, ধুলো, নোংরা আবর্জনাভর্তি রাস্তা আর হকার পতিতায় বেদখল হয়ে যাওয়া পাবলিক প্লেস নিয়ে আক্ষেপ করে কাটিয়ে দিলাম দুই দশক, শহরটা মফস্বলের ছোঁয়াচ মুছে ধীরে ধীরে আরও জগদ্দল স্থবির মন্থর শহরে পরিণত হলো, রাস্তার দুপাশের প্রতিনিয়ত বদলে যাওয়া ল্যান্ডস্কেপের সবুজহীনতার কষ্ট রুমালে মুছি আর মুছি ঠোঁটের ধুলোর দাগ, ঢাকা আমাকে মাটিতে টেনে নিয়ে প্রগাঢ় চুম্বন করে আর আমার ফুসফুস তার কালো নোংরা ধোঁয়া আর বীজাণুতে ভরে ওঠে প্রতিদিন।
এই শহরে নতুন কিছুই ঘটে না ইদানিং, আমাদের গল্পগুলো কেটে যাওয়া লংপ্লে রেকর্ড প্রতিবারই ঘ্যাচাং করে পুরোনো দাগের জায়গা থেকেই বেজে ওঠে নির্লিপ্ত, প্রতিবারই ভাবি বদলে নিতে হবে সবকিছু, বদলে যাওয়ার শ্লোগান দেখি রাস্তার বিলবোর্ডে কিন্তু আমার বদলে যাওয়া হয় না।
শেষ শীতের বিকেলে বই মেলার উদ্দেশ্যে বাসা ছেড়েছিলাম ৩টায়, রাস্তায় নেমে মনে হলো আজ আবার বই মেলা উদ্বোধন, বইপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী আসবেন বিশ্ববিদ্যালয়ে, যদিও দুপুরের আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার নিয়মিত আয়োজনও শেষ কিন্তু প্রতিক্রিয়ার জঙ্গী মিছিল শেখ হাসিনার সুনজরে পরার তীব্র আকাঙ্খায় রংচং মেখা থাকা যৌবনউত্তীর্ণ ছাত্র নেতা এবং তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের পেশীশক্তি প্রদর্শনের উৎসাহ বিকেল পর্যন্ত জ্যান্ত থাকবে।
তার চেয়ে বরং ব্লগদিবসে যাই, পুরোনো ব্লগারদের সাথে দেখা হবে, আমার ব্লগের ব্লগদিবস উদযাপনের ৪ বছর হয়ে গেলো, সময়ের সাথে ব্লগিং এর আগ্রহ আর উৎসাহে ভাটা পরেছে ,ব্লগার হিসেবে এখন আমি ২৮৬ মডেলের কম্পিউটারের মতো, যাদুঘরে আছি, লোকজন মাঝে মাঝে ইতিহাস ঘাঁটতে গেলে সংবাদ পায়, নিছক সংযোগ আছে বলে মাঝে মাঝে স্টার্ট বাটন চেপে নিজেকে রিস্টার্ট করে দেখি সব ঠিক আছে কি না। এর বাইরে ব্লগিং এর সাথে যোগাযোগ সীমিত।
তবে যাওয়াটা এক ধরণের মিশ্র অনুভুতি তৈরি করলো, অনেক অনেক দিন পর দেখা হলো পিয়াল ভাইয়ের সাথে, বইমেলায় তার জন্মযুদ্ধ বইটা আসবে, পান্ডুলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। গত দুই বছর যারা পিয়াল ভাইয়ের বইয়ের অপেক্ষা করেছে তাদের অপেক্ষার সময় শেষ। অবশ্য বইটা বইমেলা চত্ত্বরে উপস্থিত হওয়ার আগে চুড়ান্ত বাক্য বলা উচিত হবে না, দেখা যাবে ফেব্রুয়ারীর প্রথম সাত দিনে তার মনে হলো বইটার পান্ডুলিপি সংশোধন করা প্রয়োজন তখন আগামী বইমেলা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
