পহেলা বৈশাখ'১৪১৮
কাল অনেক কষ্ট করে বাসায় আসতে হয়েছে।ভাইয়াকে বলেছি আমার জন্য চারটার টিকিট দিতে উনি তা না করে সাড়ে চারটার টিকিট দিয়েছে।অবশ্য এই সমস্যা উনার নতুন না।বরাবরই উনি একই কাজ করেন ঈদ বা অন্য কোন ছুটির সময় এটা করবেই। অবশ্য সাড়ে চারটার টিকিট পাওয়াতে আমার লাভই হয়ছে।অফিসের কাজ গুলো গুছায় আসতে পেরেছি।যথারীতি আজ এবং আগামীকাল কে ওভারটাইম করবে তা ঠিক করার জন্য সালিশ মিটিং করা লাগছে। আর ছুটিছাটা আসলে লোকজনেরও অসুখ মনে হয় বেড়ে যায়, সাথে ডিপোম্যানেজার গুলার কান্নাকাটি আর মোসলেম স্যারের দৌড়ঝাপ।এই সিপ্রোসিন কেন নাই, কুমিল্লা ডিপো নীল করে বসে আসে, সিলেটে আজ জিম্যাক্স পাঠানোই লাগবে। ময়মনসিং থেকে দেলোয়ার ভাই গাড়ি পাঠাচ্ছে তাকে বি-৫০ ফোর্ট পাঠানোই লাগবে। এই লোকটা সারাজীবন বি-৫০ ফোর্টের জন্য কান্নাকাটি করে গেলো। ময়মনসিংহের লোকজনের কি আসলেই ভিটামিনের অভাব?? যাই হোক এই হ্যাপা গুলো শেষ করে অফিস থেকে বের হয়ছিলাম কাল।বাস ফ্যাক্টরীর সামনে আসতে টানা একঘন্টা দেরী করছে রাস্তার জ্যামের কারনে। বাসায় এসে মচমচা করলা ভাজি, সজনে ডাটাঁ আর ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত খেলাম। আম্মা আর আব্বার সাথে একটু আড্ডা দিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমায় গেছি।
ঘুম থেকে উঠে দেখি আটটা বাজে আম্মা যথারীতি তার ভাষণ শুরু করে দিসে বাজারের সব কাচাঁবাজার শেষ হয়ে গেলো কিন্তু আব্বা আধাঘন্টা ধরে বাথরুমে বসে আছে।এটা আমি ছোটবেলা থেকেই দেখছি আমাদের বাসার কমন ব্যাপার।আব্বা বাজার থেকে আসার পর আবার আরেক চোট হবে এই যেমনঃ
আম্মা বলবে ‘’এই শাক কি তোমাকে ফ্রী দিসে?? বুড়া শাক নিয়ে আসছো? এই কচুঁ আনছো ক্যান? এটা সিদ্ধ হবে না’’
আব্বা মাথা চুলাকায় বলবে ‘’তরকারী ওয়ালা বললো খুব ভালো কচুঁ, আড়ানীর ওর নিজের ক্ষেতের।‘’
হ তরকারি ওয়ালা তো তোমার দুলাভাই হয় তাই শালারে ফ্রেস জিনিস দিছে,’’।আম্মার উত্তর।
কোনমতে পান্তা ইলিশ খেয়ে রিকশা নিয়ে ক্যাম্পাসে গেলাম ভদ্রা পার্কে দেখলাম পোলাপাইন জোড়ায় জোড়ায় ঢুকতেছে আহারে কত আগায়ছে পোলাপাইন!! ইবলিশে গিয়ে পুরাতন দিনের কথা মনে হলো আগেও এই দিনে সবাই আসতাম ফারুক আসতো সবার পরে, কারন ও মংগল শোভাযাত্রায় যেতো।মেহনাজের সাজুঁগুজুর জন্য জেসমিনের আসতে দেরী হতো আর সাহেরাকে এই দিনে পাওয়া যেতো না উনি সারাদিন মাসুদ ভাইয়ের সাথে বুকড থাকতো।
