আমার বাপের মৃত্যু- জানা অজানায় করা পাপের শাস্তি
১.
আমি হচ্ছি আমার বাপ মায়ের তিন নম্বর বাচ্চা। ছাগল হতে হতে মানুষ হয়ে জন্মানো, এই যা।..কারণ ভাই মায়ের ফেভারিট আর বোন হলো বাপের আদরের। আমি সবসময়ই ছিলাম ত্রৈধ বিন্দু অবস্থানে। কেউ কি বিশ্বাস করবেন? আমি ভিষণ চুপচাপ ছিলাম..একা থাকতে পছন্দ করতাম..অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এখনও আমি একা থাকতে পছন্দ করি।
২
যাই হোক. আমার বাপের কথা বলি না হয়। এই লোকটির সাথে আমার চরিত্রের, চেহারার কোন মিল ছিল না। কিছু কিছু মিল পরে বের হয়েছে।যেটা তার বা আমার ১৯৯৭ সালের আগে চোখে পড়ে নাই। তার জীবদ্দশায় আপাত দৃষ্টিতে তার সাথে আমার দহরম মহররম ছিলনা। কালো, মোটা এবং বেটে (ভাই-বোনের তুলানায়) হওয়ার কারণে আমি একটু দূরে দূরেই থাকতাম। তার উপর ছিল আমার গোয়ার্তুমি।ভীষণ একরোখা, জেদী আর রাগী ছিলাম..বাপের সাথে কথায় ঝগড়া বেঁধে যেতো। আর্থিক অবস্থার টানাপড়েনে বাপের মেজাজ চড়ে থাকতো..কিভাবে কিভাবে যেন আমার সাথেই ঝগড়া লাগতো বেশি। ঐযে, জেদী ছিলাম বলেই হয়তো..এক বনে দুটো বাঘ থাকলে গর্জন তো বেশি হবেই..(এই ফাঁকে নিজেকে বাঘ বলে নিলাম)
আমি গান করতাম..সেটা ছিল আমার শখ। কিন্তু আম্মার ধারণা ছিল আমি বড় শিল্পী হবো। ওদিকে আমার বাপ এটা কখনোই পছন্দ করেনি..তার সামান্য রক্ষণশীলতার প্রভাব আমার উপর এসে পড়েছে সবসময়। একটু বন্ধু প্রিয়তা ছিল। সমাজের কুৎসিত দিকগুলো সম্বন্ধে জানতাম না। বয়সও তো হয় নাই তখন জানার। কিন্তু বাপ জানতেন এবং বিধি নিষেধ আরোপ করতেন। স্বাভাবিকভাবেই আমি মানতে পারতাম না। আমাদের দূরত্ব বাড়তে লাগলো। সবার মাঝে থেকে একা থাকার অভিজ্ঞতা অর্জন তখন থেকে শুরু।
৩.
বাপের বিছানায় পরা এবং সেই সুবাদে আর্থিক অনটন- এই দুই কারণে আমার আত্মীয়স্বজনের আসল চেহারা দেখতাম অবিরত। কষ্ট কি বস্তু- তা হয়তো অনেক পরিষ্কার আমাদের কাছে।এজন্যই যখন একজন স্বনামধন্য কাঁচা পাকা চুলের ব্যক্তি আমায় বলেছিল, যে, আমি দুনিয়া দেখি নাই- আমাকে "কষ্ট" করতে হবে..তখন হাসি পেয়েছিল ব্যাপক। লোকটি জানতোনা এক একটি ক্লাস পাশ করার জন্য আমাকে কতো কষ্ট করতে হয়েছে। এজন্যই পড়ালেখাটা আমার কাছে এখন নেশা। ফলাফলের ধার ধারি না। পড়ে যাই। আমি পড়ি আমার আর বাপের আত্মতুষ্টির জন্য কাউকে বলার জন্য নয়।
আহারে বাপের মৃত্যুদিন আসলে এইসব কথা বেশি মনে পড়ে। অজান্তেই চোখে পানি জমে। ছোটবেলা থেকে বাপের যতদিন পয়সা ছিল বছর শেষের আগে ঘরে নতুন বছরের বই আসতো..ভাগ্যিস বাপটা মরে গেল তিন বছর বিছানায় থেকে,, তা-না হলে তাকে দেখতে হতো, তার ছোট 'ছাগল'টা গণিতের বই ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে..পাশ করেছে...