আরিফ জেবতিকের সাথে দেখা হলো, যদিও এবার তার কোনো বই আসবে না, তবে সাম্প্রতিক সময়ে জেবতিকের রাজনৈতিক স্যাটায়ার যেকোনো বিবেচনায় সুখপাঠ্য, বই মেলার আগে আগে এমন চমৎকার সব লেখার কপালে প্রকাশ তিলক লাগানো থাকে তাই জিজ্ঞাসা করেছিলাম এই রাজনৈতিক স্যাটায়ারগুলো ছাপার হরফে আসবে কি না, জেবতিক বলেছে এ বছর প্রকাশিত হওয়ার আগ্রহ তার নেই।
প্রথম প্রজন্মের ব্লগার হিসেবে নিজের পরিচয় নিজের প্রাগৌতিহাসিকতার স্মারক, সে উপলক্ষ্যে অপ্রস্তুত অবস্থায় নতুন প্রজন্মের ব্লগারদের উদ্দেশ্যে কয়েকটা কথাও বলতে হয়েছে, অবশ্য এমন সব পরিস্থিতিতে নিজেকে উজবুক মনে হয়।
অনুষ্ঠানপরবর্তী সময়টা বেশ বিব্রতকর ছিলো, আমি একদা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ছিলাম কিভাবে পাকিস্তানীপ্রেমীতে পরিণত হলাম বিষয়ক ছোটো সাক্ষাৎকার দিতে হয়েছে। আমার ব্লগে আমার অনিয়মিত হওয়ার নেপথ্যে যদিও আমার এই পাকিস্তানীপ্রেমিক ইমেজের কোনো ভুমিকা নেই, বরং তেমন উৎসাহ নিয়ে বিতর্ক অব্যহত রাখার অনিচ্ছাই প্রধান, অহেতুক নিজের মতামত প্রকাশ করে সেটা প্রতিষ্ঠিত করার যৌক্তিক লড়াই চালানোর উৎসাহে ভাঁটা পরেছে সময়ের সাথে। কিন্তু যারা সেভাবে জানে না তাদের ধারণা অব্যাহত প্রতিরোধের মুখে তারা আমার কণ্ঠরোধ করেছে এবং পাকিপ্রেমীকে প্রতিহত করার আনন্দে জল ঢেলে দিতে সেখানে নিয়মিত হওয়ার মতো সময় হাতে নেই।
এভাবেই অন্ধকার নেমে আসলো আর মনে হলো বইমেলার সাথে প্রণয়ের সময় বয়ে যাচ্ছে। আমার এখন বইমেলায় থাকার কথা, অহেতুক নিজের সাফাই গাইতে গিয়ে সময় নষ্ট না করে বিদায় নিয়ে বইমেলাচত্ত্বরে উপস্থিত হওয়া জরুরী। পিয়াল ভাই এবং জেবতিক দুজনের সাথেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার নিমন্ত্রন ছিলো তবে বের হয়ে দেখলাম সন্ধ্যের মুখে তারা চলে গেছে আমাকে পেছনে ফেলেই ব্লগ দিবসের দ্বিতীয় আয়োজনে, পাবলিক লাইব্রেরীতে।
অন্ধকার বই মেলা:
অবৈধ প্রণয়ের অস্থির উত্তেজনা নিয়ে হাতিরপুলের জ্যাম পেরিয়ে যখন কাঁটাবনে পৌঁছালাম তখন সেখানে আরও বড় জ্যাম অপেক্ষা করছিলো আমার জন্য, সেই জ্যাম কাটিয়ে কবিতা উৎসবকে পাশ কাটিয়ে রাজুর সামনে এসে মনে হলো কিছুই ঠিকঠাক নেই। এই পরিস্থিতি আমার অপরিচিত। বাংলা একাডেমীর সামনের রাস্তা অন্ধকার, অন্ধাকারের ভেতরে সচল অন্ধকারগুলো আসলে মানুষ, বই মেলা যাচ্ছে কিংবা ফিরে আসছে বই মেলা থেকে। যতদুর চোখ যায় রাস্তায় সারিসারি পতাকা লাগানো, অন্ধকারে আলাদা করে তাদের রং চেনা যায় না, রং এর ঘনত্বের তারতম্যে বুঝা যায় এরা আদতে ভিন্ন ভিন্ন রং এর।
