কোথায় পাবো তারে
[কতো যে গল্প পড়েছি জীবনে, কতো কবিতা! মনে স্থায়ীভাবে গেঁথে আছে, এরকম গল্প-কবিতা-উপন্যাস-গানের সংখ্যাও কম নয়। সেসব নিয়ে লিখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু লিখতে গেলে যে আকারে বড়ো হয়ে যায়! ভাবছি, কিছু কথা মন্তব্যে জুড়ে দিলে কেমন হয়? ধরা যাক, মন্তব্যগুলোও এই লেখারই অংশ! শহীদুল জহিরের একটা গল্প নিয়ে কথা বলি আজকে। তবে তাঁকে নিয়ে এটিই শেষ লেখা নয়, পরপর কয়েকটা লিখতে হবে।]
অভিনব এক গল্প লিখেছিলেন শহীদুল জহির 'কোথায় পাব তারে' শিরোনামে। অবশ্য তাঁর অধিকাংশ গল্পই অভিনব। এই গল্পের আব্দুল করিম বলে বেড়ায় যে, সে 'ময়মনসিং' যাচ্ছে। তার এই ঘোষণা মহল্লাবাসীর মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে, কারণ এই 'আইএ পাশ বেকার' যুবকটি 'জীবনে কোথাও যায় নাই এবং যাবে না'। কেন সে ময়মনসিং যেতে চায়? কারণ সেখানে 'আমার বন্দু আছে, বেড়াইবার যামু।' নানা কৌতুককর ঘটনায় গল্প এগিয়ে চলে, এবং এক পর্যায়ে এসে আমরা জানতে পারি তার এই 'বন্দু'র নাম 'শেপালি'। এই নামটি শোনার পর-
'ভুতের গলির লোকদের কাছে তখন আব্দুল করিম এবং তার ময়মনসিং যাওয়ার প্রসঙ্গের চাইতে শেফালি প্রসঙ্গ বড় হয়ে ওঠে, দক্ষিণ মৈশুন্দি এবং ভুতের গলির এই মহল্লার লোকদের দিন উত্তেজনায় ভরে যায়, হালায় প্রেম করে নিহি, তারা বলে। তাদের মনে হয় যে, আব্দুল করিম বেকার বলেই তার পক্ষে এইসব করা সম্ভব; তখন মহল্লার লোকেরা বেকার থেকে প্রেম করাকে ঘৃণা করতে শেখে; তারা ভুলতে পারে না যে, শেফালি একটা মেয়ে এবং আব্দুল করিম বলে যে সে তার বন্ধু! ফলে মহল্লার লোকদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়, সারা দিনের কর্মকান্ত দেহ নিয়ে তারা বিছানায় জেগে থাকে, জীবনের ব্যর্থতা এবং অপচয় বোধ তাদেরকে গ্রাস করেত উদ্যত হয় এবং তারা কেমন বিষণ্ন হয়ে পড়ে; তাদের মনে হয় যে, বেকার থাকাই তো ভাল আব্দুল করিমের মতো!'
আব্দুল করিম এইসব বলে বটে, কিন্তু তার ময়মনসিং যাওয়ার কোনো লণই দেখা যায় না, নানা কারণ দেখিয়ে বিরত থাকে, কিন্তু যাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে মরতে দেয় না সে। কেন?
'আব্দুল আজিজ ব্যাপারির মনে হয় যে, এটা আব্দুল করিমের একটা খেলাই, এবং সে হয়তো নিজের সঙ্গেই খেলে, শেফালি এবং ময়মনসিং বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে সে হয়তো তার জীবনের কর্মহীনতার ভেতর এই এক অবলম্বন গড়ে তোলে।'
অবশেষে সে মহল্লার দুলালকে সঙ্গে নিয়ে রওয়ানা হয়। কিন্তু অচিরেই আমরা বুঝতে পারি, সে ওই মেয়েটির নাম ছাড়া আর কিছুই জানে না। না তার গ্রামের নাম, বা বাবার নাম। যদিও শেফালিদের বাড়িতে যাবার একটা পথনির্দেশ সেখানে দেয়া আছে। সেটি এরকম:
মোছাঃ শেপালি বেগম
ফুলবাইড়া
মৈমনসিং
ঢাকা মহাখালি বাসস্ট্যান
মৈমনসিং শহর, গাঙ্গিনার পাড়
গাঙ্গিনার পাড়- আকুয়া হয়া ফুলবাইড়া বাজার, থানার সামনে
উল্টা দিকে হাঁটলে বড় এড়াইচ গাছের (কড়ই গাছ) সামনে টিএনউ আপিস
টিএনউ আপিস সামনে রাইখা খাড়াইলে, বামদিকের রাস্তা- নাক বরাবর
হাই স্কুল ছাড়ায়া বরবর সুজা, ধান তে, কাঁটা গাছ, লাল মাটি,
বামে মোচর খায়া নদী
আহাইলা/আখাইলা/আখালিয়া নদী
নদী পার হয়া ব্রিজ পিছন দিয়া খাড়াইলে
দুপুর বেলা যেদিকে ছেওয়া পড়ে তার উল্টা দিকে,
ছেওয়া না থাকলে, যেদিকে হাঁটলে পায়ের তলায় আরাম লাগে সেইদিকে
নদীর পাড় বরাবর এক মাইল হাঁটলে দুইটা নাইরকল গাছ
দুই নাইরকল গাছের মইদ্দে খাড়ায়া গ্রামের দিকে তাকাইলে
