মৃন্ময় মিজান'এর ব্লগ
রুচিবোধ এবং সাম্প্রদায়িকতা
রুচিবোধ সাম্প্রদায়িক আচরণ উস্কে দেয়! কাউরে আপনার মনে হইতে পারে ক্ষেত, আবার কাউরে ড্যাম স্মার্ট। ফলে আপনি ক্ষেতরে অবজ্ঞা করলেন। মানে আপনি সাম্প্রদায়িক আচরণ করলেন।
একটা গোপন কথা বলি। আবৃত্তি একাডেমির শুরুর দিন গুলাতে আমি যখন নিজেরে নিয়া ব্যস্ত ছিলাম- মানে অন্যরে গোনার টাইম প্রায় ছিলই না, নিজেকে আমার বিশ্বের সেরা স্মার্ট পুলা মনে হইত। যদিও কেউ কেউ আমারে দ্য ক্ষেতিয়েস্ট পারসন অব দ্য ওয়ার্ল্ড ভাবত। তাতে আমার কিছু যাইত আসত না। আমি আমার মতই ছিলাম। কিন্তু দেখা গেল মানুষের রুচিবোধ বদলাইতাছে। তারা ক্ষেতিয়েস্টরে শুধু গুনতেছে না, মাথায় তুলার ট্রাই করতাছে।
খুনী !
কোন কোন রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে একটি ছায়া কেঁপে ওঠে। বারান্দার গ্রীলে কপাল ঠেকিয়ে কান্নাকে দেয় সযতন ছোঁয়া। কখনোবা উদাস চোখে চেয়ে থাকে আকাশের দিকে। কখনো জ্যোৎস্না থাকে কখনোবা অমাবশ্যার ভ্রুকুটি। কোন কোন রাত বাতাসহীন দমবন্ধ প্রহর। আবার কখনো সারা ঘরে বাতাসের কোলাহল।
যেবার হিমালয়ে গেলাম। বরফের রাজ্যে। সেখানেও ছায়াময়ী! আমার পাশাপাশি চলছে পা-হীন পদক্ষেপে।মৃদু বাতাসে উড়ছে চুল। জড়াচ্ছে বরফের কুচি। ক্লান্তিতে চোখ বুজে এলে স্বপ্নচূড়ায় ও-ই পৌঁছে দেয় আমাকে -বলেছিল এক অচেনা শেরপা।
আজ প্রখর রোদের নীচে লেকের পাড়ে তাকে দেখলাম। অন্যমনস্ক, নি:সঙ্গ এবং স্বাধীন। বাতাস নেই তাই চুলও সংযত-সদালাপি। আমরা পরস্পরকে আড়চোখে দেখলাম। পানিতে একটানা ঘাই মেরে যাচ্ছে কোন বিরহী মাছ। ডুব সাঁতারে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলছে কয়েকটি বালক। তারপর জেগে ওঠা ঘুর্ণিতে হঠাৎ উড়ে গেল মেয়েটি। যেভাবে প্রতি রাতেই হারিয়ে যায় তার ছায়ারূপ।
ডাক্তার বলেছিল চিকিৎসায় সেরে যাবে। আমিও জেনে গেছি যাবতীয় অসুখের একমাত্র পথ্য এই মানবী। আমি তার খুনী হব কোন সাহসে !
পহেলা বৈশাখ নাকি পহেলা অগ্রহায়ণ-কোনটি আমাদের নববর্ষের দিন ?
বাঙালির ইতিহাস চার হাজার বছরের। আর বাঙালির নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস মাত্র সেদিনের !
