ক্যানবেরা সফর - পর্ব ৫ (ইন ক্যানবেরা)
ঘুমাতে যাওয়ার দশ পনের মিনিট পর মুজা কাকু একত্রিশ দাঁত বের করে (একটা পড়ে গেছে ) মামুরে বলে কালকে তো আমাদের কোন ঝামেলা নাই শুধু ঘুরাঘুরি আর দাওয়াতে যাওয়া। আমার দিকে ইশারা করে বলে এই দুই নম্বরের কালকে অনেক কাজ। আমাদের কে সব যায়গায় নিয়ে যাবে হে হে হে। এরপর কাকু আর মামু তাদের সুখ দুঃখের আলাপ জোড়া দিলো। কে কবে কখন কিভাবে ছেঁকা গলাধঃকরণ করছে, কোথায় আর একটু পরিশ্রমী হলেই .......... হয়ে যেত ব্লা ব্লা ব্লা......। আমি মনে মনে বললাম ঘুর কোন সমস্যা নাই কিন্তু কালকে দুপুরের যে রান্নার প্লান আছে সেইখানে আমি আর রান্না করতেছি না। তোমরা দুইজন করবা।
সকালে যথারীতি সব লেট লতিফ। নয়টার দিকে বাসা থেকে বের হলাম। মিশন দুপুরের বাজার করা। টাইম লিমিট এক ঘন্টা। মন্জুরের নির্দেশিত পথে পৌঁছে গেলাম গ্রীনওয়ে টাউন সেন্টার। বাজার শেষে করে রাখার জন্য আবার বাসায় গেলাম। এরপর বের হলাম শহর দেখাতে।
প্রথমে গেলাম মাউন্ট এইন্সলি। ক্যানবেরা নেচার পার্কের মধ্যে পড়ে এটি। ক্যাঙ্গারুদের অভয়ারণ্য বলে শুনলেও এক পিসও দেখলাম না। মামু কাকু দুই জনের মন খারাপ হল। বেচারারা কেউ এখন পর্যন্ত জীবিত ক্যাঙ্গারু দেখে নাই। আসার পথে যা দেখা গেছে সব গাড়ি চাপা পড়ে মরা। সামিট পয়েন্টে উঠলাম আমরা। একটু পর পর মুজা কাকুর সিগারেট ধঁরানো দেখে মামু বলে "আপনে না আর কিছু দিন পর বিয়ে করবেন। এখন এইভাবে বিড়ি টানলে তো সমস্যা"। কাকু শ্রাগ করে বলে আরে কমাইতেছি তো, চক্ষে দেখনা?" এরপর মামু একটা এডাল্ট জোক করল ফিউচার কাকুরে নিয়ে। কাকু কোন উত্তর দিতে না পেরে চুপ গেলেন। কাকুর সাহায্যে আমি হাত বাড়ালাম। কাকুকে বললাম কালকে রাতে ঘুমের মধ্যে নাক দিয়া যে ট্রাক্টর চালাইছেন সেইটা কিন্তু মামু ভিডিও করছে। বাসায় গেলে ইউটিউবে দেখামুনে। কাকু সাথে সাথে স্ট্যান্ড ষ্টীল। ফাউল পোলা তুমি মানুষের প্রাইভেট ব্যপার নিয়ে ফাইজলামী কর। এইসব ঠিক না। বলতে না বলতেই মামুরে মারার জন্যে কাকুর দৌড় শুরু। এক কালের বিশিষ্ট দৌড়বিদ মামুরে ধরা কি এত সোজা। অযথা শক্তি খরচ করার কোন মানে হয় না আর তাছাড়া পরে কাছে পেলে এক হাত দেখে নেওয়া যাবে ভেবে কাকু ধাওয়া করা খেমা দিলেন।
ছবিঃ এ্যানজাক প্যারেড উপর থেকে
ছবিঃ ক্যানবেরা এয়ারপোর্ট
কাকু ঠান্ডা হওয়ার পর আমরা আরো কিছু ছবি তুললাম। ততক্ষনে ক্যানবেরা শহরে তুমুল বৃষ্টি শুরু। উপর থেকে আমরা বৃষ্টি দেখতে লাগলাম। আসলেই অদ্ভুত সুন্দর। একটু পরেই বৃষ্টি আমাদের দিকে তেড়ে আসলো। বৃষ্টির একটা ফোঁটা গায়ে পড়তে দিবো না পণ করে সবাই গাড়ির দিকে ভোঁ দৌড়। কিন্তু সব চাইলেই কি আর হয়। জং ধরা শরীর, দু চার কদম দৌড়েই বাতাস শেষ। এরপর যথারীতি হাঁপাতে হাঁপাতে গাড়িতে। আমরা মাউন্ট এইন্সলিকে বিদায় জানিয়ে নীচে নামা শুরু করলাম।
ছবিঃ বৃষ্টি এবার আমাদের উপরে
এইবার গন্তব্য লেক বার্লী গ্রীফিনের পাড়ে। নীচে নেমে দেখি অনেক রাস্তায় ঢাকা শহরের মত পানি জমে আছে। আস্তে আস্তে লেকের পাশে একটা পার্কে গেলাম। পার্কিংয়ের আশেপাশে ওয়াক ওয়েতে পানি দেখে আমি নামার ইচ্ছা বাদ দিলাম। মামু আর কাকু প্যান্ট গুটিয়ে নানা কসরত করে সামনে চলে গেলো। মামু চুপা লুল ব্যাপারটা আগে জানতাম। ক্যানবেরায় মামু একেবারে খুল্লাম খুল্লা লুল হয়ে গেলো। সম্ভবত মুজা কাকুর দেওয়া বুদ্ধির ফল।
ছবিঃ লেকের পাড়ে লুলামি শুরু
