ইউজার লগইন

আমার দিন যাপন

আমি এমনিতেই ফাঁকিবাজ , আর এখন রোযার মাস তাই আরো ঢিলেঢালা দিন কাটাই। মাত্রাহীন গরমে অতিষ্ঠ। ঢাকার গরমকেও হার মানায়। ঠান্ডা ঘর ছাইরা বাইর হইলেই ভ্যাপ্সা গরমে চশমার কাঁচ ঘোলা হয়ে যায়। আর ঠান্ডা ঘরে সারাদিন কাটাইলে শীতে কাঁপি আর কাশি হয়। বেসম্ভব সমস্যা।

আগের দিন বন্ধুর বাসায় ইফতার এর দাওয়াত ছিল। ঢাকা থেকে এক বান্ধবি এসেছে। সেজন্য আড্ডা'র আয়োজন। আলমের বাসায় আলম ,সুইটি, অশ্রু, আমি আর ঢাকা থেকে আসা সুশ্মি পুরান দিনের গল্প করে রাত চারটায় সেহেরি খেয়ে বাসায় ফিরসি। গল্প হচ্ছিল আগের দিনে বাসের ভিতর হকার'রা খুব চমক দেয়া ভাষায় কেমন করে ধবজভংগ রোগের অষুদ বিক্রি করতো।

অশ্রুর জামাই এমন ভাবে বর্নণা দিচ্ছিল যেন উনি নিজেই সেই অষুদের বিক্রেতা ছিল। একটা লাইন ছিল এমন " এই অষুদ খাইলে আপনার হারানো যৌবন ফিরা আইবো, সকালে উপরে উঠবেন, আর বিকালে নাম্বেন। আপনি নামতে চাইবেন না, আত্মীয় স্বজন আপনেরে টাইন্না নামাইবো।" এত হাসা হাসি করসি যে পেট ব্যথা হয়ে গেসে, খাবারো হজম হয়ে গেসে।

রোযা আর গরম এই দুই টা মিলালে চরম বিরক্তিকর একটা সময় যাইতেসে আমার। খুব বোরিং লাগে। সময় কাটেনা। বাসায় থাকলে সারাদিন টি ভি , বই , নয়ত ব্লগের লেখা পড়ে সময় কাটে। ফোনে কথা বলতে টায়ার্ড লাগে। বাসা থেকে বের হয়ে শপিং মলে গিয়ে কাপড় চোপড় দেখা শুরু করলাম। কাপড়ের দোকান গুলিতে এখুনি শীতের কাপড় চোপড় সাজাতে শুরু করে দিসে। গরমের জামা কাপড়এর দাম কমিয়ে দিসে। নিজের জন্য কয়টা ট্যাঙ্ক টপ্স আর শর্টস কিনে আরো কিছুক্ষন আজাইরা ঘোরাঘু্রি করে বাসায় চলে এলাম।

আমি কখনো রোযা ভাঙ্গি না সাধারনত। আজকাল ভাঙ্গা পড়ে যায়। বুট পিয়াজু মুড়ি নাহলে রোযা রোযা লাগেনা। যদিও প্রতিদিন খাইলে আরাম লাগেনা। আর বাংগালি হোটেলের ইফতার খাওয়ার চেয়ে না খাওয়াই ভাল। খাইলেই অসুস্থ লাগে। বাঙালি হোটেলে পিয়াজু/বেগুনি দেখলেই মনে হয় অইগুলি চোখ কট্ মট করে বলতেসে" ওই সাবধান! আমাগোরে মুখে দিবি তো মরবি।" ঢাউস সাইজের পিয়াজু যার ভিতর কোন পিয়াজ নাই যেন পিয়াজের অনেক দাম তাই দেয়া হয় নাই। তার পরিবর্তে দেয়া হয় ডালের সাথে তার দিগুন পরিমানে বেসন। আর আপনি যখন ওটা খেতে চেষ্টা করবেন , গলা দিয়ে সহজে নামাতে পারবেন না। তাই নিজেই পিয়াজু আর বুট বানায়ে ফেললাম। নিজের বানানো পিয়াজু খেয়ে নিজেই অস্থির হয়ে গেলাম এত মজা হইসে। প্রথম দিন বানাতে গিয়ে ডাল বেশি ব্লেন্ড করে ফেলসিলাম । আজ আর ভুল করি নাই। ডাল আধা ভাঙ্গা টাইপ ব্লেন্ড করলে ভাজার পর পিয়া্জু মচমচে হয়। ডালের সাথে প্রচুর পিয়াজ, আদা, তুলশি পাতা, ধনিয়া পাতা, কাঁচামরিচ দেয়াতে দারুন টেস্ট হইসে পিয়াজুর। আর ক্যানের চিকপিস ( দেখতে চটপটির বুটের মত ) এর সাথে লাল পিয়াজ, শষা, কাচামরিচ, অলিভ অয়েল, ভিনেগার, গোল মরিচের গুড়া মিশিয়ে বানিয়ে ফেললাম বুট। খাইতে বইসা দেখি মুড়ি নাই ঘরে। কি আর করা! মুড়ি ছাড়াই খেয়ে ফেললাম পিয়াজু আর বুট।

