kkkkkk
বনগ্রাম বাজারে সাম্প্রদায়িক হামলার দুই সপ্তাহ পরেও হামলার দাগ মুছে যায় নি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ত্রানের টিনের দেয়ালের পাশে এখনও হামলায় ভেঙে চুড়ে যাওয়া টিনের দেয়াল সাক্ষ্য দিচ্ছে কালীপূজার দিনে সংঘবদ্ধ আক্রমণে কিভাবে আক্রান্ত হয়েছিলো বনগ্রাম বাজারের সামান্য দুরের এই বসতি।
পুড়ে যাওয়া মন্দিরের অগ্নিদগ্ধ মুর্তি , পূজার প্রসাদ আর ফুল পায়ে মারিয়ে যারা প্রায় ৩ ঘন্টা নারকীয় উল্লাসে বনগ্রমের এইসব মানুষদের দীর্ঘদিনের বিশ্বাস এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভ্রান্তি ভাঙালো, তারা একই সাথে সরস্বতি মুর্তি, হারমোনিয়াম, মাদল ভেঙেছে। আলাদা করে দেখলে তেমন কিছুই নয় কিন্তু আমাদের দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক উপাদানে শিক্ষা-সৈন্দর্য্য -প্রেম ও ভক্তির এসব উপকরণ ভেঙে আমাদের সাংস্কৃতিক দীনতাটুকুই প্রকাশ করলো এইসব দুবৃত্তরা।
বাবলু সাহার ছেলে রাজীব সাহার ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার ছবি পাওয়া গেছে, হাটের দিন সকাল ১০টায় এমন অভিযোগ উত্থাপিত হয় বনগ্রাম বাজারে, মসজিদের মাইকেও ধর্ম অবমাননার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিলো। ধীরে ধীরে হাটে মানুষের ভীড় বাড়ে, ক্ষুব্ধ মানুষের হাতে হাতে ছড়িয়ে যায় কথিত ধর্ম অবমাননার প্রমাণের ফটোস্ট্যাট কপি। কোনো একজন দেবাশীষ রায়ের একাউন্টে কোরান অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত ৩ কিশোরের কেউই রাজীব সাহা নয়, রাজীবকে দেখেছে এমন কিশোরদের বক্তব্য রাজীব আত্মমগ্ন কিশোর, কারো সাথে কখনও অশোভন আচরণ করে নি সে, নিজের জগতে চুপচাপ এই ছেলেটি এমন আচরণ করতে পারে এমনটা বিশ্বাস করে না জিয়াউর রহমান, সে স্থানীয় স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র।
সকাল ১১টায় উত্তেজিত ক্ষুব্ধ জনতা ব্যবসায়ী বাবুল সাহাকে আটক করে, তার উপরে চড়াও হওয়া মানুষদের হাত থেকে তাকে রক্ষা করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী সোহেল। ঘটনার পরপরই সেখানে পুলিশ উপস্থিত হয়। উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত জনতার কাছে জানতে চেয়েছিলেন " এখানে কি হয়েছে?"
উপস্থিত জনতা কোরান অবমাননার অভিযোগ উত্থাপন করলে তিনি বলেন " এ বিষয়ে আমিও একমত। এবং এর পরপরই লাঠি এবং অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে বনগ্রাম বাজারের পাশের হিন্দুবসতিতে আক্রমণ করে উত্তেজিত জনতা।
প্রথম দফা আক্রমণের পর সংঘবদ্ধ জনতা বাবলু সাহার বাসায় হামলা করে।। সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৩ দফা আক্রমণের শিকার হয় হিন্দুবসতি। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে বিকেল৪টা নাগাদ পুলিশ উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রনে আনতে সমর্থ হয়, কিন্তু সে সময়ই সংঘবদ্ধ হামলা চলছিলো বাবলু সাহার ভগ্নিপতি ও স্থানীয় স্কুলের গণিত শিক্ষকের বাসায়। প্রায় ১ ঘন্টা নির্বিঘ্নে ভাঙচুড় করে এ বাসা থেকে ৮ ভরি সোনার গহনাসহ প্রায় ৭ লক্ষ টাকার মালামাল লুট এবং ধ্বংস করে আক্রমণকারীরা।
বাবলু সাহার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান লুটপাটের শিকার হয়েছে, তবে স্থানীয় বাজারের গুদামে আগুণ জ্বালালে বাজারের সকল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন আশংকা থেকে স্থানীয় বাজারের সকল ব্যবসায়ী অগ্নিসংযোগের উদ্যোগ দমন করে। তবে বাবলু সাহার বাড়ীতে আগুণ জ্বালানোর সময় এমন কোনো প্রতিরোধ ছিলো না।
নিয়মতান্ত্রিক সংঘবদ্ধ পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক হামলার নেপথ্যে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি মূল চালিকাশক্তি না কি আমাদের মানসিকতায় লুকানো সাম্প্রদায়িকতা যা সামান্য উস্কানিতে সহিংস হতে চায় এমন সাম্প্রদায়িক বৈকল্য এমন আক্রমনের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে,নিরাপদ দুরত্বে থেকে আমরা সাম্প্রদায়িক হামলার নেপথ্য কারণ নিয়ে বিভিন্ন ধরণের তত্ত্বচর্চা করতে পারি। বাস্তবতা হলো ঘটনার দুই সপ্তাহ পরেও স্থানীয় মানুষজন ঘটনার শিকার মানুষগুলো ভীত-সন্ত্রস্ত এবং নিজেদের অনুভুতি-উপলব্ধি প্রকাশে অনিচ্ছুক।
স্থানীয় প্রশাসন দাবী করছে এ ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পাবনাকে আহবায়ক করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জেলা বিশেষ শাখা) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়।তাৎক্ষণিকভাবে নিরুপিত ১২টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে পরিবার প্রতি ২ বান্ডিল করে ঢেউ টিন, নগদ ৬ হাজার করে টাকা এবং ৩০ কেজি করে চাউল প্রদান করা হয়। তবে বাবলু সাহার ভগ্নিপতি এবং আরও কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার দাবী করেছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় তাদের নাম আসে নি। ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে দেখা করতে এসে " কোনো বাবু তো তোদের রক্ষা করতে আসলো না" এমন মন্তব্য করেছেন- এমনটাই দাবী করছে স্থানীয় মানুষেরা।
বাসার পুরুষেরা তখন বাসায় ছিলো না:
মন্তব্য করুন