গাছ না হবার গল্প
পয়লা বৈশাখে সারাদিন টোটো কোম্পানীর ম্যানেজারি করার ইচ্ছা থাকলেও শরীরটা এখনো ইংল্যান্ডের টাইম টেবিল ফলো করে চলেছে। ফলে সারা রাত না ঘুমিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম বেলা একটায়। সূর্যোদয় দেখার যে ক্ষীণ একটা আশা ছিল মনে সেটা মাঝ আকাশে গিয়ে ঠেকেছে ততক্ষণে। তীব্র এই দাবদাহে বাইরে বের হবার কোন মানে হয় না তাই ঘরেই বসে থেকে বন্ধুদের একে একে ফোন দিলাম। বেশির ভাগকেই পাওয়া গেল না। সব্বাই নিজ নিজ কর্মস্থলে ব্যস্ত। রাসেল দেখলাম সিরাজগঞ্জেই আছে। সে সম্প্রতি বিয়ে করেছে সুতরাং বিগত দিনগুলোর মতো সময়-অসময় না মানার সময় ফুরিয়েছে। ক্ষীণ একটু ঈর্ষার স্রোত যেন বয়ে গেল। বন্ধুতার চেয়েও তীব্র কিছু বন্ধুকে অধিকার করে নিয়েছে। রনিকেও পেলাম সিরাজগঞ্জেই। আজকাল সে অর্থনৈতিকভাবে ভিসন স্বচ্ছল। ইতমধ্যেই আস্ত একটা গাড়ির মালিক নাকি হয়ে গেছে সে। বাড়ি এবং নারীও নিশ্চয় বেশি দূরে নেই, সুখেই আছে ... থাকুক নাহয় সুখে।
বিকালের দিকে রাসেল ফোন করে বউ নিয়ে আমার এখনে আসছে। আমি বললাম আয়। চায়ের সাথে হালকা নাস্তা এবং ভাবির সাথে হালকা রঙ্গ রসিকতা চলল। একেবারে বাচ্চা মেয়ে, কিছুটা আড়ষ্ঠ, বেশি ক্ষ্যাপালে কেঁদে ফেলতে পারে ভয়ে বেশি কিছু বললাম না। সন্ধ্যায় তিনজন মিলে একটা ভ্যানগাড়ি ভাড়া করে চললাম হাসানের ফ্যাক্টরিতে। ফুলে ফেঁপে থাকা পৈতৃক ব্যবসা দেখাশোনা করতে গিয়ে দেখলাম আক্ষরিক অর্থেই সে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। ফুলন্ত পেটটা দেখিয়ে গম্ভীর মুখে জিজ্ঞেস করলাম, "দোস্ত কয় মাস চলছে?" ততধিক গম্ভীর মুখে সে জানান দিল দেড় বছর চলছে। শহরের শেষ প্রান্তে, এদিকটাতে আলোক দুষণ নেই। চারিদিক ঝোপঝোপ, জ্যোৎস্নায় সাদাকালো, মাঝে অসংখ্য রঙীন জোনাকি! কী সুন্দর, কী সুন্দর! আহা কতদিন দেখি না!
রাসেলের আম্মার সাথে দেখা করলাম। ভদ্রমহিলা একেবারে ভেঙে পড়েছেন। যতটা না শারিরীক তার চেয়েও বেশি মানসিকভাবে। সারাক্ষণ কোন ভাবনায় মগ্ন থাকেন কে জানে? লিখনের আম্মার সাথেও দেখা করতে গিয়েছিলাম। এই বাড়িতে এক সময় কোনরকম সাড়-শব্দ না দিয়ে হুট হাট ঢুকে পড়তাম। আজ আর সে দিন নেই। বাইরে থেকে ডাকলাম, "খালাম্মা বাড়িতে আছেন?" উনি সাড়া দেওয়ার পর ভিতরে ঢুকলাম। মাস তিনেক আগে খালুজান মারা গেছেন। আমাদের খলুজান, সব বন্ধুদের বাবাদের মাঝে উনার সাথেই আমাদের সবচেয়ে গভীর সম্পর্ক ছিল। সেই বাড়ি, সেই দেয়াল, সেই গন্ধ সবই আছে। শুধু খালুজান আর এখানে থাকেন না। লিখন এখন ঢাকায় থাকে। লিখনের আপা শ্বশুর তার বাড়িতে। এই বৃদ্ধার পাশে আজ কেউ নাই। কষ্ট পেলাম। আমরা কত দ্রুতই না বড় হয়ে যাই। আমাদের মা-বাবারা কত দ্রুত বুড়ো হয়ে যান। কত তাড়াতাড়ি মরে যান। আহা সময়টাকে যদি থামিয়ে দিতে পারতাম !
আমি পারি না। ঈর্ষা, উচ্ছ্বাস, আক্ষেপকে পাশ কাটিয়ে কখনোই গাছেদের মতো নির্মোহ, নিরাবেগ হতে পারি না। ধুত্তোর! এক জীবনে শুধু মানুষই থেকে গেলাম।
এইটাও ভালো লাগলো। এইরকম অনুভূতি কিছুদিন আগে আমিও পাইছি।
দেশে কতদিন আছেন?
আমার কাছে মনে হয় গাছ নির্মোহ নয়। গাছ তার অনুভূতি প্রকাশ করে তবে তা সময় নেয়। কি জানি হয়তো আমাড় আবেগী মন। আমিই ভুল।
গাছেরা সহনশীল কিন্তু নিরাবেগ এটা মানা যায় না।
এই লেখা সম্পর্কে শুধু দু'টি শব্দই প্রয়োগ করা সম্ভব। দূর্দান্ত ও অসাধারণ!!
গাছের মতো না হওয়াই ভালো। ওরা মারাত্নক সংবেদনশীল, কিন্তু প্রকাশযোগ্য ভাষা নেই, বা ওদের ভাষা আমরা বুঝি না। মানুষ হয়ে অন্তত বেদনাগুলো প্রকাশ করতে পারছেন, নইলে তো মারাত্নক যন্ত্রণায় জীবন বিপন্ন হতো...
পরপর ২ টা পোষ্ট দেখেই স্বস্তি পাইলাম, যাক, তুমি গাছ হও নাই।
দোয়া করি পরবর্তি জীবনে ব্যাক্টেরিয়া হয়ে জন্মান ।
এখন তো নিজের জন্যও সময় থামিয়ে দিতে মন চায়।
ঢাকায় আইসা আমাদের খাওয়াইবা কবে ?
এই লেখা সম্পর্কে শুধু দু'টি শব্দই প্রয়োগ করা সম্ভব। দূর্দান্ত ও অসাধারণ!!
মন্তব্য করুন