"প্রযত্নে হন্তা"র সলুক সন্ধানে..
এই লেখাটা যখন লিখতে বসছি, তখন আমার পাশে সাইলেন্ট করে রাখা মোবাইলটা কাঁপছে। ফোন এসেছে। আমি ঘার ঘুরিয়ে একটু চোরা চাহুনি দিয়ে ফোনকারীর নামটি দেখেই আবার না দেখার ভান করে কি-বোর্ডে ক্রমশ: আঙ্গুল চালাতে থাকি। গত নভেম্বরের ১৫ তারিখের মাঝে লেখাটা দেওয়ার কথা ছিলো, ও মনে না করিয়ে দিলে ডিসেম্বরের ১৫ই পার হয়ে যেত আরেকটু হলে! যাই হোক, বলছিলাম হিমালয়ের কথা। প্রসঙ্গ তার প্রথম প্রকাশিত গল্পগুচ্ছ "প্রযত্নে হন্তা"র ভালো লাগা- মন্দ লাগা বিষয়ে আমার মতামত।
বইয়ের রিভিউ লেখাটা অত্যন্ত কঠিন একটা কাজ। তার উপর সেটা আরো কঠিন হয়ে যায়, অনেকদিনের অনভ্যাসের কারণে হাতে যদি জং পরে তখন লিখতে গেলে। যাই হোক, লেখকের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের খাতিরে আমার উপর তার একটা অধিকার আছে, যেটার দাবিতে তার বই সংগ্রহ করতে গেলেই শুনতে হয়, "মিঞা, তুমি কিন্তু লিস্টিতে আছো, তোমার কাছে আমার বইয়ের একটা রিভিউ চাই"। কিন্তু সমস্যাটা বাধে তখনই যখন বইয়ের শেষ ফ্ল্যাপে লেখা থাকে, "গল্প নিয়ে যে কোন কট্টর সমালোচনাকে ক্লেদাক্ত প্রশংসার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যায়ন করি" এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্র ধরেই যখন নিজের মাঝেই জানি কথাটার সত্যতার যথার্থতা, তখন কষ্ট করে শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে বাক্যকে অনর্থক জটিল করে ফেলার বোধহয় প্রয়োজন নেই।
এবার মূল প্রসঙ্গে ফিরে যাই, বইয়ের রিভিউ।
খাপছাড়া ভাবে শুরুটা হোক..
বইটা যে-ই পড়বে, তার প্রথমেই যে কথাটা মনে হবে, বইয়ের লেখক নিজে প্রচুর বই পড়েন, নিজের যথেষ্ট ঘোরাঘুরি আছে অন্তর্জালে। কারণ, প্রতিটা গল্পেই কোন না কোন ছলে বিভিন্ন লেখকের কথা এসেছে। এসেছে তাদের জীবনাচরণ, তাদের দর্শন, এবং সর্বোপরি বেশ কয়েকটা ক্ষেত্রে ঐসব লেখকদের উদ্দেশ্যে কিঞ্চিৎ খোঁচা দেওয়ার প্রবণতা।
আরেকটা ব্যাপার বেশ চোখে পড়ে, সেটা হল মিলান কুন্ডেরা দ্বারা কিছুটা প্রভাবিত হওয়া। তার বেশ কয়েকটা চরিত্র এসেছে নতুন রূপে। এসেছে চলতি পথের কিছু মানুষ, ছোটবেলার হঠাৎ দেখা কোন ঘটনা, কোন মানুষের প্রতিচ্ছবি।
লেখালেখির একটা প্যাটার্ন থাকতে পারে, কিংবা কাউকে হাতে ধরে লেখা-লেখি শেখানো যায়, এই ব্যাপারটার একটা চমৎকার উদাহরণ হতে পারে "লিখি চলো" গল্পটা। এটা অনেকটা ছোটবেলায় স্কুলে থাকতে বাচ্চার হাতে হাত রেখে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে "অ-আ-ক-খ" লিখতে শেখানোর মতন। বিষয় বৈচিত্র্যে অত্যন্ত আগ্রহোদ্দীপক, কিন্তু লেখাটা কেমন যেন একটু খাপছাড়া। যেন মনে হয়, লেখক লিখতে লিখতে হঠাৎ করে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে প্রথমে প্রবন্ধ লেখার কৌশল শিখিয়ে পড়ে "বাকিটা সিনেমার পর্দায় দেখবেন" মত করে এভাবে গল্পও লিখতে পারবে বলে শেষ করে ফেলেন। আর, এখানে একটা বিষয় খুব মজা লাগবে, হঠাৎ করে মনে হবে, শিক্ষক বোধহয় পালাতে পারলেই বাঁচোয়া, তাই বোধহয় গল্পের নায়িকাকে একাকি বসিয়ে হঠাৎ করে কাজের উছিলায় পালানো..