বাংলা সন ও পহেলা বৈশাখ শিরোনামে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত (১৪ এপ্রিল ২০১১) ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্যের লেখায় পাই "বাংলা বছরের পঞ্জিকায় যে ১২টি মাস বর্তমান, তার ১১টিই নক্ষত্রের নামে নামাঙ্কিত। এ ক্ষেত্রে 'বৈশাখ' বিশাখা নক্ষত্রের নামে, 'জ্যৈষ্ঠ' জ্যাষ্ঠা নক্ষত্রের নামে, 'আষাঢ়' আষাঢ়ার নামে এবং এরূপ শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র যথাক্রমে শ্রবণা, পূর্বভাদ্রপদা, অশ্বিনী, কৃত্তিকা, পৌষী, মঘা, ফাল্গুনী ও চিত্রার নামে অঙ্কিত হয়েছে। যে মাসটি নক্ষত্রের নামের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, সেটি হচ্ছে অগ্রহায়ণ; আর এই নামটির সঙ্গেই মিশে আছে বাংলার কিছু ইতিহাস, কিছু স্মৃতি এবং কিছু বিস্মৃত হয়ে যাওয়া তথ্য।
মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কিছু কথা
মাদ্রাসা শব্দটি আরবী درس (দরস) থেকে এসেছে। درس মানে হল পাঠ। আর মাদ্রাসা মানে হল যেখানে পড়ানো হয় বা বিদ্যালয়।আমাদের দেশে কয়েক ধরনের মাদ্রাসা আছে। প্রথমে একে একে এই মাদ্রাসাগুলোর পরিচয় দেই-
নূরানী/তালিমুল কুরআন/ফোরকানীয়া মাদ্রাসা:
নাম ভিন্ন হলেও এ মাদ্রাসাগুলোর কাজ একই। কুরআন শরীফ শুদ্ধ করে পড়ানো।আধুনিক পদ্ধতিতে শুদ্ধভাবে কুরআন শেখানোর জন্য এ মাদ্রাসাগুলো কাজ করে যাচ্ছে। তাজবীদ (কুরআন শেখার জন্য সহীহ উপায় সমূহ এই বইতে লেখা থাকে) সহকারে এখানে কুরআন শেখানো হয়। প্রতিটি হরফের মাখরাজ (উচ্চারণ স্থান), মদ (কোন জায়গায় টেনে পড়তে হবে, কতটুকু টেনে পড়তে হবে), এদগাম, ক্বলব, এজহার, গুন্নাহ (উচ্চারণের ধরণ সম্পর্কিত বিভিন্ন টার্ম) প্রভৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা সহকারে এখানে কুরআন শেখানো হয়।এই মাদ্রাসাগুলো মূলত ছোটদের জন্য তবে বয়স্ক কেউ শুদ্ধ করে কুরআন পড়ার জন্য তালীমুল কুরআন বা ফোরকানীয়া মাদ্রাসায় যেতে পারে।
হাফেজী মাদ্রাসা
টিস্যুর সাথে আলাপচারিতা
-আপনাকে কোন নামে ডাকব ? টয়লেট না কি ফেসিয়াল?
-ওটা মানুষের সমস্যা। আমার না।
-মানে কি ?
- আত্মপরিচয়হীনতায় ভোগে বলে ওরা সব সময় কোন না কোন ক্লাসিফিকেশনের মধ্যে নিজেকে ফেলতে চায়।এ কারণে মানুষের চেয়ে অন্যান্য পরিচয়ই ওদের কাছে বড় হয়ে ওঠে। কেউ কালা, ধলা,বাদামী; কেউ হিন্দু, মুসলমান,ইহুদী, নাসারা, বৌদ্ধ; কেউ বাঙালী,চাকমা,সাঁওতাল, মুরং। আছে আরো নানান কিসিম। শুধু মানুষই খুঁইজা পাওয়া যায় না।
-এবার বলুন কেমন এনজয় করছেন এমন লাইফ।
-আমি সন্তুষ্ট। সন্তুষ্ট নয় শুধু মানুষ।
-মানুষের সাথে আপনার এত আড়ি কেন ?
-মানুষ ছাড়া সবাই সন্তুষ্ট হতে জানে। মানুষই শুধু সন্তুষ্ট হতে শেখে না। তাছাড়া ইদানীং কিছু কিছু মানুষ টিস্যুর জীবন যাপন করছে। এটা আমাদের আত্মসম্মানের ব্যাপার। শেষ পর্যন্ত মানুষকে আমাদের সাথে তুলনা করা হচ্ছে !
-বিষয়টা একটু খোলসা করবেন ?
গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রাজনীতি করবে কারা ?
