অন্যরূপ
জীবন মানেই দেয়া আর নেয়া । শুনলেই মনে হয় যেন লেন দেন ।
খুব ঠুনকো আর সস্তা মনে হয় এমন শুনলে । কিন্তু জীবন মানে আসোলেই তাই ।
দেয়া নেয়া না হলে সম্পর্ক গভীরতা হারায় । তারপর আস্তে আস্তে কোথায় যেন একেবারেই হারিয়ে যায়।
মানুষের বাইরের চেহারা রক্ত মাংশের হলেও আসোলে ওটা কিন্তু একটা মুখোশ ছাড়া
আর কিছু নয় । সব মানুষের দুইটা রুপ আছে । একটা সবাই দেখতে পায় ,আরেকটা খালি চোখে দেখা যায়না কিন্তু চেষ্টা করলেই উপলব্দি করা সম্ভব।
মানুষের দুই রকম চেহারা চিনতে না পারাই মঙ্গল। চিনতে পারলে কষ্ট বাড়ে।
বাবা মা, ভাই বোন, আত্মীয়স্বজন, ছেলে মেয়ে, স্বামী স্ত্রী, শালা শালী, দেবর ননদ, প্রতিবেশী, সহপাঠি, সহকর্মী, প্রেমিক প্রেমিকা , বন্ধু বান্ধবী, নেতা কর্মী, মনিব কর্মচারী -কত রকমের সম্পর্ক আছে। সব সম্পর্কই টিকে থাকে দেয়া নেয়ার কারনেই। দেয়া নেয়া কম হলে সম্পর্কে টানা পোড়ন শুরু হয়ে যায়।
মানুষের জীবন থিয়েটারের নাটকের মতই । অদৃশ্য পরিচালকের নির্দেশে আমরা প্রতিদিন অভিনয় করে যাচ্ছি । মাঝে মাঝে নিজের সুবিধামত স্ক্রিপ্ট ওলট পালট করে নেই । জীবন শুরু হয় শেখানো আদর্শের বুলি দিয়ে । বাস্তব জীবনে এই আদর্শ কেউ খুব মনে রাখে না কিন্ত চোখে মুখে আর লেবাসে আদর্শ ভাব বজায় রাখি । জীবনের দৌড় প্রতিযোগিতায় আমরা শেখানো আদর্শ নয় বরং নিজের ওলট পালট করা স্ক্রিপ্ট অনুযায়ীই চলি। সেখানে শুধু নিজে ছাড়া বাকি সব কিছুই তুচ্ছ বিবেচিত হয় । ভাবছেন , বেশি বলে ফেলছি? ভেবে দেখুন কথা গুলি সত্যি কিনা !
সত্যি কথা বলতে পারার সৎ সাহস থাকলে সবাই একবাক্যে স্বীকার করে নিতো আমার কথাগুলি । যদিও এটা কেউই স্বীকার করবে না।
মানুষের দ্বিতীয় রুপ যারা দেখতে পায় তাদের কপাল খুব খারাপ। তারা না পারে সইতে , না পারে ফেলতে - এমন অবস্থায় পড়ে। অনেকেই আবার বেশি মাথা না ঘামিয়ে দ্বিতীয় রুপের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করে ।
মানুষের দুই চেহারা অনেক সময় কাছের কিংবা দুরের মানুষেরা বুঝতে পেরেও খুব অবাক হয়না এখন। বরং মেনে নেয় লোক লজ্জা, সামাজিকতা আর সম্পর্কের কারনে।
আবার অনেকে একেবারেই এসব মেনে নিতে পারেনা, তেমন মানুষও রয়েছে।
বাবা বাসায় থেকেও সন্তানকে দিয়ে ফোন কিংবা কলিং বেলের উত্তর দেয়ায়- নিজে বাসায় নাই বলে । সন্তান কি ভাবছে কিংবা পরে বাবাকে অনুকরন করবে সেটা ভাবছে না।
ছেলে বেলায় একসাথে স্কুলে পড়ুয়া বন্ধু একে অপরের সম্পর্কে আদি অন্ত সব কিছুই জানে। তাদেরই একজন পরবর্তি জীবনে পুরনো বন্ধুর সাথে এমন ভাবে আচরন করে যেন তাদের নতুন পরিচয় হয়েছে।
স্বামী অন্যায়ভাবে আয় করছে জেনেও স্ত্রী লোভের বশে সেটা মেনে নেয় কিন্তু যদি সেই টাকা বাপ মার জন্য খরচ করে স্ত্রী সেটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনা।
অনেক আদরে লালিত ভাইবোন বড় হয়ে একে অপরের সাথে ঠান্ডা আচরন করে । সুযোগ পেলে ভাই বোনের সম্পত্তি খেয়ে ফেলে জালিয়াতি করে কিংবা জোর খাটিয়ে ।
পুরুষ স্ত্রীর কারনে নিজের ভাই বোনের চেয়ে শালা শালীর প্রতি বেশি মনযোগী হয় কিন্তু স্ত্রী কখনই দেবর ননদের প্রতি অনুরক্ত হয়না সেভাবে।
নারী মায়ের জাত। কিন্তু শাশুড়ীকে ছেলের বউ যেমন মায়ের আসনে বসাতে পারে না তেমনি শাশুরড়ীও ছেলে বউকে মেয়ের মত স্নেহ করতে পারেনা ।
মালিক সৎ নয় বুঝতে পারলে কর্মচারীও ঠকাতে শুরু করে ।
রাস্তায় একসাথে মিছিল করা নেতা কর্মীর সম্পর্ক হয় অন্ধ গুরু্ ভক্তি আর স্নেহ ভাজন শিষ্যের। কিন্তু নেতা যখন ক্ষমতার মসনদে বসার সুযোগ পেয়ে সীমাহীন অন্যায় শুরু করে , কর্মী তখন সেটার সুযোগ নেয় কিন্তু নেতার প্রতি অন্ধ ভক্তি আর থাকেনা, বরং জন্ম নেয় নীরব ঘৃনা।
এসব কিছুই সবার জানা। সব জেনেও অনেকে না জানার ভান করে।
মুখোশের অতি ব্যবহার করতে করতে মানুষ স্বকীয়তা হারিয়ে এক সময় নিজেকেই নিজে চিনতে পারে না। অভিনয়ের কারনে অনেক কাছের মানুষের ভালবাসা হারাতে হারাতে একা হয়ে পড়ে ।
অনেক দিন পর আপনার লেখা পড়লাম!
কেমন আছেন ভাইয়া?
অনেকদিন পর, ভাল লাগলো।
মন্তব্য করুন