এ,বি আমার খুব প্রিয় ব্লগ। আর এই ব্লগের অনেকের মধ্যে আরাফাত শান্ত একজন রেগুলার ব্লগার। যার দিনলিপি পড়ে পড়ে আমার শান্ত নামের মানুষটাকেই ভাল লেগে যায়। শান্ত্রর' লেখা পড়ে শান্ত সম্পর্কে আমার ভাল ধারনা হয়ে গেসে। এই যুগের ছেলে হয়েও ফার্মের মুরগি হয় নাই ছেলেটা। খুব বাস্তব বাদী , সহজ সরল আর বন্ধুপাগল। অনেক চাহিদা নাই আবার ছাত্র হিসেবে একদম সাধারন বলা যায়না যে কিনা কোন মামু চাচা্র সাহায্য ছাড়াই বি সি এস এর লিখিত আর ভাইবা তে পাশ করে যায়। বিল্ডিং এর ছাদের চিলেকোঠায় ভাড়া থাকে যেখানে অনেক গরম আবার প্রায় কারেন্ট থাকেনা, বুয়াও প্রায় আসেনা রান্না করে দিতে। তবুও শান্ত;র কোন কনপ্লেইন নাই। দিব্বি হোটেলের কাবাব নান আর প্রচুর চা খেয়ে দিন পার করে দেয়। শান্ত'র বয়সের বেশির ভাগ যুবকেরা কে কয়টা গার্ল ফ্রেন্ড বদলালো, কার ফোন কত দামী, কে কোন দামী ল্যাপ্ টপ ইউস করে , গানের টপ চার্ট আর ধুম ধাড়াক্কা মুভি আর কাপড় চোপড়ের ফ্যাশন এইসব নিয়ে আলাপ করে। আর শান্ত এসব ছেলে মানুষি থেকে অনেক দূরে থেকে অনেক বুদ্ধিমান মানুষের মত প্রচুর উঁচুমার্গের লেখকদের বই পড়ে আবার সুন্দর গঠন মুলক সমালোচনাও করে। আমি সত্যি ছেলেটাকে অনেক ভালবাসি, কেই বা পছন্দ করবে না এমন যুবক কে?