তিনটা টিনের ঘর দেখা যাইব
তিনটা ঘরের একদম বাম দিকের ঘরের পাশ দিয়া যে রাস্তা গেছে
সেই রাস্তা ধইরা
আগাইলে চাইর দিকে ধান ক্ষেত, পায়ে হাঁটা আইলের রাস্তা
দূরে চাইর দিকে আরো গ্রাম
ক্ষেতে পাকা ধান যেদিকে কাইত হয়া আছে, সেই দিকে,
অথবা, যুদি ধানের দিন না হয়,
যেদিকে বাতাস বয় সেই দিকে গেলে পাঁচটা বাড়ির ভিটা দেখা যাইব,
তিনটা ভিটা সামনে দুইটা পিছনে,
পিছনের দুইটা বাড়ির ডালিম গাছওয়ালা বাড়ি।
এই পথনির্দেশ যত সহজ মনে হয়, আসলে তা নয়। বিশেষ করে 'দুপুর বেলা যেদিকে ছেওয়া পড়ে তার উল্টা দিকে, ছেওয়া না থাকলে, যেদিকে হাঁটলে পায়ের তলায় আরাম লাগে সেইদিকে' অথবা 'ক্ষেতে পাকা ধান যেদিকে কাইত হয়া আছে, সেই দিকে, অথবা, যুদি ধানের দিন না হয়, যেদিকে বাতাস বয় সেই দিকে গেলে'- এইরকম বিভ্রান্তিকর, অদ্ভুত, বিচিত্র পথনির্দেশনা মেনে কিভাবে কাঙ্ক্ষিত নারীর কাছে পৌঁছানো সম্ভব! বাতাস কি একদিকে বয়? পাকা ধান কি কেবল একদিকেই কাত হয়ে থাকে? কোনদিকে হাঁটলে পায়ের তলায় আরাম লাগে সেটা নির্ণয় করা কি সহজ কাজ? সহজ নয় বলেই বিষয়টি ঝামেলা পাকায়। তারা দিনের এমন এক সময় ওই সাঁকোর ওপর দিয়ে পাড় হয়, যখন 'ছায়া দেহের মায়া ত্যাগ করে দূরে যেতে চায় না' অর্থাৎ মধ্যদুপুর, তখন তার সামনে দ্বিতীয় সম্ভাবনাটি খতিয়ে দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। অর্থাৎ কোনদিকে গেলে পায়ের তলায় আরাম লাগবে সেটিই তাকে নির্ণয় করতে হবে এখন! কিন্তু সেটি টের পেতে হলে তো জুতো খুলতে হবে, আর জুতো খুলতে গিয়ে আব্দুল করিম ফিতের উল্টো দিকে দিয়ে টান দিয়ে একটা বিষ গেরো পাকিয়ে ফেলে। অনেক চেষ্টা-চরিত্রের পর বিষ গেরো খুলে জুতো খুলতে সম হলেও, সে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ফিরে আসে।
প্রিয় পাঠক, আপনার কি মনে হয়, এই পথনির্দেশ অনুসরণ করে কেউ কোনোদিন কোথাও পৌঁছাতে পারবে? কিন্তু তারচেয়ে বড় প্রশ্ন, একটি প্রায়-অসম্ভব পথনির্দেশ অনুসরণ করে এত দূর পর্যন্ত গিয়েও সে অকস্মাৎ ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয় কেন? তার এই আচরণের অর্থ কি? আর ফিরেই যদি আসবে তাহলে এতদিন ধরে সে শেফালির কাছে যাওয়ার এই তীব্র আকুলতা প্রকাশ করেছিলো কেন? কেনই বা সত্যি সত্যি শেফালির সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছিলো?
এই গল্পের প্রায় পুরোটা জুড়ে 'ময়মনসিং' বা 'শেপালির' কাছে যাবার জন্যে আব্দুল করিমের যে তীব্র আকুলতা প্রকাশিত হয়েছে, তা আসলে প্রেমের কাছে যাবার জন্য তার আকুলতা। এই প্রেমই তার বেকার ও গঞ্জনামুখর জীবনের একমাত্র অবলম্বন। সেই ইঙ্গিতও আছে গল্পে- 'এটা আব্দুল করিমের একটা খেলাই...।' , শুধু তাই নয়, তার এই প্রেম মহল্লাবাসীর মধ্যেও ঈর্ষার জন্ম দেয়- 'মহল্লার লোকদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়...!' এ হচ্ছে প্রেমহীন মানুষের বেদনা ও হাহাকারের গল্প। কিন্তু তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়- আব্দুল করিম এতদূর পর্যন্ত গিয়েও ফিরে আসে কেন? কারণ, আমার মনে হয়, সে একসময় বুঝে যায়- আসলে ওখানে পৌঁছানো যাবে না। প্রেম তার জন্য নয়। সে হয়তো কোনো এক অনির্ণেয় কারণে সেটা পেতেও চায় না। প্রেম পাওয়া নয়, প্রেমের সন্ধান করাটাই তার কাছে জীবন। শুধু তার কাছেই নয়, হয়তো সবার কাছেই। আমরা সবাই হয়তো একটি প্রেমের সন্ধান করতে করতেই জীবন কাটিয়ে দিই। কেউ হয়তো পায়, কেউ কখনোই পায় না। আব্দুল করিম না পাওয়ার দলে।
আমি নিজেও বোধহয় ওই আব্দুল করিমের দলেই...
