আহা, আজি এ বসন্তে
এক ঝড়ের রাতের কথা।
পলাশীর মোড়ে আগে একটা ছাপড়া মতো বাজার ছিল। বুয়েটের টিচারদের ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন থেকে একটা বহুতল মার্কেট বানাবে, তাই বাজারটা উঠায় দেয়া হল। পাশেই বুয়েটের নতুন ক্যাম্পাস। সাময়িক ভাবে তার পেছনে একটা জায়গায় বাজার তৈরি করে দেয়া হয়েছে। আধাপাকা দালান আছে কিছু। উপরে টিন, দেয়াল ইট-সিমেন্টের মিশেলে গড়া। পলাশীর সেই পুরনো ফটোকপি মেশিনগুলো রাখা সেখানে, বুয়েটের বিখ্যাত চোথাশিল্পের সূতিকাগার বলা যায়।
যাই হোক, যা বলছিলাম...এক ঝড়ের রাতের কথা।
বন্ধুরা কয়েকজন মিলে আটকা পড়েছি সেই আধাপাকা ফটোকপির দোকানে। ঝড়ের তোপের মুখে দোকানের বাইরের ডালা নামায় দেয়া হয়েছে। উপরের টিনের ফুটো দিয়ে লীক করা পানি টিউবলাইট বেয়ে গড়াচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য বাতিও নিভিয়ে দেয়া হল। এবার অন্ধকারে সব মূর্তিমতো দাঁড়িয়ে। আলো বলতে ছোট্ট একটা টিভি, তাতে দোকানিরা অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তানের সেই ঐতিহাসিক টি২০ ম্যাচ দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে দেখি ডালার ফাঁক দিয়ে, বৃষ্টি কদ্দুর কমলো। আর বৃষ্টিও দেখিয়ে দিল, ধুপধাপ গাছের ডাল ছিড়ে বিড়ে টিনের চালের উপরে ফেলতে লাগলো। রাতটা শুধু ঝড়ের জন্যই স্মরণীয় না, আরো অনেক কারণ আছে।
কালকে রাতেও যখন বৃষ্টি হচ্ছিল, তখন আমার সেই ঝড়ের রাতের কথা মনে পড়ছিল। পার্থক্য হলো কালকে রাতেরটা শুধুই বৃষ্টি। বহুতল দালানের ভেতর ঝড় অসহায় হয়ে বৃষ্টি নামেই ঝরে। লোডশেডিং হলো। সেই পলাশীর অন্ধকার। বৃষ্টির শব্দে মনে হল এখনো পলাশীর সেই দোকানে দাঁড়িয়ে, অপেক্ষায়...কখন বৃষ্টি থামবে!
নতুন এ বাসাটায় নতুন ধরণের সমস্যা। আগেও সবসময়ই আমার বিছানা জানালার ধারে থাকতো, বৃষ্টি রাতে সাধারণত জানালা খোলা রাখতাম। বৃষ্টির ছাট গায়ে পড়তো, তাতে আমার ঘুমের কোনো ব্যাঘাত ঘটতো না। নতুন বাসা দোতলা। মশার ভয়াবহ উৎপাত। বাধ্য হয়েই পুরো বাসা জাল দিয়ে মোড়ানো হলো। এই জালগুলো সারা বছর ধরে ধূলা-ধূসরিত হয়। আর বৃষ্টিতে সে ধূলা ধুয়ে যায়। বৃষ্টি রাতেও এই জাল সরানো যায় না মশার ভয়ে। ধূলারা আর কি করবে...জানালা খোলা পেলে বৃষ্টিতে ভিজে কাদা হয়ে বিছানায় এসে পড়ে। বাধ্য হয়েই বৃষ্টি রাতে জানালা বন্ধ রাখতে হয়।