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের দাবী এদেশে অনেক পুরনো। অনেকে মনে করেন এখনি সময় ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের। অনেক ইসলামী চিন্তাবিদও এক সময় ইসলামে রাজনীতি হারামের ফতোয়া দিতেন। তাদের কেউ কেউ পরবর্তিতে নিজেরাই ইসলামী রাজনৈতিক দলের কর্ণধার হয়েছেন।
এদেশে প্রচলিত গণতন্ত্র কি ইসলাম সমর্থন করে? ইসলামী চিন্তাবিদদের উত্তর- না। তাহলে তারা কেন এদেশে ভোটের রাজনীতি করে? তাদের উত্তর "মন্দের সয়লাব রুখতে প্রয়োজনে গণতন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচন করা জায়েজ আছে 'তীব্র প্রয়োজন হারামকে হালাল করে দেয়' মূলনীতির ভিত্তিতে। তারা যদি নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় যায় তাহলে কি তারা গণতন্ত্র রাখবে এই দেশে? তাদের উত্তর হল-না। তারা চায় খেলাফত প্রতিষ্ঠা। তারা বলে,আল্লাহর দেয়া নির্ধারিত পথ খিলাফত প্রতিষ্ঠা ছাড়া মানুষের গড়া মতবাদ গণতন্ত্র দিয়ে কখনোই ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব হতে পারে না।
জলের জলসায় এক সানকি বিষণ্ন রোদ
তলিয়ে যাচ্ছি। হারিয়ে যাচ্ছি। পানিতে আলোড়ন তুলে ধীরে ডুবে যাচ্ছি আমি। নিপাট বিস্ময়ে বেদনামথিত আত্মা খুঁজে নিচ্ছে মুক্তির সোপান। দৃষ্টিসীমায় তখনও সূর্যের কড়কড়ে আলোর অবগাহন। অবশ শরীরে মৃদু হাওয়ার গুনগুন নামতা। নাকের ভাঁজে কারো মোহনীয় রূপের ঘ্রাণ।
চোখের কোণে কেঁপে ওঠে একটি চঞ্চল প্রজাপতি। লাল নাকি নীল ? ধুসর অথবা সাদা ? দূরে একটি নিঃসঙ্গ চিল এক মনে চক্কর দিচ্ছে। আমি ওর স্বাধীন একাকী আত্মার কাছে ফরিয়াদ জানাই!
আহ্ আকাশ কত নীলাভ। কী নিসীম নিঃসঙ্গ এই চরাচর। আকাশের ভাঁজে ভাঁজে সাদা মেঘের নিপুণ বিন্যাস। যদি মেঘ হতাম! যদি হতাম আকাশ! আকাশের কোণে গড়ে তুলতাম যদি আমার একাকী জীবনের এক চিলতে উঠোন! আলোর সমীকরণে জেগে ওঠে নতুন ধাঁধাঁ।
অনাথ শিশুটি পানিতে কোমড় ডুবিয়ে এখনো খেলছে। ওর কোন খেদ নেই? না পাওয়ার বেদনা ওকে আহত করেনা? চারদিকের চাকচিক্যের ভীড়ে কী নিদারুণ গ্লানিময় ওর জীবন! এখনো কেন বেঁচে আছে ও?
কি ছিল তোমার মনে!
০১.
এক্সকিউজ মি! বইটা দেয়া যাবে ?
কেন ? ঠেকছি নাকি!
অনেকদিন খুঁজে পাইনি বইটা। বলতে পারবেন কোথায় পাওয়া যাবে ?
এইতো এখানেই আছে। আমার হাতে।
এটা তো বিক্রির জন্য নয়।
বই আমার। আপনি বলার কে-বিক্রি হবে কি হবে না ?
বিক্রি করবেন ? খুব ভাল হয় তাহলে।
সেটা নির্ভর করছে আপনি কত টাকা দিয়ে কিনতে চান তার উপর।
কত টাকা দিতে হবে?
বেশি না। মাত্র এক হাজার টাকা।
এত ছোট বইয়ের দাম এত!
এটা বইয়ের দাম নয়। আপনার প্রয়োজনের দাম।
দরকার নেই বাবা এত দাম দিয়ে বই কেনার।
তাহলে বইটা আপনার প্রয়োজন নয়। প্রয়োজন ছিল আমার সাথে কথা বলার অজুহাত তৈরি করা-ঠিক বলেছি কিনা বলেন!
২.
আমি চারশ মাইল দূর থেকে শুধু আপনার সাথেই দেখা করতে এসেছি। বলুন তো কেন ?