গল্পগুচ্ছের সবচেয়ে দুর্বল গল্পগুলি "গ,ল,হ; তবুও গলগ্রহ" এবং "ঈশিতা একটি আমগাছ খুঁজেছিলো" শিরোনামের। প্রথমটি তেমন একটা যুতসই লাগেনি; হয়তো চিত্রনাট্য হবে এমনটা মাথায় রেখেই লেখার কারণে লেখক চরিত্রগুলোর বিস্তারে যথেষ্ট মনোযোগী ছিলো না কিংবা চরিত্রগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ককে গুছিয়ে লিখতে গিয়ে কেবলমাত্র দুয়েকটি চরিত্র নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন। যদিও, আরো পরীক্ষা- নিরীক্ষার সুযোগ আমার মতে লেখাটায় আছে। আর দ্বিতীয়টাকে কেন যেন মনে হয়েছে বাজারি লেখা। এখানে বাজারি লেখার ব্যাখ্যা দেবার প্রয়োজন নেই, কারণ, ইদানীংকালে জনপ্রিয় লেখক এবং বুদ্ধিজীবি লেখককের নিয়ে যে একটা মুখরোচক তর্ক সবার মাঝে চলে, সেটাকে কেন্দ্র করেই সবশেষ গল্পটা। গল্পের গঠনটা একটু ঝুলন্ত, কিন্তু সবশেষে কাহিনীর হঠাৎ দিক পরিবর্তনটা চোখে লাগে এবং তখনই মনে হয় লেখকের মুন্সিয়ানাকে মেনে নেওয়াই উচিত।
গল্পগুলো পড়তে থাকলে যে ব্যাপারটা বার বার চোখে পরে, তা হল লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বহি:প্রকাশ প্রতিটি গল্পে। উদাহরণ হতে পারে, "৭ দশ ১ একাত্তর"। আমাদের অহংকার মুক্তিযদ্ধকে বর্তমান প্রজন্ম কেমন করে দেখে, কিভাবে তাকে নিয়ে কেউ ব্যবসা করে, আবার কেউ তাকে কি অসাধারণ করে অনুভব করে তার প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে। হঠাৎ কোন এক চকিতে মধ্যবিত্ত সত্ত্বা নিজের অনুভবকে গলাটিপে হত্যা করে আবার কারো মনে উস্কে দেয় প্রতিজ্ঞার সলতে। আর কেউ চতুরতার সাথে লোক দেখানো আবেগকে পুঁজি করে নিজেকে অন্যের কাছে উপস্থাপন করতে চায়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বীরগাঁথার মিডিয়া প্রকাশ প্রশ্নবিদ্ধ হয় একটি কথায়, "(উচ্চবিত্ত) সবেদ সাহেবের প্রতিপত্তি আছে, কাজেই উনার নিউজ ভ্যালু জিরো। মানুষ মনে মনে মুক্তিযোদ্ধাদের মহিউদ্দিন সাহেবের অবস্থায় দেখতে চায়, তাদের নিয়ে ফিচার লিখে সেইখানে আহা- উহু করতে চায়, মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষা করতেছে, রিকসা চালাইতেছে সেইজন্যে রাষ্ট্রের বাপ- মা উদ্ধার করে পাছার ঘাম মুছতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।" কিন্তু তারপরও কিছু মানুষ অনুভব করে, তাই তারা মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে ব্যবসা করতে চায় না। তারা গৌরবময়তাকে স্বর্ণাক্ষরে বাঁধিয়ে রাখতে চায়; দারিদ্র্যের উপহাসে যার নিত্য বসবাস।
"র্দাপ" গল্পটা একটু পরীক্ষণমূলক কিংবা মনে হয় কিছুটা ভিনদেশি কল্প-গল্প পড়ার প্রভাব। যদিও গল্পটার ফ্লো চমৎকার ছিল, কিন্তু সমাপ্তিটা আমার কাছে তেমন পরিস্কার না, লেখক কি বোঝাতে চাইলেন, টিভি সংবাদের সম্পাদকও কি লাবণ্যর মতই সবকিছুকেই উল্টো করে দেখেন? আর তারচাইতেও বড় প্রশ্ন, কেনই বা লেখকের মনে হল, যদি সবকিছুর সৃষ্টিই উল্টো করে হয়, তাহলে সবই উল্টো করে হবে? এখানে একটু যেন অস্পষ্টতা; হয়ত লেখকের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, কে জানে!
