বিজ্ঞাপন তরঙ্গ
রেডিও বাংলাদেশ । আমাদের ঘড়িতে সময় এখন ১ টা বেজে ৫ মিনিট হয়ে অমুক সেকেন্ড - ঘোষক/ঘোষিকার ঘোষনা। আপনার শুনতে পাচ্ছে এই এই এই শট ওয়েভ মেগা হার্টজে । এখন প্রচারিত হবে বিজ্ঞাপন তরঙ্গ।
সাথে সাথে প্যা প্যা পো পো করে শব্দ (বিজ্ঞাপন তরঙ্গ আরম্ভ হবার আবহ সঙ্গীত ছিল ঐটা) , শব্দের মাঝের একজন টেনে টেনে বলতো - বিজ্ঞাপন তরঙ্গ। তারপর আরো কয়েক সেকেন্ড বাজতো প্যা পো শব্দ।
দুপুর ১ টা বাজলে ৫ মিনিটের জন্য সংবাদ , তারপরেই এই বিজ্ঞাপন তরঙ্গ।
স্কুল ছুটির দিনগুলোতে মুখিয়ে থাকতাম এই অনুষ্ঠানের জন্য। প্রথমেই আরম্ভ হতো গীতালী অথবা গানের ডালি।
বিজ্ঞাপনে তরঙ্গে এখন প্রচারিত হবে পাঁচ মিশালী গানের অনুষ্ঠান - গীতালী।
গীতালী - শুনলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যেত। কি কি সব রদ্দি কালের গান - আঞ্জুমান আরা বেগমের চিবিয়ে চিবিয়ে গাওয়া গান , না হলে টুকায়ে টুকায়ে আনা সব শিল্পীদের গান, মাঝে মাঝে ২/১ টা সিনেমার পরিচিত গান। তখন সিনেমার গান ছিল হিট, ব্যান্ডের গান খুব বেশী কেউ শুনত বলে মনে পড়ে না, রেডিও তে সেসব গান বাজতো ও না।
একটা গান তারপর কিছুক্ষন ধরে চলবে বিজ্ঞাপন।
গ্যা - কো - টা - চ .... গ্যা - কো - টা - চ । এন্টিসেপটিক ট্রিপল একশন সোপ ( তখন এইটা উচ্চারন করতে গেলে দাত ভাইঙ্গা যাওয়ার মত অবস্থা হইতো) - এইটা ছিল কমন।
আর মায়া বড়ির বিজ্ঞাপন ও ছিল কমন একটা আইটেম। এপি দশন চূর্ন - আরেকটা কমন বিজ্ঞাপন ।
যাই হোক এরকম কয়েকটা বিজ্ঞাপনের পর আরেকটা গান শুরু হতো - গান শুরু হবার আগে ঘোষক বা ঘোষিকা শুদ্ধ উচ্চারনে (যারা এই যুগের এফ এম রেডিও শুনেছে শুধু, তারা শুনলে পুরা টাস্কি খাবে) বলতো -
এখন প্রচারিত হবে - মিস লংকা সিনেমার একটি গান, এই গানে কন্ঠ দিয়েছে রুনা লায়লা, কথা লিখেছেন - অমুক, সুর করেছেন - তমুক।
কথা শেষ হবার সাথে সাথেই গান - গানের পরপরই আবার বিজ্ঞাপন, এভাবেই প্রথম ঘন্টা শেষ হতো।
প্রথম ঘন্টা বরাদ্দ ছিল এই গীতালী বা গানের ডালির জন্য।
অন্য আরেকদিন প্রচারিত হতো শ্রোতাদের অনুরোধের গানের অনুষ্ঠান - গানের ডালি।
গীতালী না হলে গানের ডালি - অল্টারনেটিভ করেই প্রচারিত হত ,কিন্ত কবে কোনটা হতো - এখন আর মনে নেই।
সাধারনতঃ সিনেমার গানের জন্যই অনুরোধ আসতো গানের ডালি তে। রেডিওর ঘোষ্ক বা ঘোষিকা প্রমিত উচ্চারনে এভাবে বলতেন -
চুরি করেছ আমার মনটা - এই গানটার জন্য অনুরোধ পাঠিয়েছেন - শ্যামলী ঢাকা থেকে টুটুল, পুতুল, নাজ, সাজ , মৌলভিবাজার থেকে - ইয়াযাদ , আমজাদ, হাসান , হোসেন, রাজশাহী থেকে নজরুল , জয়িতা , নোয়াখালী থেকে মুকুল, গোকুল, জেবিন , মবিন এবং আরো অনেকে -
