নিঃসঙ্গ নিঝুপদ্বীপ এবং একটি হুমায়ুনকাব্য
যাত্রী সংখ্যা ষোল। পাঁচ জোড়া দম্পতি। দুইজন বন্ধু। এক জোড়া কলিগ। একটি বোন। একজন সহকর্মী। ওহো, আর সতেরোতম ব্যক্তি একটা উদ্ভট পথপ্রদর্শক। এই হলো নিঝুম দ্বিপ বাহিনী। এদের নাম বলে নেয়া ভালো। তাহলে গল্পটা বলা যাবে আয়েশ করে।
ট্যুরের প্ল্যান করেছে আমার বন্ধু রানা এবং তার বর সোহেল। যাদের নামেই বাংলাদেশের হিরোর বাস তাদের ট্যুরে সিনেম্যাটিক অধ্যায় থাকবে- বলাই বাহুল্য। এই দলের অপর তিন দম্পতি আগেই থেকে একে অপরকে চিনে। ছেলেগুলো সোহেলের ছোট বেলার বন্ধু। বন্ধুত্রয় এবং তাদের পত্নীত্রয়ের নাম যথাক্রমে- জয়-শাখী, ইমন- পপি, অন্ত- শম্পা। আরেক দম্পতি মোস্তফা- রোমানা। মোস্তফা সোহেলের সহকর্মী। রানার কলিগ দুজন হলেন দলের আপাত দুই ব্যাচেলর (কারণ যার যার পত্নী তার তার বাড়িতে) আরিফ ভাই আর দুরন্ত মিশু। রানারই আরেক কলিগ রিংকি আপু (বিশিষ্ট সুন্দরী এবং মিস নিঝুম দ্বীপ বা “অ্যাটেনশন দ্যা হুমায়ুন"), জাকিয়া হলো রানার বোন, আর গাইড চরিত্রে উদ্ভট প্রাণিটি হুমায়ুন। আর আমি। এখানে ষোলতম ব্যক্তির যুক্ত হওয়াটা কিছুটা নাটকীয়। আমার বন্ধু পাটোয়ারি (পাটু) নিঝুমদ্বীপে যাওয়ার প্ল্যান শুনেই বলেছিল সে যেতে চায়। কিন্তু তখন ”সীট খালি নাই”। এরপর ভ্রমণের দিন অর্থ্যাৎ ২ তারিখে বিকাল পাঁচটায় হঠাৎ রানার ফোন, দোস্ত তোর ঐ বন্ধুটাকি যাইতে পারবে? পাটুরে জানাইতেই সে বললো- যাবে। এরপর আমার বাসায় যেতে লাগলো তিন ঘণ্টা। ভেবেছিলাম, একটু তাড়াতাড়ি যাই, কিন্তু মহান ঢাকার রাস্তা সেই সুযোগ আমাকে দিল না। এই তিনঘণ্টার মধ্যে পাটু সাড়ে তিনবার তার সীদ্ধান্ত বদল করলো। এই বলে যাবো- আবার বলে যাবে না। রীতিমত ঝাড়ি দিলাম, যাইতেই হবে। তখন সে মিহি কণ্ঠে বলে, দোস আমার ব্যাগ তো তোর কাছে। (ওর ব্যাগপ্যাকটা আমি ধার নিয়েছিলাম এই ট্যুরেই যাওয়ার জন্য)। বিষয়টি চিন্তার হলেও সে মুহুর্তে ওর কথায় বিন্দু মাত্র পাত্তা না দিয়ে বললাম, একটা পলিথিনে দুইটা লুঙ্গি নিয়ে চলে আয়।...
