ইন্টারনেটে ডেটা মোচন
ডেটা বা তথ্য অপসারণ বা ডিলেটের ব্যাপারটি সম্পূর্নই নিয়ন্ত্রন নির্ভর। আর এটা কোন সমস্যাই না যতক্ষন পর্যন্ত সেই ডেটা আমার কাছে থাকছে।আমার নিজ ইচ্ছায় মুছে দিতে পারি আবার চাইলে রিকভার বা পুনঃউদ্ধার করতে পারি। আর যদি চাই যে অন্য কাউকে এই ডেটা মুছে ফেলার পর আর পুনঃউদ্ধার করতে দিব না তাহলে এর জন্য বাজারে অনেক রকমের সফটওয়্যার যা দিয়ে চিরতরে ডেটা মুছে ফেলা যায়। এইভাবে মুছে ফেলা ডেটা আর পুনঃউদ্ধার করা যায় না।
এখন ইন্টারনেটের উন্নতি আর প্রসারের সাথে সাথে আমরা ক্লাউড কম্পিউটিং এর জগতে প্রবেশ করেছি অর্থাৎ আমরা প্রায় সব কাজই করি নেটে, বেশির ভাগ ডেটাই নেটে সেভ করে রাখি। এমন কিছু প্ল্যাটফরম হল বহুল পরিচিত জিমেইল এবং ফেসবুক সেই সাথে আছে ক্লোজড প্রোপ্রাইটারি প্লাটফরম এ্যামাজন কিন্ডল এবং আইফোন। এই সমস্ত প্ল্যাটফরমে ডেটা মুছার ব্যাপারটা হচ্ছে তুলনা মূলক ভাবে সবচেয়ে কঠিন, সময় সাপেক্ষ ও কোন কোন ক্ষেত্রে অসম্ভব।
আমরা সবসময় এমন ধরনের নিয়ম কানুন আশা করে থাকতে পারি যেখানে আমি আপনি চাহিবা মাত্র এই সেবা প্রদানকারী কোম্পানী গুলো আমাদের ডেটা গুলো মুছে দিবে, কিন্তু আসলে আমাদের ডেটা গুলো একেবারে মুছে দিতে বিন্দুমাত্র আগ্রহী নয়। এই ধরনের সাইটগুলো বরং ডেটা একেবারে মুছে দেওয়ার চেয়ে সেই ভাবেই রেখে দেয় আর এ্যাকসেস বন্ধ করে দেয়। আর এই কাজের জন্য ফেসবুক হল কুখ্যাত। কিছুদিন আগে এক বেশ জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের সার্ভার হতে ডেটা একেবারে মুছা যেত। তবে স্টোরেজ বুমের কারনে এখন প্রায় সব কোম্পানী মূল সার্ভারের পাশে অন্য একটি সার্ভারে ডেটা ব্যাকআপ রাখে। কাজেই মূল সার্ভার থেকে যদি ডেটা মুছা হয় তাও খুব একটা লাভ হবে না। গুগলের সেবা ব্যবহার সংক্রান্ত শর্তাবলীতে এই কথা স্পষ্ট করে বলা আছে।
ক্লাউড কম্পিউটিং সিস্টেমে যে কম্পিউটার ডেটা সংরক্ষনের কাজ করে তা ব্যবহারকারী অর্থাৎ আমার বা আপনার নিয়ন্ত্রনের বাইরে। সেই সিস্টেমে ডেটা পাঠানোর পর কি হয় তা ব্যবহারকারীর সম্পূর্ণ অজানা। কাজেই অনলাইন ব্যাকআপ, এস.এম.এস বার্তা, ফটো শেয়ারিং সাইটে ডেটা মুছে ফেলার পর আসলেই কি ঘটে তা আমাদের ধারনার বাইরে।
এ্যামাজন, কিন্ডলে কেনা তাদের ই-বুক গুলো কিভাবে মুছতে সক্ষম হয়েছিলো তা ডেটা সংরক্ষন ও নিয়ন্ত্রন গবেষনায় অভিজ্ঞরা ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন। বিষয়টি আইনগত ভাবে অনেক বিতর্কের অবকাশ রাখে, কিন্তু এ্যামাজন ডেটা গুলো মুছতে সমর্থ কারণ তারাই সমস্ত কিন্ডল নিয়ন্ত্রন করে। তারা কিন্ডলকে এমন ভাবে ডিজাইন করেছে যেন সেটাকে তাদের ইচ্ছামত সফটওয়্যার আপডেট করতে পারে, ব্যবহারকারী কখন বই কিনবে তাও নির্ধারন করে এমনকি কখন কোন কিন্ডল একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে সেটাও।
ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনে Roxana Geambasu ও তার সহকর্মীরা Vanish নামের এইরকম একটি প্রকল্প নিয়ে গবেষনা করছেন। তারা একটি প্রোটোটাইপ ডেভেলপ করেছেন যেখানে ডেটা একটি নির্ধারিত সময় পর নিজে থেকে নষ্ট হয়ে যায়, তখন একে আর কোন ভাবেই পুনঃউদ্ধার করা যায় না। এই সিস্টেমটি কার্যকর থাকা অবস্থায় আমরা মেইল পাঠাতে পারি, গুগল ডকসে লিখে সেখানে সেভ করতে পারি, ফ্লিকারে ফটো আপলোড করতে পারি পর্যায়ক্রমিক সময় নির্ধারণ করে দিয়ে। পরে সেই সময় শেষ হয়ে গেলে সেই ডেটা গুলো আপনা আপনি নষ্ট হয়ে যাবে। এখন কথা হল এর মধ্যে ডেটা গুলো কেউ কপি করে অন্য কোথাও নিয়ে গেল, তখন কি হবে? আসলে কিছুই হবে না, ডেটা গুলো এমন ভাবে এনক্রিপ্ট করা হয় যাতে হোস্ট সার্ভার যতই কপি করুক, হ্যাকার কপি করুক, কেউ কোন ডেটা ভবিষৎ রেফারেন্সের জন্য রেখে দিলেও লাভ হবে না। পূর্বে সেট করা সেই সময় অনুযায়ী ডেটা গুলো নষ্ট হয়ে যাবে। এই ডেটা আর কেউ পড়তে পারবে না এমন কি যে লিখেছে সে ও না।
Vanish এর গঠন কাঠামো বেশ জটিল। এটি ডেটার ডিক্রিপশন কি কে অনেক গুলো ভাগে ভাগ করে জোড়া থেকে জোড়ায় বা peer-to-peer নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ওয়েবে ছড়িয়ে দেয়। যখন প্রদত্ত সময় শেষ হয় তখন এই ভাঙ্গা অংশ গুলো নিজ থেকে অবিরত খুলে এবং জোড়া লাগে যতক্ষন না ডেটা গুলো নষ্ট না হয়। এটি বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থা বা প্রোগ্রাম বা কোন ওয়েবসাইটের মত না যেখানে কোন রকমের অনুমতি নেওয়া লাগবে বা কোন শর্তাবলী মেনে চলতে হবে। এখানে ব্যাপারটি শুধু মাত্র ঘটে এবং ঘটবেই, আর অন্য কিছুই নয়।
তবে Vanish অবশ্যই তার সেবা ব্যবহারকারীকে ডেটা অন্য কোথাও কপি করতে বাধা দেয়না যেমন কিন্ডল তার ব্যবহারকারীকে এর মাধ্যমে কেনা বই অন্য জায়গায় কপি করতে দেয়। Vanish এখন পর্যন্ত একটি নমুনা মাত্র। এটি কাজ করবে শুধুমাত্র যাদের সিস্টেমে ইন্সটল করা আছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো মানের প্রদর্শনী যেখানে ডেটা সংরক্ষন ও মোচনে বিভিন্ন শ্রেণীর নিয়ন্ত্রন কিভাবে কাজ করে। তবে এর সঠিক, বড় পরিসরে এবং আইন সম্মত ভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করতে আরও অনেক নিরাপত্তামূলক পরীক্ষা ও মূল্যায়নের দরকার আছে।