ফেব্রুয়ারীর বইমেলার প্রাথমিক পরিচয়ের দিনগুলোতে বই মেলা শুরু হতো টিএসসির গেট থেকে, সেখানকার বারোয়ারী দোকান উচ্ছেদ করে বইমেলাকে বইয়ের মেলায় রূপান্তরিত করার সময়েও বাংলা একাডেমীর রাস্তার দুইপাশের স্টল দিয়েই বই মেলার শুরু হতো , এবার বাংলা একাডেমী শুধুই প্রকাশকদের মেলা, বাইরের রাজনৈতিক বিবেচনায় ঠাঁই পাওয়া দোকানগুলো নেই, সম্পূর্ণ রাস্তাই অন্ধকার, একেবারে অপরিচিত বইমেলার সাথে প্রথম দেখার অনুভুতিটুকু হতাশার।
মেটাল ডিটেক্টরবিহীন বই মেলা পৌঁছে সামনের গেট দিয়ে ঢুকতে গেলাম, পুলিশ আঙ্গুল তুলে সামনে পাঠালো, বাংলা একাডেমীর প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়ালম পুলিশ আরও সামনে ঠেলে দিলো, একেবারে সামনের গেটে এখনও মেটাল ডিটেক্টর লাগানোর কাজ চলছে, বিশেষ আলোচনার জায়গাটা পরিসরে বেড়েছে, তবে মেলার পরিসর খানিকটা ছোটো হয়েছে।
নজরুল মঞ্চের সামনে এবারও বাচ্চাদের বইয়ের দোকান, আর যথারীতি সেখানে বই মেলার প্রথম দোকানটা মুক্তধারার, ফেব্রুয়ারী বইমেলা, বইয়ের মাস হয়ে ওঠার পেছনে মুক্তধারা প্রকাশনীর মালিকের অবদান সবচেয়ে বেশী, ১৯৭৫ সালে প্রকাশনা সংস্থা মুক্তধারা বাংলা একাডেমীর প্রবেশ পথের কাছে খোলা আকাশের নিচে বই বিক্রির জন্য অনুমতি চেয়েছিল।৯৭৮ সাল থেকে বাংলা একাডেমীর প্রকাশনা, মুদ্রণ ও বিক্রয় বিভাগের উদ্যোগে ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বইমেলার আয়োজন করা হয়েছিল। তবে এর পরের বছর থেকেই যাত্রা শুরু হয় পূর্ণাঙ্গ একুশের বইমেলার এই কাজে বাংলা একাডেমী সহযোগিতা নিয়েছিল বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির।
সেটাই পরিসরে কলেবরে বড় হতে হতে এখন জমজমাট লেকহক পাঠকের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। বইমেলা উদযাপনে তার অবদানকে সম্মান দিয়ে প্রতিবছর বইমেলার স্টল বরাদ্দের সময় মুক্তধারা দিয়েই স্টল বরাদ্দ শুরু হয়। প্রতিবছরই বইমেলার চেহারা বদলায় কিন্তু প্রথম স্টল হিসেবে মুক্তধারার দোকান ঠিকই নজরুল মঞ্চের সামনে।
বইমেলায় বই কেনার শুরু হয়েছে ইউপিএল থেকে, প্রথমেই কিনলাম সুফিয়া আহমেদের মুসলিম কম্যুনিটি ইন বেঙ্গল ১৮৮৪-১৯১২। ১৯৬০ সালে ইউনিভার্সিটি ওফ লন্ডন থেকে পিএইচডি অভিসন্দর্ভ হিসেবে প্রথম অনুমোদিত হয় বইটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সুফিয়া আহমেদের বইটির দ্বিতীয় সংস্কারণ প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯৯৬ সালে, তবে এর পরবর্তী সংস্করন প্রকাশিত হয় নি বলে এই ২১ ফর্মার বিশাল বইটার দাম মাত্র ২০০ টাকা, কেনার তালিকায় আছে তাজীন এম মুর্শিদের দ্যা সাকরেড এন্ড দ্যা সেক্যুলার, যদিও নিশ্চিত না তবে আমার ধারণা তাজীন এম মুর্শিদ কোনো না কোনো ভাবে গোলাম মুর্শিদের সাথে সম্পর্কিত।