[এই লেখাটির ট্যাগ দিতে চেয়েছিলাম '
গল্পপাঠ-১
', কারণ এরকম আরো কিছু গল্প নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে আমার। কিন্তু এখানে তো নির্দিষ্ট তালিকার বাইরে নিজের পছন্দে ট্যাগ দেয়ার সুযোগ নেই। ব্লগ-কতৃপক্ষ কি ভেবে দেখবেন ব্যাপারটা?]
শহীদুল জহিরের একটা সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম আমি। সেখানে এই গল্পটি নিয়েও প্রচুর কথা বলেছিলাম। তার খানিক অংশ -
কামাল : 'কোথায় পাবো তারে' নিয়ে একটু কৌতূহল আছে। এইখানে যেমন পথনির্দেশ বা রাস্তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে সেটা খুব অদ্ভুত। দু-একটা লাইন পড়ে শোনাই 'নদী পার হয়া ব্রিজ পিছন দিয়া খাড়াইলে দুপুর বেলা যেদিকে ছেওয়া পড়ে তার উল্টা দিকে, ছেওয়া না থাকলে, যেদিকে হাঁটলে পায়ের তলায় আরাম লাগে সেইদিকে নদীর পাড় বরাবর এক মাইল হাঁটলে দুইটা নাইরকল গাছ' বা 'েেত পাকা ধান যেদিকে কাইত হয়া আছে, সেই দিকে, অথবা, যুদি ধানের দিন না হয়, যেদিকে বাতাস বয় সেই দিকে গেলে পাঁচটা বাড়ির ভিটা দেখা যাইব, তিনটা ভিটা সামনে দুইটা পিছনে, পিছনের দুইটা বাড়ির ডালিম গাছওয়ালা বাড়ি।' এরকম পথনির্দেশ মেনে বা এরকম রাস্তা ধরে কেউ কখনো কোথাও পৌঁছাতে পারবে বলে তো মনে হয় না। এটা করলেন কেন?
জহির : এটা তো খুব ফানি এবং অ্যাবসার্ড গল্প। আমি এটা করেছি যেন, পাঠকের মনে হয়- এটা একটা অসম্ভব ব্যাপার। তবে বাস্তব জীবনে এরকম বর্ণনা দেয় অনেকে। যেমন আপনি যদি বেইলি রোড বোঝাতে পারেন, তাহলে বাড়ির নম্বর-টম্বর না জানা থাকলেও আপনি একটা বাড়ির ঠিকানা বা পথের বর্ণনা দিতে পারবেন। অনেকে দেয়ও। আমি নিজেই এমন করতে দেখেছি। তো যখন গল্পটা লিখি, তখন মনে হলো- এই ফাইজলামিটা করি, বদমাইশিটা করি। হা হা হা। সেজন্যেই এটা করেছি।
কামাল : এরকম পথ ধরে শেফালির বাড়ি পৌঁছানো যেমন অসম্ভব, তেমনি আবদুল করিমের জীবনে প্রেমও একটি অসম্ভব বিষয়, ব্যাপারটি কি এরকম?
