ইউজার লগইন

মীর'এর ব্লগ

গল্প: তুমি আমার কাছে তুমি যা বলবা তাই (পর্ব-৫)

সেবার বেশিদিন দেশে থাকার সুযোগ ছিল না। প্রায় বিনা নোটিশেই গিয়েছিলাম দুই সপ্তাহের চিকন একটা ছুটি নিয়ে। সেই দুই সপ্তাহের প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করেছি তাড়িয়ে তাড়িয়ে। মিসিসিপি জানতো আমি জল আর পর্বত সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি, পূর্ণিমার রাতে কাকচক্ষু দীঘির জলে পা ডুবিয়ে বসে থেকে হালকা কোন সুর আর সঙ্গীর কথার মূচ্ছর্নায় হারিয়ে যেতে পছন্দ করি।

আমরা দু'জন দু'জনের সবরকম পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে জানতাম। এমনকি এটাও জানতাম, কার কখন কোন কাজটা কিভাবে করতে ভাল লাগে। কেন যে একজন মানুষকে এতটা বেশি জেনে ফেলেছিলাম, তা বলতে পারি না। দু'জনেরই এর পেছনে নির্জলা ভাললাগা কাজ করেছিল; সেটাই হয়তো একমাত্র কারণ। মুঠো মুঠো কথা তাই শেয়ার করেছিলাম আমরা। জেনে গিয়েছিলাম অনেক কিছুই একে অপরের সম্পর্কে।

গল্প: তুমি আমার কাছে তুমি যা বলবা তাই (পর্ব- ৪)

নামটা জেনেই বিদ্যুৎ চমকের মতো সব কথা মনে পড়ে গিয়েছিল আমার। তারপর কথা হয়েছিল ওর সঙ্গে টানা চারটি ঘন্টা। তবে তাতে আমাদের কারোই একদম কোন ভ্রুক্ষেপ ছিল না, জানেন? অথচ প্রায় আজীবনই মানুষের সঙ্গে মেশার ব্যাপারে খুঁতখুঁতে আমি। কাউকে একটু ভাল লাগলে প্রথমে দুইটা মাস অপেক্ষা করি- পছন্দটা কতোটা গভীর সেটা বোঝার জন্য। তারপর তার সঙ্গে টুকটাক আলাপ শুরু করি। সেই আমি-ই কিনা প্রথমদিনই নিজের সব গার্ড নামিয়ে রেখে, সরল-সহজ, বোকা আর আত্মপ্রেমী চরিত্রটা খোলাখুলি দেখতে দিয়েছিলাম মিসিসিপিকে। অনুধাবন করতে দিয়েছিলাম আমার চিন্তাধারা। সে-ও আমাকে ঠিক একইভাবে বরণ করে নিয়েছিল তার মানসপটে। তাই কয়েক মাসেই একে অপরের খুব প্রানের মানুষ হয়ে উঠেছিলাম আমরা।

গল্প: তুমি আমার কাছে তুমি যা বলবা তাই (পর্ব- ৩)

কলেজ ছেড়ে চলে আসতে অবশ্য আমার খুব একটা খারাপ লাগছিল না। শুধু মিসিসিপির সঙ্গে কোনো কলেজের এক ক্লাসে বসে আর সময় কাটানো হবে না কিংবা একই ক্যান্টিনে সিঙ্গারা, চা-সমুচা'র অর্ডার দেয়া হবে না, অথবা কলেজের বাস স্ট্যান্ড থেকে ক্লাসরুমের ছোট্ট যে পথটুকু, সে পথে হয়তো এরপর থেকে ওকে বুঝতে না দিয়ে ওর কাছাকাছি হেঁটে যাওয়ার অভিনয়টুকু অন্য কেউ করবে- আমি না; এমন কিছু ছোট-খাটো খারাপ লাগা ছাড়া বেশি কিছু মনেও হচ্ছিল না। তবে কলেজের ক্লাসে যে আমরা ছেলে আর মেয়ে একসাথে বসতাম- এমন না। কিংবা ক্যান্টিনেও কখনো আমরা একই টেবিলে বসি নি। আসলে দূরেই ছিল মেয়েটি। দূরেই রয়ে গেল আজীবন।

গল্প: তুমি আমার কাছে তুমি যা বলবা তাই (পর্ব-২)