জানালা বন্ধ রাখার আরো একটা কারণ আছে। কারণটা একটু রেসিস্ট। আমাদের আশেপাশে বেশ কিছু বস্তি টাইপ ঘর। শুধু বস্তি হলে সমস্যা ছিল না , সমস্যা হলো বস্তির বাসিন্দারা তাদের ঘরের খবর আর বাইরের খবর সারাদিনরাত উঁচুগলায় প্রচার করতে থাকে। শুধু তাই না, তাদের চাইনিজ গোত্রীয় কিছু উঁচুস্বরের মোবাইল আছে, তাতে বিজাতীয় সব বাজনা বাজতে থাকে অবিরাম। আমি নিঃশব্দে থাকতে পছন্দ করি, যে কারণে গানও তেমন একটা শুনি না। এ ধরণের কোলাহল বিরক্ত না লাগার কোন কারণ নাই। মাঝে মাঝে সেই বস্তিগুলাতে ঝগড়া হয়। গালির তুবড়ি বয়ে যায়, মারামারি চুলোচুলি তো প্রায় প্রতিদিন লেগেই থাকে। সুতরাং একটু রেসিস্ট হয়ে বস্তির দিকে আমি বিরক্ত চোখে তাকালে তার পেছনে অবশ্যই কারণ আছে। যা-ই হোক, আমি কিছুমাত্রায় রেসিস্টই। এদের কোলাহলের কারণেও আমি জানালা বন্ধ রাখি। নিতান্তই গরমে সিদ্ধ হবার উপক্রম হলে জানালা খুলে নিজেই হেডফোন কানে গুঁজি...কোনো একটা গান ছেড়ে তাতে নৈঃশব্দ খুঁজি।
কালকে এসব উপেক্ষা করে জানালা খুললাম, জানালার সাথের জালটাও খুললাম। বৃষ্টির ছাঁট সেই আগের মতো করে পড়তে লাগলো গায়ে। বস্তিবাসী শান্ত ছিল, কাল রাতে তাই কোন জন্মসন্দিহান গালির তুবড়ি ছোটানো ঝগড়া শুনতে হয় নি। শুধুই বৃষ্টির ক্লিশে হয়ে যাওয়া রিমঝিম রিমঝিম তান...আর তার সাথে তাল মিলিয়ে দূর কোন এক জানালার ফাঁক গলে ভেসে আসা এক মায়াবী কন্ঠঃ
আহা, আজি এ বসন্তে
এত ফুল ফোটে, এতো বাঁশি বাজে
এতো পাখি গায়,
আহা আজি এ বসন্তে...
বৈশাখের এ উন্মত্ততায় কার মনে বসন্ত ছুঁয়ে যায়?
জৈষ্ঠ্যের ঝড়ে বসন্তের গান , আহা কি সুমধুর।
বড়ই সুমধুর...তার উপ্রে কন্ঠে কিছু মধু ছিল। এইবেলা ডায়বেটিস না হইয়া যায়ই না!
আমি ছোটবেলা থেকেই এইরকম জায়গায় বড় হইছি। আরো অসুবিধা হইল, আমাদের বাসার খাওয়ার ঘরটাই ছিল বস্তির পাশে। সবাই মিলে খেতে বসছি, কথা বলতেছি, হুট করে শুরু হত তাদের "মধুর" বাণী বর্ষণ। কি একটা অসস্তি!!
বৈশাখের দিনে কাল-বৈশাখী দেখে বর্ষার গান শুনাইতে পারতা, কি শুনাইলা?? বসন্তের গান। উদাস হইয়া গেলাম তো!!
আমি শুনাই নাইরে ভাই...আমারে শুনাইছে।
তুমিও কি জানলায় দাঁড়ায়েছিলা নাকি?? ঐ দূরবর্তী জানলা দিয়া কি তোমারে দেখা যায় নাকি??

আমি শুইয়া ছিলাম। আমারে দেখতে পাওয়ার কোনো কারণ নাই, আমি টিউবলাইট না যে লোডশেডিং এ আমারে দেখা যাবে
এই উন্মত্ততার সাথে সব কিছুরই সখ্যতা হতে পারে। সেখানে বসন্তও নিরর্থক নয়, বোধকরি।
যেখানে এত এত ভাললাগা........ তা কী একটি অনুভূতিতেই স্থির থাকবে!
আপনিই কি গান গাইতাছিলেন?
আমি! আমি আবার এখানে ক্যামনে উদয় হইলাম!
