এক সকালে..
-মুকু, এই মুকু..শুনে যা তো একটু..
বাসা থেকে বের হতে গিয়ে-ও দাড়িয়ে গেল মুকু, ভাইয়া ডাকছে ভেতরের ঘর থেকে।
ওর ভার্সিটি পড়ুয়া একমাত্র ভাই স্নিগ্ধ'র ঘরে ঢুকতে ঢুকতে ভ্রু কুঁচকে গেল মুকুর। ঘর অগোছালো রাখা মুকুর একদম সহ্য হয়না।
সকাল দশটা বাজে, এখনও বিছানাই ছাড়া হয়নি!
- কীরে, এক কাপ চা করে দে না..
- কলেজ যাচ্ছি তো ভাইয়া, এখন তো একদম সময় নেই।
তাড়াহুড়া করে বের হয়ে এলো মুকু।
ফার্স্ট পিরিয়ডে আজ ওর প্রিয় রাবেয়া মিস্ এর বাংলা ক্লাস।
এত্ত সুন্দর করে কবিতা গুলা পড়েন মিস্, প্রেমে পড়ে যেতে ইচ্ছে করে!
বাসার গেইট টা খুলতেই - একটা লেজ ফোলা লাল সাদা বেড়াল হেটে যাচ্ছে, সাথে দু'টা পুচকি ছানা।
ইস্, কি সুন্দর দেখতে! সকাল সকাল এত্ত সুন্দর কিছু দেখলে কার না মন ভাল হয়ে যায়?!
কি ভেবে আবার বাসায় ঢুকল মুকু।
ধীরে সুস্থে এক কাপ চা বানিয়ে ঢুকল ভাইয়া'র ঘরে।
বাহ! মাত্র মিনিট পাঁচেক হয়েছে। এর মাঝেই বিছানা গুছিয়ে গল্পের বই পড়া শুরু হয়ে গেছে! মাস্টার্স ফাইনাল টা শেষ হবার পরের দিন থেকেই খালি বই আর বই।
- আই, নে তোর চা..
- কি মজা পাস্ এই ছাইপাশ খেয়ে?
স্নিগ্ধ'র হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে ফেলে দিতে দিতে বলল মুকু।
- কীরে, ফিরে এলি যে?
- তোর ক্লাস নেই?
- আরে, ধুর্..এক দুইটা মিস না দিলে কলেজ লাইফের মজা থাকে নাকি?
- তোর ক্লাস রুটিন তো আমার মুখস্ত, রবিবারের ফার্স্ট ক্লাস টা না তোর প্রিয় মিস্ টার?
- ও মোর জ্বালা! এত যন্ত্রনা করিস কেন তুই?!
- আমাকে এত ভালবাসিস না রে, কষ্ট পাবি..
- পাইলে পাইছি! ধর তোর চা, হাত ব্যাথা হয়ে গেল!
হাত বাড়িয়ে চা-এর কাপ টা নিল স্নিগ্ধ। বড় বড় চোখ গুলা অদ্ভুত একটা হাসিতে চিকচিক করছে আর চোখের কোণে হালকা জলের আভা।
- যাই, সেকেন্ড ক্লাস টা ধরতে হবে।
ভাই এর চোখে জল না দেখার ভান করে বের হয়ে যায় মুকু।
বাবা মারা গেছেন সেই কবে, মুকু স্কুলে পড়ার সময়। তার পরের বছর মা-ও চলে গেলেন ক্যানসার-এ। হয়ত, বাবাকে হারানোর দুঃখেই। কি যে একটা সময় গেছে তখন। দুই বছর ওঁরা নানুবাসাতেই ছিল। ভাইয়া ভার্সিটিতে উঠেই এই ছোট্ট বাসা টা ভাড়া নিয়ে ওকে নিয়ে আসলো।
পড়াশোনার সাথে সাথে ৪/৫ টা টিউশন আর সপ্তাহে তিন দিন একটা পার্ট টাইম চাকরি।
এত কিছুর পর আবার রাতে বাসায় ফিরে মুকু'র সাথে আড্ডা, এত শক্তি আসে কোথেকে?!
