ভালোবাসা তোমার ঘরে বৃষ্টি হয়ে নেমে আসুক..
১.
দোয়েল চত্বরে একটা সময় অনেক গিয়েছি। সেখানকার মাটির জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসা দোকানগুলো অনেক পরিচিত। নিয়মিত দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের গাড়িটা বেশ ছায়াময়। উল্টোদিকে ভরসাস্থল কার্জন হলে তেমন একটা যাওয়া হতো না। বাইরে থেকেই ঘুরোঘুরি। পড়াশুনায় আপাতত বিরতি দিয়ে কর্মজীবনে ঢুকে যাওয়ার পর আর এই দিকে যাওয়াই হয়নি। গতকাল হঠাৎ একটা কাজে ঐদিকে যাওয়া। ফিরতি পথে রিকসায় বসে আছি, এমন সময় একটা চমৎকার দৃশ্য দিকে থমকে গেলাম। অল্প বয়সী একটি জুটি, পোশাক- পরিচ্ছদে বোঝাই যাচ্ছিল তেমন স্বচ্ছ্বল পরিবারের নয়। হয়তো গ্রাম থেকে আসা স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বেরুনো স্বামী, এমনটাও হতে পারে। কেউ যদি দোয়েল চত্বরের এলাকায় যায়, তাহলে দেখতে পাবেন, দোকানগুলোতে সত্যিকারের ফুলের পাশাপাশি অনেক কৃত্রিম ফুলও পাওয়া যায়। তেমন একটি দোকানের সামনে সারি করে সাজানো হরেক রকমের ফুল। তরুণীটির খুব শখ ছবি ওঠার। তাই ঐ প্লাস্টিকের ফুলগুলোর সামনেই ভুবনভোলানো হাসি দিয়ে তৈরি ছবি উঠতে। আর, তরুণটি? সে তো তার ঐ সস্তাদামের ভিজিএ ক্যামেরাওয়ালা মোবাইলে অবিরত ছবি তোলায় ব্যস্ত। প্রেয়সীর হাসিমাখা মুখের একটি অভিব্যক্তিও হারাতে সে রাজি না..
২.
সম্প্রতি, ফেসবুকে[ইংরেজি শব্দ ইংরেজিতে লিখতেই সাচ্ছন্দ্য। অদ্ভূতুরে বাংলা করে বাঙ্গালিপনা জাহিরে নারাজ।] একটি ছবি দেখে প্রচন্ড মন খারাপ হয়ে গেল। কঙ্কালসাড় একটি দেহ পরে আছে রাস্তার পাশে ফুটপাথে। চলতি পথে সবাই ব্যস্ত। কেউ মোবাইলে কথা বলায়, কেউ বন্ধুদের সাথে নতুন কোন পরিকল্পনার আনন্দ যজ্ঞে, কেউ নিমগ্ন বৈষয়িক ভাবনায়। কারো এতটুকু সময় নেই, ভ্রু কুঁচকে, আড় চোখে তাকানোরও কোন তাড়না নেই। কিন্তু কেউ যদি একটু আগ্রহভরে দেখতো, তাহলে এমন একটি দৃশ্য সে দেখতে পেতো, যাতে একমুহূর্তের জন্যে হলেও সে থমকে যেতো। আপনাতেই মনে পড়ে যেতো একটি মুখ। সবসময়ের উৎকন্ঠিত সেই মায়াভরা মায়ের মুখ। রুগ্ন- ক্লিষ্ট ছেলের মাথা কোলে নিয়ে বসে আছেন সেই হতদরিদ্র মা। পরনের শতছিন্ন কাপড়টিরই হয়তো কিছু অংশ ছিঁড়ে পানি দিয়ে ভিজিয়ে ছেলের শরীরের তাপমাত্রা কমানোর অবিরত ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন অগ্রহায়ণের প্রখর রোদের দুপুরে..
৩.
