একটি মৃত্যুবিষয়ক ব্লগ
২০১৪। ব্লগার জীবনের সাত বছরে পা দিলাম। সাত বছর এক জীবনের জন্য অনেক দীর্ঘ সময়। অনেক দীর্ঘ সময়ে অনেক কিছু নিয়ে অনেক কথা বলে ফেলেছি অথচ অমোচনীয় নিয়তি "মৃত্যু" নিয়ে তেমন কিছু বলা হয়নি। হয়ত প্রচ্ছন্ন ভয়, হয়ত অজ্ঞাত অবজ্ঞা, জানা নাই কেন।
সৌভাগ্য অথবা দুর্ভাগ্যক্রমে কারও জীবনের অন্তিম সময়ের সাক্ষী হতে হয়নি কখনো। খুব কাছের মানুষ বলতে যাদের বোঝায় তাদের মাঝে আমার দাদা গত হয়েছেন আজ বহু বছর। সত্যিকারের স্মৃতি বলতে যা বোঝায় তাঁকে নিয়ে সেসব কিছু নাই। হয়ত বাবা মনে রাখেন।
নানার স্মৃতি কিছু আছে আবছায়া, তাঁর সাদা পঞ্জাবী তুষার শুভ্র চুল, হোমিওপ্যথ ওষুধ-পত্তরের বাক্সে ছোট ছোট মিষ্টি সাদা দানা, হাত ধরে রাস্তায় হেঁটে বেড়ানো সাদাকালো ছবি ..... তাঁর মৃত্যুকালীন সময়ের ঘটনাপ্রবাহ মগজ মুছে ফেলেছে। হয়ত মা মনে রাখেন।
নানীর কথা কিছুটা মনে আছে। অনেক আদরের ছিলাম তবু জীবনের শেষ দিকটাতে আমাকে চিনতে কষ্ট হত তাঁর। নানী মারা যাবার পর দীর্ঘ পথ অতিক্রম শেষে যখন নানীর বড়ি উপস্থিত হলাম ততক্ষণে দাফন সম্পন্ন হয়ে গেছে। নিয়ম অনুসারে আমরা কাঁদলাম, নিয়ম অনুসারে আমরা ভাত খেলাম, নিয়ম অনুসারে আমরা ঘুমালাম, নিয়ম অনুসারে আমরা ঘুম ভেঙে দেখলাম আমরা সবাই আছি। রোদ, জানালার ভাঙা পাল্লা গলে পড়া রোদ, সকাল বেলার চা, রাস্তার ঝাড়ুদার, কুলফি মালাইওয়ালা সব সব্বাই আছে অথচ নানীর বাড়ির নানী নাই। আমরা কাঁদলাম, অনেক কাঁদলাম। তারপর আমরা যে যার বাড়ি ফিরে গেলাম। আব্বু অফিসে গেল, আমি ইশকুলে গেলাম, রূপক ইশকুলে গেল, আম্মু রান্নাঘরে গেল। আমরা ভাত খেলাম, আমরা ঘুমালাম ...... আমরা হাসলাম।
এক বন্ধু ছিল, রনি। সন্ধ্যায় আড্ডা দিয়েছিলাম। সকালে উঠে শুনলাম রনি মরে গেছে। সন্ধ্যার রনি সকালে মরে গেছে, রনি নাই, রনি আত্মহত্যা করেছে। সুইসাইড নোট লিখেছিল কি? কি লিখেছিল ভুলে গেছি। আমরা বন্ধুরা কাঁদলাম, জানাজা পড়লাম, সিগারেট ভাগাভাগি করে খেলাম। আমরা কাঁদলাম, আমরা ভাত খেলাম, আমরা ঘুমালাম ..... আমরা হাসলাম।
হে মৃত স্বজনেরা, আমরা হাসি। তোমরা ভুল বুঝো না। জীবনের অমোঘ নিয়মে আমরা হাসি। আমাদের হাসতে হয়।
হে জীবিত স্বজনেরা, যেদিন আমি থাকবো না। তোমরা হেসো, জীবনের অমোঘ নিয়মে হেসো। সত্যি বলছি, আমি কিছু মনে করবো না।
হঠাৎ এমন লেখা কেন, মানু ?
লেখাটা ভালো, কিন্তু বিষয়বস্তুটা কেমন ভয়াবহ...
এমনি মনে হল আর কি। একদিন তো মরতে হবে, তাই না?
দুনিয়ার সব চাইতে কঠিনবিষয় নিয়ে সহজ লেখা, আপনি নিয়মিত লিখেন না কেন? এককালে আপনার লেখার রীতিমত ফ্যান আছিলাম, এখন স্ট্যাটাসে লাইক দিয়েই দায়মুক্ত হই
নিয়মিত লিখলে যে অনিয়মের স্বাদটা পাবা না
বড় কঠিন জটিল বিষয়। এখন ও নিয়ে চিন্তা করতে চাই না।
যেদিন আমরা থাকবো না এমনি অন্যরা কাঁদবে, জানাজা পড়বে, সিগারেট ভাগাভাগি করে খাবে। ভাত খাবে, ঘুমাবে ..... হাসবে।
আশ্চর্য লাগে তাই না?
মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।
কারো উপর রাগ হলে , একঘেয়েমি লাগলে ভাবি মরে গেলেই ভালো। আবার যখন মনে হয় আমি মরে গেলে কারো কিছুই থেমে থাকবে না, মনেও পড়বে না রোজ, আমার জন্য কিছুই কারো থেমে থাকবে না....মনে হলেই কষ্ট হয়, কেমন অসহায় লাগে।
এমন করে সবাই যদি ভাবত তাহলে মানুষ (আপনি না) পাপ করত না !
মন্তব্য করুন