ইউজার লগইন

অচৈতন্য

ঈদের দিন চ্যানেল আই তে একটা খবরে চোখ আটকে গেলো। রিওয়াইন্ড করে বার বার দেখলাম আর শুনলাম।খবর টা দেখে মেজাজ বিগড়ালো, মন খারাপ হোলো আর খুব অসহায় ও মনে হোলো।

এই প্রথম জানলাম ঢাকায় " সরকারী শিশু সদন " নামে অনাথ আর অনাকাঙ্খিত শিশুদের জন্য একটা আশ্রম আছে।বাইরে থেকে খুব পরিপাটি আর সুন্দর ভবন। কিন্তু ভিতরে দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। সাংবাদিকের ভিডিওতে দেখলাম অনেক গুলি খুব ছোট থেকে একটু বড় বাচ্চা রা অবহেলায় নোংরা পরিবেশে এখানে সেখানে শুয়ে আছে কোন তত্বাবধান ছাড়াই। একটা ছোট , বিকলাংগ শিশুকে দেখলাম ক্রিবে শুয়ে হাত পা ছুড়ে কাঁদছে, কারণ বেবী ক্রিবের কাঠের ফ্রেমে তার মাথা আটকে গেছে। এসব তদারক করার জন্য নিশ্চয়ই অনেক মানুষ আছে ওই প্রতিষ্ঠানের বেতনের খাতায়। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেলো ২/১ জন আয়া ধরনের মহিলা ঘুরা ঘুরি করছে। অফিসার ইন চার্জ কে আছেন জিজ্ঞেস করতে জানা গেলো ঈদ উপলক্ষে উনি একটু দেরি করে আসবেন।শিশুরা আজ ঈদের দিনে কি খেয়েছে জিজ্ঞেস করতেই উত্তর দিলো ডাল আর মরিচ দিয়ে ভাত খেয়েছে

এমন কি কথা ছিল? এই বাচ্চাদের খাবারের জন্য অবশ্যই বাজেট আছে। কিন্তু এই অনাথ বাচ্চারা বাস্তবে কি খেতে পাচ্ছে, আর কেমন অবস্থায় দিন যাপন করছে সেটা দেখার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত মানুষগুলি সেটা নিয়ে চিন্তিত না হয়ে হয়ত ব্যাক্তিগত কাজে ব্যস্থ থাকছে। কারণ এসবের জন্য আমাদের দেশে তো কোন জবাবদিহি করতে হয়না । এমন অনিয়ম তো সব ক্ষেত্রেই ঘটছে।এই সব অব্যবস্থা নিয়ে আমাদের সুশীল সমাজের মাথা ঘামানোর সময় কোথায়?

ঢাকায় আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ আছেন। সাদামনের মানুষ যাদের বলা হয় তেমনি একজন। আমার মা নেই শুনে সেই ছোটবেলা থেকে যতটুকু পেরেছেন মায়ের আদর দেবার চেষ্টা করেছেন। বন্ধুর মা, কিন্তু দেখা গেছে বন্ধুর চাইতে ওই মানুষটির সাথেই আমার যোগাযোগ বেশি হয়। ঈদ উপলক্ষে ওনাকে ঢাকায় ফোন করলাম । দেখি গলার স্বর খুব দুর্বল । বলতে গেলে শোনাই যায়না।
জিজ্ঞেস করলাম , কি হইসে খালাম্মা, রোযা রেখে অনেক দুর্বল হয়ে গেসেন? তিনি উত্তর দিলেন , নারে বাবা, আজ সারাদিন ধরে ডায়রিয়া চলছে, কিছুতেই কমছে না। অনেক কয়টা সেলাইন খেয়েও কাজ হচ্ছেনা। আমি শুনেই সাথে সাথে বললাম, খালাম্মা আপনি এখুনি কোন ক্লিনিকে চলে যান। রাতটা ওখানে কাটান। ওরা ইন্ট্রা ভেনাস সেলাইন দিয়ে সব ঠিক করে ফেলবে। খালাম্মা বলেন ,কে নিয়ে যাবে আমাকে, কেমন করে যাবো, ড্রাইভার ঈদের ছুটিতে দেশে চলে গেসে। ওনার ছেলে মেয়েরা সবাই ঈদ নিয়ে ব্যস্থ। একজন ওখানে ছিলো। ওনাকে জোর দিয়ে বললাম, দয়া করে আজ রাতেই যেন খালাম্মা'কে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু অবাক হলাম যার মা, তার গলায় কোন চিন্তার আভাস নাই। বলল , আরে না, হাসপাতালে গিয়ে কোন লাভ হবে না। কোন ডাক্তার পাওয়া যাবে না। সব ঈদের ছুটিতে। এমন ডায়রিয়া এম্নিতেই ভাল হয়ে যায়। নিজের মায়ের প্রতিও মানুষের দায়িত্ববোধ কাজ করেনা? আর ঈদ বলে কি হাসপাতাল , ক্লিনিক'এর ডাক্তার থাকবে না? এটা কি সত্যি নাকি? আমি জানিনা।

আরেকটা ঘটনা বলি। আপ্নারাও হয়তো দেখেছেন। ঈদের দিন ছয়মাসের ছোটবাচ্চা নিয়ে হাতিরঝিলে বেড়াতে গিয়ে মোটর সাইকেলের ধাক্কায় বাচ্চা সহ এক দম্পতি খুব আহত হয়েছে। ছবিতে দেখলাম ছোট বাচ্চা মোটর সাইকেল;এর চাকার নিচে প্রায়। অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে দেখছে, কিন্তু কাউকে দেখলাম না বাচ্চাটাকে উঠিয়ে কোলে নিতে। ফটোসাংবাদিক ও সাহায্যের জন্য হাত না বাড়িয়ে আগে দুর্লভ দৃশ্য ক্যামেরায় ধারন করতে ব্যস্ত ছিল। ঈদের দিন মানুষের বিনোদনের অনেক কিছু না থাকায় হাতির ঝিলে বেড়াতে যায়, তাহলে পুলিশ বিভাগের কি উচিত ছিল না ওখানে যান চলাচল নিয়ন্ত্রন করা, মানুষের চলাফেরা নিরাপদ করা?

আমরা টেলিভিষনের পর্দায় আর জনসভার বক্তৃতায় কত বড় বড় কথা শুনি। সাধারণ মানুষের ও অনেক সচেতনতার কথা শুনি বিভিন্ন মিডিয়াতে। কিন্তু জন জীবনের প্রাথমিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গুলি কেনো এত অপ্রতুল এসব নিয়ে কেন আন্দোলন করিনা, অবরোধ করিনা?

পোস্টটি ১৩ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

আরাফাত শান্ত's picture


মন খারাপ হলো!

তানবীরা's picture


আমিও টিভিতে দেখেছিলাম

মন খারাপ হলো!

নিভৃত স্বপ্নচারী's picture


আমাদের মন খারাপ করাতে কারো কিছুই আসবে যাবে না। যাদের তদারকি করার কথা তারা তো নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত! সর্ষের ভিতর ভূত থাকলে ভুত তাড়াবে কে?

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


Sad

টোকাই's picture


Sad

দূরতম গর্জন's picture


দেশটা অনৈতিকতায় এতটাই ভরে গেছে যে ছোট ছোট শিশুদের হক মেরে খেতে কেও দ্বিধা বোধ করে না। জানি না আর কত অভিশাপের পরিমান বাড়লে আমাদের হুশ হবে!

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.