গল্পগুচ্ছটির নামকরণ যে গল্পের নামে, "প্রযন্তে হন্তা"; গল্পটা পুরোটাই ব্যক্তিজীবনের স্বাধীনতার প্রত্যাশা। পুরো গল্পটাতেই মানুষের নিজ নিজ পেশা কিংবা বাধ্য হয়ে যে কাজের সাথে যুক্ত তা থেকে নিজের মনের অজান্তেই পালিয়ে যাওয়ার যে প্রবণতা তাই বার বার ঘুরেফিরে এসেছে। সবার মনের মাঝেই কেমন যেন একটা নিজের মাঝে নিজেকে খুঁজে পাবার চেষ্টার চাইতে বর্তমান অবস্থাকে অস্বীকার করে নতুন করে খোঁজার চেষ্টা। মনকে শরীর থেকে আলাদা করে দিয়ে তার মত করে চলতে দিয়ে আনন্দের যে ক্ষণিক অনুভূতি পাবার ইচ্ছা মানুষের মনের মাঝে, সেটাই হয়ত লেখকের গল্পের উপজীব্য।
অনেকটা একই ধরণের গল্প "পঁচিশে অক্টোবর"। খারাপ কাজ করতে করতে সেটায় ঘৃণা ধরা, স্বামীর প্ররোচণায় নিজের শরীর অপরের হাতে বিকিয়ে দেওয়া, কিংবা তানভীর- সেঁজুতির হঠাৎ সংসার এবং সেটার অবশ্যম্ভাবী ভাঙ্গন এবং হঠাৎ করে নিতান্তই অপ্রয়োজনে একের অপরের কথা মনে পরে যাওয়া। কিন্তু সবমিলিয়ে সবচাইতে দৃষ্টাকর্ষী যে ব্যপারটা তা হল গল্পটার শেষ। পাঠক যদি গল্পটার শেষের সাথে "আরব্য রজনীর ৪০০ রাত" বইটার কোন মিল খুঁজে পান.. তাহলে তাকে দোষ দেওয়া যাবে না!!
কথায় বলে "প্রথম দেখা অনুভূতি চিরস্থায়ী।" তাই গল্পগুচ্ছের সবচাইতে শক্তিশালী লেখাটাই মনে হয় প্রথমে দেওয়াটা একটা অলিখিত রীতি। আমার কাছেও তাই মনে হয়েছে। লেখকের সবচাইতে প্রিয় লেখাটাই প্রথমে দিয়েছেন বোধহয়। গল্পটার নামটাই একটু অদ্ভূত। "৪১" লেখকের সংখ্যাপ্রীতির উদাহরণ এই গল্পে অনেকবার ঘুরেফিরে এসেছে। লেখকের কথা থাক। আমার অনেক পছন্দের একটা লেখা এটা। অদ্ভূত কিছু কাজ করতে চাওয়া আরমানের মাঝে নিজেকে খোঁজার চেষ্টা, কিছু পরীক্ষা করতে চাওয়ার চেষ্টায় নিজেই একটা সময় পরীক্ষণীয় বস্তু হয়ে যাওয়া পুরো প্রক্রিয়ার মালিকের সাথে নিজের কিছু অস্বস্তিকর মিল আর সবশেষে পুরো প্রক্রিয়ার মাঝে ঈশ্বরের অস্তিত্বকেও মিশিয়ে দেওয়া একটা অদ্ভূত ঘ্রাণ..
