বৃত্তের বাইরে
ও কেন্দ্রবিশিষ্ট এ-বি-সি বৃত্তের ঠিক উপরেই মন পালাতে চাওয়া জানলাটা, হালকা বাতাসে তার কাঠের পাল্লাটা ক্যাঁচকোঁচ করে উঠে। সেই জানলা বেয়ে অয়নের চোখ গিয়ে পড়ে উল্টো পাশের কাজী ভিলার চারতলার হলদে আলো ঝরা জানলাটায়। সূয্যি ডোবার পর থেকেই গুনগুন করে পীথাগোরাস কিংবা ইউক্লিডের পিত্তি চটকাচ্ছিল অয়ন, তার মাঝেই দূরের সে হলদে আলোয় একটু আনমনা হয়ে ওঠে। ঘাড়ের ঠিক পেছনে হঠাৎ রদ্দি খাবার ভয় তো আছেই... তারপরেও সারা সন্ধ্যা জুড়ে একতালে গুনগুনের এইটুকু এলো হওয়া হয়তো মায়ের কর্ণগোচর হবেই না! চারতলার জানলার ওপাশে অল্প একটু ছায়ার নড়ন-চড়ন দেখা যায় কালেভাদ্রে, আর কিছু না। আজও সেরকমই একটা নিস্তরঙ্গ রাত যাবে হয়তো...আরেকটু ভাল করে দেখার আশায় তাই চশমাটাকে নাকের ডগায় আগুপিছু করে নিল, কিন্তু তাতে কি আর চশমা দূরবীনে বনে যায়? ঠিক যেই মুহূর্তে হতাশ হতে যাবে, তখুনি দপ করে নিভে গেল বাতিটা। মন ফিরে এল এ-বি-সি বৃত্তের ভেতরের বৃত্তস্থ কোণে।
মন ফিরে এলেও মাঝে মাঝেই চোখের কোণাটা হলদে বাতিটার নাম-নিশানা খুঁজতে লাগলো, অবশ্য নিরস জ্যামিতির গুনগুনের কম্পাংক বহাল রেখে। হঠাৎ মায়ের পায়ের আওয়াজ পেতেই গুনগুন সুরটা আরেকটু জোরালো করলো অয়ন। তারপরেও মা মাথার পেছনের ঠুয়াটা ঠিকই দিল, "কি? খুব পড়া দেখাইতাছস,না?! আমি আইলেই পড়ার ঢং, আর পাকের ঘরে গেলেই ঠনঠন!" করুণ মুখে অয়ন কি যেন একটা গোজামিল দিতে গেল...মায়ের রাগের তোড়ে মুখ ফুটে বলার সুযোগ পেল না। "কার লগে চালাকি করস? হ্যাঁ? তোর পেট থেইকা আমি হইছি না আমার পেট থেইকা তুই হইছস?" মুখটাকে আরো করুণ করে ফেললো অয়ন, তারপরে মায়ের একটু দম নেয়ার ফাঁকে ফস করে বলে ফেললো, "গলা শুকায় গেছে, মা। পানি খাব।" আরো কি যেন বলতে গিয়েছিল মা, থমকে গেল। রাগের খানিকটা হয়তো মায়ায় দ্রবীভূত হল। ত্রস্তপদে রান্নাঘরে ফিরে গেল। তারপর একগ্লাস পানি এনে ঠকাস করে টেবিলে রাখলো আর নিজ মনে গজগজ করতে করতে বললো, "কর, নাটক কর আমার লগে। তোর কপাল তুই খাবি। আমার কি?!" কোমরে আঁচলখানি গুজে রান্নাঘরে ফিরে গেল মা, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো অয়ন। কমসেকম আধাঘন্টার জন্য আর ঠুয়া খাচ্ছে না নিশ্চিত হওয়া গেল।
গ্লাসে এক চুমুক দিয়েছে কি দেয়নি, এমনি সময় কাজী ভিলার চারতলার হলদে আলোটা ফের জ্বলে উঠলো। জানালার ধারেই অর্পিতাপুর পড়ার টেবিল, দুয়েকটা মোটা বই টেনে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। জানালা দিয়ে এক ঝলক বাইরে তাকালো, তারপর আবার মুখ ঘুরিয়ে নিল। এক কি দুবার এলোমেলো ওড়া চুলে হাত বুলালো ... অয়ন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো। মন্ত্রমুগ্ধই তো...তা নইলে মায়ের পায়ের আওয়াজ শুনতে পেল না কেন? গ্লাস নিতেই মা ফিরে এসেছিল বোধহয়, চটাস করে মাথার পেছনটায় চাটি খেয়ে সে হুঁশ হল অয়নের। আবারও মায়ের বকবক শুরু হলো। কানে অদৃশ্য তুলা চেপে নিল, আর একটা সুবিশাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে জ্যামিতির হিজিবিজির দিকে অর্থহীন দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো অয়ন। এই ইউক্লিড আর পীথাগোরাসের যন্ত্রণায় তো আর পারা গেল না!