৪.
নিজের কথা বলবো, নাকী বাপের কথা! এটাও একটা প্রশ্ন। আমি আজ যা, তার পিছনে বাপের হাত আছে-এটা বলতে পারছিনা।কারণ তিনি বেঁচে থাকলে আমি কি লেখালেখির ধারে কাছেও আসতে পারতাম কিনা সন্দেহ। তবে আমার পড়ালেখায় ঘাটতি থাকতোনা এটা নিশ্চিত। আমার এই একটা জিনিষ বাপের পছন্দ ছিল।কারণ বড় বোনের অতিরিক্ত আহ্লাদিপনার কারণে তার পড়ালেখা ছিল ঝিমানো আর ভাইটাকে রণে ভঙ্গ দিতে হয় বাপের বিছানায় পরার পর।
৫.
আমার বাপ দেখতে ব্যাপক স্মার্ট ছিল। যার ছিটেফোঁটা আমরা কেউ পাই নাই। সেই আমলে গ্রেগরী পেক আর দেব আনন্দের অনুসারী ছিল। সেই রকম পোশাক, চুলের ছাঁট আর চলাফেরায় ছিল অভ্যস্ত।ভালো খাবার খেতে পছন্দ করতো।হাছন রাজার গান, পুরোন দিনের হিন্দী গানের অনুরাগী ছিল সবসময়। রান্না করতে পারতো বেশ ভালো। আম্মার রান্নাঘর বিষয়ক চ্যাঁচামেচি শুরু হলে বাপ নিজ উদ্যোগে রান্না শুরু করতো। ইচ্ছা করে পকেটের দুই পকেটে খুচরা টাকা রেখে দিতো।আমার পছন্দের লাড্ডু চলে আসতো ঘরে বলার আগেই। বড়টার চাহিদা বেশি থাকায় আমার চাহিদা আপনা থেকেই কমে গেল।আমারে নিয়ে কোন ঝামেলাই হয় নাই। নাহ আমি আইসক্রিম খাই..না আমার চকোলেটের নেশা আছে..বাপ বা মা হয়তে সেকারণেই আমারে ছাই দিয়ে পুষেছে..হে হে (এটা মজা ছিল)
৬.
আমাদের ট্র্যাজেডি নির্ঘ্যাৎ ছোট নয়। বরং বাপের কথা বলি। আজিমপুর কলোনীর প্রাণোচ্ছল আমার বাপ হঠাৎ করে বিছানায় পড়ে গেল। লোকটা খেতে পারতো না।কিছু হজম হতো না। মাথায় একদিনও পানি না পরলে যার অস্বস্তি লাগতো সেই লোক গোসল করতে পারতো না। বলতো- পা জ্বলে। বাপের চাকরী নাই। ঘর চলেনা, চিকিৎসাও চলেনা। বিছানায় পরে থাকতে থাকতে মেজার আরো খিচরে যেতে থাকলো। আমি কাছে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। আমি খেতাম, আমার বাপ খেতে পারতো না। যে যন্ত্রণাটা আমার আজও হয় কিছু ভালোমন্দ খাওয়ার সময়।অবস্থা যখন দ্বারে দ্বারে হাত পাতার মতো হয়ে গেল তখন বাপের আপাত অবস্থাও খারাপ হলো। একদিকে আমাদের জীবন যাপনের যুদ্ধ আরেকদিকে বাপের বেঁচে থাকার যুদ্ধ। মায়ের অবস্থা কাহিল।আমরা অভাবের কারণে কেউ লক্ষ্য করলাম না যে বাপ যাচ্ছে মৃত্যুর পথে।
৭.