সবশেষে আসি আমার সবচাইতে পছন্দের গল্পটির কথায়। "@মনীষী সিন্ড্রোম"। ডায়েরী লেখার প্যাটার্নে নিজের কথাই যেন লেখক বলে গেলো পুরোটা সময়। আর, মানুষ হেরে যাবার নয়, সময়ের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিয়ে কেউ হয়ত তার পছন্দের পেশার কাছাকাছি থাকতে পারছে, আর কেউবা হয়ত পুরোপুরিই অন্য পেশায় যুক্ত হয়ে পরছে। কিন্তু, তারপরও সব মিলিয়ে মানুষ তার স্বপ্নকে হারাতে পারে না, তাই তো মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে যায় পুরোনো স্মৃতি, তরতাজা হয়ে ওঠে মৃদু বাতাসে, ঈষৎ পানির ছাঁটে।
সবক'টা গল্পের শেষে লেখকের নিজের অনুভূতির কথা লেখা আছে। আমি বিষয়টা জানতাম। এবং এ'ও জানতাম, যদি এই কথাগুলা আগেই পড়ে ফেলি, তাহলে সেগুলো আমার লেখার সময় আমাকে প্রভাবিত করতে নি:সন্দেহে। অনেক কষ্টে সেগুলি এড়িয়ে এই লেখাট লিখে ফেলে এখন পড়ে ফেললাম গল্পের পেছনের কথাগুলো। কয়েকটা মিলে গেলো। অনেকগুলোই মেলেনি। সেগুলির ব্যপারে হিমেলের সাথে মন্তব্যে আলাপ..
সবমিলিয়ে একবাক্যে যদি বইটি কেমন হয়েছে কেউ জানতে চায়, আমার বক্তব্য কি হবে? বইটি পড়ুন। এক বসায় পড়ে শেষ না করতে পারলে এমন কোন ক্ষতি হবে না, কিন্তু, এটুকু বলতে পারি, প্রথমবার পড়ার পর প্রতিটি গল্পই আপনাকে ভাবাবে, কয়েকটি গল্প আবার পড়তে বাধ্য করতে। কয়েকটি চরিত্র ক্রমশ: নিজের মাঝের সেই পাগলাটে আমিকে মুক্তি দিতে কানের কাছে ঘ্যান- ঘ্যান করবে। আর তার ফলে যদি ক'টি দিন এই ব্যস্ত জনসমুদ্র থেকে মুক্তি মেলে, সেটাই বা কম কিসে?
লেখাটা আগেও পড়া মনে হচ্ছে কেন জানি!!
ভাল লাগল রিভিউটা পরে , অনেকগুলো নতুন ভিউপয়েন্টের সাথে পরিচিত হলাম ।আমিও রিভিউ লিখেছি একটা , তোমারটার সাথে মিলিয়ে দেখতে পারো : http://tinyurl.com/7q9jpfb
প্রথম প্যারাটা পড়ে মনে মনে হাসলাম অনেক্ষণ , অনুভূতিটা আমার খুবই চেনা। ৬ ডিসেম্বর ফাইনাল এক্সাম দিচ্ছি আর মনে মনে ভাবছি , বাসায় গিয়ে এক ফোঁটাও রিলাক্স করার সুযোগ নেই , বই নিয়ে বসতে হবে ,তারপর লিখতেই হবে । যাই হোক , এরকম না করলে আমাদের মত আইলসাদের দ্বারা কিছু সম্ভব না :পি
নিজের লেখাটার পরে আরও অনেকগুলো রিভিউ এর লিংক পেলাম । এটা দারুণ এক অভিজ্ঞতা , একই জিনিস নিয়ে কত জন কত আলাদা করে ভাবে , অদ্ভূত ব্যাপার।
একটা রিভিউ এর কথা আলাদা করে বলবই , দন্ডিত নিক এ চতুর্মাত্রিকে লেখা তোমাদের ব্যাচের আরিফুল হোসেন তুহিনের রিভিউগুলো মিস করো না, বিস্মিত হবে হয়ত , স্পেশালী ২৫ অক্টোবর গল্পটা , পুরোটা ধরতে পারার পর অবাক না হয়ে উপায় ছিল না।
