লাবড়া
বহুদিন যাবৎ বাইরে বাইরে থাকার ফলে একটা ভাল অভ্যাস হইছে যে আমি কোন খাবারেই না করি না, তেলাপোকার মতন যা পাই তাই খাই। এমন কি মাঝে মাঝে অখাদ্যরেও খাদ্য মনে হয়, যেমন কবি সুকান্ত পূর্ণিমার চাঁদের মতন অখাদ্য বস্তুরে রুটি ভাবতেন। আমি অবশ্য কবি টবি না তবে ক্ষুধা লাগলে নিতান্ত গদ্যময় মানুষেরও কবি হইতে ইচ্ছা করে ব্যাপারটা আমি খিয়াল করে দেখেছি। চরম ক্ষুধার্ত অবস্থায় আমিও একদা একটা কবিতা লিখেছিলাম ….
নীল নীল চাঁদের আলো যেন নরম পেলব মাখন
পিচ ঢালা পথটাকে পাউরুটির স্লাইস বানিয়ে খেয়ে নিতে পারলে
এ যাত্রা বেঁচে যেতাম
আকাশটা যদি হত বিরাট বড় এক পাত্র
অনন্ত নক্ষত্রেরা কর্ণ ফ্লেক্সের দানা
ফ্রিজে রাখা আধা নষ্ট দুধের সাথে খেয়ে নিতে পারলে
এ যাত্রা বেঁচে যেতাম
কান পেতে শোন....
অদূরে কোথাও ডেকে চলেছে রাত জাগা পাখী
তার কণ্ঠ সুমধুর, আরো মধুর হবে নিশ্চয় তার রোস্ট
পাখিটাকে খেয়ে নিতে পারলে
হয়ত এ যাত্রা বেঁচে যেতাম
নিয়নের রহস্যঘেরা আলোয় অতিপ্রাকৃত গাছগুলো যেন ব্রকলি
বৃষ্টির পানিতে সেদ্ধ করে একটু নুন মেখে ….. আহ!
কচকচিয়ে খেয়ে ফেলতে পারলে
এ যাত্রা বেঁচে যেতাম
বুঝেন এইবার ক্ষুধার কি ভয়াবহ ক্ষমতা। ক্ষুধা লাগলে শুধু কাব্য প্রতিভা বাড়ে তাই না শিল্প প্রতিভাও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। এইতো আজকেই ভয়াবহ ক্ষুধা নিয়ে ফ্রিজ খুলে যখন রেডিমেড কিছু পেলাম না আমার ভিতরে যেন প্রতিভার বোমা ফেটে পড়ল। চাল ডাল তেল নুন শাক সবজি যা কিছু সম্বল ছিল ঘুটা দিয়ে বানাইয়া ফেললাম লাবড়া। স্বাদ যেন অমৃতসম, আহা!
তবে আজকের ব্লগ ক্ষুধার শিল্পগুণ অথবা লাবড়ার রেসিপি নিয়ে না। আমার মগজের ভাবনা চিন্তাগুলার অবস্থা বেশ কিছুদিন ধরে লাবড়া হয়ে আছে। সব এক সাথে ঘুটা লেগে একেবারে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা। আলাদাভাবে আর কোনটাকে চিনার উপায় নাই। তাই এই ব্লগটাও একখানা লাবড়া হিসাবেই পরিবেশিত হল।
বেশ কিছুদিন যাবৎ মেহেরজান নিয়া বাঙালী অনলাইন কমিউনিটির মাঝে বেশ একটা সাজ সাজ রব বিরাজমান । বহু চেষ্টা করেও সিনেমাটা জোগাড় করতে পারলাম না। তবে অন্যের মুখে ঝাল খাওয়ার মতো মুভি রিভিউ পড়ে মনে হল পাকি সৈনিক আর বাঙালী বালিকার মাঝে প্রেম নিয়ে একখানা লাবড়া বানানো হইছে। বহু পাবলিক এই লাবড়ারে অখাদ্য ঘোষণা করেছেন আবার কেউ কেউ ইহার উপাত্ত আবিস্কার করে তাহার শিল্পগুণ বিশ্লেষনে নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। সাদা দৃষ্টিতে এই মুহুর্তে আমার মন্তব্য … একাত্তরের যুদ্ধের সময় যারা পাকিপ্রেমে মশগুল ছিল তারা এক একটা রাজাকার এবং বর্তমানে যাহারা উক্ত প্রেমের কমপ্লেক্স স্টোরির হিস্টোরি নিয়া আহা উহু করতেছেন তারা রাজাকারের বাচ্চা। সিনেমাখানা দেখার পর ফাইনাল মন্তব্য দিব। কাহিনী শেষ।
