ঈদের আনন্দ
দেখতে দেখতে রোযা প্রায় শেষ হয়ে এলো। আর মাত্র কয়দিন বাকি। বিদেশে আমি কোন দিন ঈদের সেই মজা অনুভব করি না , যা কিনা পেতাম দেশে থাকাকালীন। সেই ছোটবেলা থেকে শুরু করে অনেক বড় হয়েও দেশে ঈদের আনন্দ কখনোই কম মনে হোতো না।
ঈদে নতুন জামা কাপড়ের গন্ধ , সালাম করলেই বড়দের কাছ থেকে ঈদি পাওয়ার আনন্দ কি ভোলা যায় নাকি? ঈদের আগের দিন রাতে খালি ঘুম ভেঙ্গে যেতো আর জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখতাম দিনের আলো দেখা যায় কিনা। বাবা'র সাথে দল বেধে ঈদের জামাতে যেতাম । বাবা অনেক সুন্দর সুগন্ধি আতর ব্যবহার করতেন। জু্মা'র নামাযের দিন আর ঈদের দিন এসব আতর বের হোতো বাবা'র বিশেষ বাক্স থেকে। নিজেও লাগাতেন আর তুলায় লাগিয়ে আমাকে আর ছোট ভাই আজাদের কানে গুজে দিতেন। সারাদিন ভুর ভুর করে সেই মিষ্টি গন্ধ পেতাম । ঈদের দিন বাবা পাঞ্জাবি পায়জামা'র সাথে আচকান আর মাথায় পাগড়ী পরতো। পায়ে থাকতো নাগ্রা টাইপ জুতা। ওই ড্রেসে বাবাকে দেখতে মোগল আমলের জমিদারের মত মনে হোতো। ঈদগাহ মাঠে বাবার পাশে নামায শেষ করেই বাবাকে সালাম দিতাম। বাবা বুকে টেনে নিয়ে কোলা কুলি করতো। পকেট থেকে টাকার নতুন বান্ডিল বের করে আমাদের ঈদি দিতেন হাসি মুখে। বাড়ি ফিরে সবাই একসাথে সেমাই আর রুটি মাংশ খেতাম ।দিনের শেষে হিসাব করতাম কত টাকা পেলাম। কি মজার ছিল সেই দিন গুলি।
আজ বাবা নাই। আজাদ নাই। আর আমার ও যুগ যুগ ধরে দেশে ঈদ করা হয় না। ঈদের সেই আনন্দ এখন আমার কাছে ইতিহাস। দেশে সারাজীবন দেখেছি সবাই একদিনে একসাথে ঈদ পালন করতো। এই ব্যাপারে কোন মতৈক্য ছিল না। কিন্তু দেশের বাইরে এসে দেখি আমাদের বাঙালি সমাজ ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ উদযাপন করে। এত দুঃখ লাগে কি বলবো !
আমি যে শহরে থাকি , সেখানে আমাদের দেশের লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে। মসজিদের সংখ্যা ও প্রচুর তার সাথে দলা দলিও। ছোটবেলা থেকেই জানতাম বড় জামাতে নামায পড়লে নাকি সোয়াব বেশি আর আনন্দ ও লাগে অনেক। কিন্তু এই শহরে আমাদের দেশের মানুষেরা নিজের আধিপত্য জাহির করার জন্য যার যার এলাকায় আলাদা মসজিদ বানান যার আয়তন যেমন খুব ছোট আর মুসুল্লিও কম। এসব মসজিদের জন্য এলাকাবাসীর কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের ক্ষেত্রে রিতিমত মানষিক চাপ দেয়া হয়। লজ্জায় পড়ে হলেও ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেকে চাঁদা দেয়। চাঁদাবাজি এখানে অনেক ভাল একটা ব্যবসা। যারা মসজিদ কমিটিতে থাকেন তারা বেশিরভাগ ই বকলম টাইপ আর রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত। আর এসব কারণে ভেদাভেদ ও অনেক।
এই ভেদাভেদ শুরু হয় রমজান মাসের চাঁদ দেখা নিয়ে।
অদ্ভুত ব্যাপার হল এই আমরা যারা এই দেশে থাকি, প্রতিদিন সকাল বেলা নিউজে আবহাওয়ার
খবর দেখে বুঝে নেই দিন কেমন যাবে, কেমন গরম বা ঠান্ডা হবে, বৃষ্টি হবে কিনা এবং সেভাবে কাপড়চোপড় পড়ি, ছাতা নেই সাথে। এই দেশের ওয়েদার ফোরকাস্টে সাতদিনের আগাম পুর্বাবাস বলে দেয় এবং সেটা কখনোই খুব বেশি হের ফের হয়না। একই ভাবে এরা কবে নতুন চাঁদ উঠবে আর সুর্য কখন ঊঠবে আর অস্ত যাবে তাও একদম ঠিক ঠাক ভাবেই বলে দেয়। এদেশিদের সাথে সাথে আমরাও প্রতিনিয়ত এসব অনুসরন করে যাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে।
