ঘটনে-অঘটনে চট্টলা
১.
চট্টলার প্রথম ভ্রমণটারে অঘটন বলা যায়...নাকি ঘটন?
আমি আর মামুর ব্যাটা এক সন্ধ্যায় বসে আজাইরা ঝিমাচ্ছিলাম। হঠাৎ মনে হলো,- চল চট্টগ্রাম যাই, ভাবীরে নিয়া আসি। ভাবী পড়তেন চট্টগ্রাম ইউনিতে, ভাইয়ের পোস্টিং ঢাকায়। বৃহস্পতিবারের দিকে ভাবী ঢাকায় আসতো। তো আমরা ভাবলাম যে আমরাই গিয়ে নিয়ে আসি। মধ্যে দিয়ে চট্টলা ঘুরা হয়ে যাবে। মাথায় প্ল্যান আসার দশ মিনিটের মাথায় ফাইনাল করে ফেললাম। এবার যার বৌকে আনতে যাব, তার কাছে গেলাম। ভাই বললো, "ভাবীরে আনতে যাবি যা, আমারে জিগায়া তো প্ল্যান করস নাই!" আমাদের সামনে গা-ছাড়া ভাব ধরছে আর কি! হু কেয়ারস! রাতের বাসে চড়ে বসলাম, সূর্য উঠতে না উঠতেই চট্টলা।
এটুকু পর্যন্ত ঘটনই বলা যায়, অঘটনের শুরু তারপর থেকে। দামপাড়া নামার পরে চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটির কথা বলে সিএনজি ঠিক করলাম, যেহেতু আগে কখনো আসি নাই, আর কারো সাথে এ ট্যুর নিয়া প্লানও করি নাই সুতরাং মক্কেল পেয়ে সিএনজিওয়ালা বেমক্কা ভাড়া চেয়ে বসলো। হালকা দামাদামি করার ব্যর্থ চেষ্টা শেষে যা চায় তাতেই রাজি হয়ে চড়ে বসলাম। অনেকটা পথ আসার পরে যখন দেখলাম চট্টগ্রাম ইউনির গেট দেখা যায়, আমরা সিএনজি ছেড়ে দিলাম। কারণ ছাত্রী হল খুঁজতে হবে, হুদাই এই ডাকাত ব্যাটার সিএনজিতে ঘুইরা ফায়দা নাই। চট্টগ্রাম ইউনির গেটে নেমে গেলাম। তখন যদি জানতাম ... গেট থেকে ইউনি আরো অনেক অনেক দূরে
এবার মামুর ব্যাটা আর আমি হন্টন ধরলাম। অনেকটা পথ হাঁটতে হাঁটতে পার করলাম, রিকশার দেখা পেলাম না। কাকডাকা ভোরে কোন রিকশা আমাদের জন্য বসে থাকবে! এক জায়গায় রাস্তার পেট চিরে শাটল ট্রেনের রেললাইন পার হয়েছে, সেখানে একটা টংমার্কা হোটেল। সকালের নাস্তা খাই নাই, পেটে ইদুর না ছুঁচা কি যেন ছুটাছুটি করছিল। ঢুকলাম ঐ হোটেলে। পরোটা ডিম। মাশাল্লাহ...পরোটা তেলে ভাজছে না, যেন তেলে ভিজিয়ে-চুবিয়ে-ডুবিয়ে আনতাছে। তেল কি এতোই সস্তা?
শেষমেষ রিকশা পেলাম। ক্যাম্পাসে ঢুকতেই মনটা ভাল হয়ে গেল। ঢুকা মাত্রই দুদিকে খাড়া পাহাড় দেখে আমরা হাঁ! রাস্তার পাশে ফুটপাথ, তাতে দুয়েকটা বেঞ্চ। অসম্ভব সুন্দর ক্যাম্পাস! রিকশা এঁকেবেঁকে হলের দিকে গেল। বাংলালিংকের রাতজাগা অফারের সৌজন্যে কেউ কেউ এই ভোরেও মুঠোফোন কানে কথা বলছে, কেউ দাঁত মাজছে। হলে গিয়ে ভাবীকে ফোন দিয়ে নামালাম। তারপর আর কি...ভাবী আর তার বান্ধবীর সাথে আমি আর মামুর ব্যাটা একদিনে চট্টলা ঘুরে শেষ করলাম। পরদিন দুপুরের ট্রেনে ঢাকা ফেরত।
ঘটন অঘটনের এ গল্প ২০০৭ সালের...
