আমাদের হেলাফেলায় তোমার ছেলেবেলা
আগেই বলেছি আমার ছোটবেলা- বড়বেলার একাংশ পর্যন্ত কেটেছে অসম্ভব অভাবি অবস্থায়। একারণেই চোখের সামনে ঘটে যাওয়া অনেক বৈষম্য এখনও ছবির মতো দৃশ্যমান। গরীব হওয়ার - সুযোগের অভাব থাকার কারণে আত্মীয় স্বজনের কাছে নিগৃহীত হওয়া - একদমই গা-সওয়া ব্যাপার একদম। কিন্তু কখনোই কেন যেন অন্য বাচ্চাদের মাঝে কোন বৈষম্য মনোভাব গড়ে উঠছে দেখলে সহ্য হয় না। মনে হয়- বাবা মকে ডেকে বলি - শিশুদের শিশু হয়েই শিশুকাল পর করতে দিন। এক্ষেত্রে অবধারিত কথা- আপনার বাচ্চা কয়টা। উত্তর- একটাও না। কিন্তু শিশুর মনোবিকাশে সহনশীল এবং সংবেদনশীল হতে নিজের বাচ্চা নয়- কমন সেন্স এবং একটু সচেতনতা প্রয়োজন। আজও আমি আমার পরিবার এককালে ”গরীব” হওয়ার কারণে যা সহ্য করেছে -করছে তা অন্য কোন শিশু করুক এটা একজন সংবেদনশীল মানুষ চাইতে পারে না। কারণ আপনিও জানেন না- আপনার ছুড়ে ফেলা একজন কোমলমতি শিশু যেকোন দিন কঠোর হাতে চেপে ধরতে পারে আপনার ঘাড় ।
কথায় কথায় শুধু বলা হয়- আমরা যখন ছোট ছিলাম- তখন অমুক হয়েছে তমুক হয়েছে। কিন্তু আসলে কি হয়েছে? আমাদের ছোটবেলার আশি ভাগ সময় কেটেছে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে। আর সময় কেটেছে এমনটা শুনে শুনে- ”তুমি ছোট- এসবে নাক গলাবে না” অথবা ”এমন কেনো করো- তুমি না বড়- সব বোঝ”। বড় আর ছোট হবার দড় টানাটানির মাঝ দিয়ে বড় হয়ে গেছে কত মানুষ কে জানে। ফলাফল, পরের প্রজন্মের কাছে একই ধরনের ম্যাসেজ পৌছে দেয়। তাকেও বড়- ছোট হওয়ার দোটানায় ফেলে দেয়া। আমরা এভাবেই ক্রমশই নিজের শিশুদের ঠেলে দেই চরম দ্বৈতরথে। যে রথের যাত্রার বিরতি নেই।
ভাবতে পারেন- এ আবার কেমন কথা! কি করে পরিবার থেকেই শিশুর মনোজগতে জটিলতা সৃষ্টি হয়! আমার একান্তই ব্যক্তিগত ধারণা- শিশুরা জন্মগতভাবে সাদা-কালো, ধনী-গরীব এধরনের বৈষম্য নিয়ে জন্ম নেয় না। কারণ তাদের কাছে তার মতো ছোট্ট মানুষরা শুধুই বন্ধু। একারণেই রাস্তায় পাড়ার সবচেয়ে অভাবী ছেলেটার সঙ্গে ক্রিকেট খেলে বাসায় এসে মায়ের বকুনি খায় স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান। তাও আবার কেন? পাড়ার ”খারাপ ছেলেটার” সঙ্গে মেলামেশার জন্য। এর থেকে তারমাঝে কি বিষ ছড়িয়ে দেয়া হয়? গরীব মানে খারাপ? নাকী অভাবে থাকা অপরাধ? এই বিষ দুই ধরনের কাজ করে। এক- আপনার নিজের সন্তার ছোট থেকে নানা ধরনের বর্ণবৈষম্য নিয়ে বড় হচ্ছে। দুই- যে অভাবি ছেলেটার কাছ থেকে বন্ধুকে সরিয়ে দিলেন তার রোষের আগুনে পুড়বেন সারা জীবন। সেই ছেলেটাই হয়তো একদিন সুযোগ পেয়ে জ্বালিয়ে দিবে আপনার শখের গাড়িটি। কারণ, সে ঘৃণা করবে আপনার বড়লোকী- অহমিকা।