আবার কখনো কখনো কোন ঘোষনা ছাড়াই গান শুরু হতো - গানের মাঝে এসে ঘোষনা হতো - এই গানটির জন্য যারা অনুরোধ পাঠিয়েছেন - গল্লামারী থেকে নুসেরা , কাকন, বাকন , খাকন, গলাচিপা থেকে - মাসুম , জসিম, রহিম , করিম,
আখাউড়া থেকে উদরাজি , নিম্রাজি, ভাঙ্গা , ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা পেন্সিল, বাফরা মানুষ এবং আরো অনেকে.।.।
একটা গান তারপর কয়েকটা বিজ্ঞাপন - আবার অনুরোধের গান - কিংবা রদ্দি মার্কা গান - এভাবেই বেলা ২ টা পর্যন্ত গীতালী/গানের ডালি চলতো, সিডিউল করে।
২ টা বাজলে শুরু হতো - বাটা সঙ্গীত মালা কিংবা বউরানী প্রিন্ট শাড়ী সঙ্গীত সমাহার অথবা জনি প্রিন্ট শাড়ী সঙ্গীত মালা কিংবা সিনেমার ট্রেলর - রঙীন রুপবানের উপর ভিত্তি করে বিশেষ অনুষ্ঠান - রঙীন রুপবান।
১৫ মিনিটের অনুষ্ঠান - ৩ টা গান, ফাঁকে ফাঁকে তাদের বিজ্ঞাপন আর শেষ গানের সাথে কুইজ।
সিনেমার ট্রেলর শোনানো হত - মাজহারুল ভাইয়ের কন্ঠে।
সেই ট্রেলর অনুষ্ঠানে সিনেমার গান , সাথে সিনেমার কয়েকটা ডায়লগ - শয়তান দেহ পাবি তো মন পাবিনা , মাজহারুল ভাইয়ের কিছু ডায়লগ ।
সিনেমার ডায়লগের মাঝে মাঝেই বলে উঠতেন তিনি -
কি বলেছিল তখন শাবান ?
কিংবা
কি হবে কি হবে এখন সখিনার ?
হা ভাই বোন বন্ধুরা , এই প্রশ্নের জবাব পেতে দেখুন - সখিনার যুদ্ধ।
(কোন বিশেষ কারনে মাজহারুল সাহেব হ্যা কে হা বলতো)
২ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত চলে সঙ্গীত মালা না হলে সিনেমার ট্রেলর .।.।
চলতো বিজ্ঞাপন তরঙ্গ -
এখন শোনা হয়না আর রেডিও বাংলাদেশ , তবে গাড়ীতে মাঝে মধ্যে এফ এম রেডিও আরযে দের বকর বকর শুনলেই ১ মিনিটের মধ্যে মাথা ধরে যায় ., অফ করে দেই রেডিও।
কতদিন শুনিনা সেই রেডিও বাংলাদেশ কিংবা বাংলাদেশ বেতার
আমিও সেই রেডিও শুনিনি অনেকদিন। শহরের ইট-কাঠে চাপা পড়ে গেছে আমার শৈশবের সেই স্মৃতিগুলো।
মাঝে মাঝে প্রাণ হাঁপিয়ে উঠে। সেই গানগুলোর হঠাৎ ২-১ টা কোথাও শুনলে থমকে অতীতে চলে যায়। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে-
"আমার হাতে সেই দাগ নেই

আমি সেই মানুষ নই"।
আমি বেছে বেছে সেই পুরনো গান গুলো এখনও শুনি, ইট কাঠের খাঁচার নিচে চাপা পড়তে দেইনি সেই ভালো লাগা, নিভু নিভু করে হলেও জিইয়ে রেখেছি।
আরো ছিল সন্ধ্যা ৭টায় সৈনিক ভাইয়েদের জন্য দূর্বার। শুরুর মিউজিক ছিল "চল চল চল, ঊর্ধগগনে বাজে মাদল..." এমন। অনুরাধের আসর চাওয়া পাওয়াটা তখন খুব জনপ্রিয় ছিল। সকালে মহানগর এবং আজকের ঢাকা প্রতিদিন সকালেই শোনা হত।