হিমালয়ের গল্পের বইয়ের যে দিকটি সবচেয়ে নজর কেড়েছে সেটি হল , ১০ টি গল্পের মাঝেই কম-বেশি অভিনবত্ব আছে। নতুন কিছু করা আমার কাছে সত্যিই কঠিন লাগে । গল্পগুলো সেজন্য এক বসায় এক টানে পড়ে ফেলবার মত মনে হয়নি আমার কাছে, আমি মোটামুটি একসাথেই পড়েছি , সে কারণে একটা সময় বেশ কঠিন লাগতে শুরু করেছিল । সময় নিয়ে প্রতিটা গল্পের পর অনেকটা সময় ধরে ভাবনা ভাবার দাবী রাখে।
সারা বছর না পড়ে পরীক্ষার আগের দিন পড়তে বসলে চোখে সরষে ফুল দেখাটাই তো ভবিতব্য; তাই না? তুমি বই নিছো ৩ রা নভেম্বর, আর রিভিউ লিখলা ১৩ই ডিসেম্বর; এইবার বুঝো তুমি কোন্ পর্যায়ের ফাঁকিবাজ!!! তোমার রিভিউয়ের যে ব্যাপারটা আমাকে খুবই নাড়া দিয়েছে, তা হল, তুমি হার্ডকোর সিরিয়াস মুডে লিখোনি, মাঝে মাঝেই কিছু দুষ্টুমি লাইন ঢুকিয়ে দিয়েছো; ফলে, লেখাটা একটু আলাদা হবার দাবি রাখে।।। এইবার, লেখার মূল প্রসঙ্গে বলি।।। সেইদিন পাই ল্যাবসে বললা, 'গ,ল,হ; তবুও গলগ্রহ' গল্পটা তোমার অনেক পছন্দের, আর রিভিউয়ে ঐটাকে বইয়ের দুর্বলতম গল্প হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছো- এই কয়দিনের মধ্যে মনের এমন বিশাল পরিবর্তন হইলো কেমনে??? নিজের জীবনের কোন অভিজ্ঞতার সাথে মিলে গেলো নাকি??? (তোমার তো বয়সে বড় ভাল লাগে, এই জন্য বললাম আর কি!!!)
বাকিগুলাতে তোমার মতামত মেনে নিচ্ছি। কিন্তু একটা কৌতূহল- ২৫ শে অক্টোবর আর প্রযত্নে-হন্তা গল্প দুটোকে তোমার কোন্ পয়েন্ট অফ ভিউতে সমগোত্রীয় মনে হইল, এইটা আমার কাছে স্পষ্ট না। বিশদ ব্যাখ্যা কর, তাইলে ভিন্ন ভাবনার সম্পর্কে আরও ভালভাবে বুঝতে পারতাম।।।
মনে আছে, ব্লগে একসময় আমরা পত্রিকা বের করতাম??? অথচ, তুমি এখন লেখারই সময় পাওনা। আমার ক্রমাগত চাপের মুখে এতদিন পরে যে আবার লিখতে পারতেছো, এই জন্যই তো আমাকে কয়েক কাপ চা খাওয়ানো উচিত।।। আর তোমার মত ফাঁকিবাজ লোক যাতে লেখালিখি করার রসদ পায় এইজন্য হলেও আমার আরও বেশ কিছু বই প্রকাশ করা উচিত।।। দেখা যাক।।।
মনীষী সিনড্রোম গল্পটা আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া গল্প। এই গল্পের সঙ্গে তুমিও জড়িয়ে আছো। মনীসী সিনড্রোম নাটক করবার পর চ্যানেলে ঘোরাঘুরি, মানুষের দুর্ব্যবহার এবং মাহবুব মোর্শেদের ঢঙ, সকল অভিজ্ঞতার সঙ্গেই তোমার পরিচয় আছে।।। তাই কী বলবো??? আর, ৭১ গল্পের আগের ভার্সন তোমার অনেক পছন্দের ছিল।।। দুই ভার্সনের মধ্যে একটা তুলনামূলক চিত্র আমার মন্তব্যের জবাবে উল্লেখ কইরো।।।।আর কী বলবো; আমি তো টাইপ করে করে বুড়া হয়ে গেলাম।।। তুমি কিছু বল। আমি ততক্ষণে প্রচুর পরিমান চা খেয়ে যুবক হয়ে আসি।।।
রিভিউটা পড়ে বইটা পড়তে ইচ্ছা করছে।
==============
দৌড় কমছে ছোট ভাই?
