সিগারেট সমাচার
এ বছরের গরমকাল কেমন জানি ফাজলামি করতেসে আমার সাথে খুব। ২ দিন ফাটা ফাটি গরম পড়ে আবার তাপমাত্রা নেমে যায় ধুম করে, দিনের বেলায় অনেক গরম আর রাতের বেলায় রিতিমত লেপ গায়ে দিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে। এত বছরের বইদেশ জীবনে এমন অবস্থা আর দেখি নাই। জুন মাস এলেই গরম হয়ে যায় সব কিছু, সব কিছুই পাখনা মেলে বের হয় আড়াল থেকে, নারী পুরুষ সবাই শরীর দেখানোর প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয় যেন, তাতে আমার কোন ই আপত্তি নাই। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া এমন একটা ভাব নিয়া দেখে যাই।
আসল কথায় ফিরে আসি। বসন্তের শুরুতে আমাকে পোলেন এলার্জি চেপে ধরে , আর তখন আমার বিশাল জোরে হাঁচির চোটে আশে পাশের মানুষ ভয় পেয়ে যায়, আজকাল যদিও ভদ্রভাবে নিঃশব্দে হাঁচি দেয়া শিখেছি।এলার্জি শট নেই, প্রচুর এলার্জি অসুদ খেয়ে বেঁচে থাকি। তাপমাত্রার এত উঠানামার জন্য এবার এলার্জির সাথে যোগ হোল প্রচন্ড কাশি। প্রথমে ভেবেছিলাম সিগারেট টানার জন্য এমন হইসে আর তাই যক্ষা জাতীয় কিছু হইলো কিনা এই ভয়ে সিগারেট টানা ছেড়ে দিয়ে কাশির অসুদ খাওয়া শুরু করলাম। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম এবার সুস্থ হলে আর কোন দিন সিগারেট খাবো না। নিউইয়র্ক সিটিতে এক প্যাকেট সিগারেটের দাম ১৩ ডলার, পাগল মেয়র সিগারেট ব্যান করতে পারতেসে না তাই নেশাখোরদের বারোটা বাজানোর জন্য সিগারেটের ট্যাক্স প্রতিবছর বাড়িয়েই যাচ্ছে। আমিও ভাব্লাম , যাক এবার এই বাজে অভ্যাস্টা ছেড়ে দিতে পারলে আমার অনেক টাকা সেভ হবে।
দশদিন পরেও অসুদ খেয়ে কাশি কমাতে পারলাম না, বাধ্য হয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে এন্টিবায়োটিক নেয়া শুরু করলাম, কাশি কমে যাচ্ছে, আরাম পাচ্ছি। সিগারেট টানছিনা।
যেই কাশি কমতে শুরু করল এখন খালি মনে হচ্ছে কি যেন একটা কাজ করতে ভুলে যাচ্ছি, পরে অনেক চিন্তা করে খুজে পাই সেটা হল সিগারেট টানা। আবার মন আঁকু পাঁকু করতেসে বিড়ি টানার নেশায়।
সেই ১৪ বছর বয়স থেকে বিড়ি টানা শিখেছি। ভাত না খেয়ে থাকা যায়, কিন্তু বিড়ি বাদ দেয়া যায়না। ওটা না থাকলে মনে হয় জীবনের আর কোন মানেই হয়না। যদিও এর আগেও ২/১ বার বাচ্চাদের কারণে কিছুদিনের জন্য ছেড়েছিলাম । কিন্তু যেই দেশে যাই আমার প্রানের দোস্তরা সবাই এত আদর করে বিড়ি ধরায়ে দেয়, না করি কেমনে?
বাইরে সিগারেট টানার অনেক বিধি নিষেধ। পাব্লিক প্লেসে, পার্কে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে, বার, রেস্টুরেন্টে , অফিস আদালত, দোকান পাট কোথাও ধুম পান করা যাবেনা। বাসার ভিতর তো
টানার প্রশ্নই উঠেনা। মহা জালা! তবুও ম্যানেজ করে বিড়ি টানতে হয়।
যাইহোক, পর সমাচার এই যে, আমার বিড়ি টানা বিহীন দুই সপ্তাহ পার হোল। দেখি আর কত দিন থাকা যায়। নিজের সাথে কোন প্রমিজ করছি না, মনে মনে বলি , ছেড়ে দিতে পারলে ভালই হয়। আবার মনে হয় তাহলে আর জীবনে থাকলো কি?
গুড লাক। ছাড়তে পারলে আমাকে জানাবেন।
মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন ছাড়িতে পারিয়াছেন বিড়ি
সেই পথ লক্ষ্য লরি স্বীয় কির্তী ধ্বজা ধরি আমিও বিড়িটা দিব ছাড়ি
ইচ্ছা আসে ছাইরা দেওনের, দেখি পারি কিনা, দোয়া রাইখেন যেন পারি
হয়তো ছাড়তে পারবেন কিন্তু কষ্ট হবে!
কষ্ট হবে সেটা অল রেডি টের পাইতেসি
ছয়মাস হল সম্পর্কচ্ছেদ করেছি
বাহ, আপনি তাহলে যুদ্ধে জিত্তা গেলেন ভাই
পরিচিত কাউকে আজ পর্যন্ত এই জিনিস ছাড়তে দেখিনি। বাজে একটা নেশা
লীনা আফা, এমন ভাবে শেষ কথাটা কইলেন যেন বদ দোয়া দিলেন
যাস্ট কয়দিন ধইরা রাখেন... দেখবেন পারতেছেন
টুটুল ভাই, এবার আমাকে পারতেই হবে।
বাই দা অয়ে, হিজড়াদের ঘটনা টা শুনে খুব ভয় পাইসি, সাবধানে থাইকেন পোলাপাইন লইয়া। যা দিনকাল আইসে দেশে, চিন্তাই করন যায়না।
ছাইড়া দেন। হুদাই টাকা নষ্ট করে কী লাভ।
হ এবার সেটাই ট্রাই করতেসি, ওই টেকা জমায়া কট কটি খামু , অনেকদিন খাইনা
অসাধ্য না তবে অনেক অনেক কঠিন। ১৯৯১ থেকে চলছে, মাঝে ২ বার ৩ মাস পর্যন্ত বন্ধ ছিলো। তার পর সেই সেই
আমারো আপনার মত ঘটনা ঘটসে, আর সেটা দেশে বেড়াইতে গেলেই ঘটে। তাই চিন্তা করতাসি বছর দুই দেশে যামুনা
বেষ্ট অফ লাক!
থ্যাঙ্কস
তাহলে আর জীবনে থাকলো কি? এই জন্যই তো ছাড়া হয় না
এখনো না টেনেই আছি, দেখা যাক
সিগারেট ধরা যত সহজ ভাই, ছাড়া ততটাই সহজ। যেমন আমি প্রত্যেকদিন ধরাই, আর ঘুমের সময় ব্জ্রকঠিন শপথ নেই যে এইটাই আমার শেষ সিগারেট।
কিন্তু একটা কথা আছে না? বজ্র আঁটুনির ফস্কা গেরো? ব্যাপারটা হচ্ছে এমন!!মারাত্মক কাশিও কয়েকবার হয়েছে। দিন কয়েকের জন্য বাদ দিয়েছিলাম, তারপর পুনরায় শুরু করেছি।
তবে চেষ্টায় আছি ছেড়ে দেবার, জানি না পারব কিনা (
মন্তব্য করুন