নানা বাড়ীতে গেলে দূর্বার শোনা হোত , নানার ২ ব্যান্ডের রেডিও তে, উঠানের মাঝে মাদুর পেতে বসে।
দূর্বার এর স্টার্টিং মিউজিক শুনলে মনে হত - কাঁসার থালা বাটি নিয়ে কে যেন পেটাচ্ছে।
আহা কী শুনাইলেন!!!!! ত্রিশ বছর পেছনে চলে গেলাম যেন।
দুপুরে টিফিন ছুটিতে বাসায় এলে শোনা যেত, "কখন ছুটি হবে, কখন বাজবে সেই ঘন্টা........." প্রতিদিন গানটা বাজাতো। তবু পুরোনো মনে হতো না। যেন আমাদের জন্য লেখা হয়েছে গানটা।
ছুটির গানটা এখন ফিল করি বেশী, কখন ছুটি হবে , কখন বাড়ী যাবো , তখন ঘড়িতে দেখি রাত ৮ টা .।.।
রেডিও শোনা নিয়ে আমাদের ভাই বোনের মধ্যে ঝগড়া ও হোত তখন। রেডিও কার কাছে থাকবে এইটা নিয়ে।
আহা! কতো কি মনে কইরা দিলেনগো সাঈদ ভাই, মনটা খাখা কইরা উঠলো।
তখন প্রাইমারীতে পড়ি, সাড়ে এগারোটায় স্কুল ছুটি। পলিথিনের ভেতর বইখাতা মুড়ে বগল দাবা করে একটা গ্রাম হেঁটে বাড়িতে আসতে হতো, পথেই পড়ত বিশাল বাজার, বাজারের শেষ মাথায় তুলা পট্টি, আলম নামের এক ক্লাসমেটের বাবার তুলার দোকান (লেপ কম্বল বালিশ জাজিম) ছিলো, আর দোকানে ছিলো মার্কারী কালারের বড় একটা রেডিও, যা সবসময় ফুল ভলিউমে চলত। স্কুল থেকে সোমবার ও বুধ বার সরাসরী তাদের দোকানে এসে বসতাম, আর দুপুর দুইটা আড়াইটা পর্যন্ত কার্পাস তুলার বস্তায় হেলান দিয়ে কিংবা শুমুল তুলার বস্তায় চিত হয়ে শোনতাম, বেবি লজেন্স সঙ্গীত মালা, কখনো নাবিস্কো সঙ্গীত মালা। আর ফিলমের ট্রেইলার। ভুলেই গেছিলাম সেই সব কথা। আজ এতোদিন পর আতকা মনে করাইয়া দিলেন। প্রায় সব গানই ছিলো রুনা লায়লা, এন্ড্রু কিশোর, ও সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া। খালিদ হাসান মিলু মুনয় তখন মাত্র দুই একটা গান গাইয়া সাড়া ফালাইয়া দিছে।
রাত সাড়ে দশটায় সম্ভবত কথা নাটিকা হতো।
খুব বেশী আবেগ দেয়া হতো প্রতিটা কথায়, কিছুক্ষণ পরপরই সমুদ্রের শোঁ শোঁ ঢেউ।
ডিম করা হারিকেনের আলোয় দেখতাম আম্মা বালিশ ভেঁজাতেন নাটক শুনে।
অনেক কিছুই মনে পইড়া গেল।
ওহ! আগে বলছি মনয়, একবার বান্দ্রামী এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়া, সদ্য রান্না করা জলন্ত কয়লার চুলায় বিষ্ফোরণ ঘটাইলাম, ফলাফল দুই চোখে জলন্ত কয়লা ঢুকে গেছিলো তখন প্রায় মাসখানেক দুই চোখে পট্টি বান্ধা ছিলো। সেই সময় রেডিও ছিলো সার্বক্ষনিক সঙ্গী। স্কুল কামাইদিয়া অন্ধ দুনিয়ায় রেডিও শুনতে শুনতে মনে হইতো জীবনে একবার কানা হওয়াটা তেমন দোষের কিছু না
তুমিতো চ্রম বান্দর আছিলা দেখা যায় !!!