জহির : হ্যাঁ, তাই। এমনকি শেফালিও চায়নি যে, আবদুল করিম সেখানে পৌঁছাক এবং এক পর্যায়ে সে সেটা বুঝতেও পারে। তার উদ্যোগ ছিলো, অনেকদূর পর্যন্ত গিয়েছিলোও সে, কিন্তু যখন বুঝতে পারে যে, এটা একটা অসম্ভব কাজ, গন্তব্যটাই অসম্ভব, তখন ফিরে আসে।
শহীদুল জহির সম্বন্ধে কিছু কথা আগেই বলে নেয়া দরকার ছিলো, সেটি এখানে বললাম -
শহীদুল জহির যে শক্তিমান লেখক, এ বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ ছিলো না। অন্তত আমি কাউকে সন্দেহ প্রকাশ করতে দেখিনি। কিন্তু তাঁর শক্তিমত্তার জায়গাগুলো কখনোই খুব ভালোভাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়নি। এমনকি তাঁকে বুঝে ওঠা নিয়েও সংশয় ছিলো সবসময়ই। যারা তাঁর লেখা পছন্দ করেন তাঁদের অনেককেই আমি জিজ্ঞেস করেছি, শহীদুল জহিরের লেখা কেন তাদের ভালো লাগে? প্রশ্নটি বরাবরই তাঁর পাঠকদের জন্য ছিলো বিব্রতকর। সত্যি কথা বলতে কি, আমার জন্যও। আমি নিজেও সবসময় তাঁর লেখা বুঝে উঠতে পারিনি। মুগ্ধ হয়েছি অথচ নিজের কাছেই এই মুগ্ধতার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারিনি। বিশেষ করে, তাঁর চরিত্রগুলোর অদ্ভুত-প্রায় উদ্ভট-রহস্যময় কাণ্ড-কীর্তি এক ধরনের বিমূঢ় অনুভূতি সৃষ্টি করতো আমার মধ্যে, এখনও করে। এই লেখায় তারই কিছু উদাহরণ দেয়ার চেষ্টা করবো। সত্যি বলতে কি, মানবজীবনের যে বিপুল-প্রকাণ্ড রহস্যময়তা, সেটিকে তিনি উপস্থাপন করেছেন এমন এক ভঙ্গিতে যে এর কোনোকিছু বুঝে ওঠা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। তাঁর সব গল্প পাঠকরা বুঝে উঠতে পেরেছেন সে দাবি বোধহয় কেউই করবেন না, কিন্তু এমনই এক ঘোরলাগা বর্ণনাকৌশল ব্যবহার করতেন তিনি যে, একবার ওই গল্প পড়লে তার আবেশ থেকে বেরোনো কঠিন হয়ে ওঠে। তাঁর গল্প টেনে নিয়ে যায় এর ভাষা ও বর্ণনার গুণে; শেষ করে বুঝে উঠতে একটু সময় লাগলেও কিংবা আদৌ বুঝে ওঠা না গেলেও পাঠ শেষে এক ধরনের ভালো লাগার আবেশ ছড়িয়ে পড়ে।...
প্রথমেই আপনার নতুন লেখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। এবং পছন্দের বিষয়ে কলম ধরার জন্যে-ও।
শহীদুল জহিরের সাহিত্যিক মেধা নিয়ে তো মোটামুটি নিঃসন্দেহ আমি, এবং মনে হয় সবাই। অনেক নবীন লেখককে তাঁর ধারা অনুসরণ করতে দেখেছি। 'কোথায় পাব তারে' আমার নিজের খুব পছন্দের (এবং আবু ইব্রাহিমের মৃত্যু)। আরো আরো...
গল্পের নায়কের ময়মনসিংহ যাওয়া নিয়ে, পদনির্দেশ সবকিছুর মধ্যে একটা দুষ্টুমি আছে। এমন পদনির্দেশ পড়ে তো আউলা লাগছিলো আমার। রোদ থাকলে এমন, রোদ না থাকলে এমন, হাহাহা।
শহীদুল জহিরের সঙ্গে আপনার বাক্যালাপও চমৎকার লাগলো। তাঁর সম্পর্কে পাঠকের সবধরনের কৌতুহল মেটানোর উদ্যোগ নিলেন। পোস্ট-এর জন্য অনেক ধন্যবাদ আবারো। এবং পরের পোস্ট এর অপেক্ষা।
অনেক ধন্যবাদ লীনা। আপনি তো সর্বভূক পাঠক, কথা বলতেও ভয় লাগে। তবু, ভালো লাগার কথা জানালেন বলে সাহস খানিকটা বাড়লো। দেখি পরের কমেন্টে তাঁর সঙ্গে আমার আলাপের আরো খানিকটা তুলে দিতে পারি কী না।
শহীদুল জহিরের সাক্ষাৎকারের আরো খানিকটা অংশ-
কামাল : .... আপনার অনেক গল্পই বেশ চটুল বা হালকা ভঙ্গিতে লেখা। কিন্তু এর মধ্যেই বর্ণনা কোথাও কোথাও গাম্ভীর্যপূর্ণ ও অভিজাত হয়ে ওঠে। একটা উদাহরণ দেই। 'কোথায় পাবো তারে' গল্প থেকে কয়েকটা লাইন আপনাকে পড়ে শোনাই। এই গল্পের এক জায়গায় লিখেছেন- 'ফলে মহল্লার লোকদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়, সারা দিনের কর্মকান্ত দেহ নিয়ে তারা বিছানায় জেগে থাকে, জীবনের ব্যর্থতা এবং অপচয় বোধ তাদেরকে গ্রাস করেত উদ্যত হয় এবং তারা কেমন বিষণ্ন হয়ে পড়ে'- এই বাক্যগুলো যেন আগের বর্ণনার সঙ্গে ঠিক যাচ্ছে না। কিংবা লাইনগুলো যেন গল্পের মধ্যে এক ধরনের আভিজাত্য নিয়ে এলো। এরকম হয় কেন? একটু আগে যে বলছিলেন- আবেগ এসে পড়ে, এটা কি সেই কারণে হয়?