১৯৯৭ সাল। তখন আমার প্রি টেস্ট। তার আগে থেকে তার সাথে আমার তিনমাস ধরে কথা বন্ধ। কেন মনে নেই। হবে কোন তুচ্ছ বিষয়। আমি যখন পড়তাম বাপ জেগে থাকতো। আমি অন্ধকার ভয় পাই, আমার বাপ জানতো। এমনিতেও তার ঘুম খুব একটা হতোনা। তখন বলতো, তুই আমার মতো রাগী- এটা ভালোনা..কেউ কাউকে পাত্তা দেয়না..এতো আবেগী হওয়ার কিছু নাই...এই সেই আরো কত কথা। এখন বুঝি, লোকটা ঠিকই বলেছে। কে কার ধার ধারে! সে যে মরে গেল আমাদের কথা ভেবেছে? অথবা সেটাই হয়তো আমাদের জন্য ভালো ছিল। বেঁচে থাকাই তো তখন দায় ছিল..তাইনা? ফূর্তিবাজ লোকটিকে চোখের সামনে শেষ হতে দেখার চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কি হতে পারে?
বাপ আমাদের উপর চরম প্রতিশোধ নিয়েছে।আমাদের মনে ভয়ঙ্কর এক আঁচড় কেটে খোদাই করে লিখে গেছে, আমরা আমাদের বাপের জন্য কিছুই করতে পারিনি।
৮.
২৮ এপ্রিল ১৯৯৭।আমার নানা মারা গেলেন।খবর এলো খুব ভোরে। আমার বাপ নিজ হাতে দরজা খুলে দিল। নিজের বাপের বাড়ি বিষয়ে মায়ের অতি আগ্রহ সবসময়ই ছিল। এখন আবার নানার মৃত্যু। নানার কবর হবে দড়ি জাহাঙ্গীরপুর। আম্মা ছুটলো ঘর ফেলে..তার আপন ভাই বোনদের মধ্যে আর কেউ যাওয়ার আগ্রহ দেখালো না। আমার বাপ ভাইটারে সাথে দিয়ে দিলো। আমরা দুই বোন বাসায়। আর বাপ। সেই সপ্তাহটা বাপ একটু সুস্থ। হাঁটতে হাঁটতে মসজিদে গেল।নিজের শ্বশুরের জন্য দোয়া করতে বললো।
তারপরদিন, পেট ভরে ডাল-ভাত আর ডিম ভাজা খেল..আমাদের দুজনের সাথে বসে।
৩০ এপ্রিল ১৯৯৭
সকালে পড়তে যেতাম শাহেদ চৌধুরী স্যারের বাসায়। আসতাম আটটা নাগাদ। এসে ঘুম।আমার শরীর তখন যথারীতি খারাপ। হাম শেষ পর্যায়ে। ক্লান্ত শরীরে ঘুমাচ্ছি। আপ্পী নাশতা বানায়। হঠাৎ করে আমাকে ডাকে।আমি অবাক বিস্ময়ে বের হই। দেখলাম যে লোকটা হাঁটতে পারেনা, সে দৌঁড় দিয়ে বাথরুমে যাচ্ছে। ধপ করে কি যেন পরলো..থকথকে, লাল। বুঝলাম না। আমার বোন আমাকে দেখতে বললো..ডাকাডাকি করলাম। টয়লেটের সামনে গেলাম..দেখি বাপ মেঝেতে বসা..শরীরে কোন শক্তি নেই...