মিসিসিপি নামটা শুনে এক লহমায় অনেক কথা মনে পড়ে গেল। কিশোর বেলায় একটি বিশেষ-বাহিনী পরিচালিত কলেজে এক বছর পড়েছিলাম। সেই কলেজের নিয়ম-নীতির বাড়াবাড়ির সঙ্গে তাল মিলাতে পারি নি বলে, পরে আমায় অন্যত্র ভর্তি হতে হয়। তবে যে এক বছর ওখানে ছিলাম, সেখানেই দেখা হয়েছিল মিসিসিপির সাথে।

গল্প: তুমি আমার কাছে তুমি যা বলবা তাই (পর্ব- ১)

মনে আছে, প্রথমবার যখন মেয়েটি আমার সাথে যোগাযোগ করে, তখন আমি পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলাম। যোগাযোগ করে মানে মেসেজ দেয় আরকি। মেসেজের শব্দে ঘুম ভেঙ্গেছিল এমন না। এমনিতেই ভেঙ্গে গিয়েছিল আর ওই সময়েই মেসেজটা এসেছিল।

ঘুম ভাঙ্গা চোখ মেলে বাইরের দিকে তাকিয়ে আমি একটা জোড়া শালিক দেখতে পেয়েছিলাম। ঠিক শালিক নয়, ওদের মতোই দেখতে একটা ভিনদেশি পাখি। খানিকটা বড়। কখনও এরা মুখ দিয়ে কোন শব্দ করে তা শুনি নি। কিংবা করলেও কেবল এক ধরনের চিড়িৎ চিড়িৎ আওয়াজ শুধু। সঙ্গীকে কোন কোডেড মেসেজ পাঠায় মনে হয়। এমনভাবে যাতে অন্য কেউ বুঝতে না পারে।

তোমার চোখ

তোমার চোখের ঘোলা মনিটায়
ডুব দিয়ে এক বালক সাঁতরায়।
ওকে ডেকে আমার
কান মলে দিতে ইচ্ছে করে।
অমন করে কি কারো চোখেতে ডুবতে আছে?
সর্বনাশা কালবোশেখী- এক পলকে গঙ্গা থেকে
সাগর মাঝে ভাসিয়ে নিলে?
হায়রে বালক, জানিস নি কি কখনো আগে
বালিকাচোখে কালবোশেখী-
হাসতে হাসতে নামতে পারে।

তোমার চোখের ঘোলা মনিটায়
এমন কত গল্প জমে,
চোখ ঝাপটে গল্পগুলো
মুছতে হয় কষ্ট করে।
তোমার চোখের ঘোলা মনিটা
অনেক দূরে অনেক দূরে।
---

বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিন

তাপিত হৃদয়/ যেখানে শীতল হয়/ সেখানে বস্তু রবে জেনো নিশ্চয়...

বাম হাতের মধ্যমা আর অনামিকায় ধরা লাল বেনসনটায় সুখ টান দিতে দিতে নান্নু পাগলা যখন হেঁড়ে গলায় গানটা গেয়ে সামনে দিয়ে হেঁটে পার হচ্ছিল, তখন রাত প্রায় ১২টা। শাহবাগের সেই রমরমা অবস্থা এখন আর নেই। মেট্টোরেলের লাইন বসার আগে জায়গাটা পুরোপুরি অন্য একরকমের ছিল! কোটি মানুষের শহরের এক বিরাট ব্যস্ত মোড়, তারপরও ওইখানটায় গিয়েই সকলের গতিটা যেন একটু স্তিমিত হয়ে পড়তো! নিন্দুকেরা মোড়ের যানজটকে মুখ্য দায়ে অভিযুক্ত করতে পারেন কিন্তু আমি বলি ওটিই সেই এক্স-ফ্যাক্টর! যার টানে শাহবাগ হচ্ছে শাহবাগ, আর গুলবাগ হচ্ছে গুলবাগ।

গল্প: কষ্টের রেলগাড়ি

অনেক দিন চিকন চালের ভাত আর মুরগির মাংসের পাতলা ঝোল দিয়ে রাতে খাওয়া হয় না। ভাবতে ভাবতে যেই না মুরগির তাকের দিকে তাকিয়েছেন মুর্শেদ সাহেব, ভিমড়ি খাবার জোগাড় হলো তার।