শান্ত'র লেখায় কমেন্ট চালাচালিতে শান্ত'র এক প্রশ্নের উত্তরে আমি বলসিলাম ঢাকার হাজি'র বিরানি খাইতে ইচ্ছা করতেসে। এখানে বিরানি পাওয়া গেলেও ঢাকার বিরানির কাছে এসব কিছুই না। এখানে বাঙালি হোটেল আছে, বিরানিও পাওয়া যায়। দেশের হোটেল মালিক'রা ব্যবসা করে আর ওরা জাত হোটেল ব্যবসায়ী।পয়সা কামানো প্লাস ভাল খাবার দিয়ে কাস্টমার ধরে রাখা যাবে এই ধারনার উপর ওরা ব্যবসা করে। আর বাইরে যারা হোটেল ব্যবসা করে ওরা ওই ব্যবসা;র মানুষ না। আরেকজনের দেখা দেখি ব্যাঙ্ এর ছাতার মত অনেকেকেই ভাতের হোটেল খুলে বসে এই ধারনায় যে, ভাত বিক্রি করে অনেক পয়সা কামানো সহজ আর তার জন্য অনেক অভিজ্ঞতা'র দরকার নাই।। ভাল ফুড বানাতে হলে অনেক বেতন দিয়ে ভাল কুক রাখতে হয়। তারা সেটা না করে কম পয়সার মানুষ রেখে দায়সারা গোসের রান্না করে চালিয়ে দেয়। আর তাই কয়দিন পরেই সেই ভাতের হোটেল বন্ধ হয়ে যায় , নইলে হাত বদল হয়। এজন্য কোন বাঙালি হোটেল বা দোকানপাট দীর্ঘদিন ব্যবসায় টিকে থাকতে পারেনা। অথচ ভারতীয়রা স্বভাবে ভীষন কৃপন কিন্তু ব্যবসায়িক বুদ্ধিতে অনেক বিচক্ষন। ওদের ব্যবসা গুলি চলেই মুলত বাঙালি কাস্টমার দিয়ে। কিন্তু বাঙ্গালিরা সেটা দেখেও কিছুই শিখতে পারেনা। কারন আমাদের উদ্দেশ্য ভাল না। উদ্দেশ্য একটাই, সেটা হল যেমন করেই হউক, পয়সা কামাতে পারলেই হইলো।

হ্যাঁ এটা ঠিক, ভাল মন্দ মিলিয়েই মানুষ। আমাদের দেশ থেকেও ভাল আর মন্দ দুই কিসিমের মানুষ বিদেশে এসেছে। কিন্তু যখুনি নতুন করে কারো সাথে পরিচিত হইসি আমি তার মধ্যে দেখি নাই কোন দেশি ভ্রাতৃত্যবোধ, দেখি নাই কোন আনন্দের ছটা, বরং দেখি বিরক্তি, অবজ্ঞা আর আমি তোমার চেয়ে বড় , আপার ক্লাস এমন ভাব। এইজন্য ই আমার বাঙালি দেখলে গা জলে তাই দশ হাত দূরে থাকার চেষ্টা করি। দেশে্র রাজনিতীতে সবাই যা প্রতিনিয়ত দেখে আমরা বিদেশে বসে বাঙ্গালিদের আচার আচরনে তার চেয়ে কিছু কম দেখি না।

আবার কিছু মানুষ আছে যেন সোনা দিয়ে মোড়ানো। সত্যিকারের সোনা যেমন কখনো ক্ষয় হয়না, বরং যত পুরান হয় ততই চকচক করে, তেমন কিছু মানুষের দেখা আমিও পেয়েছি। এই মানুষগুলি সবার চোখের আড়ালে নিরবে থাকে। কোন বড় আচার অনুষ্ঠানে এদের কতৃত্ব করতে দেখা যায়না, মঞ্চে উঠে মাইক নিয়ে কাড়া কাড়ি করেনা। পদবী নিয়ে মারা মারি করেনা। টাকার খেলায় প্রতিযোগিতাও করেনা। এরা কিছু সত্যিকারের সোনার মানুষ। অনেক শিক্ষিত, জ্ঞ্যানী আর ভদ্রলোক। এমন কিছু মানুষের বন্ধু হতে পেরে আমি ধন্য মনে করি নিজেকে।