সবাই একসাথে হওয়ার পর চারুকলায় যেতাম।ওখানে মুড়ি বাতাসা খেয়ে লাল-হলুদ একটাকা দামের বরফ খেয়ে ক্যাম্পাস ষ্টেশনে আসতাম দুপুরে খাওয়ার জন্য। এখানে নিতুর সাথে এক চোট ঝগড়া আমার হতোই আমি খেতে চাইতাম পোলাও আর ওরা ভাত। শেষমেশ আমার নামই দিয়ে দিলো ওরা হা-পোলাও।
আজ এই ক্যাম্পাসে কেও নাই আমি আর ইমন ছাড়া রিয়াদকে বললাম আসতে কিন্তু ওর বঊ বাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত।ফারুক নিতু জাহাঙ্গীর ঢাকাতে আর তন্ময় বাবু হয়ে উল্লাপাড়ায় উল্লুক মারতেছে।
কি আর করা আমি আর ইমন প্ল্যান করলাম আগে যা করতাম তাই করবো,চারুকলায় গেলাম দুপুরে ষ্টেশনে ভাত খেলাম কোন ঝগড়া বাদেই। পান খেলাম সোহওয়ার্দীর সামনে থেকে। তার কিছুক্ষন পর বাসায় চলে আসলাম।এসে টিভি দেখলাম কিছুক্ষন।বিকালে বাইরে যাওয়ার আগে আম্মার হাতের পোলাও খেয়ে বের হলাম।
বাপির বাসায় এসে দেখি বাপি ব্যস্ত ওদের বাসার কন্সট্রাকশনের কাজ নিয়ে। হীরার আসার কথা বিকাল পাচঁটায় কিন্তু তার দেখা নাই ।অবশ্য হীরা কোনদিনও ঠিকসময়ে আসেনি এই কারনে এখন আমরা ওকে টাইম আগিয়ে বলি যেন ও ঠিক টাইমের ঘন্টা খানেকের মধ্যে আসতে পারে কিন্তু ইদানিং ও বুঝে গেছে আমাদের চালাকি। হীরা আসার পর পদ্মার পাড়ে গেলাম। পদ্মা আর সেই পদ্মা নাই একটা ড্রেন হয়ে গেছে কিন্তু সেই ১৯৯৮ সালে বন্যার সময় প্রতিদিন রাজশাহীতে গুজুব বেরোতো এই বাধঁ ভেংগে পানিতে তলিয়ে যাবে রাজশাহী শহর।আমাদের পাশের বাসার চাচারা তাদের ফ্রীজ একটা কাঠের বাক্সের উপর রেখেছিলো কিন্তু আব্বার কোন আয়োজন না দেখে আম্মা প্রতিদিন আব্বাকে দুইবেলা ঝাড়তো।আর আজ সেই পদ্মার কি অবস্থা দেখলেই খারাপ লাগে।কিন্তু একটা জিনিস ভালো লাগলো পুরা পদ্মার চরে মনে হচ্ছে লাল-সাদার মেলা বসেছে।
মিটলফে ফুচকা খেয়ে বাসায় আসতে আসতে রাত নয়টা। কেটে গেলো ১৪১৮ এর প্রথমদিন, পহেলা বৈশাখ।
২।
আজ সকালে উঠেই এই কথাটা মনে হয়েছিলো দেশে থাকলে কি করতাম? কিন্তু আজ কিভাবে কাটালাম? সকালে উঠে কালকের রাতের ভাতে পানি দিয়ে পান্তাভাত বানালাম। আলু ভর্তা করে খেয়ে ল্যাবে আসলাম।ল্যবমেটদের শণপাপড়ী খাওয়ালাম। আর আজকের দিনটা কেন স্পেশাল তা বুঝালাম।একজনের খুব ভালো লেগেছে খেতে আমাকে আবার এনে দিতে বলেছে আরেকজন এমন ভাব করে খেলো যেন ওরে আমি বিষ দিসি আর ও সেটা চেখে দেখছে বিষের কনসেন্ট্রেশন ঠিক আছে কিনা?মনে মনে দু চারটা রাজশাহীর বিখ্যাত গালি ওকে বছরের প্রথমদিন উপহার দিয়ে দিলাম......