যাক, রেডিও তো ছিল সেই সময় কাছে। রেডিও তে কি এখনও সেই বিজ্ঞাপন তরঙ্গ হয় ? মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছে করে ।
জটিল জিনিস বাইর করছ।
তবে কিছু তথ্য বিভ্রাট আছে। পাঁচমিশালি না রকমারী গানের অনুষ্ঠান গিতালি।
সপ্তাহে একদিন মনেহয় দুপুরে হইত নাটক। অদ্ভূত রকমের লাগত বিভোর হইয়া শুনতাম। লোকনাটক গুলি তো সেইরকম। মধুমালা মদন কুমার, সোজন বাঁদিয়ার ঘাট।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে বা সাতটা বিশে হইত সৈনিক ভাইদের জন্য অনুষ্ঠান ... এই এই কীজানি ধুর মাথায় আসতাছেনা।
মনে পরছে দুর্বার
থ্যাঙ্কু হাসান ভাই, রকমারী হইবো, ভুইলা গেছিলাম, লেখার সময় মনে হইতেছিল খালি পাঁচমিশালি । তবে ২ টা একই জিনিস ।
নাটক হইতো শুক্রবার , নাটক শোনার জন্য শুক্রবার তাড়াহুড়া লাগতো দুপুরের খাবার শেষ করার জন্য। অন্যদিন গুলাতে ওয়ার্ল্ড মিউজিক, ব্যান্ডের গান, ইংলিশ গান শোনার শুরু আমার ঐখান থেইকাই। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া পোলা মাইয়ারা বেশ ঢং করে ইংলিশ উচ্চারনে ওয়ার্ল্ড মিউজিক পরিচালনা করতো।
এইসব মিস করি এখন খুব ।
ফাডাফাডি হৈছে.......
দুপুর বেলা স্কুল থেইকা ফিরা, খাইয়া দাইয়া মাথার কাছে রেডিও নিয়া.......
হা হা এপি দশন চূর্ন সেরা দাঁতের মাজন, দাঁতের মাড়ি শক্ত, করে দশন চূর্ন....
দুইটার সময় থেইকা যেইটা শুরু হৈতো, মনে হয় বানিজ্যিক কার্যক্রম আছিলো, বেইলী রোডে ছিলো অফিস......
তখন সিনেমার গান যা হৈতো, তার অর্ধেকের বেশি থাকতো এন্ড্রু কিশোর আর রুনা লায়লা...
তয় রেডিওর বেষ্ট প্রোগ্রাম মনে হয় নিশুতি অধিবেসন, রাইতে সিনেমার গানের মাঝে বেস্ট গুলান, আঢুনিক গান কম, বিশ্ব সঙ্গীত, আর সবচাইতে চমৎকার হৈলো, নাটক...আহা, রেডিওর নাটক...
বাণিজ্যক কার্যক্রম ছিল ঐটা কিন্তু কোন যায়গা থেকে ট্রান্সমিশন হইত জানতাম না।
হুম, রুনা আর এন্ড্রুর একচেটিয়া দাপট তখন রেডিও তে।
সাঈদ ভাই,
গত ৬/৭ বছর আগের কথা, রেডি ও কিনতে মার্কেটে গিয়াছিলাম- ভাল রেডিও আর পাওয়া যায় না। অনেক খুজে ১০ বান্ডয়ের একটা কিনেছি। এখনো আমি মাঝে মাঝে শুনি- বিদ্দুত না থাকলে!