অতপর ঘটনা নিম্ন লিখিত।
উহু..এখনই নয়। আরেকটু সময় নেই। আগে নিজের যুক্ত হওয়ার গল্পটা বলে নেই। আমি এবং রানা বেগম বদরুন্নেসা সরকারি কলেজের বন্ধু। কলেজ পাশের পর বহু বছর দেখা নাই। জয়তু ফেসবুক! বছর আড়াই আগে ফেসবুকের মারফৎ আবার দুই বন্ধুর দেখা মিললো। বেশ কয়েকটা আড্ডার মাঝেই দেখা গেল, আমার বর-ওর বর বেশ ভালো জমে। আর আমরা বরাবরই দুষ্টু এবং একই প্রকৃতির হওয়ায় ঐ কিছুদিনের গ্যাপটা মিলিয়ে গেল নিমিষে। এরপর এই ট্যুরের প্ল্যান। প্রথমবার সময় ঠিক হলো যখন,তখন আমরা অপারগ। পরেরবার আমার সময় মিললো। কিন্তু আমার বরের মিললো না। একই সময় আমার বরের সুন্দরবনে যাবার কথা। ঠিক করেছিলাম, একবার গিয়েছি আর ন্যাড়া বেলতলায় যাবো না, অর্থ্যাৎ আর সুন্দরবনে যাবো না। ঠিক করলাম, ঐ সময়েই আমি নিঝুম দ্বীপেই যাবো। বরের ট্যুর ভেস্তে গেল অফিসের কাজের জন্য। শেষ পর্যন্ত বরকে রেখেই আমি রওনা দিলাম পাটু আর পাটুর ব্যাগ নিয়ে।
এগারোটায় বাস। সায়েদাবাদ থেকে। শাহী এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু এই বাসের কোন কাউন্টার নেই। তখনও আমরা আপাত দৃষ্টিতে কেউ কাউরে চিনি না। সায়েদাবাদের রাস্তায় এমাথা ওমাথা চক্কড় কেটে অন্য এক কাউন্টারে এই বাসের হদিস পাওয়া গেল। একের ভিতর দুই অবস্থা। মানে কাউন্টারের নাম যাহাই হোক- ইহাই শাহীর কাউন্টার। অবশেষে বাস এলো। আমার প্রথম ভুল ভেঙে দিয়ে যে বাসটি এলো সেটি বেশ বড়-সড়। এতোটা বড় আশা করি নাই। যে যার মতো বাসে চড়তেই বাস চললো হু হু করে। বাস ড্রাইভার কি খাওয়া ছিল আল্লাহ মালুম। আমাদের গরু ছাগলই হয়তো মনে করেছিল। নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে গাড়ি চালালো ব্যপক গতিতে। আল্লাহ’র নামে যাওয়া যাকে বলে, তাই হলো এবার। একে তো কই যাচ্ছি জানি না, কাউরে চিনি না। আমাদের বারোয়ারি দলের কেউ যায়নি আগে, কেমন থাকা খাওয়া কোন ধারনাই নাই। একমাত্র আল্লাহ’ই ভরসা।
পথিমধ্যে জাতীয়-বিজাতীয় টয়লেটের দেখা মিললো। ছবি না দেখালে বোঝানোর উপায় নেই। কেন বাইরের পর্যটক আমাদের দেশ ভ্রমণে আসবে সেটাই বড় প্রশ্ন মনে হচ্ছিল। আমরা আল্লাহকে স্মরণ করে উপরে তাকিয়ে টয়লেটের কার্য সমাধা করে বাঁচলাম। ভাবীদের স্পোর্টিভাব প্রশংসারযোগ্য। কোন অভিযোগ ছাড়াই তারা চলছেন। সম্ভবত নোয়াখারির সদরের আশেপাশে কোন একটি বাস ডিপোতে নামিয়ে দিল আমাদের ভোর তিনটে নাগাদ। আবার আমার ভুল ভাঙার পালা। শুনেছিলাম শীত নেই, এলাকাটায় ভয়ংকর শীত। কাপাকাপি অবস্থা সবার। সেখানে যাত্রার অল্প বিরতিতে আপাত ”সিঙ্গেলদের” আলাপ হলো। পাটুর ভাবগতি বুঝতে পারছি না। মোটামুটি জোর করেই ওকে নিয়ে আসা। তখনও সে চুপ। ওদিকে শীত তো হার না মানা। কাপন্ত অবস্থাতেই সেখান থেকে আরেকটি ছোটবাসে