২.
২০০৭ সালের আগে পরে যে চট্টলা যাওয়া হয় নাই তা না, কক্সবাজার কিংবা রাঙ্গামাটি যাত্রার ফাঁকে-ফুঁকে দুয়েকবার দেখা হয়েছে, ঘুরে দেখা হয় নাই। তবে অঘটন কিংবা ঘটন ঘটতে বেশি সময় নেয় নি। যেমন এই কয়েক মাস আগের কথা। আমরা এক ডজন ভূত গেলাম কক্সবাজার। প্ল্যানটা এরকমঃ রাত এগারোটার তূর্ণা নিশীথা সকালে চট্টগ্রাম থামবে, নাস্তা খেয়ে বাসে উঠে কক্সবাজার। বারোটার আগে পরে কোন এক সময় হোটেলে চেকইন করবো। তো সেই এগারোটার ট্রেন ছাড়লো রাত আড়াইটায়। সকাল নয়টার দিকে পৌঁছলাম চট্টগ্রামে। খিদেয় সবার অবস্থা কাহিল। এর মধ্যে আমি বুদ্ধি দিলাম যে কক্সবাজারের বাস যেখান থেকে ছাড়ে সেখানে আগে যাই, টিকেট কেটে নাস্তা খেয়ে রওনা দিব। আসলাম বদ্দারহাট। এক হোটেলে ঢুকলাম।
-নাস্তা কি?
-পরটা ভাজি।
-নিয়া আসো।
ভাজি দেখে আক্কেল গুড়ুম! করল্লা ভাজি! বাপের জন্মেও আমাদের বারোভূতের কেউ পরটা করল্লাভাজি দিয়া খাই নাই।
-আর কি আছে?
-খাসির কইলজা।
-দেখি, নিয়া আসো।
মাশাল্লাহ, যে কইলজা নিয়া আসলো, তা দেখে আমাদের কইলজা শুকায় আসলো । বিকল্প হিসাবে কেউ চা দিয়া পরটা খেল। আমি বিস্বাদ কইলজা দিয়াই চেষ্টা চালালাম। চট্টলার বদ্দারহাটের এই হোটেলটাই আমার দেখা প্রথম হোটেল, যেখানে ডিম নাই!
সেদিন প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ করে বের হলাম সবাই হোটেল থেকে, বাসের হেলপারদের ক্যাচম্যাচে মেজাজ আরো খারাপ হতে থাকলো। রাস্তার বেহাল হালে মেজাজ ঠিক হবার কোন কারণই ছিল না ... সে মেজাজ ভাল হলো যখন চলন্ত বাস থেকে রাস্তার ঢাল বেয়ে দূরে দেখে গেল কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত!
৩.