আমরা নিজেদের কিছু কম্পিউটারে ডেটার নিয়ন্ত্রন হারিয়েছি সাথে হারিয়েছি ক্লাউড কম্পিউটিং এ আমাদের ডেটার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রন। কিন্তু তাই বলে আমরা ফেসবুক, ফ্লিকার, টুইটার ব্যবহার করা বন্ধ করবোনা এই ভেবে যে আমরা যখন চাইবো তখন কতৃপক্ষ আমাদের ডেটা মুছে দিবে আর কিন্ডল, আইফোন ব্যবহার করবোনা এর জন্যে যে তারা আমাদের ডেটা মুছে দিবে যখন সেটা আমরা চাইবো না। আমাদের কে অবশ্যই নিজেদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ডেটার পূর্ণ নিয়ন্ত্রন নিতে হবে, আর Vanish এর মত কাজ গুলো আমাদের কে সেই পথ দেখায়।
এখন আমাদের এমন জিনিষ দরকার যাতে করে আমরা যখন প্রয়োজন বোধ করব তখন যেন বড় বড় কর্পোরেশন গুলো আমাদের ডেটা মুছে দিতে না পারে।
রেফারেন্স:
http://en.wikipedia.org/wiki/Cloud_computing
http://en.wikipedia.org/wiki/Amazon_Kindle
http://en.wikipedia.org/wiki/IPhone
http://www.wikihow.com/Permanently-Delete-a-Facebook-Account
http://vanish.cs.washington.edu/index.html
ইলিশ মাছ দিয়া ডাটার তরকারী খাইতে ভালো লাগে।
কিন্তু শীত কালে তো ভ্যানিশিং ক্রীম না , কোল্ড ক্রীম লাগাইতে হয়।
অঃটঃ অনেক কিছুই জানলাম। দাবীর সাথে একমত।
থ্যাংকু
নতুন বিষয় জানলাম ... ধন্যবাদ শাতিল... আশা করছি নিয়মিত নতুন নতুন লেখা দিয়ে আমাদের জানার জগতকে বাড়িয়ে তুলবে
একটা প্রশ্ন ছিলো...
এখানে আমরা বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে?
এইখানে আমরা বলতে আসলে সবাইকে বুঝানো হইছে যারা শুধুমাত্র সার্ভিস গুলা ব্যবহার করে, এইসবের মূল ডেভেলপমেন্টের সাথে জড়িত না, এদের ইন্ফ্রাস্ট্রাকচার কিভাবে কাজ করে জানেনা।
অনেক কিছু জানলাম। থ্যাঙ্কু।
থ্যাংকু
কত্তো কিছু জানার আছে...সিরিজ আকারে চলুক......
~
শিক্ষনীয় পোস্ট
ধন্যবাদ শাতিল ভাইয়া
এখন আমাদের এমন জিনিষ দরকার যাতে করে আমরা যখন প্রয়োজন বোধ করব তখন যেন বড় বড় কর্পোরেশন গুলো আমাদের ডেটা মুছে দিতে না পারে।
একমত।
এই জিনিষটাও মনে হয় সম্ভব। যদি কিন্ডলের টেকনোলোজি রিভার্স ইন্জিনিয়ারিং এর মধ্যমে দেখা যায়।
প্রথম প্যারা পড়েই বুঝলাম, এইটা আমার জন্য প্রযোজ্য নহে। এগুলা আমি কিছুই বুঝি না।
তবু শাতিলুদ্দিনকে থ্যাঙ্কু...
শাতিলুদ্দিন নাম্টা জোশ হৈছে :)
তাইলে অরে কন আকীকা দিতে
আরবী সূরার মতো ধইরা ধইরা পইড়া গেলাম। বুঝলাম কি বুঝলাম না তাও বুঝলাম না ঃ)
তবে যারা বুঝেন আশাকরি তাদের জন্য কাজে লাগবে ঃ)
মন্তব্য করুন