সবাইকে তোলা হলো। এবারের ড্রাইভার আরো সুপারম্যান। এই ড্রাইভারের হাতে জান সঁপে দিয়ে লাফাতে লাফাতে (বাসের কল্যাণে) পৌঁছালাম, থুক্কু বাসটি লাফাতে লাফাতে চলে এলো চেয়ারম্যান ঘাটে। সেখান থেকে আমাদের ট্রলারে উঠার কথা। সাথে সাথেই। কিন্তু এখান থেকেই শুরু হুমায়ুন-নামা। হুমায়ুন ঘোষণা দিল, জোয়াড় না আসলে ট্রলার ছাড়ার আলামৎ নাই। ঘটনা হলো জোয়াড় কখন আসবে কেউ জানে না। কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে সেটাও কেউ জানে না। ঘাটের প্রচণ্ড- শীতে নাকের আগায় জান গিয়ে জমে গেল। কোন ”কারণে” ট্রলার ছাড়ার উপায় নেই সেটা তখন না জানতে পারলেও তা নিয়ে কেউ খুব একটা ভাবেনি। কি করে শীত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় তা নিয়েই সবাই চিন্তায় পড়ে গেল। ঘাটের একমাত্র শীত-সহায়ক দোকান থেকে হাত পা মাথা বাঁচানোর মতো কাপড় কেনা হলো। এবং ততক্ষণে ট্রলার ছাড়ার ”কারণ”ও চলে এলো..আমাদের সাথে ঝুলে পড়া ৪ অজানা পর্যটক। হুমায়ুন সাহেব ঘোষণা দিলেন, ট্রলার ছাড়ার যোগ্যতা নদী অর্জন করেছে! আমরা খুশি..তখন তো আর জানি না প্রায় সাত ঘণ্টা ট্রলারে যাত্র কি জিনিষ!! প্রথম প্রথম নদী, গাঙচিল, বক সব ভালো লাগলো। গরুর সাঁতার কাটাও দেখতে মধুর লাগছিল। পরে আর সেটা সহ্যের পর্যায় ছিল না। শীত পালিয়ে গেল রোদের ঝাড়িতে। গরমে এক-একজন নাকমুখ ঢেকে ঘুমিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো। পাটু কিন্তু তখন্ও চুপ। ভাবলাম অধিক শোকে বেচারা পাথর হয়ে গেছে। ওকে না ঘাটিয়ে আল্লার নামে মুখ ঢেকে শুয়ে পরলাম। জীবনে প্রথমবারের মতো ”ঘোড়ার মত ঘুমে” পারদর্শী হওয়াতে গর্বিত হয়ে গেলাম। যতবারই ঘুমভাঙে দেখি আমি কারো বালিশ বা অন্য কেউ আমার মাথার বালিশ, কিন্তু ঘাটের দেখা নাই। এক পর্যায়ে মনে হলো চুল আর চামড়া পোড়ার গন্ধ আসছে নিজেদের গা থেকে। ভাবছি যা থাকুক কপালে পানিতে ঝাপ দিব! তার আগেই, অবশেষে তিনটে নাগাদ তাহার দেখা পেলাম। আমাদের নিঝুম দ্বিপ।
এই দ্বীপের নামকরণের সার্থকতা এখনও আছে। আসলেই নিঝুম। পাড়ে নেমে কিছুদূর হেটে গিয়ে দেখি নিঝুম দ্বিপ রিসোর্ট। পুরোন আজিমপুর কলোনি যারা দেখেছেন, তারা স্মৃতি হাতড়ে পাবেন এই রিসোর্ট দেখে। পাশাপাশি দুটো দোতালা বাসায় আমাদের ষোলজনের ব্যবস্থা হলো। আবারো আমার ভুল ভাঙলো। রিসোর্টেও থাকার আয়োজন সন্তোষজনক। তুলোর লেপটা স্বর্গীয় মনে হলো। এই দুই রিসোর্ট বিল্ডিং ছাড়া আর আছে একটি দেড়তলা স্কুল। আরেকটি হারিকেন শেল্টার কাম সিজনাল টুরিস্ট লজ কাম পারমানেন্ট পুলিশ ফাড়ি। এই হলো নিঝুম দ্বীপের পাকা বাড়ির খসড়া।
