প্রকৃতি প্রেম
একদিন নিউইয়র্ক টাইমস এ একটা খবর চোখ আটকে গেলো। একটু ব্যতিক্রমধর্মী মনে হয়াতে
খবরটা ভাল করে পড়লাম।এটা মনে হয় ১৯৯৪/৯৫ সনের সামারের কথা। খবরটা ছিল এমনঃ
" গাছের কাছে যুবকের ক্ষমা প্রার্থনা"
ম্যানহাটানের সেন্ট্রাল পার্কে এক যুবক বাইক চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে গাছের সাথে তার বাইক্ টা চেইন দিয়ে বেঁধে পাশের বেঞ্চে ঘুমাচ্ছিল। পার্ক পুলিশ এসে যুবক কে ডেকে তুলে জিজ্ঞেস করল যে বাইক টা তার কিনা, জবাবে যুবক হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়লে পুলিশ তাকে হাতকড়া পড়িয়ে পার্ক প্রিসেন্টে নিয়ে যায়। এই দেশে গাছ পালা পশু পাখির ব্যাপারে মানুষের সহানুভুতি এবং আইনের প্রয়োগ খুব কঠিন।
যুবক তার ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে পার্ক কমিশনারের কাছে আবেদন করে।পার্ক কমিশনার ছিল তখন এক প্রকৃতি প্রেমিক রসিক আর কট্টর ইহুদি বুড়ো।বুড়ো সেই যুবক কে পার্কের সেই গাছের কাছে নিয়ে গেলো, তারপর সবার উপস্থিতিতে গাছকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইতে বললো।
যুবক তাই করলো এবং পরবর্তি ৬ সপ্তাহ অই যুবক্ কে স্বেচ্ছায় পার্ক পরিচর্যার জন্য সময় ব্যয় করতে হল।তারপর তার আইনের বেড়াজাল থেকে নিস্কৃতি মিললো।
দেশে আমরা অহরহ দেখতাম গাছের গায়ে পেরেক মেরে সারা গাছ জুড়ে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপনের সাইন বোর্ড, পোস্টার, গাছের সাথে লাগিয়ে টং দোকান বানানো, ইচ্ছামত ডাল পালা এমন কি মুল গাছ কেটে ফেলা, মুল সড়কের পাশে বন বিভাগের লাগানো গাছ কেটে হরতালে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়া, চুরি করে গাছ কেটে সামান্য পয়সা কামানো এসব যেন কোন ঘটনাই না। গাছ পালা রক্ষা করার কাজে নিয়জিত স্বয়ং বনবিভাগ এই অপকর্মে লিপ্ত দেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই, কিন্তু এসব রক্ষা করা নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নাই।
বিদেশে যখন গাছ পালার রক্ষায় সাধারন মানুষের আন্তরিকতা আর স্থানীয় সরকারের কঠোর আইনের প্রয়োগ দেখি তখন সত্যি ভালোলাগায় মন আপ্লুত হয়ে যায় , তখন মনে মনে ভাবি , ইস আমাদের দেশেও যদি এমন হোতো সবাই।
মুল সড়ক ছাড়াও প্রতিটি বাড়ির সামনে সাইড ওয়াক মানে ফুটপাথে সিটি গাছ লাগায় এবং যার বাড়ির সামনে যেই গাছ পড়ে সেই গাছের পরিচর্যা করার দায়িত্ব সেই বাড়িওয়ালা্র। গাছের সাথে যদি কেউ কিছু লাগায়, রঙ করে, কিংবা ডাল পালা কাটে তাহলে মোটা অঙ্কের জরিমানা হয়।
বাড়ি কিনলে বাধ্যতামুলক ভাবে বাড়ির বীমা কিনতে হয়, যখন বাড়ির সীমানায় অনেক বড় বড় গাছ থাকে,অনেক ইন্সুরেন্স কোম্পানী ওই বাড়ির বীমা করতে চায়না, আর করলেও তার প্রিমিয়াম অনেক বেশি হয় আর মানুষ এই ব্যাপারে কোন কমপ্লেইন করতে পারেনা। শুধু তাই নয়, অনেক সময় বাড়ির সীমানায় বড় শিকড়ের গাছ থাকলে ওই শিকড় বাড়ির মুল পয়ঃ নিস্কাশন নর্দমা যা কিনা মাটির নীচে থাকে সেটার স্বাভাবিক গতির পথে বাঁধার সৃষ্টি করে বাড়ির ভিতর স্যুয়র লাইন ক্লগ করে ফেলে যা ঠিক করতে অনেক পয়সা খরচ করতে হয়।
গাছের সাথে কোন ধরনের ইলেক্ট্রিক, টেলিফোন, কেবল এসবের তারের পোল হিসেবে ব্যবহার করা যায়না। গাছ যেমন প্রাকৃতিক শোভা বাড়ায় তেমনি অনেক সমস্যাও তৈরি করে , তবুও গাছ পালা রক্ষায় আইনের ব্যবহার সবাইকে মেনে চলতে হয়।
শুধু তাই নয়, যখন স্যান্ডি টাইপের ঘুর্নিঝড় হয়, তখন প্রচুর গাছপালা পড়ে যায় বাতাসে । আর যখন ওইসব মহিরুহ ভুপাতিত হয় দেখা যায় অনেক বাড়িঘর, গাড়ি, মুল সড়ক এসব ধবংষ করে ফেলে, যদিও তার ক্ষতি পুরন দেবার জন্য বীমা করা আছে সবার, কিন্তু ভোগান্তি অনেক।
এত কিছুর পর ও দীর্ঘ শীতকাল পেরিয়ে বসন্তকালে গাছে নতুন পাতা আসে আর ফুলের রেনু দেখা যায়, প্রকৃতি যখন আস্তে আস্তে নিজের স্বরুপে সম্পুর্ন সবুজ আর রংধনুর রঙ এ রঙ্গিন হয়ে আত্মপ্রকাশ করে, তখন মনে হয় পৃথিবী কত সুন্দর ! প্রকৃতির এই রুপ দেখে আমার এই দুই চোখ যেন সার্থক।
সুন্দর চিন্তা।
আমেরিকানদের মমত্ববোধ নিয়ে অবশ্য আমার অনেক কনফিউশন আছে। ওরা একটা পাখির জীবন বাঁচানোর জন্যও বিশাল অংকের টাকা খরচ করে, অথচ হিরোশিমা-নাগাসাকিতে বোমা ফেলার আগে দু'বার চিন্তা করে না ।
লেখা ভাল লাগলো
আমরা যে খুব ভদ্র আর প্রকৃতি প্রেমিক, তার প্রমাণ রাখি সবকিছুতে।
মন্তব্য করুন