এমনিতে দোকানটার তাকগুলো খুব সাজানো-গোছানো, যেকোন কিছু যাতে ক্রেতারা সহজে খুঁজে পেতে পারে, সেদিকে পূর্ণ খেয়াল রেখে বিন্যস্ত; সেটা তার জানাই। নিত্যদিন যে আসা-যাওয়া পেনি নামের সেই ছোট্ট ২৪ ঘন্টার স্টোরটায়। যেটা সপ্তাহে সাত দিন আর বছরে ৩৬৫ দিন খোলা থাকে। শুধু যেসব বছর লীপ ইয়ার অর্থাত ৩৬৬ দিনে হয়, সেসব বছর ২৯ ফেব্রুয়ারি বন্ধ।

অলীক ভাবনার জগতে হারিয়ে যাওয়া - ১

নতুন কোন কিছু অনেকদিন লেখা হয় না। ২০২২ সালের শেষদিকে একটা ডায়েরি শুরু করেছিলাম। সেটা শেষ হয়ে গেছে সেই কবে। তবে তারপর আর নতুন করে কিছুই লিখি নি। মাঝে একটা গল্প লিখেছিলাম। একটা মেয়ের মনের গল্প। সবকিছুর পরও না পাওয়াগুলো যাকে মাঝে মাঝে বিদ্ধ করে। তখন সে একটা অলীক জগতের স্বপ্ন দেখে। যেখানে একটা ঠান্ডা ও নিরিবিলি কাল্পনিক শহরে হারিয়ে যায় সে।

অলীক ভাবনার জগতে এই যে হারিয়ে যাওয়া, এটা বোধহয় আমাদের সবার সঙ্গেই ঘটে। নিজের আশপাশের জীবনটাকে সরিয়ে রেখে একটু হারিয়ে যাওয়া। কিন্তু যথাসময়ে এসব ভাবনার লাগাম পরানোটাও যে জরুরি, সেটাই বোধহয় শেষ গল্পটার প্রতিপাদ্য ছিল। এভাবে প্রতিদিন কত কত স্বপ্নেরা তাদের প্রয়োজনে জেগে ওঠে আবার প্রয়োজনে ডুবে যায় আমাদের মনের মানসপটে!

কি সব দিনরাত্রি

আজকাল কোন স্বপ্ন নিয়ে ঘুম থেকে উঠি না
মিনিমাম ২ ঘন্টা ফোন চালাই বিছানায় শুয়ে শুয়ে
তারপর ক্লান্ত চোখে তাকাই বন্ধ জানালাটার দিকে,
বিচ্ছিরি বিরক্তিরা চারটা পাশ ঘিরে ভিড় করে আসে।

কোথাও একটা ইঞ্চিও ওরা ফাঁকা রাখে না
যেন ফাঁকা কোন বর্গইঞ্চি পেলেই আমি পালিয়ে যাবো
ওইখানে। লুকিয়ে পড়বো সন্তপর্ণে। তারপর বিরক্তিরা আর
আমায় খুঁজে পাবে না।

আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে যাই কলের পাড়ে
পানির ট্যাপ- ওটাকে কলপাড় বলা যায় না,
আবার যায়ও হয়তো কে জানে
ওই কলখানা দিয়েই তো ঠান্ডা,
গরম সবরকমের পানি আসে।
তারপরও কি রান্নাঘরের পানির ট্যাপকে কলপাড়
বলা যায়? না উচিত সেটা বলা?

আমার জীবনটাকেও খানিকটা সাযুজ্যময় মনে হয়।
শুধুমাত্র অলস একটা মস্তিষ্করূপী শয়তানের কারখানা ছাড়া
যার আর কোন কিছু নেই,
মানুষ হতাশ হলে বড় বিচ্ছিরি হয়ে যায়।
একসময় যেটাকে কলপাড় মনে হতো
আজকাল পানির ট্যাপও মনে হয় না

অন্য কোন প্রাণী হলে এত জঘন্য আত্মোপলব্ধি হতো না

পৃথিবীর মানুষের ওপর আমার যে ভয়ংকর রাগ হয়েছে। যদিও চেষ্টা করছি কমানোর। কিন্তু কমছে না। রাগে আসলে কি হয়? নিজের ক্ষতি ছাড়া আর তো কিছু দেখি না। ক্ষতিটাও সহজে বোঝা সম্ভব না। মনের ভেতর গোপনে এ ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। খেয়াল করে দেখলাম, ইদানীং আমার ইতিবাচক মানসিকতা ভয়াবহ হারে নিম্নগামী। রাগ নিয়ে ভাবতে থাকলে, আস্তে আস্তে বেড়ে যায় হৃদকম্পনও। যা শরীরের জন্য ভাল না কোনমতেই। তারপরও প্রায় প্রায়ই মানুষ নামক এই প্রাণীটির ওপর আমার অক্ষম নিষ্ফলা আক্রোশ সৃষ্টি হয়। কিন্তু যদি রাগ সরিয়ে সঠিক তথ্যের আলোকে বাস্তবের দিকে দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখা যাবে, দোষের মূলভাগটি আসলে আমারই।