দেখা যাচ্ছে রিসোর্টের অদূরে ঈষৎ ঘন জঙ্গল। গায়ে পানি আর পেটে খানা দিয়ে সেদিনের মতো ঘুরতে গেলাম দ্বীপের বীচে। বালুময় বীচে চললো ছবি তোলার উৎসব। সন্ধ্যার আগে আগে ফেরার তাগিদ। কারণ এখানকার মানুষগুলো আসলেই নির্জনতা পছন্দ করে, এখন্ও তাদের গায়ে সোদা গাঁয়ের গন্ধ। আমরা তাদের কাছে শোকেসে রাখা পুতুলের মতন। যেখানেই যাচ্ছি গোল হয়ে পাশে দাড়িয়ে যাচ্ছে। কিছু করছে না বটে, হা করে ”ঢাকা” গিলছে। তাদের না ঘাটিয়ে সন্ধার পর ফিরে আসা। একটি বিষয় না বললেই নয়। নিঝুমদ্বীপটা তার আদিমতা নিয়ে এখন্ও সুন্দর। এখনও বাংলাদেশের শ্যামল রূপ তার গর্ব। তারা নিজেদের পরিচ্ছন্ন রাখতে ডাস্টবিন বানিয়েছে। কিন্তু ঢাকার অসভ্য কিছু পর্যটক যা খাচ্ছে তার প্যাকেট- খালি ক্যান যেখানে সেখানে ফেলে রাখছে! কি আজব এরা! দেখলাম আমাদের সাথে থাকা আরেকটি গ্রুপ এই কাজটাই করলো। এরা বলে আবার সব ব্যাংকার! আমরা ষোলজনই চেষ্টা করেছি আর যাই হোক দ্বীপবাসীদের কাছে যেন অপরাধী না হই।
যাই হোক। সেদিন রাতটা কাটলো গল্পগুজব করে। ঠিক করা হলো, পরদিন ভোরে চলে যাবো অদূরে আরেকটি চড়ে, ওখানে হরিণ দেখতে। সব প্ল্যান ঠিক। হুমায়ুন এসে ধোষণা দিলো,সকালে নাকী হরিণ আসেই না। তাই আমরা সকালে নয়, ঐ চড়ে যাবো দুপুর তিনটাতে। সকালে যাবো এই দ্বীপের জঙ্গলে।
যে পরিকল্পনা সেই কাজ। রাতে আমাদের টাইনি ঝাল মরিচের মানে জাকিয়ার একটার পর একটা হাসির ঝাল- বোম হজম করে পরদিন সকালে জঙ্গলে রওনা দিলাম। দূর থেকে মনে হয় কাছে। আসলে বাপু তা অনেক দূরে। এখানে এসে হুমায়ুন নিজেকে সেলিম মনে করে রিংকি আপুকে তার আনারকলি বানিয়ে ফেললো। তার চাপাবাজির ঠ্যালায় জীবন অস্থির। কিন্তু কেউ কিছু বলে না। হাজার হোক গাইড বলে কথা। সেটা সবাই বুঝে মুখ টিপে হাসছি। কিনতু ১০-১২ বছরের গাইড ”খান সাহেবের” জাকিয়াপ্রেম দেখে না হেসে উপায় নেই। হরিণ একদিকে খান সাহেব জাকিয়ার হাত ধরে নিয়ে যায় আরেক দিকে। আমাদের জ্বালা, একদিকে হুমায়ুনকাব্য আরেকদিকে খান-কথা। তারমাঝেও হরিণ দেখতে পেলাম। জীবনে প্রথমবারের মতো দেখলাম শিংওয়ালা হরিণ। এক কথায় চমৎকার। আর হ্যাঁ, লবণাক্ত মাটির বুক চিড়ে মাতা উচু করা ম্যানগ্রোভও বেশ ভালো লাগলো।
হুমায়ুনের নাচা-কুদা, ম্যানগ্রোভ আর বনের নির্জনতায় বেশ কিছু সময় কাটিয়ে ফেরার পালা।
রিসোর্টে ফিরেই জানতে পারলাম যেখানে সকালে আমাদের যাবার কথা ছিল, কিন্তু হরিণ থাকে না বলে হুমায়ুন বাতিল করেছিল সেখানেই সকালে ব্যাংকারগুলো দিব্যি হরিণ দেখে এসেছে। আবার কোলেও তুলেছে। অদম্য আমি বলেই ফেললাম, হরিণগুলোকেও ছাগল বানালেন দেখি!
ঘটনার রির্পোট করলাম সোহেলের কাছে। কি আর করা। না হয় বিকেলেই সই। দুপুরে ভালমন্দ খেয়ে ফের রওনা দিলাম। এবারের দ্বীপটা সত্যি অসাধারণ। অনেক্ষাণী জায়গাজুড়ে উঁচুনীচু প্রান্তর। হটাৎ করে জংগল শুরু। আহা সেই জঙ্গলের গন্ধটা নাকে লেগে আছে। এক কথায়- অসাধারণ!!