না! ব্যাখ্যা শুইনা মনে হইলো আর কি...বাই দ্য উয়ে, কাল্কে কি আপ্নে গান গাইছিলেন
বুঝলাম কুনো এক মায়াবী তরুনী তোমার আশপাশেই থাকে। জানালা মাঝে সাঝে খুইলো আরকি
আর ঐদিনের বৃষ্টি আমারে বহুত ভিজাইসে, বাসায় যে কেমনে আসছি আল্লায় জানে
ঐদিন সেইরকম মজা হইছিল...অনেক দিন মনে থাকার মতো রাত পার করছি।
আধ্যাত্মিক ব্যাপারস্যাপার মনে হয় ,ডালমে কুচ কালা মালুম হ্যায়...
আমাদের বাসার ডাল তো একটু হলুদ হলুদ রঙের হয়, তোমাদের ঐদিকে কালো হয় নাকি?
আপনে একদিন অনেক বড় লেখক হইবেন ( যদিনা মাঝ পথে লেখাঝোকা না ছাইড়া দেন)
আর বড় হওয়ার চান্স নাই, লম্বা হওয়ার বয়স শেষ
শুভ কামনা ভাঙ্গা পেন্সিল।
ধন্যবাদ
বন্ধু অনেক দিন পর আপনার লেখা দেখে খহুব ভালো লাগলো।
আপনি কি ফেরারী পাখি নাকি? এখনো সামুতে গিয়ে আপনার লেখা পড়ে আসি কিন্তু
তুমি রেগুলার লেখোনা ক্যান?
কই! রেগুলারই তো লেখি! সামুতেও তো আমি মাসে ২-১টার বেশি লেখতাম না
আপনি নিয়মিত লিখেন না বলে আপনার ভালো লাগার বিষয়গুলি সুন্দর লেখায় আসে না আর আমরা বন্চিত হই। এটা ঠিক না।নিয়মিত লিখেন।
আমি যে কি পরিমাণ আইলসা আর এস্কেপিস্ট, তা আশেপাশের মানুষরা ভাল জানে। এখন পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে নিয়মিত লেগে থাকা হইছে শুধু এই ব্লগিং এই! শোকর করেন
আপডেট কি?
আজও বৃষ্টি হবে কিন্তু
এই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে কি আর কিছু হওয়ার চান্স আছে?
রবী ঠাকুরের 'আমার সোনার বাংলা' পরে মনে হয় এই " আহা আজি এ বসন্তে" গানটাই সবচেয়ে বেশি জানে সাধারণ মানুষ। আমার মনে লয় আপা'র স্টকে ঐ একটাই গান ছিল ঐ মূহুর্তে।
অনুভুতির প্রকাশ ভাল্লাগছেগো ভাইডি।
আমি অবশ্য অনেকগুলা জানি। তার মধ্যে ছোটবেলায় একটা গানের মর্মই বুঝতাম, যখন পড়বে না মোর... এখনো এটাই মনে হয় সবচাইতে প্রিয়!
কি জানি ঝড়ের রাতের উন্মাদনায় কি গান হচ্ছিল আর আপনে কি শুনেছেন?
যাই হোক তবুও ভাল যে মন যা শুনতে চাইছে তাই শুনেছেন।
নাহ...ঝড় ছিল না, শুধু বৃষ্টি ছিল। ঠিকই শুনছি
লেখাটা ভালো লাগলো
ধন্যবাদ
ঐ রাতে আমি ভিজছিলাম বৃষ্টিতে ।
আহ!!
কারো কারো মনে সব সময় বসন্ত
এখনো ঐ রাতের কথা মনে পড়লে শীত ধরে যায়!
ঘ্যাটনাতো খুব সুবিধার মনে হচ্ছে না । জানালা, বাকুম বাকুম গান !!!!
বৃষ্টি আর হইলো না
জান্তেই পারলাম না উনি আরো কয়েকটা গান জানে নাকি এই একটাই 
বৈশাখের এ উন্মত্ততায় কার মনে বসন্ত ছুঁয়ে যায়?
মনে রঙ থাকলে ষড়ঋতুতেই বসন্ত ছুঁতে পারে
কিংবা বকলম ভাইয়ের কথামতো উনার স্টকে আর কোনো গান ছিল না
মন্তব্য করুন