আপনার কথা শুনে আমার একটা গল্প মনে পড়ল। কিন্তু বলা যাবে না।
বলুন আমি কিছু মনে করব না।
একজন নারীর সাথে এমন গল্প বলা ভয়ানক স্ল্যাং হিসেবে ট্রিট হবে।
আমার সমস্যা নেই আপনি বলুন।
ব্লু-মুনে অরণ্যবাস
সকালটা বরাবরের মতই রোগাটে, বিবর্ণ, পাংশুটে। যথারীতি ৭ টায় বাসা থেকে বের হয়ে অফিস। অফিসের এক ফাঁকে বসের রুমে প্রবেশ। বিকেল তিনটায় অফিস ত্যাগের অনুমতির সাথে রোববার ছুটির পারমিশন। ব্যস আর ঠেকায় কে ?
সবার আগে সদরঘাট পৌঁছে গেলাম। অবশ্য ১২ টা থেকে হাসান ভাই উপস্থিত ছিলেন কেবিন বুকিং সংক্রান্ত জটিলতায়। ওনারে না ধরলে আমিই হলাম আমাদের এই অভিযাত্রার প্রথম অভিযাত্রী। কথা ছিল ঘাটে উপস্থিত থাকবে সৈতক-৮ নামের আমতলীগামী লঞ্চটি। কিন্তু আমাদের আল্লার মর্জি (বরগুনার লঞ্চ) হয়ে উঠতে হল সৈকত এ।
৫টায় লঞ্চ ছেড়ে দেয় । শেষমুহূর্তে সাইফুল আর খোরশেদ ভাই গিয়ে পৌছেন লঞ্চ এ। আমরা আনন্দ উল্লাসে ভাসতে ভাসতে রওয়ানা হলাম। সন্ধ্যার আগেই চাঁদের দেখা পেলাম। সাইদ ভাইকে বললাম পূর্ণিমার আগেই এত বড় চাঁদ ! পূর্ণিমায় না যেন কী অপেক্ষা করছে!
স্বপ্নজটিলতায় স্থবির ভাগাড়
স্বপ্নের রঙ কালো।
দক্ষিণের বালিয়াড়ি পার হয়ে ধনুক বাঁকা একটি খাল তোমাকে স্বাগত জানাবে। ইপিলইপিল গাছের ঝিরিঝিরি পাতায় বইবে দুপুরের হাওয়া। পাশ দিয়ে বয়ে যাবে সবুজ মাঠ, ধানেদের চারা, আর এখানে ওখানে আলের ভাঁজে ভাঁজে শামুকের সলাজ ঘোমটা।
রোদের কনসার্ট থেমে গেলে ফুরফুরে বাতাসে গলা ভিজিয়ে পান করো রাতের আঁধার। ততক্ষণে বাদামী হলুদ গরুগুলো জুড়ে দেবে অপার্থিব গান। গরুদের কোরাস শিখে নিও- হতাশার পৃথিবী নিয়ে জাগবে নতুন চর। আর বকুলীদের পুরনো টিনের চালে টুংটাং ঝরবে ইটের ভৌতিক নামতা।
তৃতীয় দিন স্বপ্নের সাথে দেখা হবে। শুনে নাও দ্বিতীয়দিনের নসিহত। ভোরের বাতাসে খুব ধীরে খুলে দিও জানালার রশি। শিশির ভারে নুয়ে থাকবে সবুজ ডগা। কবুতরের খোপ থেকে বকম বকম বাক শুনে হেঁটে যেও দীগন্তের ধারে। সেখানে মরচে ধরা স্মৃতির কোলে খেলা করছে একটি বেঢপ শৈশব। আনমনে তাতে এঁকো লাল-সবুজ আলপনা।
টাঙ্গুয়ার হাওরে একদিন
এক.
