সম্মিলিত ছ্যাঁকাগুচ্ছ
জীবনে যতবার না প্রেম করেছি তার চেয়ে ছ্যাঁকা খেয়েছি কয়েকগুণ বেশি। সেই সব ছ্যঁকাময় স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজকের ভ্যালেন্টাইন্স স্পেশাল : সম্মিলিত ছ্যাঁকাগুচ্ছ
সর্বস্বত্ত সংরক্ষিত
পুরনো বাক্স ঘাঁটাঘাঁটি যদি করো, এখনও আচমকা
দু-একটা নীল খাম বেরিয়ে পড়তে পারে।
গোটা গোটা অক্ষরে ভুল বানানের ভালবাসা
রাখা না রাখার দ্বন্দ্ব।
অব্যবহৃত হলদে পাতার বইয়ের ভাঁজে এক আধটা
মৃত রুক্ষ গোলপের অবাঞ্ছিত উপস্থিতি কিছু বিচিত্র নয়;
বহু আগের ছুঁড়ে ফেলা অসমাপ্ত কাজের ইতি।
দু-একটা ফেলনা উপহার, যা না রাখলেও চলে।
চলে যেতে পারে জঞ্জালের বাক্সে
শতেক কবিতার শবযাত্রা।
নাহ,
তোমার কাছে রাখা আমার সমস্তটাই জলাঞ্জলি দেয়া যায়।
অথচ তবুও,
ভালবাসাটুকু কী গভীর নির্মমতায় সর্বসত্বে সংরক্ষিত রেখেছ।
অফসুস
স্মৃতি বিভ্রম নিয়ে বড় বিব্রত আছি
তোমার জন্ম, আজন্মের ভালোবাসার দিবস রজনী
আয়ত চোখের রঙ আর তাতে কাজল ছিল কি ছিল না
কিছুতেই মনে পড়ে না
চুলের সীঁথিটা ডান নাকি বামপন্থি ছিল
কপোলে তিলক ছিল কি না
বিগত যুগ গত হবার আগেই ভুলে বসে আছি।
তবুও সে সব ভুল, ভুলে যাওয়া মেনে নেয়া যায়।
অথচ দেখ কি বিব্রতকর,
আমি বারবার শুধু ভুলে যাই তুমি আমার নও।
কৃষ্ণচূড়া
মলাট হীন জীর্ণ বইটা খুলতেই
একগুচ্ছ শুষ্ক কৃষ্ণচূড়া প্রজাপতি হয়ে গেল।
গাছের বাকলে আঁকা কৈশোরত্তীর্ণ অস্পষ্ট কলজে
ক্রমশ অস্পষ্টতর।
তবুও মলাট হীন বইয়ের ভাঁজে
শুধু শুধু মৃত কৃষ্ণচূড়া গুঁজে রাখা।
আমাদের ভাল থাকাথাকি
লাঞ্চ আওয়ের টিফিন খেতে খেতে লিখে ফেললাম
বহুল জিজ্ঞাসিত সে প্র্শ্ন, "কেমন অছো?"
চির জানা উত্তর "ভাল আছি। তুমি? তুমি কেমন আছো?"
আমিও লিখলাম "ভাল আছি"
ইনবক্স জুড়ে শুধু ভাল থাকাথাকি।
বহু বছর ধরে আমরা এমন ভাল থাকি।
সবুজ শ্যাওলা
তোমার ছাতের কার্নিশ
বারান্দায় ফুলের টব যত
তোমার ঘরের সিঁড়ির কোণায়
ম্রিয়মাণ শ্যওলা জমে থাকে
বেঁচে থাকে তোমার অবহেলায়
আবজাব-৩
বলি নাই অপেক্ষায় থাকো।
এই সব হেমন্তের ধান কাটা শেষে
নবান্নের উৎসবে যাব।
তারপর শীতঘুম।
অতঃপর ঘুম শেষে খামোখায় বাতাসে তোমার ঘ্রাণ খুঁজি।
আবারও বছর কুড়ি পরে
ঢের ছিল সেইসব সুদিন।
রোদ মাখা ভোর শেষে
দুপুরের ক্লাস ফেলে তোমার চুলের ঘ্রাণ,
হাসি মুখ মেখে
চির চেনা বিকেলের দেশ
সন্ধ্যার চায়ের কাপে ছিল মিশে।
ঢের ছিল তবু,
আমার গল্পটি ফুরল,
নটে গাছটি মুড়ল!