আমার প্রতিটা ঘটনার খুটি নাটি মনে আছে,,সব লিখতে চাইনা। চারতলার বাবু ভাই, ১৮ নম্বরের সুমন ভাই না থাকলে হয়তো আব্বাকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া হতোনা। আমাদের কাছে একটা পয়সাও নাই। আম্মা নাই। মোবাইল নামক বস্তুটি তখনও হাতের নাগালে আসেনাই। খবর দেয়ার উপায় নাই।কি করবো জানিনা।
আর ছিল ছোট ফুপু, ছোট ফুপা। সোনা ফুপু কাঁপছে।স্পষ্ট মনে আছে। যে সিএনজিটা গেল, সেটাই ফিরে এলো।আব্বার মুখটা হা করা, লাশ হয়ে ফিরে এলো। ঘর ততক্ষণে পরিষ্কার। বিছানা ঝেড়ে ফিটফাট..সেই বিছানায় লোকটা আর শুতে পারেনাই।
এরপর আত্মীয়নামক প্রাণীগুলোর আচরণ সম্বন্ধে আর নাই বলি। কেউ ব্যস্ত খাওয়া দাওয়া নিয়ে, কেউ ব্যস্ত সটকে পরার উছিলা খোঁজায় (যদি পয়সা খরচ হয়)..কেউ ব্যস্ত লাশ দাফন করায়। রাতের আগে দাফন না করলে যদি আমাদের দুজনের সাথে থাকতে হয়! সেটা তো করা যাবেনা!
ভাই নেই..আম্মা নেই...লাশ দাফন হয়ে গেল..আজিমপুর কবরস্থানে..
আমরা দুইবোন বাসায়, প্রতিবেশীরা রইলো.. বাকী প্রাণীরা কেটে পরলো নিজ উদ্যোগে। আমাদের খাওয়ালো দোতালার মৌসুমীরা।
ভাই ফিরে এসে দেখলো বাপের মাটি হয়ে গেছে। পরদিন তাকে খুঁজে পাওয়া গেল কবরস্থানে কবর আঁকড়ে ধরে কাঁদতে থাকা অবস্থায়..
৯.
আমার বাপ তার কোন চাওয়া পূর্ণ হতে দেখেনি। ছেলের রোজগার খেতে পারেনি, বড়টির গণিতের ভয় কাটিয়ে পরীক্ষায় পাশ করা দেখতে পারেনি, আর ছোট ছাগলের মোটামুটি ভালো রেজাল্টে আনন্দ করতে পারেনি। জীবনের শেষ দিন গুলোতো উন্নত জীবন যাপনের ছিটে ফোঁটা উপভোগ করতে পারেনি। এখন উপরওয়ালার অশেষ রহমতে যা আমরা শতকরা একভাগ হলেও করতে পারছি। এটা আমার কাছে অ্ন্যায়সম। বাপের জন্য তো কিছুই করতে পারিনাই। নিজে ঠিকই আরাম করছি।এটা অনেক বড় একটা কষ্ট। যেটা কাউকে বোঝানোর নয়..পৃথিবীর যেসকল সন্তান এধরনের মৃত্যু দেখেছে তারা কোন কিছুতে শান্তি পায়না..আমার অন্তত তা মনে হয়না..
১০
আমার জামাই "হিরোজ" দেখে। আমি দেখিনা।কিন্তু কি হয় সেই গল্প গুলো শুনি। এখন মনে হয়, যদি আমার এমন ক্ষমতা থাকতো যে ফিরে যেতে পারতাম ১৯৯৭..কিন্তু এখনকার অবস্থা আমার থাকতো..তা হলে বাপের মৌলিক চাহিদা- অন্তত চিকিৎসাটা ঠিক মতো করাতে পারতাম।মনের সাধ মিটিয়ে..যদি যাওয়া যেতো..
শুরুতে বলেছিলাম লেখালেখিতে আসার পিছনে বাপের উৎসাহ ছিল কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। এখন বলি, তার জন্যই তো আমার লেখালেখি শুরু..তার মৃত্যুর পর এটাই তো ছিল আমার অস্ত্র..জীবনযুদ্ধের..
১১.