এখানে জনাব হুমায়ুন চিত্রনায়ক ওমর সানির মতো আকিয়ে বাকিয়ে কি যেন করতে লাগলো। পাটু যতই বলে হরিণ দেখে নাই, ততই সে রিংকি আপুকেই হরিণ দেখাতে আগ্রহী হয়! আর খান তো জাকিয়ার হাতই ছাড়ে না।
আসলেই পালে পালে হরিণ দেখা হলো। চিত্রা হরিণ।
সাপের খোলশও দেখলাম। মানে ইয়ে মানে...
আমি আবার কাদায়..মানে..আচ্ছা সেই গদ্য থাক...
অদ্ভুদ এই ভালো লাগার জায়গাটায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিশ্চুপ বসে থাকা যায়। ক্যামন একটা মায়া..একটা আকর্ষণ। ফেরার সময় হয়তো তাই কারো মুখে তেমন কথা নেই। সবাই চুপচাপ গোধুলীর আলোয় দেখছে বাংলাদেশের আদি অকৃত্রিম সৌন্দর্যকে।
ঐ রাতেই আমাদের বার বি কিউ হবার কথা। হুমায়ুন বলেছিল ক্যাম্পফায়ার করা যাবে না। অনুমতি নাই, হেন তেন। ফিরতেই দেখি অন্য দলটি দিব্যি বার বি কিউ করে যাচ্ছে। রিপোর্ট টু সোহেল। আবারো।অতপর বিশ্রাম শেষে আমাদের জন্য দিব্যি বার বি কিউ হলো। আমার লাইফের অন্যতম সেরা বার বি কিউ এটা। আমরা সত্যি সত্যি আগুন ঘিরে নাচলাম। গাইলাম। পুরাই ফুল অন। চাঁদের গূর্ণ হতে একদিন বাকি থাকলেও সেরাতে চাঁদ কৃপণতা করেনি আমাদের সাথে। বার বি কিউ-এর শুরুতে হুমায়ুনের মাতব্বরি করার ইচ্ছা থাকলেও কেউ খুব একটা পাত্তা দেয়নি। সে পড়ে আসেওনি।
আমরা ভরপুর মজা করার পর খেতে বসে সবাই স্পিচ দিলাম। এরমাঝে সেরা ছিল সোহেলের কথাই। সোহেলকে তার কলিগ “শহীদ”ভাই বলে। তাই সোহেল উঠেই বললো, আমিই সোহেল আর আমিই কিন্তু শহীদ। ...
পরদিন ভোর ছয়টায় কল দিল হুমায়ুন। বলে ব্যাটা লাপাত্তা। আমরা কি আর ঘুমাই। আড্ডাবাজী চললো রাতভর। আমার সামান্য জ্বরে সবার আন্তরিকতা দেখে মনে হলোস রক্তের সম্পর্ক থাকলেই মায়া থাকে- এটা ভুল। মানুষ মাত্রই মানুষের জন্য মায়া। আর যদি তারা বন্ধু হয় তাহলে তো কথাই নেই। পরদিন সকালে আবারও একই তামাশা হুমায়ুনের। ছয়টায় সবাই তৈরি, তার জোয়াড় মানে ব্যাংকাররা তৈরি হলো ৮টা নাগাদ। ট্রলার ছাড়লো সাড়ে আট টা নাগাদ। টকটকে লাল পলাশ গাছটাকে ছাড়তে কষ্ট হচ্ছিল। তারপরও। ভুলতে পারবো না তো বটেই। ....
আরো ভুলতে পারবো না ঐ মহিলাকে। কোলে এক বাচ্চা আর একটা বোচকা দেখিয়ে হাতিয়া পর্যন্ত যাওয়ার অনুনয় করে, ট্রলারে শেষ পর্যন্ত উঠালো বিভিন্ন বয়সের ৪টা বাচ্চা, হাফডজন মুরগী, কোয়ার্টার ডজন বস্তা এবং ইত্যাদি..ইত্যাদি..