জহির : হতে পারে। আমি খেয়াল করি নাই ব্যাপারটা। আসলে আমি বুঝতেই পারি নাই। আমার কখনো কখনো মনে হয়, একজন লেখকের অনেক পাঠক থাকার এই এক সুবিধা- তারা বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন তল থেকে জিনিসগুলো দেখেন! এটা লেখকের সৃষ্টি হতে পারে, কিন্তু মননশীল পাঠকও তো আসলে স্বার্বভৌম। যেটা আপনি বললেন, সেটা আমি খেয়ালই করিনি। হ্যাঁ, এই গল্পের মধ্যে একটা মশকরা আছে, চটুটুলতা আছে, ইয়ার্কি আছে। এই গল্পে আব্দুল করিম নামে যে চরিত্রটা আছে, তার কথা যখন এসেছে, তখন সেটা তরলভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু এই জায়গাটাতে মশকারি নাই। এখানে মহল্লার লোকদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে। এটাও হয়তো তরলভাবেই বর্ণনা করা যেত, আমি ঠিক জানি না। গল্পটি মূলত অ্যাবসার্ড এবং ফানি, অথচ এই অংশটি তা নয়।... কিন্তু এর হয়তো অন্য একটি কারণও আছে। মানে, এটা কেন এসেছে, তার হয়তো একটি কারণ আছে। আমার ধারণা মানুষ যখন অন্যকে প্রেম করতে দেখে তখন সে খুব ঈর্ষান্বিত হয়। নিজের জীবনে একটা অর্থহীনতার বোধ জাগে। কারণ আমরা সবাই প্রেম পাইতে চাই, যেহেতু পাই না, তাই যখন দেখি অন্য কেউ প্রেম করছে, তখন এক ধরনের ইয়ে লাগে। আমরা স্বীকার করতে চাই না বটে যে, আমরা প্রেম পাই নাই, কিন্তু এক ধরনের মন খারাপ হয়। এটা ভুল হতে পারে, কেউ হয়তো বলতে পারে আপনার কথা ভুল, আমাদের কষ্ট হয় না- সেটাও হতে পারে। কিন্তু আমার ধারণা এটা হয়, হয়তো আমারও এটা হয়, আমারও হয়তো মন খারাপ হয়, মনে হয় ও প্রেম করছে, আমি পারি নাই। এই ব্যাপারটাকে আমি জেনারালাইজ করতে চেয়েছি।
কামাল : একই গল্পের আরো কয়েকটি লাইন- 'আব্দুল আজিজ ব্যাপারির কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় এবং তার মনে হয় যে, এটা আব্দুল করিমের একটা খেলাই, এবং সে হয়তো নিজের সঙ্গেই খেলে, শেফালি এবং ময়মনসিং বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে সে হয়তো তার জীবনের কর্মহীনতার ভেতর এই এক অবলম্বন গড়ে তোলে।' আবদুল আজিজ ব্যাপারির যে চরিত্র আপনি তৈরি করেছেন, তার পে এ রকম ভাবনা ঠিক...
জহির : যায় না। এরকম ভাবনাটা তার পক্ষে সম্ভব না। এখানে লেখকের উপস্থিতি ঘটেছে।
কামাল : এই লেখকের উপস্থিতি প্রসঙ্গেই তাহলে আরেকটা প্রশ্ন করি। যেমন, আপনার 'মহল্লায় বান্দর' গল্পটা। এই গল্পের নামের মধ্যেই তো একটা হালকা-চটুল ভাব আছে। বর্ণনাটাও সেইরকম। কিন্তু কোথাও কোথাও এমন দু-একটা শব্দ ঢুকে গেছে, যে বেশ অস্বাভাবিক লাগে।
জহির : কোনটা? আইডেন্টিফাই করেন!
কামাল : করছি। যেমন এরকম একটা বর্ণনা আছে- 'আব্দুর রহিম মিয়া কোন একদিন দুপুরে অথবা বিকেলে যুগিনগরে তার 'রহিম এন্ড কোং প্লাস্টিক ইন্ডাঃ লিঃ' থেকে ফিরে কলতলায় মুখ ধুতে যায়, সে কলের পাশে একটি নিচু দেয়ালের ওপর তার সিটিজেন অটোমেটিক কোয়ার্জ ঘড়িটা খুলে রেখে প্রক্ষালণ কর্ম সম্পন্ন করে ঘরে ফিরে আসে...।' এই বাক্যে 'প্রক্ষালণ কর্ম সম্পন্ন করে ' অংশটা বা 'প্রক্ষালণ' শব্দটা...
জহির : গুরুচণ্ডালের মতো লাগে!