কেন জানি চোখ ভিজে আসে মুকুর। এমন ভাই কে না ভালবাসলে কাকে ভালবাসবে!
ওই তো মুকুর সব..
চোখে মুখে পানির ঝাঁপটা দিয়ে ছোট্ট ছাতাটা হাতে বাসা থেকে বের হয়ে এলো মুকু, যা রোঁদ পড়ে আজকাল!
একটু এগুতেই রাস্তার মোড়ে ভিড় দেখে দাড়াতে হ্ল। তখনই শুনতে হল ভয়ংকর খবর টা। একটু আগেই নাকি একটা কলেজ বাস এক্সিডেন্ট করেছে বড় রাস্তায়। এই বাস টাতে করেই রোজ কলেজ যায় মুকু।
কেমন অদ্ভুত জানি লাগছে সবকিছু। ভাইয়া না ডাকলে অথবা বিড়াল টা না দেখলে ও হয়ত এই বাসটাতেই থাকতো!
মনটাই খারাপ হয়ে গেল। থাক, আজ আর ক্লাস করার মুড নেই। কিছুক্ষণ মূর্তির মত দাড়িয়ে থেকে বাসাতেই ফিরে এলো মুকু।
জামাকাপড় ছেড়ে দুই গ্লাস ঠাণ্ডা লেবুর শরবত নিয়ে স্নিগ্ধর ঘরে ঢুকল মুকু।
টেবিলে গ্লাস দুইটা রাখতেই ফিরে তাকালো স্নিগ্ধ।
- কীরে, কলেজ যাওয়া ক্যানসেল করে দিলি?
জানিস, ভেবেছিলাম আজ তোকে কলেজ যেতে মানা করবো..
দেখ, তুই নিজেই গেলি না।
একেই বলে বোনের মন!
- মুকু, জানিস.. বাবা-মা বেঁচে থাকলে আজ ওঁদের বিয়ের তিরিশ বছর পূর্তি হত!
- তাহলে, আজ আমাদের পিকনিক।
যা, কেক আর অন্যান্য যা কিছু তোর প্রিয় নিয়ে আয়। ভায়াকে বলল মুকু।
পরক্ষনেই আবার বলল,
না রে - থাক..
মা বাবা ই নেই, এসব করে আর কি হবে..।
আড়চোখে মৃদু হেসে মুকুর চোখে চাইল স্নিগ্ধ..
- না রে..
আমাদের লাইফ-এ যাদের আমরা খুব পছন্দ করি তারা কখনই আমাদের লাফ থেকে হারিয়ে যায় না।
যদি ওঁরা কোথাও চলে-ও যায়, তাও না। ওঁরা না থেকে-ও অনেক বেশি করে থেকে যায়।
আমাদের হাসি-কান্নায়, ভালোবাসায়।
আনমনে বসে থাকে দুই ভাইবোন,
কোন কথা নেই..
ওঁদের কথায় সায় দিতেই বোধহয়।
ঘরের কোনে মা বাবার বিয়ের ছবিটার সাথে বসে থাকা টিকটিকি টা ডেকে উঠে,
টিক টিক..টিক টিক..ঠিক ঠিক..টিক টিক..।
সুন্দর হয়েছে
অনেক ধন্যবাদ।
হাসেন কেন?
ভাল লাগছে নাকি পড়ে মজা পাইছেন?!
আরও লিখেন না কেন আপনি?
ধন্যবাদ, আপু।
লিখি তো, যখনি মাথায় কিছু আসে লিখি।
জোড় করে কিছু লিখতে পারি না তাই হয়তো কম লেখা হ্য়।
বাহ্! ভালো লাগলো খুব। ইদানিং অলস হয়ে গেছ
হরলিক্স খাবো কি না ভাবতেছি!
আরও একটিভ হওয়া যাবে নে!
মুকু নামটা অনেকদিন পর দেখলাম। সন্জীবের লোটাকম্বলের নায়িকা ছিল মুকুলিকা / মুকু।
গল্পটা ভাল লাগলো।
~
ধন্যবাদ।
নামটা ওখান থেকেই নেয়া,
আমার সবচাইতে প্রিয় উপন্যাসগুলার একটা।
মন্তব্য করুন