চট্টলার এবারের ট্যুর ছিল পুরাই বিজনেস ট্রিপ । সৌদিয়া-এস.আলমের মার্সিডিজ বেনজে করে গেলাম চট্টগ্রাম। পুরানো অভিজ্ঞতা বলে, আরামদায়ক মনে হলেও এই বিলাসী সীটে ঘুমানো কঠিন। যথারীতি এবারও তাই হলো। সকালের ট্রিপ দেখে তেমন একটা গায়ে লাগলো না। চট্টলায় কাজ বলতে ছিল বিয়ের ডালা নিয়ে যাওয়া। সাথে আলগা কাজঃ চট্টগ্রাম নেমে মিষ্টি আর ফুল কেনা। আগে থেকেই গাড়ি ঠিক করা ছিল। আট ঘণ্টার সুদীর্ঘ সফর শেষে বাস থেকে নেমেই দেখি গাড়ি অপেক্ষা করছে! এই আনন্দে মশগুল হয়ে রিটার্ণ টিকেট না কেটেই ছেড়ে এলাম দামপাড়া -- প্রথম অঘটন। সেদিন রাতে অনেক কষ্টে শেষে সিল্ক-লাইনের টিকেট পাওয়া গিয়েছিল, বাকি সব শেষ! আরেকটু হলেই অবস্থা খারাপ ছিল! যাই হোক, গাড়ি নিয়ে গেলাম ওয়েল ফুড - চট্টলার নামকরা মিষ্টির দোকান। ছয় পদের মিষ্টি নেবার কথা, কিন্তু মিষ্টি প্রায় সবই শেষ। যা-ই চাই, তা-ই নাই। এমনে কি বিয়ের মিষ্টি কেনা যায়? বহু কষ্টে এটা-সেটা মিলিয়ে মিষ্টি কেনা হলো।
এবার পালা ফুলের। ড্রাইভার কোথায় যেন নিয়ে যেতে চাইলো, আমি আবার জানালা দিয়ে একটা ফুলের দোকান দেখে গাড়ি থামালাম। ৫০টা অর্কিড রিবন-র্যাপিং পেপার দিয়ে বেঁধে ব্যুকে তৈরি করে দিতে হবে। দাম চাইলো ১৫০০৳। প্রেমে অনভিজ্ঞতাহেতু ফুল এবং তার দামেও ব্যাপক অনভিজ্ঞতা। অর্কিড বলে রজনীগন্ধা ধরায় দিলে ঐটাই নিয়ে আসতাম ! যাই হোক, পনেরশ টাকা বেশি মনে হওয়ায় পাশের দোকানে গেলাম, এ ব্যাটা চায় ১৮০০৳ ! আগের দোকানেও ফিরে যেতে মন চাইলো না, এখন ফিরে গেলে আর দামাদামি করার সুযোগ নাই। শেষে ড্রাইভার যেই দোকানে নিতে চাইলো সেই দোকানে গেলাম। ফুল তো দূরের কথা, ফুলের পাতাও সেখানে নাই; কতোগুলা ঝাউপাতা ছিল শুধু। মেজাজটা কেমন লাগে? পাশে আরেকটা দোকান খুঁজে বের করলাম। সেখান থেকে ২৫০৳ দিয়ে কয়েকটা বাসি গোলাপ আর রজনীগন্ধার একটা বোরিং ব্যুকে কিনে গেলাম পাত্রের বাসায়।
অঘটনের ভিড়ে ঘটনের কথা বলা হয় নাই। চট্টলা যাবার পথে বাস তখন মীরসরাই পার হয়ে আরো কিছু দূর। হঠাৎ দেখি পাশের বেঁটে পাহাড়গুলোর গায়ে কুয়াশার মতো মেঘ! গল্পের বইয়ে কিংবা নেপালে তোলা ছবিতে এতোদিন দেখেছি, বাস্তবে দেখা হয়নি! ! বান্দরবান গিয়ে দেখবো ভাবছিলাম, চট্টলার বেঁটে পাহাড়ে এই দৃশ্য প্রথম দেখবো কল্পনা করি নাই!
বিজনেস ট্রিপ থেকে ফিরলাম মঙ্গলবার সকালে। এবারও পাক্কা সাড়ে সাত ঘণ্টা লাগলো। বাস থেকে নেমে নটরডেমের সামনে সিএনজি খুঁজতে লাগলাম। অনেক কষ্টে যখন এক মহারাজাকে রাজি করাতে পারলাম, তখন মনে পড়লো বাসে একটা প্যাকেট ফেলে আসছি। সিএনজি ছেড়ে আবার দৌড় দিলাম। মধুমিতার পেছন থেকে উদ্ধার করলাম প্যাকেট। এ অঘটন যদিও ঢাকায় ঘটছে...তবুও...সব দোষ, চট্টলা ঘোষ ।
ভালো কথা, এবারের এই বিজনেস ট্রিপের বিজনেসটাই তো বলা হয় নাই। বিয়ের ডালা নিয়ে যেতে হয়েছিল পাত্রের বাসায়, পাত্রী আমার বোন। আকদ এই শুক্রবার। এটা ঘটন নাকি অঘটন সময়ই বলে দিবে!