রঙ-বেরঙা স্মৃতি নিয়ে পৌনে বারোটায় আসলাম হাতিয়া। সেখানে লঞ্চ। আবারো ভুল ভাংলো। লঞ্চের রুমগুলো আশাতীত ভালো। পানির উপর খানা, গানা আর বাজানা ব্যাপক হলো। মোস্তফার অসাধারণ গান আমাদের গার গাইবার চেষ্টা সবকিছু মিলে ভোর ছয়টা পর্যন্ত চমৎকার সময় কাটলো। যখন পচাঁ গন্ধ নাকে এলো বুঝে গেলাম আমার প্রিয় ঢাকা কাছে, বুড়িগঙ্গারই কোলে এখন।
ভোর ৬টা। লঞ্চ থেকে নামার পালা। যে যার মতো ছুটছে। আমার আবার ঐদিনই অফিস।
হুমায়ুনকে শেষ গালমন্দ, আনুষ্ঠানিক বিদায় ঘোষণা, সিএনজিওয়ালাদের মারার ইচ্ছা, বাসার সামনে হাসিবের অপেক্ষার শেষে স্বস্তির হাসি- সবমিলে তিনদিনের টানা ভ্রমণের উপযুক্ত উপসংহার। আর ভ্রমণটাকে স্মরনীয় করে দিল অনেকগুলো বন্ধু উপহার দিয়ে। অচেনা মানুষগুলো সবাই সবাইকে চেনে। কৃতিত্বটা সোহেল-রানার তো বটেই। সাথে বাকীদেরও। ভালোবাসার প্রসারিত হাত তো সবারই ছিল।
অতএব, আবার দেখা হবে বন্ধু। রাতে একসাথে একদিন খাওয়ার বিষয়টা ভুলো না যেন!
(বি:দ্র: ছবি আপলৌডেড)
আপনে সবকিছুতে এত তাড়াহুড়া করেন ক্যান? আজব!
ভ্রমণকাহিনী ভালো পাইসি। কাদায় কি হইসিলো সেইটা বলেন এবার।
কথা সত্য...আমি সবসময় একটু দৌড়ের উপর থাকি..আম্মা বলতো, আমার নাকী "ইয়ের টাইমে বদনার তালাশ" টাইপ অবস্থা থাকে ....
...আর না দৌড়ানোর চেষ্টা খরতাম.. 
অনেককিছুর মিল পেলাম আমার সেন্টমার্টিন ট্যুরের সাথে। অসাধারণ ভালো লাগে ঐ জায়গাগুলো
লেখা খুবই উপাদেয় হয়েছে আর একটু সময় দিলে আরো .।.।.।.।.।.।
দাঁড়ান আফা ...এক্ষুণী লেখারে প্রাইভেট কইরা টপিং দিচ্ছি...
"কাদা"র নাকি "কাঁদা"র গদ্য?
ভাল্লাগছে ভাল্লাগছে...
মনে হইলো জানি দৌড়াইতে দৌড়াইতে আপ্নে লিখছেন, আর আমিও দৌড়াইতে দৌড়াইতে পড়তেছি
আপনার চোখে নিঝুম দ্বীপ দেখা হলো। আপনার লেখা আপনার মতোই সাবলীল।
রাত ৩ টার সময় তাড়াহুড়ো হবে না তো কি হবে!! এমনি তে ম্যাক আর আইবিএম নিয়ে বিপদে আছি...
রাইত তিন্টায় লিখছেন কেন?
কারণ সময়ে কুলাচ্ছিলো না বড়ভাই..এদফায় ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন প্লিইইইইইজ..
ঠিকাছে
পিচ্চি মানুষ বইলা মাফ কইরা দিলাম এইবারের মতো 
যাক বাপু..পিচ্চি হওয়ার একটা সুবিধা পেলাম শেষ পর্যন্ত...
ওহো! একটা কথা জিগাইতে ভুইলা গেসিলাম। উপরে লিখছেন না, "ক্ষমা সুন্দর"? ক্ষমা মেডাম কি আসলেই সৌন্দর্য দেখতে
যেহ.. আফাটা আসলেই সোন্দর ...
উনার সাথে পরিচিত হইতে পারলে খুশী হইতাম
জয়তু নিঝুম দ্বীপ। রওনা দেবার পর থেকে ট্রলার পর্যন্ত একটা পার্ট আর পরের টুকুন একটা পার্ট বানিয়ে আবার লিখে ফেলেন আপু। আপনার লেখা পড়তে খুবই ভালো লেগেছে।
এটা লিখতেই ১ মাআআআআস সময় লাগলো..!
আবার দুটো পার্ট??...দেখি ..আল্লাহ ভরসা....
দারুণ বেড়িয়ে এলাম নিঝুমদ্বীপে... ছবি সহ পেলে আরো ভাল বেড়ানো হতো।
ছবি দিলাম...