ছবিঃ লেক বার্লী গ্রীফিন
ছবিঃ লেক বার্লী গ্রীফিন
লেক দেখা শেষ হওয়ার পর আমরা গেলাম পার্লামেন্ট ভবন দেখাতে। আমি আর মন্জুর বাইরে আড্ডাবাজী করলাম। মামু আর কাকু গেলো ভিতরে দেখতে। ঘন্টা খানেক পর দুইজন ফেরত এলো। কাকুর কাছে শুনলাম মামু লুলামীর চূড়ান্ত সীমা কাকে বলে, কত প্রকার, কি কি সব।
ছবিঃ ফেডারেল পার্লামেন্ট অফ অষ্ট্রেলীয়া
ছবিঃ পুরাতন পার্লামেন্ট ভবন আর কোনায় সামান্য লুলামি
ছবিঃ এসেম্বলী হল
ছবিঃ আদিবাসীদের আঁকা ছবি
ছবিঃ কি করছিলো আল্লাহ মালুম। মেয়েটা ভেংচি দিছে। লুলামির আরও ছবি ফেসবুকে আছে।
কমনওয়েলথ ওয়্যার মেমোরিয়ালে যাওয়ার ইচ্ছা থাকা সত্বেও সময় স্বল্পতার জন্য যাওয়ার প্লান বাদ দিলাম। পার্লামেন্ট থেকে এর পর সোজা বাসায় দুপুরের রান্নার জন্য দৌড়। বাসায় যেয়ে আমি রান্নায় ফাঁকি দিলাম। মুজা কাকু যথারীতি তার বিখ্যাত ডায়ালগ দিয়ে রান্নায় নামলো আর আমি কিছুক্ষন আগে মামুর করা লুলামীর স্থির চিত্র দেখায় মন দিলাম।
ছবিঃ রান্নার সময় আমার সাথে খেপচুরিয়াস কাকু
রান্না শেষে খেতে বসে মুজা কাকুর রাগ ভাঙ্গানোর জন্য বললাম "এনায়েত ভাই এইভাবে চেতেন কেন? আমি তো জানি আপনি অনেক ভালো রান্না করেন। আপনার ভালো রান্নাটা আমি কাউকে মিস করাইতে চাইতেছিলাম না"। আমার সাথে বাকীরা যোগ দিল। মুজা কাকু লাজুক ভাবে মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে বলে "এ আর এমন কি কাজ"। খাওয়া শেষ করে বসলাম আড্ডায়।
আড্ডা শেষে সবাই বের হলাম মাহবুব সুমন ভাইয়ের বাসার উদ্দেশ্যে। যেয়ে দেখি দিব্য এখন একা একাই সারা ঘর হেঁটে বেড়ায়। একটু আধটু কথা বলে। কিছুক্ষনের মধ্যে সবার সাথে দিব্যর ভাব জমে গেল। বেশ স্মার্ট বাবু। ভাইয়ার বাসায় ডিনার করলাম আমরা। যাওয়ার আগে ভাইয়া জিজ্ঞাসা করেছিলো কি কি খাবো। আমি বলেছিলাম ডাল ভাত আলু ভাজি আর সবজি। খেতে বসে দেখি সাথে আরও ৫/৬ রকমের আইটেম। গলা পর্যন্ত ভর্তি করে সব খেলাম। জম্পেশ এই খাওয়া দাওয়ার জন্য ভাবীকে স্পেশাল ধন্যবাদ। খাওয়া শেষে আবার আড্ডায় বসলাম। এবার দেওয়া হল ফিরনি। বেশ সময় নিয়ে সেটাও খেলাম। এরপর আরও কিছুক্ষন বকবক করার পর ভাইয়া ভাবীর কাছে বিদায় নিয়ে ফেরত গেলাম মন্জুরের বাসায়। পরদিন সকালে যার যার বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিয়ে সবাই ঘুমাতে গেলাম।
আগের পর্বের লিংকঃ
ক্যানবেরা সফর - পর্ব ১
ক্যানবেরা সফর - পর্ব ২
ক্যানবেরা সফর - পর্ব ৩
ক্যানবেরা সফর - পর্ব ৪
মাসু'র বাসায় খাইতাম্ছায়
রান্ধা কামেলের ফটুক নাই দেইখা মাইনাচ
ভালো লাগছে... শেষ নাকি?
এই সিরিজ শেষ

সুমন ভাইরে বলেন
ব্রেশ !! ..........
সফর কি এইখানেই শেষ ? কবে যে বিদ্যাশ যামু !!
হ এইটা এইখানেই শেষ

আসার সময় রোড রুলসরে কাঁচা কলা দেখাইয়া মেলা আগেই বাসায় চইলা আসছি
সেরম ভ্রমন!
ছবির উইথ ৫৫০ কইরা দেন।
আসলেই সেরম হইছিলো
দিলাম ৫৫০ কইরা
ইশ্, কবে যে বিদেশ যাবো
এতদিন পরে? মারা গিয়া আবার জীবিত হওয়ার পরের ষফরের কাহিনী পইড়া মজা পাইলাম।আমি আরো ভাবছিলাম মনে হয় ব্যান খাইছেন। নাইলে এতদিন খোঁজ নাই কেন।
জয়িতার কমেন্ট পইড়া শান্তি পাইলাম। আমি ভেবেছিলাম আমার শর্ট টাইম মেমোরী লস হইছে নাকি ঃ)
ছবিতো সব ঝাকানাকা। লেকের ছবিদুটো আর মেঘ করার ছবিখানা জম্পেশ
অষ্ট্রেলিয়া যাইতে মনচায়।
হাফপ্যান্টপিন্দাবালিকাদের ছবি আর নাই
ভ্রমণকাহিনী পছন্দ হইসে
মন্তব্য করুন