এই দোষে দুষ্ট কমবেশি আমরা সবাই

প্রতিটা সকালে আমি সামনের বিল্ডিংয়ের জানালা, পর্দা, দেয়াল ইত্যাদি দেখতে দেখতে ঘুম থেকে উঠি। আগে খোলা আকাশ দেখতে দেখতে উঠতাম। এখন এক চিলতে আকাশ কোনমতে জানালা থেকে দেখা যায়। নামকাওয়াস্তে এসব নিয়ে মাতামাতি যদিও আমি করি, কিন্তু এটাও জানি বিষয়গুলো এককভাবে খুব সামান্যই গুরুত্ব বহন করে জীবনে। খোলা আকাশ দেখতে দেখতে ঘুম থেকে ওঠার সুযোগ হেলায় হারিয়ে কংক্রীটের জঞ্জাল দেখতে দেখতে ঘুম থেকে উঠছি বলে যে খুব কিছু গিয়েছে বা এসেছে জীবনে, তা না। পৃথিবীর সব মানুষই বুঝি এমন, তাই না?

জীবনের অপরিহার্য প্রয়োজনগুলো খুঁজে বের করুন

আজ প্রায় মাসখানেক যাবত কফি পান করা ছেড়ে দিয়েছি। তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না। ছেড়ে দেয়ার আগে মনে হতো সকালে এক মগ কফি ছাড়া হয়তো সারাদিন মাথাব্যাথা করবে। দেখলাম তাও করলো না। কফি বাদ দিয়ে প্রতি সকালে এক কাপ করে গ্রিন টি পান করা শুরু করার পর দেখলাম, পানীয়টা শরীরের জন্যও দারুণ। শরীরের ভেতরের অনেক রোগ-বালাইয়ের উপসর্গকে দমিয়ে রাখে। আগে আমার পেটে তৈলজাতীয় খাদ্য থেকে সৃষ্ট জ্বালাপোড়া ও অস্বস্তিকর অনুভূতি, বুকের কোনায়-কানায় মাঝে মাঝে খেলে যাওয়া ব্যাথা- ইত্যাদি নিয়মিত না হলেও, অনিয়মিতভাবে দেখা দিতে আসতো। গত এক মাসে সেসবের কোন বালাই ছিল না বললেই চলে।

বলতে পারি না কেউ আমরা

দিকে দিকে কত রঙ্গই না ঘটে চলেছে! দেশে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে আবারও খড়্গহস্ত হয়েছে সরকার। রুচির পুলিশেরা মাঠে নেমেছে গণমানুষকে রুচিশীলতার ট্যাবলেট গেলাতে। যারা মাঠে নেমেছে, তারা নিজ নিজ সংস্থা, সংগঠনের উপরের পদে উঠতে কি কি অরুচিকর কাজ করেছে জীবনে, তার হিসেব বেমালুম গাপ করা! আমার আজকের লেখার বিষয়বস্তুও এটা। মানুষে মানুষে বিভেদ এবং তার কারণে সৃষ্ট অনিবার্য পশ্চাৎপদতা।

গল্প: আপনাদের বাড়ি থেকে অরোরা দেখা যায়?

পার্ফমেন্স মার্কেটিং যেমন ডিমান্ডিং, তেমনি হেভিওয়েট একটা জব, যেটা ঘুম ছাড়া দিন-রাত সর্বক্ষণ মাথার ভেতর বন্ধুর মতো সঙ্গ জুগিয়ে চলতে পারে। মানুষের আর বেশি কিছু লাগে না। একটা কোম্পানির চাকুরির বিজ্ঞাপন দেখে ভাবছিল তিষি, কি দারুণ করেই না নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনের ছবি আঁকতে পারে তারা!

প্রতিদিন সকালে কোম্পানির ভেতর কফিমেশিন চলে প্রবল গতিতে। এখন সময় এনালাইসিসের। কেপিআই-গুলোর কি অবস্থা? মেটা-ক্যাম্পেইনটা কেমন চলছে? নতুন ল্যান্ডিং পেইজটা কি কনভার্সন আনছে, যেমনটা আশা করা হয়েছিল?