কিন্তু যখুনি আমাদের ধর্মিয় মাস আসে তখন আমরা সব কিছু ভুলে গিয়ে একেবারে অশিক্ষিত ধর্মান্ধ উজবুকের মত আচরণ করা শুরু করে দেই প্রতি বছর একই নিয়মে। পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশে থেকে, উন্নত টেকনলোজির ফোরকাস্ট তখন আমরা আর ফলো করি না। তখন নানা রকম ফতোয়া শুরু হয়ে যায়। নিজের চোখে চাঁদ দেখতে হবে। আবার কেউ বলে সউদি আরবে চাঁদ দেখা যেতে হবে, কেউ বলে বাংলাদেশে চাঁদ দেখতে হবে। ব্যস শুরু হয়ে যায় আমাদের দোটানা। কাল না পরশু , কবে খাবো সেহেরি? কেউ কারো সিদ্ধান্ত মানে না। এখানেও বায়তুল মোকাররমের মত আমাদের সেন্ট্রাল মসজিদ আছে। কিন্তু ওইজে আগে বলসি, কেউ কাউকে মানেনা। কারন না মানলে কিছু আসে যায়না। এখানেই আমাদের দ্বিধাবিভক্ত নানা জাতের মানুষের আসল চরিত্রের প্রকাশ ঘটে খুব পরিস্কারভাবে। অবশেষে যে যার সুবিধামত ্নিজেদের মসজিদের ফতোয়া অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা রাখা শুরু করে এবং সেই কারণে এই দেশে ঈদ ও একাধিক দিনে হয়ে থাকে। দেখা যায় ভিন্ন মসজিদের অনুসারি হওয়ার কারনে দুই ভাই বোন বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাও ভিন্ন দিনে ঈদ উদযাপন করে। এইসব ক্ষেত্রে আমরা খুব অভদ্র আর অশিক্ষিতের মত ধর্মান্ধ হয়ে যাই । নিজের ভাইবোন বন্ধু কাউকেই কেয়ার করিনা।
ঈদের জামাত এ হয় নানা রকম ফাজলামি। এটাতো ঈদের জামাত না যেনো চাঁদা উঠানোর মাহফিল। মসজিদের ফান্ডে প্রচুর টাকা থাকা সত্বেও ঈদের দিন প্রচুর সময় নিয়ে মাইকে কমিটির লোকজন মানুষকে মসজিদ, ইমাম এর জন্য চাঁদা দিতে বলে যা সত্যি খুব বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়ায়। হয়তো কোন স্কুলের মাঠ ভাড়া নিয়ে ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়েছে । বড় জামাতে নামায পড়ার জন্য অনেক মানুষ আসে দূর দুরান্ত থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে। দেখা যায় মাঠের প্রথম কয়েক কাতারে ত্রিপল দেয়া হয়েছে নামায পড়ার জন্য। বাকি মাঠ খালি। এখন ত্রিপল বিছানো কাতার গুলি যখন ভরাট হয়ে যায় শুরু হয়ে যায় বিড়োম্বনা। অনেকেই হয়ত নিজে জায়নামায নিয়ে আসে নাই। সেক্ষেত্রে শিশির কিংবা বৃষ্টি ভেজা মাঠে কাদা মাটিতে ভিজে নামায পড়ছে। একবার ভাবুন নামাযের আয়োজকদের মন মানসিকতার কথা। কতটা নীচ আর পয়সা মারার চিন্তায় মগ্ন থাকলে এমন করে মানুষ। পুরা মাঠ যদি ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেয় যা খুব সস্থায় ভাড়া পাওয়া যায় অনেক টাকার ব্যাপার হবেনা। এরা কি আসোলে ধার্মিক না ভন্ড?
এক ই সময়ে যদি অন্য দেশের মসজিদের কথা বলি , সম্পুর্ন ভিন্ন চিত্র। আমি বেশ কয় বছর ধরে ঘুরে ঘুরে অন্য দেশের মসজিদে নামায পড়তে যাই। তখন খুব দুঃখ লাগে নিজের দেশের মানুষগুলির এত মিস ম্যানেজমেন্ট এর কথা ভেবে। গত বছর ঈদের নামায পড়তে গিয়েছিলাম এক ইন্দোনেশিয়ান মসজিদে। পুরাই ভিন্ন চিত্র। অনেক মানুষ নামায পড়ছে, কোন হই চই নাই। কোন চাঁদাবাজি নাই।, মাইকে কোন চিল্লা চিল্লি নাই। খুব নিরিবিলিতে শান্তভাবে নামায পড়ছে, সবাই হাসিমুখে কোলাকুলি করছে। সবচেয়ে ভাল লাগে দেখে মহিলারা সবাই আলাদা নামায পড়ে মসজিদের বাইরে সবাইকে গরম কফি, চা, নাস্তা বিতরন করছে। কিন্তু কোন পয়সা নিচ্ছে না।
এত সুন্দর আনন্দ ঘন পরিবেশ দেখলেই মন ভরে যায়। আর ভাবি আমরা আর ভাল মানুষ হতে পারলাম না। দেশে আর বিদেশে যেখানেই থাকি না কেন।
হতাসাজনক!
ভালো যাক দিন। শুভকামনা!
আমাদের এখানেতো একবার পুলিশ আসছিলো। হাতাহাতি এমন পরযায়ে গেছিলো। ইদের দিন থিরিলিং
তবে কয়েদদিন ধরে ইদ হওয়াকে আমি সমরথন করি। অনেক বেশি বাসায় দাওয়াত খাওয়া যায় ঘুরে ফিরে, সাজগোজ ........
াহাহা, ভালই কইসেন
মন্তব্য করুন