মেহরাব যে কথা বলে শুরু করছে আমিও সেটা বলেই শুরু করবো। এই বইয়ের অনেক পাঠ প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে পাঠকদের মাঝে পাঠ ভাবনা শেয়ারের সুযোগ তৈরি হচ্ছে সেটা খুবই ভালো ব্যাপার হচ্ছে।
http://tinyurl.com/3r3nlwz
আমার রিভিউটার লিংক শেয়ার করলাম। সেখানে মোটামুটি মিলিয়ে নিতে পারো। তবে একটা তুলনামূলক আলোচনা এখানেও করে ফেলা যায়। ঈশিতা একটি আমগাছ বুনেছিলো এটা বাজারি লেখা বলে তুমি তো দেখি পুরা কড়া সমালোচনা করে ফেললে, আমি ব্যাপারটা এভাবে দেখি এই গল্প একতি নির্দিষ্ট শ্রেণীর পাঠককে টানবে। তবে বইয়ের সবগুলো গল্প অনেক বার পড়া হলেও এটা বেশি পড়া হয়ে উঠেনি। গ ল হ :তূও গলগ্রহে তোমার ভাবনা আমার ভাবনা একবিন্দুতে মিলে গেছে তাই সেটা নিয়ে আলোচনা বাদ দিলাম। পাঠক সমীপেষুর শেষের যে জায়গাটা তোমার কাছে ভালো লেগেছে আমার কাছে অদ্ভুতভাবে বেখাপ্পা মনে হয়েছে। মনে হয়েছে গল্প ঠেলাগাড়ির গতিতে চলতে চলতে হঠাৎ ট্রাক হয়ে দৌড় দিছে। পাঠকের অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি। লিখি চলো গল্পটার প্রশংসা আমি নিজে করেছিলাম ব্লগে লেখার সময়। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে এই গল্পটা আমার কাছে আগের মতো আবেদন বহ হয়ে উঠতে পারে নি। পাঠকের মৃত্যু মনে হয়।
প্রযত্নে হন্তার ব্যাপারে একমত তবে এটা ২৫ শে অক্টোবরের সাথে মিললো কেমনে হিমালয়ের মতো আমিও বুঝি নাই। ২৫ শে অক্টোবর গল্পটা বেশ রকম দারুণ যদিও এটার মূল সুর বুঝতে তুহিনের রিভিউ পড়া লাগছে। সেই রিভিউয়ের লাইন তুলে দিচ্ছি
@মনীষী সিনড্রোম গল্পটা বেশ যত্ন করে লেখা ভালো না লাগার কারণ নাই। তবে মজার ঘটনা বলি। এই গল্পটি আমি যখন পড়ি আমার মুড বেশ অফ ছিলো। তার মাঝে যখন এই লাইন গুলো আসে
নিজের অজান্তে অনেকক্ষণ হেসেছি।
৭দশ ১ একাত্তর এবং ৪১ গল্পদুটি আমার কাছে সমান ভালো লেেছে। দুটোর মাঝে দুই ধরণের আবেশ থাকলেও গল্প দুটো অনেক কমপ্লিট আর বক্তব্য গুলো বাস্তব ঘেষা এবং জোড়ালো।
র্দাপ গল্পটা বইয়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় গল্প খুব সম্ভবত হিমালয়ের লেখা আমার পড়া সেরা। এর সব কিছু এতটা টান টান এতটা সুন্দর উল্টো সোজার ব্যাপার নিয়ে নাড়াচাড়া নিজের বিম্ব গঠন--এক কথায় অসাধারণ।
তোমার রিভিউটা ভালো লাগলো। আরো রিভিউ আসুক। আমরা শেয়ার করতে থাকি পাঠ ভাবনা।
শুভকামনা।
যদিও বইটি পড়িনি কিন্তু রিভিউ ভালো লেগেছে
মন্তব্য করুন