আমার বন্ধুরা/ পরিচিত বড় ভাইয়ারা সবসময় একটি কথা বলতেন।
পৃথিবীতে মানুষ দুই রকমের। একদল, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে থাকছে। আরেকদল, যারা হলে থাকে নাই।
প্রথমদিকে বুঝতাম না। বাসা ছেড়ে যখন প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং করতে আসি, তখন খুব খারাপ লাগতো। ভর্তির পর হলে সিট পেয়ে ওঠা। এরপর? এরপর তো একটা সময় ছুটি হলেই বিরক্ত লাগতো। বন্ধুদের ছেড়ে থাকতে হবে? এতোদিন? বাসায় গিয়ে কি করবো? স্কুল- কলেজের বন্ধুদের সাথে তেমন একটা সময় পাওয়া যেতো না। তাদের ছুটি আমার ছুটি মিলছে না। ঘুরেফিরে সন্ধ্যাবেলায় একটা সময় পর্যন্ত আড্ডাবাজি। কিন্তু প্রতিদিন সেটা হয়না। তাই ঘুরেফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সাথেই বার বার হৃদ্যতা। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাপে পিস্ট হয়ে যখন নিজের জন্মদিন ভুলে ঘুমিয়ে পরি, ঠিক তখনই সবাই মিলে হাজির হয়ে যায় কেক- মোমবাতি নিয়ে। আলো নিভিয়ে মোম জ্বালিয়ে একটা ভুতূড়ে পরিবেশ তৈরির ব্যর্থ চেষ্টার পর মাথায় পানি ঢেলে ঘুম ভাঙিয়ে কেক কাটা। অর্ধেক খাওয়া আর অর্ধেক মুখে মাখামাখি। তখন হয়তো আরো অনেকে শুভেচ্ছা জানাতে মোবাইলের নেটওয়ার্ক ব্যস্ত করতে চেষ্টামগ্ন। তাদের শুভেচ্ছাবাণী শোনার সময় কই? মোবাইলের কন্ঠস্বর তখন বালিশের পাশে/ বইয়ের নিচে চাপা পড়ে রুদ্ধ..
৪.
একটা সময় ছিলো যখন স্ত্রীকে গ্রামে রেখে শহরে স্বামী আসতো কাজের প্রয়োজনে। সপ্তাহান্তে বাড়ি যাওয়া হতো। আর, কোন সপ্তাহে সম্ভব না হলে চিঠি। স্ত্রী বিরহে কাতর স্বামীদের ভাবনাই তখন চিত্রায়িত, “একলা ঘরে মনবধূয়া আমার, কি জানি কি করে..” সময়ের সাথে সাথে পট পরিবর্তন। মেয়েরা গ্রামের গন্ডি পেরিয়ে শহুরে। কিন্তু তার সাথে সাথে ছেলেরাও দেশ ছেড়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার্থে কিংবা জীবিকার প্রয়োজনে। প্রযুক্তির কল্যাণে প্রতিদিন স্কাইপে/ ফেসবুকের ভিডিও চ্যাটে দেখা/ কথা বলা। তাতে কি? দূরে থাকার কষ্টটা এখনো হয়তো ঠিক আগের মতনই। তাই তো কিছুদিন আগে বিয়ে করা এক বড় ভাইয়া তার স্ত্রীকে ট্যাগ করে ফেসবুকে গান শেয়ার করেন, “রেতের বেলা একলা এখন, জিরুচ্ছে সব শহরতলী/ চোখদু’টো খুব পড়ছে মনে, এই কথাটা ক্যামনে বলি..”
৫.