এসকল বাহ্যিকতার বাইরে ঘরের অনেক বিষয় থাকে। যেমন, শিশুর সামনে অন্যের সমালোচনা করা। আমরা বড় হয়ে নানা জনের সঙ্গে নানা বিতণ্ডায় জড়িয়ে যেতে পারি। কিন্তুই সেই ঝামেলার বিষবৃক্ষের বীজ কি শিশুটার মনে পুঁতে দিতে চাই? মনে রাখবেন- যে ছবি শিশুর মনে এঁকে দিচ্ছেন সেটা নিয়েই কিন্তু শিশুরা বড় হবে। আর তা শুধু অন্যের ছবি নয়। আপনারও। অনেক সময়ই এমন হয়- যে মায়েরা বাচ্চাদের সামনে কেবল বাবার সমালোচনা করে- সেই বাচ্চারা বড় হয়ে বাবা মা কাউকেই সম্মান করে না। কারো কাছের হয় না। বরং বাইরের পৃথিবীকে আপন করে নেয়। যেটা প্রায়ই তাকে ব্যাকফায়ার করে।
আরো ব্যাকফায়ার করে ছোট বেলা থেকেই যদি তার মাঝে ”দামী”/ ”অদামী” বিষয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়। যেমন ধরা যাক, কোন এক পরিবারে তিন মামার তিন বউ। দুইজন গৃহবধু একজন ডাক্তার। শিশুটার কাছে কিন্তু এরা মামী ছাড়া অন্য কিছুই নয়। এখন দুইজনকে বড় মামী-ছোট মামী আর একজনকে ডাক্তার মামী ডাকতে শেখানো হলে শিশুটির নিজেই মানদণ্ড তৈরি করে ফেলতে পারে। ভাবতে পারে - ঐ দুই মামীর থেকে বুঝি ডাক্তার মামীই বেশি দামী।
এরকম অজস্র ছোটখাটো বিষয়..ধরা যাক কোন এক ধরনের তুলনাই। "তুমি কেনো অমুকের মতো পড়ো না, তমুকের মতো খেলো না!" আরো কত কি? বড়দের ক্রমাগত এই চাহিদা একজন বাচ্চার সারল্য কেড়ে নিয়ে তাকে ক্রমশ প্রতিযোগী এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ করে তোলে। তারা শিখে কি করে অন্যের কাঁধে পা রেখে চলা যায়। কিন্তু শেখে না কারো হাত ধরে চলতে। আপনি কি দেখতে পান- একারণেই আপনার বাচ্চা কতোটা নিঃস্বঙ্গ! কতোটা অনিরাপদ!
(মনের মাঝে জমে থাকা এই এলোমেলো কথা গুলো একসাথে করতে এই সিরিজ চলবে..)
ভাল লাগল। ভাল বাস্তবতা তুলে এনেছেন। লেখা চলুক।
কম তো দেখলাম না আপু! তাই মনে হলো এবার বলার সময় এসেছে।
পড়ছি-চলুক- শিশুদের সাথে সাথে বড়রাও শিখুক!
শান্ত যখন বলেছে- তখন চলতেই পারে।
খুব ভালো পর্যবেক্ষণ।
বাহ কতদিন পর মীরের কমেন্ট! ভালো লাগলো...
কি অবস্থা ? আছেন কেমন! আপনাকে খুঁজছিলাম কেনো জানি...
অবস্থা ভালো। আমিও চিন্তিত ছিলাম কেন আপনি খুঁজছিলেন ভেবে। এখন ভুলে গেছেন জেনে ভাল্লাগলো।
ভুলি নাই... কিন্তু সে তো আগের কথা.. তাই আর...
খুবই ভালো লাগলো লেখাটা।
তাহলে পরের পর্বগুলো লিখবো?
ভাল লাগল। ভাল বাস্তবতা তুলে এনেছেন। লেখা চলুক।
তবে তাই হোক..
মন্তব্য করুন