একটি কথা বলা হয়নি।আমার চোখের সামনে আব্বার যকৃত গলে পড়ে গেছে, আমার বোন সেই পড়ে থাকা যকৃত পরিষ্কার করেছে আর আমার নানার লাশ নিয়ে তার দুই পক্ষের টানা হেচড়ায় আমার ভাইটা আব্বার লাশ দেখতে পারেনি..এতে কি আমাদের তিন ভাই বোনের জীবনের অর্ধেকটা পাপেরও মোচন হয়েছে! এর থেকে বড় কষ্টের আর কি থাকতে পারে?
মনটা খুব খারাপ হইলো
এমন একটা লেখা শেষে তোমাকে স্বাগতম বলার সুযোগ নেই
নিয়মিত লেখালেখি করো ...
ভালো থাকো
স্তব্ধ হলাম লেখাটা পড়ে। স্তব্ধ খালি আপানাদের পুরো পরিবারের কথা মনে করে তা না হয়, রেখার ধরনটার জন্যও।
আমার বাবা বিছানায় শুয়ে ছিলেন তিন বছর। আবেগি করলোও লেখাটা।
রেখার জায়গায় লেখা হবে।
মন্তব্য এডিটের সুযোগ চাইইইইই
আমিও স্তব্ধ হলাম...
ঝাপসা চোখে পড়লাম।
রুম্পা...
প্রথম লেখাতেই সবার মন খারাপ করে দিলেন প্রচণ্ড
বাবা বিষয়ক কিছু পড়লেই আমার বাবার কথা মনে পড়ে।
যাহোক,
আমি জানি আপনি পরের পোস্টেই সবার মন সুদে আসলে ভালো করে দিবেন।
স্বাগতম আমরা বন্ধুতে
মনটা খারাপ হয়ে গেল, আমি জানি কষ্ট কি কারন আমার বাবা - মা দুইজনকেই হারিয়েছি ছোট বেলায়।
অনেক সংগ্রামের পর আজ দাঁড়িয়েছি ।
আমি নিজের কথা ভাবছি! আমি ও যে বয়সি হতে চলছি!
জগত সংসার বড় কঠিন।
Rumpa
mon kharap ta pashe niye nirontor cholte hoy emon ta jibon hoyto shobar noy. eta niye thakatai hoyto jibon... nuton jiboner torre purono hoyto niyomito bilin hoy - tao hoy to shobar belay projojjo noy. baba-mrittu shojjar akkhep hoyto jabar noy... onek shafollo ar kokhonoi share kora jabe na... tobu poroborti shomoye anonder utsho guli theke anonder je uthsoron ta dharon kore jodi onner modhdhe she anondo choriye dewa jay, jar nei beshi kore tader jonno .. kichu ta hoyto valo lagte pare .. modda kotha holo cholbar shokti ta hariye na fela ... puno puno srijon er majhe kharaplaga guli impersonal kono kichu toiri te choriye diye dekhte paro.
tomar shoker shathe ekatotta prokash korchi.
কারো কারো গল্পগুলো খুব কাছাকাছি হয়। কারো কারো বেদনা আক্ষেপও।
ঠিক এই এপ্রিলেই, সেই ১৯৯৭ সালেই একদিন ঘুম থেকে ভোর বেলা মায়ের উৎকন্ঠিত গলা। 'দেখতো তোর বাবা ঘুম থেকে উঠছে না কেন'?