সিদ্ধান্তটা হুট করেই। জুন ক্লোজিং এর কাজের চাপ ছিল। তবু ভাবলাম ঘুরে আসি। এমন সুযোগ আবার কবে আসবে কে জানে। সাইদ ভাইর সাথে যোগাযোগ করে আমাদের জন্য ৫ জনের বুকিং দিলাম। যদিও শেষ পর্যন্ত সাতজন গেলাম ট্যুরে । সাথে দুই পিচ্চি। মোট ৯ জন।
বাসের জন্য অপেক্ষা এবং বাস ভ্রমণ:
'আগে আসলে আগে পাবেন' এর ভিত্তিতে সিট দেয়া হবে-এমন একটা প্রচারণা চলছিল। আমরা পৌঁছেও যাই সময়মত। ঢাকার জ্যাম গলে বাস আসতে দেরী করে ফেলে ১ ঘন্টা। বোধহয় স্বজনপ্রিতী হবে, মেসবাহ ভাই আমাদের জন্য সিট বরাদ্দ দিলেন বাসের মাঝ বরাবর। ঢাকা থেকে বের হতে হতে রাত একটার কিছুটা বেশি।
আধো ঘুম আধো জাগরনে চলছিল বাস ভ্রমণ। রাতে একজায়গায় থেমে ফ্রেশ হবার বন্দোবস্ত এবং হালকা নাস্তার ব্যবস্থা। ওখানে আমাদের গ্রুপের আরেকজনের সাথে দেখা। সে যাচ্ছে সিলেট ট্যুরে। ওরা ১০/১২জন। তারপর আবার বাসের এসি পরিবেশ।
কোন এক হরিৎ বিকেলে স্মিত হাসিতে ভরবে উঠোন
সপ্তর্ষি প্রেমে অবাক জলস্রোতের নতজানু একাঙ্কিকা থেমে গেলে স্থানু সময় ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকে এক অকৃত্রিম মহীরূহ। যার সফেদ রেশম চিকচিকে হাসিকান্নার আলোয়ানে খেলা করে গুচ্ছ গুচ্ছ স্বপ্নকথিকা। বালকবেলার দোমড়ানো হাহাকার ঘিরে বসে থাকে একরাশ উঠোন-গোধূলি; আমি যার আধো আধো স্মৃতির ওপিঠে নিরলস এঁকে যাই একটি মুখ- রোগাটে, বিবর্ণ এবং জংধরা সূর্যের পিঠে আলো ঝলমল অপার আঁধার।
আমাদের শৈশব সেই আধো জাগরণগন্ধী সুপুরুষ সন্তময় হয়ে বেয়ারী বিলের ছনক্ষেতে ঝরে পড়ে হঠাৎ শালিখ হয়ে হেসে ওঠে, সুর তোলে, গেয়ে যায় ঘুমপাড়ানী স্বপ্নময় বাস্তবতা। একটি কাগজের পিঠে বিমান ওড়াতে যেয়ে পবিত্র মন্দির কবুতরের গন্ধে সোঁদা হয়ে উঠলে ঘামঝরা বিকেলের অধর কেঁপে কেঁপে ওঠে তার অজস্র চুম্বনে।
মোল্লাপুকুরের নরম তরল জলাধার গাঢ় বিকেলের রঙ হয়ে ভেসে থাকে। হঠাৎ অজানা সাম্পানে তার পলায়ন ভীত হয়ে আমাদের ঘরে ঢুকে পড়লে ভুলে যাই সকালের মৃদু আওয়াজ, মেহেদীর ভালবাসা আর চাপিলা মাছের নাদুস নুদুস ঘ্রাণ। একরত্তি ডাহুক বিকেলে ডাকের ছেঁড়া তারে আসে ডাওরীর জলে ভেসে থাকা কবিতা এফোঁড় ওফোঁড় বুলেটে।
মেঘলা আলাপের ঘোর কিংবা বিরহ বিলাস
- মেঘের ঘনত্ব দেখেছ ? বৃষ্টি হয়েই ঝরবে বুঝি আজ আষাঢ়!
- আমার এখানে আঁধারের উৎসব। জানালায় ঝুলছে বিষণ্ন পর্দার ঢেউ।
- বাইরে বাড়িয়ে দাও মুখ। দৃষ্টি খুঁজে নিক দিগন্তের কালো মেঘ। বৃষ্টি নামবেই। বাইরে না হোক অন্দরে।
- কাঁদিয়ে সুখের দেখা পেতে চাও কেন বিরহপুজারী ?
- সমাগত আষাঢ়ের কোলাহলে কার হৃদয় হাহাকার করে না বিরহপুরীতে ?
- একাকী এ পথচলা কি ফুরোবে না কখনো!
- আড্ডার মধ্যমনি হয়েও তুমি একা ! জীবন জটিল এক পথ, একাকীত্বই সম্বল। আসা যাওয়ার মত পথচলাও একা। দুজন বা সমবেত বলে আসলেই কিছু নেই।
- স্মৃতিগুলো মুছে যাক। একাকী আকাশে ভেসে উঠুক একখণ্ড খেয়ালী চাঁদের আলো!