বেশ অনেক দিন ধরেই কিনবো কিনবো ভাবছিলাম জি ডাব্লিউ চৌধুরীর দ্যা লাস্ট ডেজ ওফ ইউনাইটেড পাকিস্তান, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে যখন ইয়াহিয়া শেখ মুজিবের ভেতরে সমঝোতা আলোচনা হচ্ছিলো সে সময়ে জিডাব্লিউ চৌধুরী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সফরকারী দলের সাথে ছিলেন, একই আলোচনায় অংশগ্রহন করেছিলেন ড. কামাল হোসেন, তার সেই সময়ের স্মৃতিচারণ কিংবা বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কেনো অনিবার্য ছিলো শিরোণামে। বইটা অনেক দিন ধরে নেড়ে চেড়ে দেখেছি, পুরোনো সংস্করনের দাম ছিলো মাত্র ২০০ টাকা, তবে নতুন সংস্করনে মূল্য দ্বিগুণ হয়েছে। বঙ্গভবনে পাঁচ বছর বইটি গতবার মেলায় দেখেছিলাম, মাত্র ১২০ টাকা দাম, কিনবো কিনবো সিদ্ধান্তহীনতা কাটিয়ে যখন কিনবো মনস্থ করলাম তখন পানির দামে ৪০০+ পাতার বইটা কিনে নিয়ে গেছে অন্য কেউ।
পিয়াল ভাইয়ের সাথে কথা হচ্ছিলো ব্লগের অনুষ্ঠানে, বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু হওয়ার পর ৩রা এপ্রিল ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সাথে সাক্ষাৎ করেন, সেই সাক্ষাৎকারে উপস্থিত ছিলেন রেহমান সোবহান, আনিসুর রহমান, ব্যারিস্টার আমির উল ইসলাম এবং তাজউদ্দিন আহমেদ। রেহমান সোবহান এবং আনিসুর রহমানের ভাষ্যটা পড়েছি আগেই, অমর্ত্য সেনের দুতিয়ালীতে এই সাক্ষাৎকার সম্ভব হয়েছিলো, যদিও অমর্ত্য সেন বেহায়ার মতো এ বিষয়ে কোনো স্মৃতিচারণ করেন নি, বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য নুরুল ইসলামের সাথে ব্যক্তিগত পরিচয় সূত্রে অমর্ত্য সেন এই উদ্যোগে সহযোগিতা করেছিলেন তথ্যটা দিয়েছেন নুরুল ইসলাম তার নিজের স্মৃতিচারণে। আমির উল ইসলামের অংশটা আমার জানা নেই, সময় প্রকাশনী থেকে তার স্মৃতিচারণ প্রকাশিত হয়েছিলো, সে সূত্রেই সময় প্রকাশনীর স্টল খুঁজছিলাম, তবে সেখানে যাওয়ার আগেই সাহিত্য প্রকাশের স্টল চোখে পড়লো, সেখান থেকে কেনা হলো
সৈয়দ নাজিমুদ্দিন হাশিমের বন্দিশালা পাকিস্তান, পাকিস্তানের বন্দিক্যাম্পে কাটানো সময়ের স্মৃতিচারণ, কেনা হলো আতিউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন, আর কেনা হলো আবদুল মতিনের মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালী। এবং দ্বীতিয়বার ফিরে এসে কিনলাম দিনু বিল্লাহর টয় হাউজ থেকে ১৯৭১ মৃত্যু ছায়াসঙ্গী বইটা।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও স্মৃতিচারণ কিংবা দিনলিপি বিষয়ে এক ধরণের আগ্রহ আছে আমার, সময় ও সুযোগ পেলে কিনি এবং পড়েও ফেলি। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের ছোটো বোনের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের দিনলিপি পড়েছিলাম আরেকজনের বাসায় আড্ডা দিতে গিয়ে, আড্ডাটা জমে নি কিন্তু বইটা শেষ হয়েছে। প্রত্যেকের নিজস্ব একটা গল্প আছে একাত্তর নিয়ে, কিন্তু মেজর রফিকুল ইসলামের লক্ষপ্রাণের বিনিময়ে বইটা পড়লে এক ধরণের অসস্তি লাগে নিজের ভেতরেই , মনে হয় এটা এক ধরণের আত্মপ্রচারমূলক বই, যেখানে প্রতি পাতায় একবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়
" আই ডিড ইট অল, আই ওয়াজ দ্যা হিরো ওফ দ্যাট ডে।" ক্যাপ্টেন রফিকের আমিই সব করেছিলাম এর সাথে এম আর আখতার মুকুলের বইটার ভিন্নতা একটাই রফিক একাই সব করে ফেলেছে কিন্তু এম আর আখতার মুকুল সব করেও সেটার যোগ্য প্রতিদান পায় নি। তার বইয়ের পাতায় পাতায় হাহাকার আমি এত করেও কিছুই পেলাম না।
আমার এত কষ্ট দেখার লোক নেই এবং আমি ভীষণ গর্বিত ভাবধারার কোন পর্যায়ে পড়বে জানি না কিন্তু কাদের সিদ্দিকীর সহযোদ্ধার স্মৃতিচারণ দেখলাম সাহিত্য প্রকাশে, দামটা বেশী।
সময় প্রকাশনীর সামনে:
মাঝে মাঝে প্রচন্ড রাগ শরীরের মাংশপেশীতে ঢুকে যায় আর প্রবল জ্বরের মতো শরীরে ঘুরতে থাকে, সময় প্রকাশনীর সামনে দাঁড়িয়ে বই দেখছি, আমার পাশে বয়স্ক একজন বই কিনছেন, ১২৫ টাকার বই ২৫% কমিশনে ৯৪ টাকা রেখে তাকে ঠকানো হচ্ছে এমন বিতর্ক চলছে, তিনি হিসাব করছেন ১০০ টাকা ২৫% কমিশন ৭৫ টাকা আর ২৫টাকা ২৫% সাড়ে ৭ টাকা, আমি মাঝে বলতে চেয়েছিলাম অংকটা সোয়া ৬টাকা হবে কিন্তু বলা হলো না, তিনি সংশোধন করে বললেন ২৫ টাকার ২৫% সাড়ে ৬টাকা, সব মিলিয়ে হলো ৮১ টাকা, আপনি ৮০ টাকা না রেখে কেনো ৯৪ টাকা রাখলেন। দোকানি বললো ২৫ টাকা থেকে সাড়ে ৬টাকা বাদ যাবে, বাকিটা যোগ হবে সে হিসাবে সেটা ৯৪ টাকা হয়। আমি তখন শওকত ওসমানের কালরাত্রীর স্মৃতিচারণ দেখে সেটার দিকে হাত বাড়িয়েছি, পা সরাতে গিয়ে তার পায়ের সাথে পা লাগলো, প্রায় যান্ত্রিক ভাবে বললাম সরি।
লোকটা প্রচন্ড রেগে বললো দেখে পা ফেললেই হয়, ভীড় নেই পায়ের সাথে পা লাগবে কেনো?
আমি আবারও দু:খ প্রকাশ করে বললাম আসলে অনিচ্ছাকৃত,
তিনি পুনরায় বললেন পা দেখে ফেললে তো পায়ের সাথে লাগতো না।
আমি নিজের চোখেরদিকে আঙ্গুল তুলে বললাম ভাই চোখটা এখানে থাকে পায়ের সাথে লাগানো থাকে না তাই দেখতে পাই নি, লেগে গেছে।
আগুণে ঘি পড়ার মতো ক্ষেপে গেলো লোকটা।
কথা তো ভালোই জানেন, এই তোমার বইটা নিছো তো। তাকিয়ে দেখলাম তার ছোটো ছেলে তার সাথে মেলায় এসেছে। নিজের রাগে লাগাম টেনে বললাম ভাই আপনার পায়ে লেগে যাওয়ার জন্যে তো দু:খপ্রকাশ করলাম, তিনি পাল্টা জবাব দিলেন পাইছেন একটা কথা সরি, সরি বললেই সব ভুল ঠিক হয়ে গেলো।