সেদিন ছিল পহেলা বৈশাখ। সব বোনেরা মিলে পহেলা বৈশাখের উৎসবে গেছে। চারবোন কখনো একসাথে বেরুতো না মাকে ছেড়ে। সেই প্রথম গেল। বাসায় আমি আর মা। আমি মায়ের ডাক শুনে ছুটে গেলাম বাবার বিছানার পাশে। কপালে হাত দিয়ে দেখলাম - ঠান্ডা। পালস, নেই। বাবা আর জাগবে না কখনো। আমি পাথর হয়ে গেলাম। বাবা ডাক্তারের কাছে নেয়ারও সুযোগ দেয়নি আমাকে। ঘুমের মধ্যে স্ট্রোক করেছিল। আমার কেন যেন মনে হতো বাবা আমার উপর অভিমান করে চলে গেছে। সেই অপরাধবোধ আমাকে আমৃত্যু তাড়া করে বেড়াবে। সেই বছর থেকে আমাদের পরিবারে পহেলা বৈশাখটা পরিত্যাজ্য হয়ে গেল।
আপনার গল্পের সাথে আরো মিল পেলাম কিছু আত্মীয় পরিজনের ব্যবহারে। সেই বিপদে মানুষ চিনেছিলাম খুব। তখনো আমি দাড়াইনি, দাড়াতে পারবো কিনা নিশ্চিত নই। সদ্য চাকরীতে ঢুকেছি। বেতনের টাকা দিয়ে সংসার চালানোর অবস্থা আসেনি। আত্মীয় মানুষের চেহারা আমি খুব দেখেছিলাম। তবে সেই দুঃসময়ে আমার পাশে পাশে ছিল প্রিয় বন্ধুরা। আমাকে প্রান দিয়ে আগলে রেখেছিল ওরা। আমাকে ভেঙ্গে পড়তে দেয়নি। আমি সেইসব বন্ধুর হাত কখনো ছাড়ি না তাই।
আপনার লেখাটা আগাগোড়া ছুঁয়ে গেল তাই সঙ্গত কারনেই।
প্রবাসে যখন আসি তখন বাবা'র উপর যে কোন ক্ষোভ ছিলনা না বলা যাবে না। আজ প্রবাসে আসার সাত বছর পর এখন নিজেকে যখন বাবা'র আসনে দেখি তখন সব ছুড়ে ফেলে দেশে ছুটে যেতে চায় মন। মাঝে মধ্যে ভাবি জীবনটা কেন এত জটিলতার মধ্যে কাটাতে হয়। বিত্ত বৈভব তো কখনও চাইনি কিন্তু একটা সহজ সরল জীবন এত অস্পৃশ্য কেন?!
এত সহজ ভাষায় এত আবেগী লিখা খুব কম পড়েছি।
লেখাটা অনেক বেশী মন ছুয়ে গেলো।জলভরা চোখে পড়লাম।
তুমি কি জানো আমি তোমাকে মাঝে মাঝে খুব হিংশা করি,মাঝে মাঝে আমার তোমার মতন হতে ইচ্ছা করে।আমার জামাই প্রায়শই একজন আত্মনির্ভশীল নারীর উদাহরন হিশেবে তোমার কথা বলে।আমার দৃঢ় বিশ্বাস তোমার বাবা যেখানেই আছেন তোমাদের অবস্থান দেখে উনি গর্ব বোধ করছেন।
ভালো থেকো সবসময়।
আমি খুব মন খারাপ অবস্থায় আছি রে ভাই। এই সময় এই লেখা পড়ে কী রকম যে লাগলো তা আর না বলি। তবুও তো ভালো মানুষ একটা বাপ পাইসো। কষ্ট লাগে এখনও। আমার বাপের অমানুষির গল্প বলতে শুরু করলে তো রাত কাবার হয়ে যাবে আপু। আর আত্মীয় স্বজন? ওইগুলাকে স্বজন নাম দিসিলো কোন্ গাধা এইটা ভাবি। সবগুলাই তো দুর্জন দেখা যায়। খুব আপন লাগলো পড়ে। ভালো থেকো লক্ষী আপুটা।
আহারে আমার আপুটা!
মন খারাপ হয়ে গেলো অনেক.।
ভালো থাকো সবসময়!
লেখাটা পড়েছি বিকালেই। কিন্তু কি বলব বুঝি নাই।
ভালো থাকেন আপনি, আপনারা।সৃষ্টিকর্তা আপনাদের ভালো রাখুন।
এরকম একটা লেখার পড়ার পরে কমেন্ট করার কিছু থাকে না ...