- কখনো নষ্টালজিক হতে চাও যদি হয়ে যাও নিজস্ব নিয়মে। স্মৃতি হাতড়ে মানুষ তো কেবল নিজেকেই খোঁজে। এই যে মেঘলা আকাশের হাতছানি, এর কষ্টটুকুও নিজস্ব। রাগ কিংবা অভিমান সেও হাজির হয় নিজস্বতা নিয়ে। অন্যের সাথে মিল বা মিলানো অর্থহীন।
- অর্থহীন এই জীবন আর কত!
- একমুঠো আঁধার জড়িয়ে নাও চোখে কিংবা আলো। হেঁটে যাও বহুদুর কিংবা কাছে। শেষ আলোয় দেখবে সব অর্থহীন। ছেড়ে যেতে হয় সবই।
- তোমার আকাশ আজ কোন রঙে রাঙিয়েছো কবি !
প্রেমিকের ডানায় নাচে প্রজাপতি মন
গুচ্ছ গাড়ির বনেদি সুতোয় ঝুলে থাকে প্রেম। রঙ বদলের স্বপ্নমঞ্চে কাঁদে এক টুকরো নাকছাবি। কেউ কেউ বাতাসে ভাসে শিমুলের ওড়াওড়ি মেখে নিয়ে চোখে। পলিথিন মুড়িয়ে সুখ শুয়ে থাকে শাহবাগের মোড়ে।
তারুণ্য ছড়ানো বাদামের খোসা, দুটাকায় কেনা হলুদ গোলাপ, কিংবা মধ্য রাতের ডিম পরোটার ঝিলিক হাসিতে ফোটে এক পেয়ালা রোদ। এখানে জারুলের পাপড়ি খেয়ে গেছে নীল পাজামা, বাঁকা ভ্রু ডানা, সিনেমা ফেরত প্রেমিক যুগল এবং একটি নিরেট পদ্য।
আমাদের বয়সে পাখিগুলো ডানা হয়ে খেয়ে যেত আকাশ। তোমার ভীরু ভীরু চোখ এসব দেখার আগেই পালিয়ে যায় কাল। তার কোলে নেচে বেড়ায় অবহেলার অন্তর্দহন আর এক দুপুর বিলেতি ঘোমটা। ঘোমটার নীচে লুকিয়ে থাকা নাকে খেলা করে রঙিন স্বপ্নের মুহুর্তভেদী অন্তরীক্ষ। সেখানে গাঙচীলের ডানায় ভাসে ইউক্যালিপটাসের জলোচ্ছ্বাস, ব্যঙের গাড়ি এবং অবশ্যই আমাদের না দেখা স্বপ্নের অন্তর্বয়ন।
ঘুড়িরা উড়ে যায় বাতাবী উঠোনে
এক ঠোঙা ভালবাসা চিবুচ্ছে গরম দুপুর কিংবা মাঘের শীত
শালিখের প্রেমালাপ থেমে যাবে অজানা সূর্যের উলম্ব চুম্বনে
টিনের চালজুড়ে উচ্ছল বাতাস নেচে বেড়াবে সাথে নিয়ে বকুলের ডাল
আকাশ বদলের খেলায় নিংড়ে নেব তোমার ভালবাসা জমি।
খনিতে কি হবে ডাকিনী কুহক!
উরুর পেশীতে যদি খেলা করে বিষধর সাপ
নেউলের নধর হতে কেড়ে নেব বিষের ভাণ্ড
পেয়ালায় আজলা ডুবিয়ে দেখিয়ে দেব নকল সমীকরণ আর
অবেলার বাতাসে কাঁপা বাতাবীলেবুর ডাল।
দুমুখো বাতাসে হা হা বুক
উথাল পাথাল করে মরুক বেগানা শাড়ীর আঁচলে
ফিঙের ঠোঁটে হাসুক একরত্তি কদবেল
কাজলের মায়ায় বাঁধো যদি পথভোলা খেয়ালী পথিক
মরুর স্নিগ্ধ বাতাসে পাবে গোলাপের মিষ্টি হাসির ঝিরিঝিরি ঢেউ।