আমার ছেলে হাসে! আমার পত্নী আমার পোলারে কয় "তোর বাপের 'পিতলা শখ'!
আপনার ই
আখাউড়া থেকে উদরাজি
যাক আপনি তাহলে এখনো শুনেন রেডিও । দারুন, কিপিটাপ।
নস্টালজিস্টিকিস্টিস পোস্ট । হঠাৎ করেই মনে অনেকগুলো স্মৃতির পপ-আপ হল । আমি সেলুনে চুল কাটাতে যেতাম দুপুর বেলায় , রেডিওতে বিজ্ঞাপন তরঙ্গ , গিতালী , মাজহার সাহেব সবই তো আমার চেনা !!!
একটা প্রশ্ন সবসময় মাথায় ঘুরত । অচেনা আনকোড়া গানের জন্যও সারাদেশ থেকে কি করে এত মানুষ রিকোয়েস্ট পাঠায় ? আবার একই গানের জন্য একই জায়গা থেকে এত মানুষ কি করে রিকোয়েস্ট করে ? পুরো ব্যাপারটাই মিথ্যে মনে হত
এইটা আমারও প্রশ্ন, এখনও এর উত্তর পাইনাই।
সৈনিক ভাইদের জন্য অনুষ্ঠানের নাম ছিল ......... দুর্বার
জটিল বিষয় মনে করছেন। সিনেমার বিজ্ঞাপনে বলতো- সাসপেন্স (ব্যাকগ্রাউন্ডে- তাহলে কে আমার বাবা???), ড্রামা (চৌধুরী সাহেব আমরা গরিব হতে পারি ছোটলোক ন্ই), অ্যাকশন (মুহাহাহা তোর জিভ আমি উপড়ে ফেলবো কুত্তা!!!), কমেডি (ইঁহিঁহিঁহিঁ আরেকটু কাছে আয় আঙ্গুরি--- ঐ গেলি না পুলিশ ডাকুম) সোশ্যাল অ্যাকশন (মাননীয় আদালত, কে করবে এই অবিচারের বিচার---)
এইটার কাছেধারে নাজমুল হুসাইন সাহেব যশোরের মণিহার সিনেমাহল নিয়া হকারী শুরু করতেন। বিজ্ঞাপনের মধ্যে দু্ইটা বহুবছর চলছিলো, মায়াবড়ির "আহা মিষ্টি কি যে মিষ্টি" গানটা আর লাইফবয় সাবানের নাটিকা। দেখেন মনে পড়ে কিনা।
-ক্ইগো এই নাও তোমার বাজার। এমনিতে ময়লা আর কাদা তার উপর লোকের ভীড়
-চিন্তা ক্ইরো না তোমার লাইগা লাইফবয় সাবান আইনা রাখছি। গোসল কইরা আসো।
-কী সাবান ক্ইলা?
-লাইফবয়। এই সাবান ব্যবহার করলে শরীর যেমন পরিষ্কার হয়, স্বাস্থ্য্ও থাকে ভালো।
-তাইলে তো রোজ্ই লাইফবয় সাবান দিয়া গোসল করা লাগে
-হ
=====================================
সাইড টপিক- অনুরোধের চিঠিগুলো বাস্তবিক্ই আসে। বস্তায় বস্তায় আসে। সেরদরা বেচা হয় এইসব চিঠি। আমার নিজের চোখে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের অবস্থা দেখা; ঢাকার অবস্থা সহজেই অনুমেয়। চট্টগ্রাম বেতারে বহুবছর ছায়াছবির গানের অনুরোধের আসর উপস্থাপনা করতেন শিরিনা বেগম নামের একজন, নিজের নাম বলতেন শেরেইনা বেইগাম, বয়স্ক ভদ্রমহিলা, তিনি প্রচুর প্রেমপত্র্ও পেতেন
জট্টিল !!! জট্টিল !!! আপনার কমেন্টের পোষ্ট টা পূর্ণতা পেল , এত ডীটেইলস মনে ছিল না , কমেন্ট পড়ার পর সব ভেসে উঠলো যেন।
লাইফবয় সাবানের এড পুরা হুবহু মনে আছে দেখি । হাহাহা।
এত মনে রাখেন কি করে ?