ভাল থাকুন।
স্বাগতম আপনাকে
এরকম লেখায় মন্তব্য করার মতো ভাষা জানা নেই।
আপনার বাবা যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন
আপনারা সবাই ভাল থাকুন। আপনার বাবা র রুহের শান্তি কামনা করছি।
আসলে আমি খুব একটা ভালো লিখতে জানিনা। এজন্য সাহস করে কখনো ব্লগ শুরু করি নাই। তার উপর প্রথম লেখাটাই এমন হবে আমি নিজেও জানতাম না। হয়ে গেল।

এখানে যে ক'জন আমাকে চিনেন, তারা জানেন আমি ব্যাপক হাসি খুশি..
নজরুল ভাই (ওস্তাদ) ঠিকই বলেছেন। চেষ্টা করবো পরের লেখায় মন ভালো করে দিতে।
....................বাবার আত্নার শান্তি কামনা করছি । শুভ কামনা থাকলো ।
মন খারাপ করা লেখা
আমরা বন্ধুতে স্বাগতম ।
লেখাটা পড়ে কিছুক্ষণ বাকরূদ্ধ হয়ে রইলাম।
এরচেয়ে চেয়ে বেশী কিছু বলার ভাষা নেই .।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।।
হুমম…অনেক গুলো লাইন যেন আমারই লেখা…
বাবা মারা যান হটাত করেই…তারপর সংসার চালাতে ২১ বছর বয়সেই চাকরী, গোটা চারেক টিউশনী, ইন্সুরেন্সের দালালী আর সাথে পড়া চালিয়ে এখন উপরওয়ালার অশেষ কৃপায় উন্নত জীবন উপভোগ করি । কিন্তু জীবনের সব পাওয়াই মূল্যহীন হয়ে যায় যখন মনে পরে যে বাবা আমার কিছুই দেখে যেতে পারেননি; বাবার জন্য কখনো কিছুই করতে পারিনি । এর চেয়ে কষ্টের কিছু নেই…আর এই কষ্ট থেকে মুক্তিরও কোন পথ নেই…:(((
যাদের বাবা আছেন তারা তাদের সৌভাগ্য অনুধাবন করুন আর তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করুন…
~
দুর্দান্ত ! এতো সহজ করে গভীর দুঃখ বলা খুব কঠিন! প্রিয়তে রাখলাম
কি লিখবো বুঝতে পারছিনা ।
খুব কষ্ট লাগছে আপনার লেখাটা পড়ে
কি লিখবো বুঝতে পারছিনা ।
খুব কষ্ট লাগছে আপনার লেখাটা পড়ে
যদিও আপনি পোস্টটা কতদূর ফলো করছেন জানি না। তবে জানিয়ে রাখি বাবাকে নিয়ে এমন লেখা এর আগে পড়ি নি
ভাইয়া আমি অবশ্যই ফলো করছি..কিন্তু অন্তত এ পোস্টে কথার পিঠে কথা বলার কোন ভাষা আমার জানা নেই..মাঝে মাঝে মৌনতাকেই ভাষা হিসেবে বেছে নেই ..এই যা..আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আব্বাকে নিয়ে এই লেখাটি নিয়ে মন্তব্য করার জন্য..
এই লেখায় কোন মন্তব্য করার সাধ্য আমার নাই!
অন্যদের মতোই বলি এ লেখায় মন্তব্য করার দুঃসাহস আমার নাই।
ভালো থাকবেন।
আমার চোখ কেন ঝাপসা করে দিলা রুম্পা আপু? তুমি খুব খারাপ
আমার চোখ কেন ঝাপসা করে দিলা রুম্পা আপু? তুমি খুব খারাপ
মানুষ তো সৃস্টিকর্তার সবচেয়ে প্রিয় সৃষ্টি, সবচেয়ে ভালবাসার ধন । কেন তা'হলে মানুষকে তিনি এত কষ্ট দেন ? কষ্ট দিয়ে তিনিও কি কষ্ট পান না ? নাকি অক্ষমের কষ্ট তিনি উপভোগ করেন, আর অনাবিল আনন্দে অট্টহাস্যে দশদিগন্ত কাঁপিয়ে তোলেন ?
মন্তব্য করুন