কামাল : আমি ঠিক গুরুচণ্ডাল বলবো না, একটু যেন অস্বাভাবিক লাগে, অভিজাত লাগে।
জহির : একটু ভারি ধরনের... এইটা হতে পারে, হয়তো খেয়াল করি নাই। আসলে... একটা গল্পের তো মোটামুটি একটা লেন্থ আছে, পুরোটা একইরকম ভাবে সঙ্গতি রাখা একটু ডিফিকাল্ট, একটু কঠিনই মনে হয়। একদম ওজনে ওজন মিলিয়ে শব্দগুলো বসানো খুবই জটিল হয়ে পড়ে।
কামাল : কিন্তু আমার মনে হয়, এই ধরনের শব্দ ব্যবহার গল্পকে শক্তিশালীই করে তোলে।
জহির : না, শক্তিশালী করে তোলার ব্যাপার নয়। একজন লেখক যখন লেখেন, তখন এত চিন্তা করে লেখেন না। লেখক যা কিছু লেখেন, তার সবকিছুর যুক্তিও তার কাছে থাকে না। এটা... এটাকে কী বলবেন... অতিপ্রাকৃতিক... না এটা ঠিক অতিপ্রাকৃতিক বিষয় না... কী বলবো... একজন লেখক হয়তো অনুমান করে নেন, এই জিনিসটা এই জিনিসটার সঙ্গে যাচ্ছে বা যাচ্ছে না। কিন্তু এর কোনো যুক্তি তার কাছে নেই। এটা বুঝতে পারাটাই আসল ব্যাপার, কিন্তু কিভাবে বুঝতে পারা যায়, কীভাবে যায় না সেটা কেউ বলতে পারবে না। এই বুঝতে পারা না পারার জন্যই কোনো গল্প গল্প হয়, কোনোটা হয় না। শুধু ভাষা নয়, কাহিনী বিন্যাস, এর পদ্ধতি এই সবকিছু নিয়েই সে একরকম সিদ্ধান্তে পৌঁছায় বা বোঝে যে, এটা আমি করবো কী করবো না, এটা লিখবো কি লিখবো না, কিন্তু কিভাবে এটা বোঝে তার কোনো যুক্তি নাই। আরো একটা প্যারা হয়তো বেশি বা কম লেখা যেত, কিন্তু একজন ইন্ডিভিজুয়াল লেখক একটি গল্প একটা নির্দিষ্ট জায়গায় শেষ করে, কারণ সে তার নিজের ভেতর থেকে তার সিস্টেমে সে অনুভব করে যে, এই গল্পটা এখানেই শেষ হবে। তো, শব্দ চয়নেও তাই। এই ক্ষেত্রে হয়তো 'প্রক্ষালণ' শব্দটার কোনো বিকল্প আমার মনে ধরে নাই, হাত ধুয়ে গিয়ে বা ইত্যাদি, আমার এখন ঠিক মনে নাই। হয়তো একটা ওজনের মাপ ছিলো। 'কোথায় পাবো তারে' তো লেখকের উপস্থিতির কথা বলেছি, তার প্রমাণ আমি নিজেও দিতে পারবো। আব্দুল করিম ময়মিনসিং গিয়ে ডালিম গাছের তলে দাঁড়ালে তাকে বলবে 'আইছুইন', এই আইছুইন তো এই লোকের জানার কথা না। এইটা তো ময়মনসিংয়ের ভাষা, এটা তো তাদের জানার কথা না, তারা তো ঢাকা থেকে গেছে। এটা আমি লেখার সময়ই টেরও পেয়েছি। তবু লিখেছি... কারণ আমার উদ্দেশ্যই ছিলো ওটা লেখা। লেখকের উপস্থিতি মেনে নিয়েই ওটা লেখা হয়েছে।...
শহীদুল জহিরের এই গল্পটি আমি পড়িনি। আপনার চমৎকার বিশ্লেষন গল্পটি পড়ার তীব্র আগ্রহের জন্ম দিল।
শহীদুল জহিরের সাথে আপনার সাক্ষাৎকারটি ও খুব চমৎকার।
শেপালির বাড়ি কত দূর।
আব্দুল করিমের মনের জ্বালা যত দূর---
হাহাহাহা দারুণ বলেছেন।
গল্পটা পড়ে ফেলুন। দুর্দান্ত।
সাক্ষাতকারটা পুরা দিয়ে দ্যান। লেখা পছন্দ হইসে।
সাক্ষাৎকার তো অনেক বড়ো্। এত বড়ো লেখা দিলে লোকে মারপে
পড়ার জন্য ধন্যবাদ
বাড়ির ঠিকানা দেয়ার জায়গাটুকু যেনো কবিতা
শহীদুল জহিরের সাথে আপনার সাক্ষাৎকারটি ও খুব চমৎকার।
শহীদুল জহিরের লেখা আমি পড়িনি। আপনার চমৎকার বিশ্লেষন লেখা পড়ার তীব্র আগ্রহের জন্ম দিল।
শহীদুল জহির তো অসামান্য লেখক। হাতের কাছে বই থাকলে পড়ে ফেলুন।
আর এই লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ
হাতের কাছে নাই। টুকে রাখলাম, কিনে পড়বো
এভাবে কতকিছু যে টুকে রেখেছেন, আর কয়টা শেষ পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারবেন, ঈশ্বরই জানেন!
দারূণ একটা গল্প নিয়ে লেখা, সাথে সাক্ষাতকারটাও দারূণ লাগছে।
মজা লাগছে শহীদুল জহির এর বক্তব্যের সাথে আমার কিছু কিছু ভাবনার মিল দেখে...