রেডিও বাংলাদেশ ঢাকার কিন্তু দু্টো সম্প্রচার চ্যানেল ছিলো। ঢাকা ক আর খ। ক্রিকেটের ধারাভাষ্যের চাপে মাঝেমধ্যে বানিজ্যিক কার্যক্রমের চ্যানেল শিফট করা হতো। নীচে দেখলাম খুলনা বেতারের নাটকের কথা বললেন। সকালের দিকে খুলনা বেতারে দৈনিক নাটিকা হতো, নামটা ভুলে গেছি, তবে চরিত্রদের নাম ছিলো সূরত, ইজ্জত আর ময়নাভাবী। চমৎকার রম্যের ছলে শিক্ষামূলক নাটক ছিলো।
সকালে ঢাকা থেকে ম্যাগাজিন প্রচারিত হত , নামটা যেন কি ছিল, মনে নেই।
খুলনার ঐ নাটিকা শুনছি কি না , তাও মনে করতে পারছিনা, তবে দুপুরের নাটক গুলো বেশ শোনা হতো।
-গাড়িয়াল ভাই
-সময় নাই
-কই যাও?
-দুরের গাঁও।
-ফিরবা কখন?
সন্ধ্যা যখন।
-ফিরা আইসা?
-ঘাটে বৈসা করবো গোসল, গায়ে মাখবো লাইফবয়।
-লাইফবয়।
লাস্টের লাইফবয় টা মনে হয় কোরাসের সাথে বলতো, ভুলে গেছি । এত এ্যড মনে রাখছেন ক্যামনে ?
আরেকটা বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়লো-
-হাসিনার মা, মাইয়াডারে এইবার বিয়াডা দিয়াই ফালাই
-বিয়া দিবা, টেকা কই?
-টেকা দিবো ফুরাডান
-ফুরাডান তো পোকা মারনের ওষুধ
-আরে এবার ধানে পোকা লাগনের আগেই ফুরাডান ছিডায়া দিছি
(ব্যাকগ্রাউন্ডে আওয়াজ হবে, ফুরাডান আরো ধান!)
জট্টিল দাদা, আমি ভুলেই গেছিলাম , এখন মনে পড়ছে , একা একা হাসতেছি ।
যখন পড়বে না মোর পায়ের চিনহ এই বাটে, আমি বাইবো না আমি বাইবো না মোর খেয়া তরী এই ঘাটে গো
একদিন আমরা থাকবো না কিন্তু রেডিওটা থেকে যাবে
আহা ছুডুবেলার কথা মনে করিয়ে দিলেন।
রেডিও শোনার দিন গুলো, একটা চ্যনেল দেইখাই খুশী থাকার দিন - এত রেডিও টিভি চ্যানেল তবুও সেই দিন গুলো অন্য রকম ছিল, বড় মায়াবী ছিল।
দেশ আধুনিক হইছে। এখন আম্রা এফেম শুনি... আরজে
হ , আরজে ডিজে ভিজে তে দেশ ভইরা গেল। বিশাল উন্নতি দেশের।
এখনকার নাটক দেখার চাইতে আগে রেডিও তে নাটক শুনা অনেক বেশী আনন্দের ছিল।
আসলেই , শুক্রবার আমরা অপেক্ষা করতাম নাটকের জন্য আবার খুলনা স্টেশনের নাটক শোনার জন্য ও অপেক্ষা করতাম ।
শুধু শুনিয়েই কি রকম আবিষ্ট করতো !!!