কবে যে ক্লাস সিক্স পার হবে ... ... ... ... কবে যে অর্পিতাপুর সমান বড় হবে...?!
দাঁত বের করা হাসির সাথে কিছু কথাও লিখছিলাম...। কই গেলো!!!...
খেলুম না...
কত্তো কি কি জানি বলছিলাম... 
কথার উপ্রে তো ট্যাক্স বসায় নাই এখনো, আবার বলেন
আহারে ক্লাস সিক্সের পোলাপাইন...মমতাজ এগো লেইগাই গান গাইছিলো,
গল্প মজার হইছে...অ্যাম্বিশনের প্যারাবল...
ক্লাস সিক্স বইলা কি হৃদয় নাই?
টিউশনি করান? আপনার গল্পগুলো বরাবরই ভালো হয়। ধন্যবাদ।
করাই, কিন্তু ক্লাস সিক্স না
আত্মজীবনী!
বুইড়া আঙ্গুল!
বটমলাইন লেখা দরকার ছিল-"০২-০৩-০৪ সর্বোপরি বিদায় নিতে যাওয়া ০৫ এর আপুদের জন্য
"...তাইলে আত্মজীবনী বইলা চালায় দেয়া যাইতো 
বটমলাইন লেখা দরকার ছিল-"০২-০৩-০৪ সর্বোপরি বিদায় নিতে যাওয়া ০৫ এর আপুদের জন্য
"...তাইলে আত্মজীবনী বইলা চালায় দেয়া যাইতো 
আহা, এরকম দিন এই জীবনে আর আসবে না।
আহা!
গল্পটা দারুণ লাগলো! এই গল্পে আম্রা কী শিখলাম? কিলাস সিক্সেই স্বপ্ন দেখা শুরু আর সাথে ফাও ফাও বড়দের বিরক্তিকর ঠুয়া
এরাম গল্প আরো চাইইইইইইইই...ভালো থাকা হোক।
ধন্যবাদ
ক্লাস সিক্স আর এইটের কথা মনে পড়লে আমি এখনো শিউরে উঠি, ভাগ্যিস বড় হয়ে গেছিলাম তাড়াতাড়ি

কতো তাড়াতাড়ি বড় হইছিলেন?
পোলায়তো দেখি ছোটবেলাতেই বিশাল লুল
এইটা কি জীবন থেকে নেয়া?
অবশ্যই এটা জীবন থেকে নেয়া, তবে আমার না। আপনার হইতে পারে
এইটা আম্মার মুখে এখনো শুনতে হয়
আমারও
ম্যালেনা'র কথা মনে পড়লো, সাথে রুবি রায়েরও....
আমি হলে শুভ্রাদির কথা মনে পড়তো ।
প্র্যাক্টিস মেক্স এ বয় ম্যান
স্মৃতিকথা বহুত উমদা হইছে ভাঙ্গা
একটা ক্লাসিক মাতৃবাণী:
আমার প্যাডের ছাও
আমারে ধইরা খাইবার চাও
ক্লাস সিক্সটিক্সের দিকে ওয়ানটুর ছোটভাইবোন কিছু থাকে মহা গ্যাঞ্জাইম্যা। এইগুলি কিছু্ই বুঝেনা ভাব দেখায়া গ্রাহকযন্ত্রের ভূমিকায় থাকে, একটু পরেই রান্নাঘরে গিয়া প্রেরকযন্ত্রে পরিণত হয় (সিক্সের সাধারণ বিজ্ঞান বইতে রেডিওর গঠনপ্রণালীতে গ্রাহক ও প্রেরক যন্ত্রের বর্ণনা ছিলো)
আমার স্মৃতিকথা এমন না
আমার স্মৃতিকথা এর চাইতে উলটা।
আইডিয়াল স্কুলের কলেজে শুধু মেয়েরা পড়তো। সুতরাং যতোদিন স্কুলে ছিলাম সাদা এপ্রনের সবাইকে আপু-আপু নজরে দেখতাম। নিজে কলেজ পার হয়ে ভার্সিটিও প্রায় শেষ করে ফেলছি...এখনো আইডিয়াল কলেজের সাদা এপ্রনে কাউকে দেখলে আপু-আপুই লাগে
তবে একবার আইডিয়াল কলেজের ভর্তি ফরমের লাইন ছিল আমাদের স্কুল মাঠে...সেদিন জানালা দিয়ে মাঠের দিকে তাকায় থাকার জন্য আট-দশজনকে কানে ধরে দাঁড়া করায় রাখা হইছিল। সেইদলে আমিও ছিলাম
ইন্টারেস্টিং ... লেখার ঢংটা ভালো লাগছে
মায়ের ডায়ালগগুলোও কোলকাতা ঢংয়ে একটু রসালো ধরনের হলে আরো জমতো কিনা ভাবছি
মন্তব্য করুন