সিগারেট ছাড়া দিন যাপন করছি দুই মাস হয়ে গেলো বোধ হয়। খুব পাগল হচ্ছিনা সিগারেট টানার জন্য। বুধবারে প্রিয় বন্ধু খোকা আসতেসে ঢাকা থেকে। আমার সাথেই থাকবে কয়দিন। আমিও খুব খুশি। দুই বন্ধু মিলে দারুন আড্ডা মারবো। ঘুরে বেড়াবো। খোকা চরম সিগারেট খোর। পাঁচ/দশ মিনিট পর পর একটা করে সিগারেট ধরায়। অনেক সময় নিয়ে আয়েশ করে টানে। সিগারেটের শেষ টান নাকি সুখ টান। ওটা না দেয়া পর্যন্ত সিগারেট ফেলে না হাত থেকে। আগে আমরা একজনের সিগারেট আরেকজন টানতাম, আবার ফেরত দিতাম সুখ টান দেয়ার জন্য। সিগারেটের বাটে থু থু লেগে গেলেও কিছু মনে করতাম না। কিন্তু এখন ভাল লাগে না কারটা টানতে। খোকা যতবার সিগারেট ধরাবে, সাথে বন্ধুকেও খুব আদর করে একটা বের করে নিজের লাইটার দিয়ে ধরিয়ে দিবে । আর তাই আমি খুব চিন্তায় আসি। খোকা সপ্তাহখানেক আমার সাথে এক বাসায় কাটাবে। পারবো তো সিগারেট না টেনে থাকতে? দেখা যাক !

পোস্টটি ১২ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

নিভৃত স্বপ্নচারী's picture


ভাল লাগলো দিনলিপি। চলুক..

টোকাই's picture


ধন্যবাদ

আহসান হাবীব's picture


টোকাই ভাই, লেখা তো ভালই লাগল। তয় দেখছি আল্লামা শফি নানার রোগ এদিক অদিক কিছটা ছড়াইছে। যাওজ্ঞা লিখতে থাকেন। মজা

টোকাই's picture


ধন্যবাদ আহা ভাই

আরাফাত শান্ত's picture


আজ সারাদিন ব্যাস্ত ছিলাম যে পোস্টটা পড়ার সময় হয় নি। আপনার দিনলিপি গুলাও দারুন হচ্ছে কিন্তু। নিয়মিত লিখবেন!

আমার সমন্ধে বলছেন যা তা বেশী বেশী। বেশী স্নেহের কারনেই হয়তো এই বাড়িয়ে বলা Laughing out loud

টোকাই's picture


শান্ত, আমি খুব সত্য কথা বলতে পছন্দ করি।

রাসেল আশরাফ's picture


পড়লাম। চালিয়ে যান ব্রো।

টোকাই's picture


থ্যাঙ্কস ব্রাদার

সাঈদ's picture


গুড । চলুক

১০

টোকাই's picture


েক ধন্যবাদ

১১

জেবীন's picture


এই যে রোজকার সময়কার কথামালা Smile

আমি কিন্তু নাকউচা মানুষের চেয়ে মিশুক জাতীয় মানুষ বেশি পেয়েছিলাম দেশ থেকে আসা, স্ট্যাটাস দেখানি'ওলারাও ক'দিন পর ঠিকঠাকই লাইনে এসে গিয়েছিল, আর যারা ওমন নাকউচা বাদ দেখায় একসময় তারা কিন্তু আলাদা হয়ে পড়ে, আর অই বিদেশবিভুইয়ে কেইবা চায় একলা চলতে!

১২

টোকাই's picture


কিছু কিছু মানুষ কোন দিন বদলায় না। আর অল্প পানির মাছ ডাঙ্গায় উঠলে বেশি লাফায়, জানেন তো।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে জেবীন আপা।

১৩

তানবীরা's picture


ভীষন কৃপন কিন্তু ব্যবসায়িক বুদ্ধিতে অনেক বিচক্ষন। ওদের ব্যবসা গুলি চলেই মুলত বাঙালি কাস্টমার দিয়ে। কিন্তু বাঙ্গালিরা সেটা দেখেও কিছুই শিখতে পারেনা। কারন আমাদের উদ্দেশ্য ভাল না।

চরম সত্যি Puzzled

আরেকজনের দেখা দেখি ব্যাঙ্ এর ছাতার মত অনেকেকেই ভাতের হোটেল খুলে বসে এই ধারনায় যে, ভাত বিক্রি করে অনেক পয়সা কামানো সহজ আর তার জন্য অনেক অভিজ্ঞতা'র দরকার নাই।।

আরো চরম সত্যি Sad(

১৪

দূরতম গর্জন's picture


অসম্ভব সুন্দর দিনলিপি

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.