কল্পনার শক্তি ও গুরুত্ব বাস্তবের চেয়ে অনেক বেশী!
কই বেশি??যদি তাই হয় তাহলে লোকজন যা ভাবে তা হয় না কেন??
শুভ নববর্ষ।
বৈশাখের প্রথম দিনে ঝড় হইতেছে । পুরা সফল নববর্ষ । শুভ নববর্ষ ভাইয়া ।
ও হ্যা, লেখার বিরাম চিহ্নেরা কি মেলায় ঘুরতে গেছে? অনেককেই তাদের জায়গায় দেখা যাচ্ছে না
শুভ নববর্ষ আপনাকেও।
সেই সকালে মেলায় গেছে কোন পাত্তা নাই।আপনি দেখলে খবর দিয়েন তো।
আলু ভর্তা। কাঁচামরিচ সর্বোপরি প্লেট ডেকোরেশন অত্যন্ত সুন্দর হইছে।
প্রথম প্রথম বিদেশ আসলে মন খারাপ লাগে, আস্তে আস্তে সহ্য শক্তি বাইরা যাবে, তখন মনে হবে, যে দেখে যাক চলে গোল্লায়, যা করে ভালো করে আল্লায়
শুভ নববর্ষ
গরীবের লগে মশকরা করেন।
শুভ নববর্ষ রাসেল।
পান্তাভাত-আলুভর্তা-কাঁচা মরিচ.....ইলিশটা পরের বছর নিশ্চয়ই
শুভ নববর্ষ লীনাদি।
ইলিশটা ফ্রিজে আছে।কাটাকাটির জন্য রান্না করা হয় নি।
তাহলে ঠিক আছে আমি ভাবছিলাম আহারে ছেলেটা বিদেশে বসে ইলিশ জোগাড় করতে পারে নি মনে হয়।
বিদেশে ঠিকই পাওয়া যায়। আমাদের দেশেই পাওয়া যায় না শুধু। এক হালি ইলিশ কিনতে হয় ষোল হাজার টাকায়।
শুভ নববর্ষ। আপনার পান্তা আলুভর্তা ও কাচাঁমরিচ দারুন এসেছে ছবিটা আর ততোধিক দারূন খাবার। একটি কাচা পেয়াঁজের দরকার ছিল।
তাইতো।পেয়াঁজ রাখা দরকার ছিলো।
আপনারে একটু রাশরাফ নামে ডাকতে ইচ্ছা করতেসে। আপনার একাকীত্বকে হিংসা করি ভীষণ। ভাই কেমন আছেন?
ডাকো, যা ইচ্ছা হয় ডাকো।গত একবছরে এত নামে লোকজন ডাকে তাতে আর কিছু মনে হয় না।
সুখে থাকলে ভূতে কিলায়তেছে না।
ইয়েস্ মাই ব্রাদার। অনেকদিন কেউ কিলাচ্ছে না। এই নিয়ে আছি আফসুসে। যাক্ আপনের জন্য কিন্তু ফ্রেশ ধইন্যাপাতা আছে চার কেজি। পান্তাভাতের সঙ্গে খেতে হবে।
ছবিটা সুন্দর হইছে, কিন্তু পেঁয়াজ-লবন ছাড়া কেবল মরিচ-ভর্তা দিয়ে তো পান্তাভাত স্বাদু হওয়ার কথা না! এইসব কবে যে শিখবেন!
সামনে বার ইনশাল্লাহ।
প্লেট ডেকোরেশন অত্যন্ত সুন্দর হইছে। আপনি কুন ডেকোরেটরের লুক?
শুভ নববর্ষ।
লীনাপাকে রিকুষ্ট করছি যেনো ১৪১৮ এর কেকের ছবিটা দেয় এখানে।
চুপচাপপড়েগেলাম
শুভ নববর্ষ
চুপাচাপ জানিয়ে গেলাম শুভ নববর্ষ।
পান্তা জীবনে খাইনাই, এ জীবনে খামুও না
বাই দ্যা অয়ে, এদ্দিন পর কি "শুভ নববর্ষ" বলা উচিৎ?
মন্তব্য করুন