ছবি দিলাম...
উপাদেয় লেখা, নিঝুম দ্বীপে যাইতে মনচাইতাছে
আসেন ভাইসব, বইমেলার আনন্দে এবার নিঝুম দ্বীপ ঘুরে আসি...
আহ মনে পইড়া গেল পুরান স্মৃতি.... আসলেই দারুন স্নিগ্ধ, সবুজ প্রকৃতির এক মিলন মেলা...নিঝুম দ্বীপ...লেখাটা ফাটাফাটি হইছে....
পড়তে পড়তে পড়তে পড়তে খুব ভাল্লেগে হিংসা লাগতেছে। এত বেড়ান কেন? আজব!
আফা আছেন কিরাম?
আমার পয়ের নীচে কেজি কেজি সরষে..কি করবো...

ইনশাল্লাহ আমরা সবাই মিলে যাবো..
আমিও একদা ১৫০ জন সহযাত্রী সহকারে নিঝুম দ্বীপ গিয়াছিলাম...
লেখা তোমার মতই হইছে... মানে ....ইয়ে... সোন্দর
:\
হুমম বস আপনি কি সূর্য উৎসবে (২০০৪) এর কথা কইতাছেন?
হায় হায় করছো কী তুমি ! পুরা নিঝুম দ্বীপ ট্যুরে একটাই ছবি তুলছো ? তাও আবার সেইটাই আমগোরে ২ বার দেখাইলা !!

উফফফফফ...দেখেন এখন দেখেন....
আপনার লেখা পড়ে আরাম পািলাম, উপাদেয় হয়েছে। ছবিতে আপনি কুন্জন?
আমি কোনটা- সেই রহস্যটার সমাধান না হয় আপনার উপস্থিতিতে কোন এক আড্ডাতেই হোক!..
আইছছা।। এইবার চিনছি। এই লেখিকার লিঙ্ক ধইরাই ‘আমরা বন্ধু’-তে আইসিলাম।
এইটাইপের লেখা তে মাইনাস ছাড়া আর কিছু দেয়ার থাকে না। মানুষের এতো সুখ কপালে থাকে কেমনে?

এহ..সুখ কই..??
এটা অনেক দিন পরে ঘুরতে গেলাম। মাশাআল্লাহ...
সুখে থাকতে ভূতে কিলায় বলেই তো রোদে পুড়ে "কমপ্লেকশন"-এর ১৪টা বাজাই!!!...
নজর দিয়েন না কলাম...
ওরে ফটুক দিছে দেখি??? সৌন্দর্য সৌন্দর্য ফটুক তো...
বলছেন!!
হ, কইলামই তো
সবচে সুন্দর লাগছে পুষ্পভারাক্রান্ত ছবিটা, আর হরিণের ছবিটা...
আরো ছবি আছে..ফেসবুকে তুলে দিবো ইনশাল্লাহ..আমাদের ব্লগের একটা ট্যুর হলে কেমন হয়??
আমাদের ব্লগের ট্যুর হলেতো খুবি ভালো হয়, কিন্তু সবার শিডিউল মেলানো খুবই ঝামেলার কাজ
সেজন্যই আর হয়ে ওঠে না 
খুবই সুন্দর-সাবলীল ভ্রমণকাহিনী। দারুণ সুস্বাদু রান্না আর দৃষ্টিনন্দন পরিবেশনা!
বুঝলেন তোহ আমিকেমন রাধুনী!!...
ছবিগুলো অনেক সুন্দর।
ধন্যবাদ...
দারুন।
গত ডিসেম্বরে আমরা ৮ জন গিয়েছিলাম কিন্তু প্রচন্ড কুয়াশা আর ঠান্ডা ছিলো তখন।
ছবি গুলা ভালো লাগলো ।
আমাদের দলের সবারই জায়গাটা বড্ড ভালো লেগেছে...ঠাণ্ডাটাও উপভোগ করেছি...
নিঝুম দ্বীপ যাবার খুব ইচ্ছে আমার। সময় সুযোগ পেলে একবার যাব। ছবিগুলি অনেক সুন্দর।
নিঝুম দ্বীপ যাবার খুব ইচ্ছে আছে আমার
এখন সে ইচ্ছে অনেক অনেক বেড়ে গেল। লেখার পড়ে যেন অনেকটা নিঝুম দ্বীপ ঘোরা হলো
মন্তব্য করুন