বলল সে, থাক সে কথা।
বিগত দশক জানে তার জীবনের ঋণ।
চিরহরিৎ অরণ্যও জানে
সকল মুগ্ধতার অবসর হয় এক দিন।
জলছাপ
তোমার শার্টে দাগটা কিসের?
বলল সে।
দেখলাম তাইতো!
কোন বছরের কোন মাসে
খানিকটা রঙ লেগেছিল হয়তো।
তারপর ধুয়ে মুছে গেছে তবু
জলছাপ হয়ে রয়ে গেল।
বেখেয়ালে চোখ পড়লেই
পড়ে যায় মনে কোন একদিন
খানিকটা রঙ লেগেছিল
চিরকুট
দীর্ঘ ভূমিকার অবকাশ নাই।
প্রিয়তমেষু,
তোমার দণ্ডবিধি কি বলে খুব জানি।
তথাপি প্রণয় স্থগিত রেখে
আমাকেও চাল, ডাল, তেল, নুন খুঁজে নিতে হয়।
সবার মতো আমারও খিদে পায়।
মৃত্যানুভূতি
জানতে চাইলে মৃত্যু কি।
উত্তর খূঁজে পেতে সমগ্র পৃথিবীটা পায়ে হেঁটে এসেছিলাম।
শতেক মনিষীর সহস্র সংজ্ঞায়,
মোটা মোটা বিজ্ঞান আর ধর্ম গ্রন্থের ভাঁজে ভাঁজে
শুধু শক্তির অবিনাশিতা আর জাতিষ্মরদের গল্প,
পরলৌকিক আত্মার চির সূখ-দুঃখ।
কোত্থাও মৃত্যুর সংজ্ঞা নেই,
মানুষেরা দেবতার মতো অমৃত, বললাম আমি।
অতঃপর তোমার প্রস্থানে মৃত্যানুভূতি ছুঁয়ে গেল ..
তুমি নাই
http://www.facebook.com/ -খুলতেই
মাঝে মাঝে ডান দিকে এক ঝাঁক ডানা কাটা পরি দেখে ফেলি।
ফেসবুক বলে আমি নাকি তাদের চিনে থাকতে পারি।
চিনি নাই কখনো। যাকে চিনতাম ফেসবুক তাকে চিনে না।
কতবার তার নাম গুগলে সার্চ করেছি,
ইয়াহু, বিং আর নানা মেটা সার্চ ইঞ্জিনে।
কেউ তাকে খুঁজে পায়নি কখনো ...
আকাশ, বাতাস, স্থল, জল, অন্তরীক্ষের কোনায়
কোত্থাও সে নাই।
যেন কোন দিন ছিল না সে কখনো পৃথিবীর অথবা আমার
?
হতে পারতে প্রকাশ্য যতিচিহ্ন কোন।
দাঁড়ি কমা সেমিকোলন,
অনুসর্গ-বিসর্গ, বিষ্ময়।
হতে পারতে জীবনের ভুল-শুদ্ধ ব্যাকরণ যত।
তবু পড়ে থাকলে অন্তরালে -
শুধুই প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে!
ভাল লাগলো
এই সম্মিলিত কবিতাগুচ্ছ করে ভালো করছো। বেশ কয়টা নতুন সংযোজিত হয়েছে, পুরানোগুলোর বেশিরভাগই পছন্দের কবিতা।
মারাত্নক সব কবিতা। সবগুলো পড়ে শেষে এসে মনে হলো শেষটাই মন ছুয়েছে সবচেয়ে বেশি ।ছ্যাকা খাওয়া খারাপ না যদি এমন দারুণ সব কবিতা হয় ।
শেষে এসে বলতেই হলো
অসাধারন।
মন্তব্য করুন