থ্যাংকস শুভ
পুরো সাক্ষাৎকারটাই দিতে পারতেন কিন্তু ভাইজান। তাতে বরং আরো ভালো লাগতো আমাদের। আপনার সাক্ষাৎকার নেয়ার এই আগ্রহটার সঙ্গে আমি পূর্বপরিচিত। এর আগে রাহাত খানের সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম, আপনার নেয়া।
আর শহীদুল জহির পড়ি নাই। সো তার লেখার ব্যপারে মন্তব্য করতে পারলাম না। শুধু এটা বলতে পারি, আপনার লেখা পড়ে তার লেখা পড়তে ইচ্ছে হলো।
পুরো সাক্ষাৎকারটা অনেক বড়ো মীর। পরবর্তী কোনো লেখায় না হয় আরো কিছু অংশ তুলে দেবো।
হ্যাঁ, আমি অনেক সাক্ষাৎকার নিয়েছি একসময়। এখন বরং আর নেয়া হয় না। আগ্রহ থাকলেও, কাজটা খুব ক্লান্তিকর মনে হয়।
শহিদুল জহিরকে পড়া দরকার। অসামান্য এক শিল্পী তিনি। আর হ্যাঁ, অনেক ধন্যবাদ এই লেখাটি পড়ার জন্য।
আরে আমরা তো নিতান্ত শিশু (!) নই। বড় লেখা একটানে পড়তে পারি কামাল ভাই। আমার সর্বোচ্চ রেকর্ড হচ্ছে ১৭৫ পৃষ্ঠার পুতুলনাচের ইতিকথা আবদুল মান্নান সৈয়দের ভূমিকা এবং মানিকের জীবনীসহ একটানে পড়েছিলাম। কোনো উঠি নাই, নড়ি নাই, কিচ্ছু না। তাই আপনি নির্ভয়ে দিতে পারেন সাক্ষাৎকারটা।
আমি কি তাই বলেছি? এত বড় লেখা ব্লগ পোস্ট হবার উপযুক্ত নয়, সেটাই বোঝাতে চেয়েছি। যাহোক, শব্দসংখ্যার কোনো লিমিট না থাকলে তাঁর কয়েকটি গল্প নিয়ে লেখার পর ওই সাক্ষাৎকারটিও পোস্ট করে দেব। হলো তো?
আপনি তাই না বললেও, আমি আসলে শিশুই
যাক্ কামাল ভাই, এই লেখাটা পড়া হয়ে গেছে। এবার নতুন কোনো লেখা দেন। আপনার সবগুলো সাক্ষাৎকারের একটা করে কপি এই ব্লগে রাখতে পারেন। বন্ধু-ভক্ত-অনুসারীদের সুবিধে হবে।
আর ব্লগে কিন্তু অনেক কম সময় দিচ্ছেন, জানিয়ে গেলাম।
হ্যাঁ, নতুন লেখা দেব শিঘ্রিই।
সাক্ষাৎকারগুলোর সব কটার সফট কপি নাই। একসময় আমি হাতেই লিখতাম, কম্পিউটার ছিলো না। পত্রিকায় ছাপা হওয়ার পর প্রকাশিত কপিটাই সংগ্রহে রাখতাম। ওই সময়কার অজস্র লেখা পড়ে আছে, কোনো কূলকিনারা করতে পারছি না। সাক্ষাৎকারগুলোরও একই অবস্থা
শহীদুল জহিরের সাক্ষাতকারটা পুরা পড়তে চাই। বড় হলে ভাগে ভাগে দিতে পারেন..
~
হ্যাঁ পুরো সাক্ষাৎকারটা অনেক বড়ো। ব্লগপোস্ট হিসেবে মানায় না। আর ভাগ করে দিলে ধারাবাহিকতা থাকে না। হয়তো পরবর্তী কোনো লেখায় আরো কিছু অংশ তুলে দেবো।
গল্পপাঠ সিরিজ অসাধারণ হবে।
নির্দিষ্ট তালিকার বাইরে নিজের পছন্দে ট্যাগ দেয়ার সুযোগ থাকা আসলেই প্রয়োজন।
অসাধারণ হোক না হোক, ভালোলাগাগুলো তো শেয়ার করাই যায়।
ইচ্ছেমতো ট্যাগ দিতে পারলাম না, ব্যাপারটা কেমন যেন লাগলো।
শহীদুল জহিরের লেখা অল্পই পড়েছি। খুব ভালো লাগা নিয়েই পড়া।
আপনার লেখা, সাক্ষাৎকার --দুটোই খুব ভালো লাগলো।
পড়ে ফেলাই ভালো, এত অসাধারণ লেখেন তিনি!
লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
শহীদুল জহিরের মাত্র দুই একটা গল্প পড়েছি । ভালো লেগেছে । যে গল্পটার খানিকটা পাঠ তুলে দিলেন সেটা আকর্ষনীয় । আপনার বিশ্লেষণ দারুণ ।
অনেক ধন্যবাদ
শহীদুল জহিরের লেখা যা পাইছি কাছে সবই পড়ছি গোগ্রাসে গিলে। অসাধারন লেখা তার চেয়েও অসাধারন উনার গল্প বলার ভঙ্গি। এইটা নিয়ে যতদুর মনে পড়ে নাটক বানায়ছিলো ফালতু লাগছে পুরাই!
হ্যাঁ, সত্যিই এক অসামান্য শিল্পী তিনি।
নাটকটার কথা আমিও শুনেছি, তবে দেখার সুযোগ হয়নি। শহীদুল জহিরের লেখা নিয়ে নাটক/সিনেমা তৈরি করা কঠিন ব্যাপার। এই বর্ণনা কি ক্যামেরায় ধরা যায়!? অবশ্য নুরুল আলম আতিকের তৈরি করা 'চতুর্থ মাত্রা' আমার ভালো লেগেছিল।
শহীদুল জহীরের প্রায় গল্পই আমার পড়া তবে এই গল্পটি পড়া হয়নি। 'কোথায় পাবো তারে' নামটার সাথে অনেক পরিচিত কিন্তু এই গল্পের বিষয়টা কি, সেটা জানার ইচ্ছে ছিলো যেহেতু আমি গল্পটি পাঠ করিনি, আপনার লেখা থেকে বিষয়টা বুঝতে পারলাম। ধন্যবাদ কামাল ভাই।
আলোচনা পড়ে কি মূল গল্পের স্বাদ পাওয়া যায়? সময় করে গল্পটা পড়ে নেবেন, গভীর আনন্দ পাওয়া যায় এরকম গল্প পড়লে।
শহীদুল জহিরের লেখা পড়া হয়নি, যদিও অনেকের লেখাতেই জেনেছি লেখার সম্পর্কে। শখ আছে।
গল্পটা তো দারুন। পথ চেনাবার এই পদ্ধতি অনেকেই করে, কিন্তু এনারটাতো পুরো ধাঁধাঁ লাগলো যেন! সাক্ষাৎকারে যেমন উনি বললেন দুষ্টামি করে করে, মজার হইছে ব্যাপারটা।
পুরো সাক্ষাৎকারের অপেক্ষায় রইলাম
শহীদুল জহিরের বর্ণনা তো ধাঁধাময়ই। মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হয়। পরের কোনো লেখায় এরকম আরো কিছু ধাঁধাময় বর্ণনার উদাহরণ দেবো।
পড়ার জন্য থ্যাংকস, জেবীন
হায়রে কপাল, শেপালির বাড়ি যাইতে এত হ্যাপা...
আপনার লেখা নিয়ে কিছু না বলি, ধৃষ্টতা সব জায়গায় দেখানো ঠিক না
হ, 'শেপালির বাড়ি' যাওয়া এইরকম জটিল ব্যাপারই।
পরের লাইন সম্বন্ধে কিছু কইলাম না
গল্পটা পড়েছি। রায়হান ভাই প্রথম শহীদুল জহিরের বই আমাকে উপহার দেন ২০১০ এর বই মেলায়। এর পরে আরো দু'টি বই কিনেছি। একেবারেই অন্যরকম লেগেছে উনার লেখা।
আপনার লেখাটাও দারুন লাগলো কামাল ভাই।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ বিমা।
এবং দেরি করে উত্তর দেয়ার জন্য দুঃখিত।
কামাল ভাই, কই আপনি? কেমন আছেন??
সম্ভবত শহীদুল জহিরের মৃতু্যর পর পর প্রথম আলোর সাময়িকীতে আনিসুল হক তাঁকে নিয়ে লেখেন। আমার এক বন্ধু লীনা আপু সেই লেখা পড়ে ব্যাপক আপ্লুত এবং আগ্রহান্বিত হয়ে আমাকে একেকবার ফোন করছেন আর বলছেন, পাচ্ছি না রে, শহীদুল জহিরের বই পাচ্ছি না। আমার মাথায় নামটা গেঁথে গেল। সে সপ্তাহেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ গাড়ি এলে উনার ছোট গল্পের বইটা পেয়ে যাই। ভিন্ন টাইপের লেখা কিন্তু পড়ার সময় ভাবনার গভীর থেকে গভীরে নিয়ে যায়। গল্পটা আপুকে ছায়াকপি করে ঢাকায় পাঠয়ে দেই। মজার ব্যাপার হলো শহিদুল জহিরের বই কিনতে গিয়ে আপু যে কত লেখকের বই কিনে ফেললেন কিন্তু কাঙ্ক্ষিত বই মিলতে অনেকদিন লেগে গেল।
কামাল ভাই, সাক্ষাৎকারটা পড়তে মন চাইছে। যতো বড় হোক দিয়ে দেন না প্লিজ। অথবা পর পর ২/৩টা ভাগে দিন। আমরা আপনার ব্লগে ঢুকে পড়ে নেবো। দিয়েন ভাইয়া। প্লিজ।
মন্তব্য করুন