সপ্তাহখানেক আগে রিকসা- গাড়ির ভালোবাসায় তৃতীয় পক্ষ হয়ে পড়ায় ভালোবাসার তীব্রতা আমাকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে! মাথায়- হাতে- পায়ে আহত অবস্থায় যখন ভাইয়ার বাসায় বিশ্রামে ছিলাম, তখন স্বজনের খোঁজ- খবর নেয়ার হার দেখে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল। ক’জনের এত স্বজন থাকে? আর, চিকিৎসার জন্যে ঢাকা মেডিক্যালের বন্ধুকে ফোন করা মাত্রই নিজের পরীক্ষার পড়া বাদ দিয়ে আমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে কাছে ঘুরে সমস্ত সুস্রষার ব্যবস্থা করে দেয়া দেখেই নিজের অজান্তেই বন্ধুভাগ্য আবারো নিজের কাছেই কৃতজ্ঞ হয়ে পরি..
৬.
বেশ কিছুদিন আগে ব্লগের ভাইয়াদের সাথে একটি ঘরোয়া আড্ডায় অনেকদিন পর দেখা। খাওয়া- দাওয়া হলো। টুটুল ভাইয়ার বাচ্চা ঋহান সেখানো সগৌরবে উপস্থিত। তাকে কাস্টার্ড দেওয়া হলো। আমিও তার পাশাপাশি। স্বার্থপরের মত ঋহানকে রেখে নিজেই খেয়ে ফেললাম আমার ভাগেরটুকু। কিন্তু এরপরের ঘটনাটুকুর জন্যে আমি প্রস্তুত ছিলাম না। ঋহান নিজে একচামচ খায় আর, আমার প্লেটে একচামচ করে তুলে দিয়ে বলে, খাও খাও.. এত আদর নিয়ে বলছিলো, আর আমি না খাওয়া পর্যন্ত এত ভালোবাসা নিয়ে তাকিয়ে থাকছিলো.. আমি নিশ্চিত আমার মায়ের পর আর কেউ এত ভালোবাসা নিয়ে আমাকে কিছু খেতে বলে নি..
সবার জীবনেই ভালোবাসা নেমে আসুক..
আহারে ভাইয়া! এত্ত এত্ত মায়া, আদর নিয়ে লিখছো , মনটাই ভরে গেলো। ভালাবাসাময় হোক পুরাটা জীবন।
রিক্সা-গাড়ির মাঝামাঝি আর যেও না। এখন কেমন আছ?
অনেক অনেক ধইন্যা।
এখন ভালো আছি, আপু।
আর, কে গান শেয়ার করে সেইটা জানেন না??
সদ্য বিয়া করছে কে??
ব্লগের লুকজন তো জানে না কে রাইতে গান শেয়ার. করে, তাদেরকে জানানো তুমার দায়িত্ব
ওহ্! আর কোন বড়ভাই ফেসবুকে নিশীথে এই গানের লিংক দিলো সেটা বললা না!
খুব মায়ামায় একটা লেখা।
এবির প্রথম পাতায় আপনাকে নিয়মিত দেখতে পেলে খুব ভাল লাগবে। ভাল থাকুন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
অনেক বেশি অলস তো, তাই নিয়মিত থাকা হয় না।
ঝকঝকে লেখা পড়লেই মন ভালো হয়ে যায়। ব্যস্ততার ভিতরেও নিয়মিত লেইখো বন্ধু। ভালোবাসা শুভকামনা রইলো!
ভালবাসার উপাখ্যান, ভালো লাগল।
চমৎকার মায়াভরা একটি লেখা। খুব ভালো লাগলো।
হলের ব্যাপারটি সত্যি...
ভালো লেখা, ভালো থাকা হোক!
মুক্তোর মতো ঝরঝরে লেখা।
এই ছেলেটাকে এতো পছন্দ করি। ছেলেটা কি জানে? না জানলে না জানুক ফুলপির ব্যবসার আমার পার্টনার এটা ফাইনাল।
রেতের বেলা গান শেয়ার করাটা ভাল তো কপালে থাকলে তুইও ব্যাটা একদিন শেয়ার করবি।
=====================
ভাল থাকো সেই কামনা রইলো।
ভালো লেগেছে।
লেখা মুচমুচা হয়েছে।
গান শেয়ার করার কপাল তাড়াতাড়ি খুলুক এই কামনা
মন্তব্য করুন