গতকাল আউলার সাথে কথা হল, (যারা পুরানা ব্লগার তারা আউলারে চিনেন)। তার ইউনির রিইউনিওনে জনৈক বালিকা নাকি “শিলা কি জাওয়ানি” শিরোনামের গানখানা গেয়ে শুনিয়েছেন। শুধু তাই না গানের সাথে নৃত্যও পরিবেশন করেছন। উক্ত নৃত্য অবলোকন করে তাবৎ বালিকাকুল ছিঃ ছিঃ রব তুলেছিল আর বালকগণ হয়েছিল ব্যাপকভাবে বিনোদিত, হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তুক এর পরবর্তি ঘটনা কি হবে? রাগন্বিত বালিকাগণ রাগমোচনের জন্য টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল দেখতে লাগবে। বিনোদিত বালক বিপ্লবী মন নিয়ে ফেলানির বিচারের দাবিতে ফেসবুকে দুই চারটা স্ট্যাটাস দিবে। সমস্যার মূলে কেউ হাত দেয় না।
উপসংহার: আমাদের জাতীয়তাবোধ যেন অদ্ভুত এক লাবড়া।
আমার লগে মিল্লেই মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে আর না মিল্লেই রেজাকার ! এইটা এখন চলছে
গত সাতত্রিশ বছরে কাহিনী অনেক কমপ্লিকেটেড হইছে। একাত্তুরে বন্দুক নিয়া দৌড়াদৌড়ির পর আমার মামা এখন গোলম আজমের বাসায় ভাড়া থাকেন, পলিটিক্যাল ভিউতে লিখেন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি। সেইটা নিয়া কমপ্লেন মারলে মামাতো বোন আবার ফেসবুক থেকে ডিলিট মারে। পুরা লাইফটাই লাবড়া। মাঝে মাঝে নিজের পরিচয় নিয়া বিপাকে পড়ি। শালার না হইলাম পাকি, না হইলাম ভারতীয় না হইতে পারলাম বাঙালী।
তিতা সত্য
আপনার সাথে আমার না মিললে রাজাকার কথাটা ঠিক না। আপনার সাথে আমার না মিললে ঝগড়া বিবাদ লাগে। ঝগড়া হলে গালিগালাজের দিকে যায়, আর মোটামুটি সুশীর গালি হলো রাজাকার। এখানে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বিপক্ষের কোন ব্যাপার নাই।
একমত। আমি এখন একটা বাণী দিই - 'পাকিরা এক রাইতে গাইবান্ধা শহরের পাঁচ লাখ মানুষ মাইরা ফেলছে'। কে কে এই টা সাপোর্ট করলেন হাত তুলেন। যারা সাপোর্ট করলেন তারা হইলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতানায় উদ্ভাসিত নতুন প্রজন্ম। আর যারা বিপক্ষে তারা হইল পাকি প্রেমি রেজাকার।
হেইল বেঙল!
হুমম!
আমি এই লেখাটা চ্রমরকম পছন্দ কর্লাম। একেবারে যা তা রকম ভালো দুইটা লাইন হচ্ছে,
লাবড়া ভালো লাগলো, তবে ঝাল বেশি
ভিটামিনযুক্ত লাবড়া, চিন্তার খোরাক দেয়া
নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টাও একটা বিশেষ লাবড়া
লাবড়া দেখলে ভয় লাগে, গোল্লাকাক্না লাবড়া লিখে গায়েব হয়ে গেছে
কবিতাটা খুব পছন্দ হয়েছে।
কবিতাটা পছন্দ হইসে...
মন্তব্য করুন