মাঝে মাঝে অবিবেচক প্রচন্ড রাগ মাথা চাড়া দেয়, লোকটার ব্যবহারে পাল্টা কয়েকটা গালি আর একটা থাপ্পড় দিতে পারলে গায়ের জ্বলুনি কমতো কিন্তু তার ছোটো ছেলের সামনে তাকে ধরে মারাটাও শোভন কিছু না, কিছুক্ষণ জ্বরের মতো শরীরে রাগটা ঘুরলো, অবশেষে কিছুটা স্থিমিত হলো রাগটা।
আমার ইংরেজী উচ্চারণ ভালো না , ছেলে মেয়ে সম্বোধনে সমস্যা আছে, মেয়েদেরও হি হিজ বলি, কিন্তু উচ্চারণ কতটা খারাপ সেটার প্রমাণ পেলাম শুদ্ধস্বরের স্টলে গিয়ে। মোস্তাক শরীফের অনুবাদের বইটা দেখলাম, হাতে নিয়ে দেখলাম বইয়ের গায়ের দাম পাক্কা ৪২০,
গল্প উপন্যাসের দাম এত বেশী হলে মুশকিল। লিপির মন্তব্যের উত্তরে বইটা হাতে নিয়ে বললাম প্রাইসটা দেখো। দোকানসহযোগী বইটা হাতে নিয়ে বললেন আসলে ডিসপ্লেতে আছে তো।
আমি কিছুক্ষণ বিভ্রান্ত তাকিয়ে থাকলাম, ডিসপ্লের বইটিতে সম্ভবত ভুল দাম দেওয়া আছে, ঠিক দামটা জেনে তিনি বলবেন, তবে তিনি বললেন ডিসপ্লের বই না তার কাছে "ফ্রেশ" কপিও আছে। ইংরেজী উচ্চারণের প্রচন্ড দুর্বলতার এমন জলন্ত প্রমাণ না পেলেও হতো।
বইমেলার একটা স্টলে দেখলাম হায়াত পরিবারের ছবি, আবুল হায়াত, বিপাশা হায়াত, তৈকির আহমেদের উপন্যাস ছাপিয়েছে তারা, তাদের পাশে ইশিতা এবং বেশ সুন্দরী একজন অপরিচিত মেয়ে নাম লেখা পূর্ণতা। নাটকের লোকজন উপন্যাস লিখবে সেটা আপত্তিকর না, ওমর সানীও উপন্যাস লিখছে, বেবী নাজনীন , মৌসুমী শমী কায়সারও উপন্যাস লিখেছে, কিন্তু পূর্ণতাকে চিনলাম না। দোকানীকে বললাম এই যে মেয়েটা ওর নাম কি পূর্ণতা। দোকানী বললো ওর নাম মীম , বিদ্যা সিনহা মীম। বুঝলাম পূর্ণতা উপন্যাসের নাম।
দারুন গরম পোস্ট!
যার পায়ে পা লাগলো সেই লোকটার বোধ হয় কারো সাথে আগেই ঝগড়া হয়েছে তাই এত ক্ষেপে ছিলো ।
মৌসুমীর উপন্যাস পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। বর্তমানে ময়ুরীর উপন্যাস পড়ার প্রতীক্ষায় আছি।
সারামাস চলুক এই সিরিজ।
সাথে থাকলাম ।
সিরিজটা ভাল লাগছে।
চমৎকার বললে তো অনেক কম বলা হয়। তাই চমৎকারের চে' একটু বেশিই বলি।
গদ্য রচনার এত ভালো একটি হাত থাকা সত্ত্বেও আপনি গল্প-উপন্যাস রচনায় মনোযোগ দিলেন না...। এই লেখার শুরুর কথাগুলো এত টানটান! মুগ্ধ, সত্যিই।
বইমেলা শুরু হয়ে গেল। এভাবে কেনাকাটার বিবরণ দিলে আমাদের মত কম জানারা তথ্যাদি পাবে। সিরিজটা কোনোভাবেই যেন না থামে।
মোস্তাক শরীফের বই কিনুন, অপরকেও কিনতে বলুন
এর জন্যই আপনারে বইমেলা নিয়ে প্রতিদিন লিখতে অনুরোধ জানাই... কত্ত কি যে, দেখা হয় আপনার চোখে... যেটা হয়তো নিজে গেলেও দেখি না
সিম্পলি গ্রেট। আপনার হাত বান্দাইয়া রাখার কাম
আজকে আসেন নাই
তাজীন এম মুর্শিদ গোলাম মুর্শিদের কন্যা, এখন ভিজিটিং হিসেবে BRAC এ পড়াবেন, বেলিজিয়ামে থাকেন
মন্তব্য করুন