চট্টলা ঘটন। আপনিতো দেখি অঘটনঘটনপটিয়সী। আর শুক্রবারে যা ঘটবে তা তো একটি গীতিকাব্য। আপনার বোনের জন্য একরাশ শুভ কামনা।
অনেক ধন্যবাদ
ভাঙ্গাদা'
কাকতাল তবু বলি আজ পাশের বাড়িতে বোনের গায়ে হলুদ হলো। সবকিছু আমরাই করলাম। একসাথে বড় হয়েছি। কাল বিয়ে হয়ে যাবে। খুব ভিন্ন একটা অনুভূতি হচ্ছে। আমার নিজের বোনটার কথা মনে পড়ছে। হায় হায়। তবে ভরসার কথা এই যে জীবনের ভিন্ন ভিন্ন দিক আছে।
দাদা ভালো থাকবেন।
আমার বোনটা তো পিঠাপিঠি। পিচ্চিকালে কতো যে খামচাখামচি-মারামারি করছি! এমনকি কখনো আপু বলেও ডাকি নাই
ছবিটা দেখে আরো মজা পাইলাম। এক টুকরো চট্টগ্রাম। অশেষ ধইন্যা..
এটা ঘটন নাকি অঘটন সময়ই বলে দিবে
এটা দারুন বলেছেন। আজকাল বিয়ের জাঁক জমক ছবি দেখি ফেসবুকে আর ভাবি ...............। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত
আমার কাছে ভালোই লাগে, একটা দিনের জন্য হলেও সুখ অনেক বড় জিনিস!
বাহ! তুমি বলে কথা। দারুন লিখেছ। ভালো লাগলো পড়তে।
তোমার বোনের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
ধন্যবাদ
বোনের জন্য শুভ কামনা।।
এবার কি আপনার পালা?
কপাল এখনো দুই আঙ্গুল
মাইনাস মাইনাস মাইনাস
বেকুব কি আর গাছে ধরে, বহদ্দারহাটে লোকে যায় টাটকা বিফ কিনতে, খেতে না।
বিজনেস ট্রিপটা কবে দিসিলা? নেক্সট টাইম আসার আগে দয়া করে মনে রাখিও যে নুশেরা আপু এখনও মরে যায় নাই এবং চট্টগ্রামেই থাকতে পারে। দোকান খালি না, বন্ধ থাকলেও তার সন্ধানে ফুলমিষ্টি খানাপিনা সবকিছু্ই আছে।
বোনের খাতিরে ঝাড়ি কিছু কম পাইলা ভাঙ্গা।
বোনটা ভালো থাকুক আজীবন।
মাইনাস মাইনাস মাইনাস
বেকুব কি আর গাছে ধরে, বহদ্দারহাটে লোকে যায় টাটকা বিফ কিনতে, খেতে না।
বিজনেস ট্রিপটা কবে দিসিলা? নেক্সট টাইম আসার আগে দয়া করে মনে রাখিও যে নুশেরা আপু এখনও মরে যায় নাই এবং চট্টগ্রামেই থাকতে পারে। দোকান খালি না, বন্ধ থাকলেও তার সন্ধানে ফুলমিষ্টি খানাপিনা সবকিছু্ই আছে।
বোনের খাতিরে ঝাড়ি কিছু কম পাইলা ভাঙ্গা।
বোনটা ভালো থাকুক আজীবন।
সকালে তো ছবি আছিলো না!!! কখন লাগাইলা আবার??

যাই হোক। "ঘর ভর্তি কোলাহলে" ক্যাকু-ক্যাকু কর!!!
ছবি পরে লাগাইলাম
আপনার সব অঘটন কি চট্টলাতেই হইছে নাকি ??
খালি চট্টলারগুলা মনে পড়তাছে
শুভকামনা ।
হেহে! ২০০৭ এ মামুর ব্যাটার বউ এর বান্ধবীর কথা দেখি আর কইলা না!
একটু প্যাচ লাগাইছেন। মামুর ব্যাটা আর আমি গেছি আরেক ভাইয়ের বৌরে আনতে
মন্তব্য করুন