দারুণ স্মৃতি কাতর হলেম হে! আহা মন চাইছে এখুনি কাঁঠাল তলায় মাদুর পেতে রেডিওর নব ঘুরাই...আমেজে চোখ বুঁজে আসছে দেখি..।কোন স্টিশনে যেন বাজছে পুরানো দিনের গান ' এমন চাঁদের আলো, মরি যদি সেও ভালো সে মরন স্বর্গ সমানউউউ' .....স্মৃতির দুয়ার এভাবে হাট করে খুলে দেবার জন্য এক আকাশ ভালোবাসা জানালেন । ভালো থাকা হোক নিরন্তর ।
*জানালেম*
আপনাকে দেখে ও ভালো লাগলো, ভালো থাকেন নিরন্তর।
চট্টগ্রার রেডিও থেকে রোববার রাতে বোধহয় নাটক হতো। সেই নাটকে না দেখেও এত মজার হাসির উপাদান থাকতো, হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যেতো। সাথে মিউজিগুলাও। আজকাল হয় কি না জানি না।
এমন ভাবে আবেগ ফুটায়ে তুলতো কথা দিয়ে , ভাবতেই অবাক লাগে।
খুলনা স্টেশনের নাটক শোনা প্রায়ই, অদ্ভুত সুন্দর কাহিনী থাকতো নাটকে।
নস্টালজিক হয়া গেলাম।
বাংলাদেশ বেতারও এফএম এ আসা উচিত।
ঢাকায় তো এফ এম এ শোনা যায় , কিন্তু পুরা রেডিও সম্প্রচার না।
লেখা বড় ভালু পাইলাম....স্মৃতিকথা লিখতে মঞ্চাইতেসে এহন!
অপেক্ষা করছেন কেন ? লিখে ফেলান ।
নস্টালজিক হয়া গেলাম।
স্কুল-কলেজের কোন প্রেমের স্মৃতি কি মনে পড়লো দুলাভাই ?
খুব স্মৃতিকাতর করে দিলেন ভাই। আশির দশকে বেড়ে উঠেছি এই রেডিও বাংলাদেশ শুনে। প্রতিদিন দুপুরের খাবারের সময়ে কেউ একটা টু শব্দও করতো্না-- মন দিয়ে রেডিওতে প্রচারিত সিনেমার বিজ্ঞাপনগুলো শুনতাম। মনে আছে একদিন গাজী মাজহারুক ইসলামের বয়ান শুনে সাড়ে তিন বছরের ছোটভাই আম্মাকে জিজ্ঞেস করলো, মা, প্রেম কী? আমার মায়ের সে কি বিড়ম্বনা এটুকু পিচ্চিরে প্রেমের সজ্ঞা বুঝাতে গিয়ে--মনে পড়লে এখনো খুব হাসি পায়।
কি আর বলবো ভাই, আহা মিষ্টি কি যে মিষ্টি এই সুন্দর........... - মায়া বড়ির বিজ্ঞাপনের এই গানটা তখন মনে ধরেছিল , না বুঝেই গাইতে গিয়া মা'র হাতে মাইর খাইছি , রেডিওর কল্যানে।
বাবা খুব রেডিও শুনত
আপনি কি শুনেন ? এফ এম ???
আহা সবই যে কমন পড়ে!
লালু ভুলু সিনেমার বিজ্ঞাপনে গাজী মাজহারুল সাহেবের ভরা কন্ঠ আর লালু........ ভুলু........চিৎকারটা এখনো যেন কানে বাজে। আরও ছিল বলাকা ব্লেড এর বিজ্ঞাপন, মনে পড়ে? চট্টগ্রাম স্টেশনে আঞ্চলিক ভাষায় বিজ্ঞাপনও হত."মানুরে...... ও মানু ... , জ্বী জ্বী জ্বী .. আঁই যাইয়ুঁম ঢাকা শহরত তল্যাই আইন্নুম কি?" মনে পড়ে?
হা হা, ভাই মনে পড়ছে ।
মন্তব্য করুন